"হেমু ভাই। জুতা ফালায়ে দিলাম।"
"কেন?"
"আপনে খালি পায়ে হাটবেন আর আমি হাটুম জুতা পায়ে - কেমুন দেখায়?"
"ভালো করেছিস।"
"চাইরশ তিরিশ টাকা দিয়া কিনছিলাম।" - উদাস গলায় বলল মোবারক।
"জুতার জন্য খারাপ লাগছে?"
"ঠিক তা না। তয় ওই দিন যার পকেট মাইরা জুতা কিনছিলাম হে মনে হয় খুব কষ্টের মইধ্যে আছিলো। জুতা ফালানোর সময় মনে পইরা গেল বেটার কথা।"
"কিভাবে জেনেছিলি ওর কষ্টের কথা।"
"ওর মানিবেগে একটা চিঠি পাইছিলাম। চিঠি পইরা আমার কান্দন আইছিলো।"
"তাই নাকি?"
"আমি চাইছিলাম ওর মানিবেগ ফিরত দিতে। কিন্তু দিবার পারি নাই। কোন ঠিকানা পাইনাই ওর মানিবেগে।"
"তাহলে ওর পকেট মেরেছিলি কেন?"
"চেহারা দেইখা বুজবার পারিনাই হেমু ভাই। বেটার চেহারায় বদ বদ একটা ভাব আছিলো।"
"এখন কি তোর খারাপ লাগছে লোকটার জন্য?"
"হ। আমি ওর চিঠি আর মানিবেগ রাইখা দিছি। আপনেরে দেখামুনে। চিঠিডা পরলেই বুজবেন কাহিনী।"
"আচ্ছা চিন্তা করিস না। আমার মনে হচ্ছে তোর সাথে আবার ওর দেখা হবে।"
"সত্য কইতাছেন হেমু ভাই। আপনে যখন কইছেন অবশ্যি দেখা পামু। পাইলে হের পাও ধইরা মাফ চামু। পারলে ওর টেকাও ফিরায়ে দিমু।"
"ওর বউএর নাম ফরিদা তাইনা?"
"হায় খোদা আপনে বুঝলেন কেমনে?" কিছুটা চমকে উঠলো মোবারক। পরক্ষনেই সামলে নিল।
"আপনে তো বুঝবেনই। আপনে হইলেন পীর ফকির মানুষ।"
"এটা বুঝতে পীর হওয়া লাগে না মোবারক। তুই ফজলু দারোগাকে ওর বউএর নাম বলেছিলি ফরিদা। সেজন্যই মনে হল। ফরিদা নামটা বোধহয় তোর মাথায় আটকে আছে।"
"হ ভাই। এই জন্যই ইস্টাটিং এ ভুল কইরা ফালাইছি। আর এট্টু চিন্তা ভাবনা কইরা কথা কওন উচিত আছিলো দারোগার লগে।"
"প্রথমবার তো, সেজন্য মাথা ঠান্ডা রাখতে পারোস নাই।"
"তয় দারোগার মাইর খাইয়া উচিত শিক্ষা হইছে আমার। আর কোনদিন আন্দাজে কারো নাম কইতে যামু না। এইডা খুব কঠিন কাম।"
"তাই মনে হয় তোর? আসলে জগতে কোন কিছুই সোজা না আবার কঠিনও না।"
আমি নিজেই এবার উদাস হয়ে গেলাম -
"কিছুই নয়কো কঠিন আবার নয়কো কিছুই সোজা।
বরই আজব এই জগতটা নয়রে সোজা বোঝা।"
"কি বুঝলি?"
"তেমন বুঝলাম না। তয় এইটুকু বুঝলাম হেমু হওন অত সোজা বিষয় না।"
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ দুপুর ২:২০