somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হিহিমুমু-৪

০৫ ই মে, ২০১৬ রাত ৮:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

'এই হিমু এই..'
কে যেন চিৎকার করে ডাকছে। আমি আড় চোখে তাকালাম। সর্বনাশ - মাজেদা খালা। আমার থেকে মাত্র কয়েক ফুট দুরে। গাড়ীর ভেতর থেকে চেঁচাচ্ছেন।
আমি দ্রুত পরিস্থিতি পর্যালোচনা করলাম। 'এক দৌড়ে পগার পার' হয়ে যাওয়া টাইপ কিছু একটা করা দরকার। তবে পালানোর কোন পথ নেই বলেই মনে হচ্ছে।
এখানে বলে রাখি, আমার বর্তমান অবস্থান চন্দ্রিমা উদ্যানের মুল প্রবেশ পথের একটু পেছনে - উদ্যানে ঢোকার দুই প্রবেশ পথের মাঝামাঝি। অল্প কিছুক্ষন আগে মোবারকের গাড়ী থেকে নেমেছি। হাতে এক ডজন 'ফ্রিজের-ঠান্ডা-পানি'র বোতল। গত কয়েকদিন দিন যাবৎ আমি এখানকার 'প্রফেশনাল হকার'।
আমি দ্রুত গলায় ঝোলানো সানগ্লাসটা চোখে লাগিয়ে নিয়ে আবার শুরু করলাম-
'এই পানি, এই ফ্রিজের ঠান্ডা পানি...'
মাজেদা খালাকে বিভ্রান্ত করে সটকে পড়ার এটাই একমাত্র উপায় মনে হল। কোনমতে ব্রীজের কাছে পৌছতে পারলেই পগার পার হতে পারবো।
'এই পানিওলা হারামজাদা এদিকে আয়' - মাজেদা খালা গাড়ি থোকে নেমে পড়েছেন। এখন ভয়ংকর ভাবে চেঁচাচ্ছন।
নাহ্, আর পালানো হল না। আমি পানির বোতল হাতে তাঁর দিকে এগিয়ে গেলাম।
'আপা পানি নিবেন?'
'বদমাস- আমাকে আপা ডাকছিস কেন।'
আমি তাঁর দিকে তাকালাম। চোখে সানগ্লাস থাকায় তিনি আমার চোখ দেখতে পাচ্ছেন না। কথা বলার সময় চোখের দিকে না তাকাতে পারলে অসস্তি বোধ হয়। মাজেদা খালারও সেরকম হচ্ছে মনে হয় -
'গালি দিচ্ছেন ক্যানো? গরিব বলে গালাগালি করবেন? যা খুশী তাই বলবেন?'
'তুমি হিমু না?'
খালা দোটানায় পড়েছেন - তুই থেকে তুমিতে উঠেছেন। হবারই কথা। দুর থেকে আঁচ করা না গেলেও কাছে এলে আমার কিম্ভুতকিমাকার চেহারাটা দেখে যে কেউ বিভ্রান্ত হবেন। মুখের দাড়িগোফ বেশ বড় বড় হয়ে গেছে। চোখে রুপার সানগ্লাস। মোটামুটি 'হনুমান' জাতীয় কিছু একটার মত অবস্থা।
'এই দাড়াও- ভুল হয়ে গেছে। তোমাকে ভুল করো আমার ভাগ্নে ভেবেছি। তুমি কিছু মনে করোনা।'
তিনি আমার হাত চেপে ধরলেন। ধরেই হয়তো আংটিটার স্পর্শ পেলেন। চট করে আঙ্গুলে পরা আংটিটা একবার দেখে নিলেন-
'আরে তুইতো হিমুই। এই হারামজাদা- আমার চোখ ফাঁকি দিতে চাস।' - তার গলায় খুশী খুশী ভাব -
'এই যে আমার দেয়া আঙটি'
নাহ, আর হল না। আঙটিটাই শেষমেষ ডোবাল। আমি হাল ছেড়ে দেবার মত ভাব করলাম -
'আর পারলাম কই। শার্লক হোমসের খালাতো বোনকে ফাকি দেয়াকি চাট্টিখানি কথা'
'বাদরামি রাখ। আগে বল মেয়েদের সানগ্লাস চোখে দিয়েছিস কেনো? চোখ থেকে সরা ওটা - বিশ্রী লাগছে দেখতে'
আমি চোখ থেকে গ্লাস সরালাম। খালার বেশভুষা একটু অগোছালো। ঘরের কাপড়েই বের হয়েছেন মনে হচ্ছে।
'তোমাকে না দারুন লাগছে খালা।'
'পিন মারতে হবে না বদমাস। এখন গাড়ীতে ওঠ।'
আমি সুবোধ বালকের মতো গাড়িতে উঠে বসলাম।
~~~~~~~
গাড়িতে ঢুকেই খালা শুরু করলেন -
'এই হিমু তোর ব্যাপার কিরে? রাস্তাঘাটে পানি বিক্রী করিস? তোর মতলব কি?'
'মতলবের কি দেখলে খালা। হালাল ব্যবসা করি। বউ বাচ্চার ভরণপোষন করতে হবে না?'
'বউ বাচ্চা মানে? বিয়ে করে ফেলেছিস?'
'না করলেও করতে কতক্ষন - তুমি যে ভাবে লেগে আছ তাতে তো যে কোন দিনই কপালে একটা পেত্নী জুটে যেতে পারে।'
'সেদিন তুই ওভাবে পালিয়ে এলি? অনেক কষ্টে পাত্রীপক্ষকে ম্যানেজ করতে হয়েছে আমার।'
'হ্যা খালা - বড় ভুল করেছি। সেদিন বিয়েটা করে ফেললে ভালই হত। শ্বশুরবাড়ী বসে মুরগীর কাঁচা-রান খেতে পারতাম।'
'কাচা-রান মানে?'
'বাদ দাও খালা - এখন বলো আবার আমার বিয়ে ঠিক করেছ?'
'না- আমি বুঝেছি তুই আমাদের পছন্দে বিয়ে করবি না। তাই ভেবেছি তোর পছন্দ করা মেয়ের সাথেই তোর বিয়ে দেব।'
'তাহলে তো ভালই হল। চলো আবার ওখানে ফিরে যাই।'
'কেন?'
'আমার পছন্দের মেয়েটাকে দেখাব।'
'এরমধ্যে মেয়েও পছন্দ করে ফেলেছিস? মেয়ে কেমন? মেয়ের বাবা কি করে?'
'ইয়ে, মেয়ের গায়ের রং একটু ময়লা - আর সামনের দাঁত দুটো একটু উচু। তবে খারাপ না। বেশ মায়া মায়া চেহারা। আমার জন্য দুপুরে খাবার নিয়ে আসে। '
'বলিস কি? খাবার নিয়ে আসে বলেই ভজে গেলি? আমি তোকে অনেক শক্ত ছেলে ভেবেছিলাম।'
'না খালা। একসাথে ব্যাবসা করবো বলেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি।'
'একসাথে ব্যাবসা করবি? কিসের ব্যাবসা?'
'ওদের পৈতৃক সুত্রে চা' মা্নে 'টি' এর ব্যাবসা।'
'তাই নাকি? চা-বাগান টাগান আছে নিশ্চয়ই?'
'তা ঠিক জানি না। তবে বড় বড় দুটো চায়ের ফ্লাস্ক আছে।'
'মানে?'
'মানে ওই ফ্লাস্ক দুটোতে মেয়েটা চা বিক্রী করে।'
'দেখ হিমু ফাজলামো করবি না। এইবার কিন্তু আমি সিরিয়াস।'
'আমিও সিরিয়াস তুমি বলে যাও।'
'বাদরামি রেখে শোন । আমি কুয়াকাটা বেড়াতে যাচ্ছি। তুই আমার সাথে যাবি।'
'কুয়াকাটা আমাকে নিয়ে যাবে কেন। খালু সাহেবকে নিয়ে যাও।'
'না। এখানে তোকেই যেতে হবে। আমি একটা ট্রাভেল গ্রুপ খুজে পেয়েছি। ওদের একটা ইভেন্ট হচ্চে কুয়াকাটায়। আমি ওদের দুটো ইভেন্টে গিয়েছি। খুব মজা হয়। '
'তাই নাকি - বেশ ভাল। তা আমাকে কি করতে হবে?'
'এবার আমি তোকে নিয়ে যাব। কুয়াকাটায় তোকে নিয়ে যাবার উদ্দেশ্য হল ওদের সাথে তোকে পরিচিত করে দেয়া। এখন থেকে তুইও এদের সাথে ঘুরবি।'
'শুধুই ঘুরাঘুরি নাকি তোমার আর কোন উদ্দেশ্য আছে?'
'উদ্দেশ্য তো একটা আছেই - শোন - পাগলা টাইপের কিছু ব্যাচেলর মেয়েও আছে এই গ্রুপে। তোকে দেখলেই পটে যাবে।'
'দেখলেই পটে যাবে? মেয়রা কি ইদানীং হনুমান টাইপ পুরুষ পছন্দ করে নাকি?'
'আরে না কথার কথা - তুইতো আর এভাবে যাবিনা। সাফ সুতোর হয়ে যাবি।'
'তা কবে যেতে হবে- আজকেই?'
'ধুর গাধা - আজকে না। এখনো আট-দশ দিন বাকি।'
'তাহলে তো হলো না - আজকে আমি ফ্রি ছিলাম।'
'আমি তোর কোন কথাই শুনবো না। তোকে যেতেই হবে।'
আমি হাল ছেড়ে দেবার ভাব করলাম-
'কি আর করা। তোমাকে তো আর না করতে পারবো না। কিন্তু বিয়ে কি কুয়াকাটাতেই হবে?'
'বিয়ে?'
'হ্যা, বিয়ের বিষয়ে আর দেরী করতে চাইনা। পাগল টাইপের একটা পটে গেলে সাথে সাথে বিয়ে করে ফেলব বিনা খরচে।'
"ধুমধাম হবে বিয়ের চিনি পান, সাথে হবে এন্ড্রুদা'র গান।" - আমি উদাস হয়ে গেলাম।
'এন্ড্রুদা'টা আবার কে?'
'এন্ড্রুদাকে চেন না? বিখ্যাত গায়ক এন্ড্রু কিশোর।'
'উনি যাবেন তোকে কে বলেছে?'
'আমার মনে হল। তুমি খোজ নিয়ে দেখতে পার।'
'অনেক ফালতু কথা বলেছিস আজ। আর একটাও বলবিনা।'
'বললাম তো খালা। উনিও যাচ্ছেন এই ইভেন্টে - তুমি খোজ নিয়ে দেখতে পার।'
'দাড়া আমি এখনি ফোন করে জিজ্ঞেস করছি। কথা ঠিক না হলে তোর কান আজকে টেনে ছিড়ে ফেলব।'
খালা কাউকে ফোন করলেন। আমি গাড়ির সিটে হেলান দিয়ে চোখ বুঝলাম। দিব্য চোখে দেখতে পাচ্ছি - কুয়াকাটায়া বিয়ের অনুষ্ঠান হচ্ছে, গোল গোল চোখের মাদার তেরেসা টাইপের একজন বৌ সেজে বসে আছে। এ্যান্ডু কিশোর গান ধরেছেন -
"তারে একজনমে ভালবেসে ভরবে না মন ভরবে না।
আমার সারা দেহ খেয়ো গো মাটি।
এই চোখ দুটো মাটি খেয়ো না..."
আমি মনে হল গাড়িতে বসে নেই - চলে গেছি কুয়াকাটায়...
খালার মনে হয় কথা শেষ হয়ে এসেছে -
'ও আচ্ছা, তাহলে তো ভালই, আপনি শিওর, টাকাও পে-করে দিয়েছেন, ঠিক আছে মাহমুদ ভাই।'
খালা ফোন রেখে আমার দিকে তাকালেন। মনে হচ্ছে খুব একটা খুশী হতে পারেননি।
আমি হাসলাম। আমার বিশেষ হাসি। খালা মনে হয় আরো গম্ভীর হয়ে গেলেন। মনে হচ্ছে তিনি ব্যাপারটা মেনে নিতে পারছেন না।
এখনি মোক্ষম সময় খালার হাত থেকে সটকে পড়ার। আমি প্রকৃতির কাছে ছেড়ে দিলাম আামার ভাগ্য সম্ভবতঃ এ যাত্রা প্রকৃতিই আমাকে উদ্ধার করবে...
আচমকা ব্রেক কষে গাড়ি দাড়িয়ে গেল। ড্রাইভার ওভারটেক করতে গিয়ে একটা রিক্সার চাকা দুমড়ে-মুচড়ে ফেলেছে। গাড়ির বামদিকে রিক্সাটা মোটামুটি গিট্টুর মত লেগে আছে।
আমি দরজা খুলে দুই লাফে পাশের গলির ভিতর ঢুকে গেলাম...
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ দুপুর ২:২৪
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×