somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পৃথিবীর ত্রিমাত্রিক মডেল তৈরি করছে জার্মান স্যাটেলাইট

৩০ শে জুন, ২০১০ রাত ১:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

জার্মান মহাকাশ সংস্থা এক বেসরকারী সংস্থার সহযোগিতায় অভিনব এক প্রকল্পের মাধ্যমে আগামী তিন বছরের মধ্যে গোটা পৃথিবীর এক উন্নত থ্রি-ডি মডেল তৈরি করতে চলেছে৷


হলিউডের সফল চলচ্চিত্র ‘অবতার'এর মূল আকর্ষণই ত্রিমাত্রিক জগত৷ একের পর এক টেলিভিশন সেট বাজারে আসছে, যার পর্দায় ‘থ্রি ডি' ছবি দেখা যায়৷ এবার পৃথিবীর ত্রিমাত্রিক মানচিত্র তৈরি করতে শুরু হলো এক মহাকাশ অভিযান৷

‘টু ডি'র দ্বিমাত্রিক চ্যাপ্টা ছবি আর কারো মনে ধরছে না৷ তাই ত্রিমাত্রিক প্রযুক্তিকে ঘিরে চারিদিকে নতুন এক উদ্দীপনা লক্ষ্য করা যাচ্ছে৷ এবার পৃথিবীর ত্রিমাত্রিক ছবি তুলতে ‘ট্যান্ডেম এক্স' নামের এক স্যাটেলাইট পাঠানো হলো মহাকাশে৷ প্রায় ১৫ কোটি বর্গ কিলোমিটার এলাকার উন্নত ত্রিমাত্রিক ছবি তোলা হবে এই প্রকল্পের আওতায়৷ ‘ট্যান্ডেম এক্স' সবুজ ও ‘টেরাসার এক্স' লাল কক্ষপথে পৃথিবী প্রদক্ষিণ করবে

প্রকল্পের রূপরেখা

‘ট্যান্ডেম এক্স' ও তার যমজ ভাই ‘টেরাসার এক্স' ইতিমধ্যেই কাজ শুরু করে দিয়েছে৷ ‘টেরাসার এক্স' ২০০৭ সাল থেকেই মহাকাশ থেকে তথ্য পাঠিয়ে চলেছে৷ প্রায় সাড়ে আট কোটি ইউরো ব্যয় করে এই স্যাটেলাইট তৈরি হয়েছিল৷ এবার ‘ট্যান্ডেম এক্স' তার সঙ্গী হওয়ার ফলে তাদের যৌথ শক্তি নতুন মাত্রা পেয়েছে৷ গোটা প্রকল্পের জন্য ব্যয় হয়েছে প্রায় ১৬.৫ কোটি ইউরো৷ জার্মান মহাকাশ সংস্থা ডিএলআর ও ‘অ্যাস্ট্রিয়াম' নামের এক বেসরকারী সংস্থা মিলে এই প্রকল্প শুরু করেছে৷ ‘অ্যাস্ট্রিয়াম' প্রকল্পের এক চতুর্থাংশ ব্যয়ভার বহন করছে৷ ২১শে জুন ১.৩ টন ওজনের এই স্যাটেলাইট কাজাকস্তানের বৈকানুর মহাকাশ কেন্দ্র থেকে রাশিয়ার একটি রকেটের মাধ্যমে উৎক্ষেপণ করা হয়৷ মাত্র সাড়ে তিন দিনের মধ্যেই প্রথম সঙ্কেত আসতে শুরু করে দিয়েছে৷ সেই তথ্য বিশ্লেষণ করে মাদাগাস্কার দ্বিপের উত্তরাংশ, ইউক্রেন ও মস্কো শহরের ছবি দেখা যাচ্ছে৷ তবে এই সব তথ্য মূলত পরীক্ষামূলক হিসেবেই গণ্য করা হচ্ছে৷ ছবির মান যাতে সন্তোষজনক হয়, নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রে তা নিশ্চিত করা হচ্ছে৷ প্রাথমিক স্তরে দুটি স্যাটেলাইটের কক্ষপথ আলাদা৷ ধাপে ধাপে তাদের মধ্যে সমন্বয় আনা হচ্ছে৷

মিউনিখের কাছে ছোট একটি শহরের নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র থেকে তাদের কাজকর্মের উপর নজর রাখা হচ্ছে৷ ৩ বছর ধরে ভূপৃষ্ঠের সম্পূর্ণ এলাকার ছবি তুলে যাবে এই দুই স্যাটেলাইট৷ ৫১৪ কিলোমিটার উপরে এক কক্ষপথে ঘণ্টায় প্রায় ২৮,০০০ কিলোমিটার গতিতে পরস্পরের মধ্যে মাত্র দু'শো মিটার ব্যবধান বজায় রেখে তারা একই এলাকার ছবি তুলে যাবে – বা আরও স্পষ্টভাবে বলতে গেলে রাডার যন্ত্রের মাধ্যমে যে কোনো এলাকার উঁচু-নিচু সব খুঁটিনাটি বৈশিষ্ট্য ক্যামেরাবন্দি করবে৷ আকাশ মেঘে ঢাকা থাকলেও রাডার যন্ত্র কাজ করতে পারে৷ ফলে আবহাওয়ার পরোয়া না করেই কাজ করে যেতে পারবে এই দুই স্যাটেলাইট৷ ত্রিমাত্রিক ক্যামেরার যেমন দু'টি করে লেন্স থাকে, যাদের মধ্যে সামান্য ব্যবধানের ফলেই ত্রিমাত্রিক ছবি তোলা সম্ভব – ঠিক সেভাবেই দুটি স্যাটেলাইটের মধ্যে নির্দিষ্ট ব্যবধান বজায় রেখে পৃথিবীর ছবি তোলা হচ্ছে৷ মানুষের দুটি চোখও ঠিক একইভাবে কাজ করে৷ ফলে আমরা আশেপাশের যে কোনো বস্তুর দূরত্ব সঠিকভাবে আন্দাজ করতে পারি৷

ত্রিমাত্রিক তথ্যভান্ডার

‘ট্যান্ডেম এক্স' ও ‘টেরাসার এক্স'এর পাঠানো তথ্য এসে পৌঁছচ্ছে মিউনিখের কাছে নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রে৷ সেই তথ্য বিশ্লেষণ করে ক্রমশঃ গড়ে উঠছে পৃথিবীর প্রথম নির্ভরযোগ্য ত্রিমাত্রিক মডেল৷ ভৌগোলিক বা অন্য কোনো সীমানার পরোয়া করে না স্যাটেলাইটের ক্যামেরা৷ অত্যন্ত সূক্ষ্ম সেই ছবি৷ ভূপৃষ্ঠের ৫১৪ কিলোমিটার উপর থেকেও এত স্পষ্ট ছবি তোলা হচ্ছে, যে মাত্র ৫ মিটারের তফাতও তাতে ধরা পড়ে৷ অর্থাৎ চলন্ত ট্রেনের ছবিও ধরা পড়বে স্যাটেলাইটের চোখে৷ এই প্রকল্প থেকে যে ডিজিট্যাল তথ্য সংগ্রহ করা হবে, তার পরিমাণ হবে প্রায় ১.৫ পেটাবাইট৷ ১ পেটাবাইট হলো ১,০০০ টেরাবাইট বা ১০ লক্ষ গিগাবাইট৷ সাধারণ ডিভিডির মধ্যে সেই তথ্য পুরলে এবং সেই সব ডিভিডি একে অপরের উপর রাখলে সেই স্তুপের উচ্চতা হবে প্রায় ৪৩০ মিটার৷

প্রয়োগের সম্ভাবনা

পৃথিবীর ত্রিমাত্রিক মডেলের কার কাজে লাগে পারে? ভূ-তাত্ত্বিকদের কাছে এমন এক মডেল স্বপ্নের মতো৷ তাঁরা যে এই তথ্য পুরোপুরি কাজে লাগাবেন, তা বলাই বাহুল্য৷ তবে এর প্রয়োগ এখানেই সীমিত নয়৷ শহর এলাকার পরিকল্পনা, জমির ব্যবহার, প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মোকাবিলার মতো কাজেও ত্রিমাত্রিক মডেল অত্যন্ত কাজে লাগতে পারে৷ সমুদ্র সম্পর্কে গবেষণার ক্ষেত্রেও মূল্যবান তথ্য পাওয়া যেতে পারে৷ প্রাকৃতিক সম্পদের খোঁজেও ত্রিমাত্রিক মানচিত্র কাজে লাগানো হবে৷ সামরিক অভিযান অথবা বিপর্যয়ের ক্ষেত্রে ত্রাণ পৌঁছনোর সময় এই তথ্য কাজে লাগবে৷ শুধু সরকার, প্রশাসন বা অন্যান্য প্রতিষ্ঠান নয় – বাণিজ্যিক ভিত্তিতে এই তথ্য ব্যবহার করা যেতে পারে৷ ইতিমধ্যেই ৩০টি সংস্থা এবিষয়ে আগ্রহ দেখিয়েছে৷ ফলে এই ত্রিমাত্রিক মডেলের চাহিদা যে বিশাল হতে চলেছে, এবিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই৷ অদূর ভবিষ্যতে গাড়ির ন্যাভিগেশন যন্ত্রের মধ্যেও হয়তো স্থান পাবে এই তথ্য৷ গন্তব্যে পৌঁছনোর আগেই পথ সম্পর্কে আগাম ও স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যাবে৷

জার্মান মহাকাশ সংস্থা ডিএলআর'এর কাছে এই প্রকল্প অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ৷ অন্য যে কোনো প্রকল্পের মতো এক্ষেত্রেও মূল উদ্দেশ্য বিজ্ঞানের ক্ষমতার প্রসার হলেও এই প্রকল্পের ব্যবহারিক দিক এতটাই বহুমুখী, যে মহাকাশ অভিযানের সার্থকতা সব স্তরের মানুষের কাছেই অত্যন্ত স্পষ্ট৷ তাছাড়া তথ্যের বাণিজ্যিক বিপণনের মাধ্যমে মহাকাশ সংস্থা কিছু আয়ও করতে পারবে, যা অর্থনৈতিক সঙ্কটের এই যুগে মোটেই ফেলনা নয়৷
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

নেতানিয়াহুও গনহত্যার দায়ে ঘৃণিত নায়ক হিসাবেই ইতিহাসে স্থান করে নিবে

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:৩৮

গত উইকেন্ডে খোদ ইজরাইলে হাজার হাজার ইজরাইলি জনতা নেতানিয়াহুর সরকারের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ করেছে।
দেখুন, https://www.youtube.com/shorts/HlFc6IxFeRA
ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ করার উদ্দেশ্যে নেতানিয়াহুর এই হত্যাযজ্ঞ ইজরায়েলকে কতটা নিরাপদ করবে জনসাধারণ আজ সন্দিহান। বরং এতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

খুন হয়ে বসে আছি সেই কবে

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ২:৩১


আশেপাশের কেউই টের পাইনি
খুন হয়ে বসে আছি সেই কবে ।

প্রথমবার যখন খুন হলাম
সেই কি কষ্ট!
সেই কষ্ট একবারের জন্যও ভুলতে পারিনি এখনো।

ছয় বছর বয়সে মহল্লায় চড়ুইভাতি খেলতে গিয়ে প্রায় দ্বিগুন... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাম গাছ (জামুন কা পেড়)

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ০৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:০৩

মূল: কৃষণ চন্দর
অনুবাদ: কাজী সায়েমুজ্জামান

গত রাতে ভয়াবহ ঝড় হয়েছে। সেই ঝড়ে সচিবালয়ের লনে একটি জাম গাছ পড়ে গেছে। সকালে মালী দেখলো এক লোক গাছের নিচে চাপা পড়ে আছে।

... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনির্বাণ শিখা

লিখেছেন নীলসাধু, ০৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



রাত ন’টার মত বাজে। আমি কি যেন লিখছি হঠাৎ আমার মেজো মেয়ে ছুটতে ছুটতে এসে বলল, বাবা একজন খুব বিখ্যাত মানুষ তোমাকে টেলিফোন করেছেন।

আমি দেখলাম আমার মেয়ের মুখ উত্তেজনায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

=ইয়াম্মি খুব টেস্ট=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:১৪



©কাজী ফাতেমা ছবি
সবুজ আমের কুচি কুচি
কাঁচা লংকা সাথে
ঝালে ঝুলে, সাথে চিনি
কচলে নরম হাতে....

মিষ্টি ঝালের সংমিশ্রনে
ভর্তা কি কয় তারে!
খেলে পরে একবার, খেতে
ইচ্ছে বারে বারে।

ভর্তার আস্বাদ লাগলো জিভে
ইয়াম্মি খুব টেস্ট
গ্রীষ্মের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×