somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অনিকের এক বেলা

০৪ ঠা জুন, ২০০৯ রাত ১২:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শীতের সকালের মিষ্টি রোদ্দুরে ঘুম ভাংলো অনিকের
আড়মোরা ভেঙ্গে হাতমুখ ধুয়ে নাস্তা খেতে বসল সে। শীতকাল সবসমই তার খুব প্রিয়।

পাশের ঘর থেকে সুমনের গান ভেসে আসছে…
“আজি জানলার কাছে ডেকে গেছে এক পাখির মতন সকাল…”

আজ অনিকের আর বাসা থেকে বের হতে ইচ্ছে করছে না কিন্তু সুন্দর সকালটা তার ঘরে বসে কাটানো হল না, বেশ কয়েকটা কাজ সারতে হবে আজ, তাড়াতাড়ি জামাকাপড় পরে নিল সে, ঘর থেকে বের হল;


কয়েকদিন আগে একটা ব্যাগ হারিয়ে ফেলেছে অনিক। কিভাবে যে হারালো এটা সে মনে করতে পারছে না, মনে হয় কোনো বাসের সিট এর উপর ফেলে এসেছে; ব্যাগের ভেতরে তার পাসপোর্ট আর পরীক্ষার সার্টিফিকেটগুলো ছিল; বাধ্য হয়ে এখন থানায় যেতে হচ্ছে ডায়েরি করতে; এর আগে অনিকের থানায় যাওয়ার কোন অভিজ্ঞতা হয় নি, ভেতরে ঢোকার পর তার অনুভূতিটা ঠিক সুখকর হল না; অনেকগুলো টেবিল এ বসে ইউনিফর্ম পরা পুলিশগুলো কাজ করছে।হইচই আর চিতকার এর ভেতর কাজ চলছে। বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষার পর তার পালা আসল, এর মাঝে সে যা দেখল তা ভুলে যাওয়াই ভালো;সবাই ডায়েরীর মধ্যে কাগজ গুজে দিচ্ছে, আর পুলিশগুলো সেগুলো নির্বিকারভাবে পকেটে পুরে রাখছে, খুবই সহজ এবং সাভাবিক ভংগিতে, একটুও আড়ষ্টতা নেই তাদের এই ব্যবহারে;
“কি সমস্যা আপনার?” অনিক সম্বিত ফিরে পেল পুলিশ অফিসার এর ডাকে।
অনিক সবকিছু ব্যাখ্যা করল;
“আপনারা যে কি সব করেন! এত্ত অসাব্ধান! আপনাদের জন্য আমাদের ঝামেলা পোহাতে হয়।”
অনিক সবকিছুই হজম করে গেল; সব শেষ হওয়ার পর সে চেয়ার থেকে উঠে দাড়াল, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এখান থেকে বের হতে চায় সে;
“এই যে!চলে যাচ্ছেন যে”, পেছন থেকে ডাক পড়ল আবার;
“থানায় কি কখনো আসেননি নাকি? সব ছোটলোকে দেখি দেশ ভরে যাচ্ছে, ভদ্রতাবোধ টুকুও নেই দেখি।”
অনিক কিছুক্ষণ চুপ করে থাকলো, অনেকগুলো মুখ সে দেখতে পেল, সবাই এসেছে তাদের সমস্যা নিয়ে, সবগুলো মুখই বোবা;
পকেটে হাত দিল সে, কিছু কাগজের স্পর্শ পাওয়ার জন্য;


থানা থেকে বের হয়ে অনিকের খুব ক্লান্ত লাগল; আজকে আর কোন কাজ করতে ইচ্ছে করছে না; বাসায় ফিরতে চায় সে; প্রচন্ড ভীড় ঠেলে বাসে উঠল সে; অনেকটা পথ; সিট খালি হতেই বসে পড়ল; আকাশ-পাতাল ভাবতে ভাবতে কিছুক্ষণের ভেতরে সে অন্য জগতে চলে গেল; কতক্ষ্ণ ঘুমিয়েছে সে ঠিক বলতে পারল না, ঘুম ভাংলো হইচইয়ের শব্দে।
-“ব্যাটা, তেলের দাম বাড়ছে কয় টাকা?তুই ভাড়া ৯ টাকা চাস?”
-“স্যার, ৯ টাকা অনেকদিন ধরেই ভাড়া”, ১০ কি ১১ বছরের একটা ছেলে করুণ চোখে বলল।
-“তুই আমারে শেখাস?তুই কয়দিন এই রুট এ হেল্পারগিরি করিস? প্রতিদিন ৮ টাকা দিয়ে যাই”
-“স্যার, ভাড়া ৯ টাকা, আপনি জিগান সবাইরে”
-"তোর এত্ত বড় সাহস!মুখে মুখে তর্ক করিস!!! ………।”
"…………………………………………………………"
"…………………………………………………………"
"…………………………………………………………"

আচমকা লোকটা প্রচন্ড জোড়ে ঘুসি মারে ছেলেটার নাকে, রক্ত পড়তে থাকে তার নাক দিয়ে;


বাসের কিছু লোকজন ছেলেটার গায়ে হাত তোলার ঘটনাকে মেনে নিতে পারে না, কিন্তু বেশীরভাগ মানুষকেই খুশী দেখা যায়; ছেলেগুলো যে ভাড়া নিয়ে অনিয়ম করে এবং কবে কে ১ টাকা বেশী ভাড়া দিয়েছে এই গল্প জুড়ে দেয়; অনেকেই বলে যে এদের নিয়মিত মার দেওয়া উচিত; নিয়মিত টাকা মেরে খাচ্ছে; এ সব অন্যায়ের প্রতিবাদ না করলেই নয়; উচিত শিক্ষা হয়েছে;


অনিক ভাবে আর ভাবে;
মানুষগুলোকে মেলানোর চেষ্টা করে!
ইশ!
মানুষগুলো যদি সবজায়গায় প্রতিবাদী হতে পারত; অন্যায়গুলো বুঝতে পারত; সাহস দেখাতে পারত!!
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই জুন, ২০০৯ রাত ৯:১২
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

রাজাকার হিসাবেই গর্ববোধ করবেন মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:১৮


একজন রাজাকার চিরকাল রাজাকার কিন্তু একবার মুক্তিযোদ্ধা আজীবন মুক্তিযোদ্ধা নয় - হুমায়ুন আজাদের ভবিষ্যৎ বাণী সত্যি হতে চলেছে। বিএনপি থেকে ৫ বার বহিস্কৃত নেতা মেজর আখতারুজ্জামান। আপাদমস্তক টাউট বাটপার একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশে কোন প্রজন্ম সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত? ১৯৭১ থেকে একটি সংক্ষিপ্ত ভাবনা

লিখেছেন মুনতাসির, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪৩

বাংলাদেশে দুর্নীতির প্রশ্নটি প্রায়ই ব্যক্তি বা দলের দিকে ছুড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু একটু গভীরে গেলে দেখা যায়, এটি অনেক বেশি প্রজন্মভিত্তিক রাজনৈতিক - অর্থনৈতিক বাস্তবতার সঙ্গে যুক্ত। ১৯৭১ এর পর... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাঁদগাজীর মত শিম্পাঞ্জিদের পোস্টে আটকে থাকবেন নাকি মাথাটা খাটাবেন?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭


ধরুন ব্লগে ঢুকে আপনি দেখলেন, আপনার পোস্টে মন্তব্যকারীর নামের মধ্যে "জেন একাত্তর" ওরফে চাঁদগাজীর নাম দেখাচ্ছে। মুহূর্তেই আপনার দাঁত-মুখ শক্ত হয়ে গেল। তার মন্তব্য পড়ার আগেই আপনার মস্তিষ্ক সংকেত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১৫


((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

×