somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

১৯৭১ এবং আমি

০২ রা নভেম্বর, ২০০৭ দুপুর ২:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১৯৭১ এর দর্শক ছিলাম না আমি ।ঐ আলো আর আধার মেশানো সময় টা তে আমার বাবা ছিলেন ১০ বছরের একজন ছোট,অন্ধকার অনুধাবনে অক্ষম, মানুষ ।আর আমার ময়ের জন্ম হয়েছে ৭১ এর সেপ্টেম্বরে(এজন্যেই হয়ত আমার মা এত উজ্বল,৭১ এর সব আগুন মেশানো শক্তি তার জন্মে মিশে আছে) ।
আমার বড় চাচা মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন(ভুল বললাম,মুক্তিযোদ্ধারা কোনো অতীত ইতিহাস নন,তারা আমাদের অতীত,বর্তমান,ভবিষ্যত )।চান্দিনা অপারেশনে একটা সুচালো রাইফেল এর বুলেট,তার ডান বুকের পাশ ঘেষে গিয়েছিল ।আমি কখোনো এত সুন্দর ক্ষত দেখিনি ।সেই আলোঘেরা সময়টা নিয়ে চাচা যখন কথা বলেন, তার চোখ যেন নীলাভ স্বপ্নীল হয়ে উঠে ।মুরাদনগরে আর্মি ক্যাম্পে আক্রমনের সময় একরাত তাকে পাশের একটা ডোবায় কচুরীপানা মাথায় দিয়ে থাকতে হয়েছিলো ।সেই ডোবায় নাকি ছিলো বিশাল বিশাল জোঁক ।চাচা বলে জোঁক তো আর স্বাধীনতা বোঝে না,তাই মুক্তিযোদ্ধাদের রক্ত শুষে খেতে তাদের বিশেষ কোনো আপত্তি ছিলো না ।
৭১ সম্পর্কিত আমার আবেগ অনেকটাই ধার করা ।তবে সেই আবেগই আমি অনেক বেশি কেপে উঠি,কেপে কেপে উঠি ।ভালোবাসা জমতে থাকে স্তরে স্তরে ।
সৈয়দ শামছুল হকের পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায় পড়ে আমি ভীষন আপ্লুত হয়েছিলাম ।
নুরল দীনের সারা জীবন পড়ে মনে হয়েছিলো,৭১ সালে যে হাজার হাজার,লক্ষ লক্ষ নুরলদীনের জন্ম হয়েছিলো,তারা
আমার দেশটাকে সোনায় সোনায় আবৃত করে দিয়েছিলো ।
কিন্তু নষ্টদের আগ্রাসন দিনে দিনে বাড়ছেই ।

মাঝে মাঝে মনে হয়,সারা দেশ ভরে গেছে ঐসব রক্তচোষা জোঁকে!যারা দংশন করেছিলো ৭১,এখনও তারা দংশন করেই যাচ্ছে ।

আমি কখোনো ৭১ নিয়ে বিশেষ কিছু লিখি নাই ।কারন নিজেকে কখোনো ৭১ কে ধারন করার যোগ্য মনে হয় নাই ।
তবে মুক্তিযুদ্ধের দলিলপত্রের কিছু অংশ পড়ে তীব্র আবেগ নিয়ে একবার একটা কবিতা লিখেছিলাম,৭১ নিয়ে আমি ,সেটা ছাড়া অসম্পূর্ন(কবিতাটা কলেজে থাকার সময় লেখা,প্রায় ৪ বছর আগে,ঐসময়ে লেখা সবলেখাই এখন আমার ভালো লাগে না,ফেলে দিয়েছি অধিকাংশ ,অপরিনত মনে হত ।তবে এইটা এখনও ভালো লাগে আমার ।)


১৯৭১
বাতাসে আগুন জ্বলছে,
অনাগরিক স্রোতে আকাশে,অবশ কম্পন ।
আগুন,ঘৃণা,অথবা নীল আকাশের বিরতিহীন সহবাস ।
সবুজ ঘাস,নদী,
নির্লজ্ব লালায়িত লাল লাভাস্রোতে ঢেকে যায় ।
চারদিকে আধপোড়া বিবেক,মৃতদেহ এবং সদ্যজাতের চিত্কার,
হিংসার নামে কদাকার মৃত্যু ।
অথবা কল্পনিক ন্যাচারাল ইকুলিব্রিয়াম ।
অন্ধকারটা যেন অন্ত:স্বত্তা !
আলোর অপেক্ষায় ছিলো সবাই,
আলোর অপেক্ষায় ছিলো অনেকেই ।
সেই ছেলেটি;
চোখে আকাশ হৃদপিন্ডে স্রোত নিয়ে,
অনন্তের মত আকস্মিকতা নিয়ে,
সোনালী সবুজ ঢেউ ওঠা ঘাসের মত,নদীর মত,কাব্যকে
ধারন করেছিলো বিশুষ্ক হৃদপিন্ডে ।
যার লাশ আজকাল,
শেয়াল শকুন অথবা কুত্তার নেশাতে ব্যস্ত ।
অন্ধস্রোতে লাশের অন্ধকার গন্ধ!
অথবা অতলান্তের মত সেই মেয়েটি!
যার শরীরে সোনালী ধানের শীষের মত গন্ধ ছিল,
যার সোনার রং এ,
শাদা শাপলার অকৃত্রিম স্পর্শ ছিলো ।
এখন সে,
ছিন্ন স্তন,ছেড়া তলপেট,বেয়নেট চর্জের ঘৃনা
আর কৃষ্ণশূন্যতার মত চোখ নিয়ে ভাগাড়ে বাসী ।
লাভাস্রোতে আকাশে ওড়ে,
সবুজ আগুনে পোকামাকড়ের আনন্দময় মৃত্যু ।
আমরা সোনায় জন্মাই ।
আকাশে আবার পুরাতন সূর্য,
কী যে লাল!!
এখনো,অসত্য,ঘৃণা,ভুলের মাঝেও,
জোছনায় ওড়ে মাতৃফুল ।

১৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জীবনের গল্প

লিখেছেন ঢাকার লোক, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৩৫

মাত্র মাস দুই আগে আমার এক আত্মীয়ের সাথে দেখা আমার এক বোনের বাড়ি। তার স্ত্রী মারা গেছেন তার সপ্তাহ দুই আগে। মক্কায় উমরাহ করতে গিয়ে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমান

লিখেছেন জিনাত নাজিয়া, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:১২

" অভিমান "

তোমার ঠোঁটে বোল শিখেছি
তুমি আমার মা, কেমন করে
ভুলছ আমায় বলতে
পারিনা। এমন করে চলে
গেলে, ফিরে ও এলেনা। হয়তো
তোমার সুখেই কাটছে দিন,
আমায় ভাবছ না।

আমি এখন সাগর... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার কিছু ভুল!

লিখেছেন মোঃ খালিদ সাইফুল্লাহ্‌, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮

১। ফ্লাস্কে চা থাকে। চা খেতে টেবিলে চলে গেলাম। কাপে দুধ-চিনি নিয়ে পাশে থাকা ফ্লাস্ক না নিয়ে জগ নিয়ে পানি ঢেলে দিলাম। ভাবছিলাম এখন কি করতে হবে? হুঁশ ফিরে এল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×