somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নতুন অর্থ ব্যবস্থার দিকে ঝুঁকছে বিশ্ব জনমত?

১৩ ই মে, ২০১০ রাত ১১:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর বিগত প্রায় দুই দশক ধরে পুঁজিবাদ বিশ্ব অর্থ ব্যবস্থাকে শাসন করে এসেছে এবং এই পুঁজিবাদ ভিত্তিক অর্থ ব্যবস্থার নেতৃত্ব দিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। পুঁজিবাদের জন্মদাতা ও লালনকারী হিসেবেও যুক্তরাষ্ট্রকে ধরা হয়। পুঁজিবাদের কারণে আজ গোটা বিশ্বেই মুক্ত বাজার অর্থনীতির এত প্রাধান্য। যদিও এতে দরিদ্র দেশগুলোর কতটুকু উপকার হয়েছে তা একটি বিরাট প্রশ্ন।
তবু পুঁজিবাদের জোয়ারে এসব দেশগুলোকে ভেসে যেতে হয়েছে এবং জোর করে হলেও মুক্ত বাজার অর্থনীতির বটিকা গিলতে হয়েছে।

তবে পরিস্থিতি বদলাতে শুরু করেছে। বিশেষ করে সাম্প্রতিক বিশ্ব অর্থনীতির মন্দা দশা এবং বাণিজ্যিক স্বার্থের বেলায় পশ্চিমা দেশগুলোর দ্বিমুখী নীতি আজ মানুষকে নতুন করে ভাবিয়ে তুলেছে। সম্প্রতি দুটি জরিপে এই তথ্য বের হয়ে এসেছে।
দুটি জরিপ চালানো হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ম্যারিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালিত সংগঠন worldpublicopinion.org এর পক্ষ থেকে। প্রথম জরিপটি চালানো হয় উন্নত এবং উন্নয়নশীল ২৭ টি দেশে। মোট ২৯ হাজার ৩৩ জন এই জরিপে অংশ নেন এবং তাদের মতামত তুলে ধরেন। দেখা গেছে ২৭টি দেশের মাত্র ১১ শতাংশ লোক মনে করেন পুঁজিবাদ ভিত্তিক অর্থ ব্যবস্থা ভালোভাবে চলছে। শতকরা ৫১ ভাগ লোকের তেমন আস্থা নেই প্রচলিত পুঁজিবাদের প্রতি, তারা মনে করেন এই অর্থ ব্যবস্থা ঠিকভাবে চলছে না এবং এতে সংস্কার আনা প্রয়োজন। জরিপ চালানো ২৭ টি দেশের উত্তরদাতাদের মধ্যে ২৩ শতাংশ লোক মনে করেন পুঁজিবাদের মধ্যে মারাত্মক ত্রুটি রয়েছে এবং নতুন একটি অর্থ ব্যবস্থার প্রয়োজন। এসব দেশের মধ্যে ফ্রান্সের শতকরা ৪৩ ভাগ, মেক্সিকোর ৩৮ ভাগ, ব্রাজিলের ৩৫ ভাগ এবং ইউক্রেনের ৩১ ভাগ লোক এই নতুন অর্থ ব্যবস্থা চালুর পক্ষে। লক্ষণীয় যে এই চারটি দেশ হচ্ছে উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা এবং পূর্ব ও পশ্চিম ইউরোপের দেশ। অর্থাৎ পশ্চিমা দেশগুলোতেই এখন নতুন বিশ্ব অর্থ ব্যবস্থা চালুর দাবি দিন দিন জোরালো হচ্ছে। এমনকি পুঁজিবাদের দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মাত্র ২৫ ভাগ লোক মনে করছে যে পুঁজিবাদ ঠিকমত চলছে। অন্যতম মুসলিম প্রধান দেশ পাকিস্তানে এই সমর্থনের হার মাত্র ২১ ভাগ।

পুঁজিবাদের প্রতি আস্থা হারানোর পাশাপাশি রাষ্ট্রীয়করণের দিকেও ঝুঁকছে মানুষ। জরিপের ২৭ টি দেশের মধ্যে ১৫ টি দেশের মানুষই মত দিয়েছেন যে রাষ্ট্রের বড় বড় শিল্পের মালিকানা সরকারের হাতে থাকা উচিত। অন্তত এসব শিল্পে রাষ্ট্রের প্রত্যক্ষ ভূমিকা রাখা দরকার। ২২টি দেশের মানুষ সমর্থন করছেন সম্পদ বন্টনের দায়িত্ব সরকারের পালন করার বিষয়টি। মূলত বার্লিন প্রাচীরের পতনের মধ্য দিয়ে দুই জার্মানির পুনরায় একত্রিত হওয়ার ঘটনাটিকে সমাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে পুঁজিবাদের বিজয় হিসেবে ধরা হয়। এই ঘটনার কিছুদিন পর সোভিয়েত ইউনিয়নেরও ভাঙ্গন প্রত্যক্ষ করে বিশ্ববাসী। এরপর থেকে কেবল পুঁজিবাদের আধিপত্যই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু এই জরিপের ফলাফলে দেখা যাচ্ছে যে এখনও সমাজতান্ত্রিক অর্থ ব্যবস্থার প্রতি বহু মানুষের আগ্রহ রয়েছে।
পুঁজিবাদ ভিত্তিক অর্থ ব্যবস্থার প্রতি আস্থা হারানোর পাশাপাশি পুঁজিবাদের নেতৃত্বদানকারী দেশ যুক্তরাষ্ট্রও গোটা বিশ্বে আজ সমর্থন হারাচ্ছে। এক্ষেত্রে অবশ্য ইউরোপের দেশগুলোর সঙ্গে মুসলিম দেশগুলোর যথেষ্ট ফারাক দেখা গেছে।

worldpublicopinion.org নামে সংগঠনটি দ্বিতীয় যে জরিপটি চালিয়েছে তাতে এই চিত্র ফুটে উঠেছে। এই জরিপটি চালানো হয় ২০টি দেশের ২০,৩৪৯ জন লোকের ওপর। যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান ভূমিকা নিয়ে দেশগুলোর নাগরিকদের মনোভাব কেমন তা জানতে এই জরিপটি চালানো হয়। এসব দেশের মোট ৪০ ভাগ লোক মনে করে যে যুক্তরাষ্ট্র বর্তমান বিশ্বে একটি ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে। আর ৪৪ শতাংশ উত্তরদাতা এক্ষেত্রে চীনকে এগিয়ে রেখেছে। অর্থাৎ বিশ্ব রাজনীতিতে চীনের ভূমিকার দিকে সমর্থন দিন দিন বাড়ছে। ইউরোপের দেশগুলোতে অবশ্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিই সমর্থন বেশি দেখা গেছে। তারা চীনের প্রতি তেমন সমর্থন দেয়নি। অপরদিকে মুসলিম দেশগুলোতে দেখা গেছে ঠিক উল্টো। মিশর, পাকিস্তান তুরস্কের মত দেশগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি সমর্থনের হার মাত্র ১৬ শতাংশে নেমে এসেছে। অপরদিকে চীনের প্রতি তাদের সমর্থন বাড়ছে। জরিপকারী প্রতিষ্ঠান জানিয়েছে বিশ্ব রাজনীতিতে এই যে বিভাজন সেটি বেশ নীরবেই হয়ে গেছে।
দেখা যাচ্ছে একদিকে মানুষ পুঁজিবাদের দিকে আস্থা হারাচ্ছে একই সঙ্গে পুঁজিবাদের দেশ যুক্তরাষ্ট্রও তার সমর্থন হারাচ্ছে। বিশ্ব অর্থ ব্যবস্থা এবং বিশ্ব রাজনীতিতে যে নতুন মেরুকরণ তৈরি হতে যাচ্ছে তাতে মুসলিম দেশগুলোর ভূমিকা কি হবে সেটি এখন দেখার বিষয়। বিশেষ করে নতুন অর্থ ব্যবস্থা হিসেবে মুসলিম দেশগুলো ইসলামী অর্থ ব্যবস্থাকে তুলে ধরতে পারলে সেটি বিশ্ব রাজনীতিতেও নতুন অবস্থান তৈরির সুযোগ করে দেবে।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???



আপনারা যারা আখাউড়ার কাছাকাছি বসবাস করে থাকেন
তবে এই কথাটা শুনেও থাকতে পারেন ।
আজকে তেমন একটি বাস্তব ঘটনা বলব !
আমরা সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×