somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চরম :):);)

১৫ ই ডিসেম্বর, ২০১১ সকাল ১১:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মোবাইলের রিংটোন বেজে উঠল রিসিভ করতেই অপর পাশ থেকে দজ্জালনী দ্য গ্রেট খালাত বোন ফারজানা আক্রমণাত্মক স্টাইলে বলল, ঐ হারামি তুই কিদারে? ঐ হারামি পর্যন্ত বুঝলেও কিদারে শব্দটি বুঝতে না পেরে বললাম, কিদারে মানে কী? প্রশ্ন শুনে অপর পাশে তুমুল হাসির শব্দ তুলে ফারজানা ওর পাশের কাউকে বলল, দেখলি মেরা খালাত ভাইটা ক্যায়া এনালগ চিজ হ্যায়! প্রশ্ন করে কি ভুল করলাম? জিজ্ঞাসা করতে যাব এমন সময় কলিংবেল বেজে উঠল। দরজা খুলে দিতেই আমাকে অবাক করে দিয়ে চিত্কার করে ফারজানা বলল, দেখা তেরেকো কিতনা বড়া সারপ্রাইজ দিয়া। ফারজানার কথায় ওর সঙ্গে আসা বান্ধবী হেসে উঠে বলল, তেরে লিয়ে সিরিয়ালটাতে এমন করে সারপ্রাইজ দেয়ার একটি দৃশ্য আছে। সারপ্রাইজ শব্দটির আগে-পরের শব্দগুলো বোঝা আমার কর্ম না। তাই বোঝার চেষ্টা বাদ দিয়ে অনুমান করে নিলাম, হিন্দি সিরিয়ালের স্টাইলে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আমাকে সারপ্রাইজ দিতেই কল দিয়েছে। ইচ্ছা হলো কইষ্যা একটা লাথি দিয়ে ফারজানাকে দাদাদের দেশে পাঠিয়ে দিতে। এক লাথিতে দাদাদের দেশে পাঠাতে না পারি, এক লাথিতে ফারজানার পা যে ভাঙতে পারব, তাতে কোনো সন্দেহ না থাকলেও ওর বান্ধবীর সামনে লাথি দেয়ার কথাটাও বলতে পারলাম না। বলতে না পারার আফসোস নিয়ে বললাম, আম্মু বাইরে গেছে; তোরা আম্মুর রুমে গিয়ে বস। আম্মু চলে আসবে। আমার হাত থেকে রিমোট কেড়ে নিয়ে ফারজানা বলল, তুই আমাদের জন্য বাইরে থেকে কিছু খাবার নিয়ে আয়।

কিচেনে সবই আছে, নিয়ে খেয়ে নে। আমি একটু পর খেলা দেখব বলতেই কোমরে ওড়না পেঁচিয়ে আমার দিকে অগ্নিদৃষ্টি নিক্ষেপ করে ফারজানা বলল, গুষ্টি কিলাতাহু ফুটবলকি। ম্যায়নে ১৫০ টাকা সিএনজি ভাড়া দ্যাকে আয়া ‘ইয়ে রিসতা কেয়া খেলতা হ্যায়’ দেখতে আর তুই বলছিস খেলা দেখবি? খেলা দেখে কেউ কোনোদিন বড়লোক হতে পারছে? পারছে তোর মতো বয়সে খেলা দেখে কেউ ফুটবলার হতে? পারেনি। খেলা দেইখ্যা টাইম নষ্ট না করে বাইরে ঘুরতে যা, আমাদের সিরিয়াল দেখার সময় ডিস্টার্ব করলে সবাই মিলে ধরে তোকে রশি দিয়ে বেঁধে রাখব। একথা বলতেই ওর বান্ধবী তিন্নি হাঃ হাঃ করে হেসে উঠল।

আমার খেলা দেখা বলা পর্যন্তই দেখা থেকে গেল। ছোট ভাইয়ের বউয়ের সঙ্গে বড় ভাইয়ের প্রেম, বড় ভাইয়ের উপর প্রতিশোধ নিতে ছোট ভাইকে বিয়ে করা থেকে শুরু করে দেবর-ভাবীর পরকীয়া, ভাবী-ননদের ক্যাচাল, বউ-শাশুড়িকে, শাশুড়ি বউকে বাঁশ দেয়ার কূট-কৌশলে ভরা বস্তা পচা হিন্দি সিরিয়াল দেখে কি শিখছে আমাদের নারীরা—এই প্রশ্নটি না করে করা যেতে পারে ক্যাচাল শেখার আর কিছু কি বাকি আছে? আবহমান সহজ-সরল বাংলার নারীদের কী পরিমাণ ক্যাচালবাজ বানিয়ে ফেলছে তা ছোট খালা আর খালাত ভাই মাসুমের বউ লতা ভাবীকে না দেখলে, জানাই হতো না। বছর দুয়েক আগেও লতা ভাবী আর ছোট খালার বউ-শাশুড়ি সম্পর্ক নিয়ে সবাই গর্ব করত। পাশাপাশি বসে হিন্দি সিরিয়াল দেখা বছর খানেক আগের বউ-শাশুড়ি এখন একজন আরেকজনের চরম শত্রু। কিছুদিন আগের ঘটনা। বাথরুমে পা পিছলে পড়ে গিয়ে ছোট খালার পা ভেঙে গেল। খালা এতে বউয়ের ষড়যন্ত্র আবিষ্কার করে ঘোষণা দিলেন, খালাকে মেরে ফেলতেই ভাবী ইচ্ছা করে বাথরুম পিচ্ছিল করে রেখেছে! দাদা বাবুদের ক্যাচালে ভরা হিন্দি সিরিয়ালগুলো আমাদের ড্রয়িংরুম দখল করে নিলেও আমাদের দেশীয় চ্যানেলগুলো দাদাবাবুদের ড্রয়িংরুমে জায়গা পায়নি। দাদাবাবুদের এই দেশের ইলিশে অরুচি না থাকলেও আমাদের দেশের টিভি চ্যানেলগুলোতে দাদাবাবুদের ঠিক তেমন অরুচি, যেমন অরুচি এই দেশের পানি পান করতে মনমোহন বাবুর! অথচ ফেনী নদী থেকে ত্রিপুরার মানুষের জন্য পানি নেয়ার রুচি ঠিকই আছে!

১৫০ টাকা সিএনজি ভাড়া দিয়ে সিরিয়াল দেখতে যে দুই ললনা আসতে পারে, সেই দুই ধিঙ্গির মেয়ের পক্ষে হিন্দি সিরিয়ালের স্টাইলে আমাকে বেঁধে রাখাটাও বিচিত্র কিছু নয়। তাই বিপদের মধ্যে বসে না থেকে বাইরে বেরিয়ে এলাম। মোড়ের দোকানের সামনে আসতেই বন্ধু রাসেলকে আসতে দেখে মনটা খুশি হয়ে উঠল। কাছাকাছি আসতেই রাশেদ বলল, দোস্ত খেলা শুরু হতে আর ১০ মিনিট, তুই যাইতাছস কই? আমি তো তোদের বাসায় যাইতাছি খেলা দেখব বলে।
—আমি তো তোরে দেখে ভাবলাম, তোর বাসায় যাব খেলা দেখতে।
—তোর বাসার টিভি কী হয়েছে? ফারজানা আর ওর বান্ধবী এসেছে। রিমোট কেড়ে নিয়ে আমাকে বের করে দিয়েছে।
—আর কইস না দোস্ত। খেলা দেখব বলে তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরলাম। রিমোট হাতে নিতেই তোর ভাবী হুমকি দিয়েছে ‘দম মারো দম’ দেখা শেষ হওয়ার আগে রিমোট চাইলে রাতের রান্না হবে না। রিমোটের বাটনে চাপ দিলে আমার পেটে টান দেবে। তাই রিমোট দিয়ে চলে আসছি। রিমোটের দখল যাক, তবুও বিবি খুশি থাক। সারাদিন খাইট্যা খুইট্যা বাসায় আইসা একটা দিনও রিমোটের দখল নিতে পারি না। মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা-এর মতো আসতাছে হিন্দি সিনেমা। তোর ভাবী বলে রাখছে, প্রতি শুক্রবার হলে গিয়ে ৬টা থেকে ৯টা হিন্দি সিনেমা দেখাতে হবে। সপ্তাহে একদিন সব দোস্ত মিলে আড্ডা দিতাম, সেটার উপর হিন্দি সিনেমার গজব পড়ছে। বিবিকে কাভি আল বিদা না ক্যাহানা না দেখাতে গিয়ে আড্ডাকেই আলবিদা বলতে হবে— বলে রাশেদ করুণ দৃষ্টিতে তাকাল।

রাশেদের করুণ মুখের দিকে চেয়ে বললাম, দোস্ত খেলা দেখে কোনো লাভ নাই, উল্টা সময়ের অপচয়, চোখের ক্ষতি, আজাইড়া টেনশন। এর চাইতে চল দুই দোস্ত ঢাকা শহর চষে বেড়াই। রাত ১১টা পর্যন্ত কখনও হেঁটে কখনও রিকশায় চড়ে বাউণ্ডুলে আড্ডা দিয়ে বাসায় এসে দেখি ফারজানারা এখনও সিরিয়াল দেখছে। কিছু না বলে ফ্রেশ হতে বাথরুমে ঢুকে দেখি পানি নেই! নদী-সাগরের দেশে পানি সঙ্কট! মমতার মমতায় (!) ন্যায্য হিস্যা অধরাই রয়ে গেল আর বীর বাঙালি তিস্তার চুক্তি না হওয়ায় ট্রানজিট না দেয়ায় আনন্দে ফেটে পড়ছে! সত্যি সেলুকাস! কি বিচিত্র এই জাতির আনন্দ পাওয়া!! এই জাতি বুঝল না তিস্তার হিস্যা আমাদের ন্যায্য হিস্যা!

http://rommofun.com/696/
৭টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=নীল আকাশের প্রান্ত ছুঁয়ে-৭ (আকাশ ভালোবেসে)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:১৯

০১।



=আকাশের মন খারাপ আজ, অথচ ফুলেরা হাসে=
আকাশের মন খারাপ, মেঘ কাজল চোখ তার,
কেঁদে দিলেই লেপ্টে যাবে চোখের কাজল,
আকাশের বুকে বিষাদের ছাউনি,
ধ্বস নামলেই ডুবে যাবে মাটি!
================================================
অনেক দিন পর আকাশের ছবি নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগ লিখেছি: কথাটার পরে ভাসছে ১১ বছর ১১ মাস... কথাটা

লিখেছেন আবু ছােলহ, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:১৮

ব্লগ লিখেছি: কথাটার পরে ভাসছে ১১ বছর ১১ মাস... কথাটা

গুগল থেকে নেয়া ছবি।

সামুতে মাল্টি নিক নিয়ে অনেকেই কথা বলেন। অনেকের কাছে মাল্টি যন্ত্রণারও কারণ। শুধু যন্ত্রণা নয়, নরক যন্ত্রণাও... ...বাকিটুকু পড়ুন

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সমস্যা মিয়ার সমস্যা

লিখেছেন রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ), ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

সমস্যা মিয়ার সিঙ্গারা সমুচার দোকানে প্রতিদিন আমরা এসে জমায়েত হই, যখন বিকালের বিষণ্ন রোদ গড়িয়ে গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে, সন্ধ্যা পেরিয়ে আকাশের রঙিন আলোর আভা মিলিয়ে যেতে শুরু করে। সন্ধ্যা সাড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই মুহূর্তে তারেক জিয়ার দরকার নিজেকে আরও উন্মুক্ত করে দেওয়া।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৬ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৬


তারেক জিয়া ও বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে আমি ব্লগে অনেকবারই পোস্ট দিয়েছি এবং বিএনপি'র নেতৃত্ব সংকটের কথা খুব স্পষ্টভাবে দেখিয়েছি ও বলেছি। এটার জন্য বিএনপিকে সমর্থন করে কিংবা বিএনপি'র প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×