somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কিছু ধনাঢ্য হিন্দু ব্যক্তির প্রতিপত্তি প্রদর্শনের ফলস্বরুপ দূর্গাপূজা ভুমিষ্ট হয়।

১৬ ই অক্টোবর, ২০১০ সকাল ১১:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



বেদ, রামায়ন সহ হিন্দুদের মূল ধর্মীয় বইয়ে দূর্গাপূজার অস্তিত্ত্ব পাওয়া যায়না। কিছু ধনাঢ্য হিন্দু ব্যক্তির প্রতিপত্তি প্রদর্শনের ফলস্বরুপ দূর্গাপূজা ভুমিষ্ট হয়।
নিম্নে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:

দুর্গাপূজা বেদসম্মত নয়। বৈদিক পূজার ছাপ দেয়ার জন্য বেদের দেবী সূক্তটির ব্যবহার করা হয় কিন্তু বেদের দেবীসূক্তে যে হৈমবতী উমার উল্লেখ আছে তার সঙ্গে দুর্গার কোনো সম্পর্ক নেই।
বাল্মীকির রামায়ন যে সময়কার রচনা মার্কণ্ডেয় পুরাণ সে সময় জন্মায়নি, কথিত দেবী দুর্গার আখ্যায়িকাও তখনও আসেনি।
মার্কণ্ডেয় পুরাণ যুগের ভিত্তিতে ‘শ্রীশ্রীচণ্ডী’ লিখিত হয়েছে। পৌরাণিক শাক্তাচারের শক্তির আদিমতম অবস্থাকে সংস্কৃতিতে বলা হয় আদ্যাশক্তি। এই আদ্যাশক্তির চণ্ডরূপই চণ্ড শক্তি বা চণ্ডী। তেরশ বছর আগের মার্কণ্ডেয় পুরাণ যার সংক্ষিপ্ত নাম চণ্ডী যাতে দুর্গার কথা রয়েছে, সুরথ রাজার গল্প রয়েছে, তাতেও রামের কথা লেখা নেই, আর রাম যে দুর্গার পূজা করেছিলো সে গল্পও নেই।
মোঘল যুগের কবি তুলসী দাসের ‘রামচিতমানস্থ। সেখানেও রাম কর্তৃক দুর্গাপূজার কোন উল্লেখ নেই। তাহলে দুর্গাপূজার প্রচলন হলো কিভাবে?
পাঠান যুগের গোড়ার দিকে বরেন্দ্রভূমিতে- মানে, উত্তর বাংলার রাজশাহী জেলার তাহেরপুরে কংস নারায়ণ রায় নামে একজন রাজা ছিলো। গৌড় রাজ্যের শাসকদের জায়গীরদার তাহের খাঁর নামানুসারে ‘তাহেরপুর’ নামকরণ হয়েছিলো। এর পূর্ব নাম ছিলো সাপরুল। তাহের খাঁকে পরাজিত করে কংস নারায়ণ তাহেরপুর দখল করে এবং লুটপাট চালিয়ে অকল্পনীয় ধন-সম্পদ হস্তগত করে। অতঃপর নিজের শক্তি ও মহিমা সর্বজনে প্রকাশ করতে অশ্বমেধ যজ্ঞ করার সংকল্প করে। সে তার সময়ের পণ্ডিতদের ডেকে বললো, ‘আমি রাজসূয় কিংবা অশ্বমেধ যজ্ঞ করতে চাই। মানুষে জানুক আমার ধন ঐশ্বর্য কি রকম আছে, আর দু’হাতে ফেলে ছড়িয়ে দান করবো।’ শুনে পণ্ডিতেরা বলেছিলো, ‘এই কলিযুগে রাজসূয় বা অশ্বমেধ যজ্ঞ হয় না, তাই মার্কণ্ডেয় পুরাণে যে দুর্গাপূজা বা দুর্গোৎসবের কথা আছে, তাতেও খুব খরচ করা যায়, জাঁকজমক দেখানো যায়, নিজের ঐশ্বর্য দেখানো যায়। আপনি মার্কণ্ডেয় পুরাণ মতে এই দুর্গোৎসব করুন।’ তখন রাজা কংস নারায়ণ রায় তৎকালীন সাতলক্ষ স্বর্ণমুদ্রা (বর্তমান বাজার মূল্যে ছয়শ’ কোটি টাকা প্রায়) ব্যয় করে প্রথম দুর্গাপূজা করে। তার দেখাদেখি একটাকিয়ার (একটাকিয়া সম্ভবত রংপুর জেলায়) রাজা জগৎবল্লভ সাড়ে আটলক্ষ স্বর্ণমুদ্রা ব্যয় করে আরো জাঁকজমক করে দুর্গাপূজা করলো। তাদের দেখাদখি অন্যান্য জমিদাররা ভাবলো, ‘আমরাইবা কম কিসে, আমরাও টাকার খেলা দেখাতে পারি।’ তারাও জাঁকজমক করে দুর্গাপূজা শুরু করলো। প্রতি হিন্দু জমিদার বাড়িতে শুরু হয়ে গেলো দুর্গাপূজা
সেই সময়ের হুগলী জেলার বলাগড় থানার গুপ্তিপাড়ার (জায়গাটার আসল নাম গুপ্তবৃন্দাবন) বারোজন বন্ধু ভাবলো যে আমরা এককভাবে পারবো না, কিন্তু বারোজন মিলে তো পূজার আয়োজন করতে পারি। উর্দুভাষায় বন্ধুকে ইয়ার বলে, তাই বারোজন ইয়ারে মিলে যে দুর্গাপূজা করলো সেটা হলো বারো ইয়ারী পূজা বা বারোয়ারী পূজা। আর এই বারোয়ারী পূজায় যেহেতু অন্ত্যজ লোকদের অঞ্জলি দেবার অধিকার থাকে না, তাই সবার অধিকার যাতে থাকে সেজন্য আধুনিককালে বারোয়ারী পূজা বিবর্তিত হয়ে তাদের ভাষায় হলো সার্বজনীন পূজা।
ঊনিশ শতক থেকে আস্তে আস্তে কলকাতার পূজার রেশ ছড়িয়ে পড়েছিলো বাংলাদেশে এবং কলকাতায় অবস্থানরত অনুপস্থিত ভূস্বামী ও ধনাঢ্যরা কলকাতায় আমোদ ফুর্তি তামাসার একটি অংশ আবার শুরু করতে চাইলো বাংলাদেশের নিজ নিজ অঞ্চলে। এ ছাড়া মধ্যবিত্ত, ধনাঢ্য পেশাজীবীরা যারা প্রধানত থাকতো কলকাতা বা ঢাকায় তারাও আসতো পূজার ছুটিতে গ্রামে। মূল উদ্দেশ্য সবার ছিলো একই, ঐশ্বর্য (আধিপত্য) ও প্রজাদের প্রতি ক্ষমতা প্রদর্শন।
বর্ণহিন্দু ছাড়া তথাকথিত নিম্নবর্ণের হিন্দুদের মধ্যে যারা ছিলো বিত্তশালী তারাও দুর্গাপূজা উপলক্ষে নিজেদের ‘সম্মান’ বাড়ানোর চেষ্টা করতো। তারা অবিকল অনুকরণের চেষ্টা করতো বর্ণ হিন্দুদের, যা বর্ণহিন্দু বিশেষ করে ব্রাহ্মণেরা মোটেই পছন্দ করতো না। এমনকি নিম্নবর্ণের বাড়িতে প্রতিষ্ঠিত প্রতিমা প্রণামও ছিলো নিষিদ্ধ।
বাঙালি হিন্দুর দুর্গাপূজা শুরু হয়েছে ষোড়শ শতাব্দী থেকে। এ ঐতিহ্য একান্তভাবেই বাঙালি হিন্দুর। উপমহাদেশের অন্য অঞ্চলের হিন্দুদের মধ্যে শারদীয় দুর্গাপূজার প্রচলন নেই।
এরপর ঊনবিংশ শতাব্দীতে কলকাতা শহরকে কেন্দ্র করে যে নব্যধনীদের উদ্ভব ঘটে, তারা দুর্গাপূজার নামে অশ্লীলতাকে আরো বিস্তার করে। অশ্লীল কদর্য নৃত্যগীত, মদ্যপান ও বেশ্যাগমনকে তাদের দুর্গাপূজার অপরিহার্য অনুষঙ্গ তারা করে নেয়।
দুর্গাপূজা প্রবল উৎসবে পরিণত হয়েছিলো প্রথমে কলকাতায়। শুধু নিছক উৎসবের জন্য নয়, প্রভু ইংরেজদের মনোরঞ্জন ও যোগাযোগের জন্যও উচ্চবর্গ ও মধ্যবিত্ত ব্যবহার করতো দুর্গাপূজা। এর প্রচুর বিবরণ ছড়িয়ে আছে সমসাময়িক বিভিন্ন পত্রপত্রিকায়, নকশা, উপন্যাসে। এখানে একটি পুস্তিকার সামান্য উদ্ধৃতি দেয়া হলো, ‘...মহামায়ার শুভ আগমনে যে কেবল হিন্দুরা আহ্লাদে ফুটিফাটা হলো তা নয়, ইংরেজ ফিরিঙ্গিরাও এ সময়ে আমোদ করতে ছাড়েন না। সম্বতসরের মধ্যে বঙ্গদেশে এই একটি বিশেষ সময়।...
দুর্গাপূজা নিয়ে বর্তমানে যে মচ্ছব হচ্ছে তা অতীতে যখন কম ছিলো তখন থেকেই খোদ হিন্দুদের মধ্যেই অনেকে সমালোচনা করে আসছে। উদাহরণত, ‘...পূর্বের দুর্গোৎসবে আর এখনকার দুর্গোৎসবে অনেক প্রভেদ হইয়া দাঁড়াইয়াছে। পূর্বের পূজা মানসিক ছিলো, আর এখনকার পূজা তামসিক হইয়া দাঁড়াইয়াছে। নাচ, তামাসা লইয়া এখন লোকের পূজা ...।’
ষোড়শ শতক থেকে ঊনিশ শতক পর্যন্ত ধনিকরা দুর্গাপূজাকে তাদের মতো করে দুর্গোৎসবে রূপান্তরিত করতে চেয়েছে। তাতে তাদের উৎসবের ক্রমাগত অশ্লীলতার বিস্তার ঘটেছে। পূজার সময় ‘ধনীর দুয়ারে কাঙালিনী মেয়েরা চোখের পানি ফেলেছে, আর মুষ্টিমেয় ধনীর দুলাল-দুলালীরা নানা ধরনের পৈশাচিক আনন্দে মেতেছে।
ধনিকদের পারিবারিক দুর্গাপূজা অনুষ্ঠান উপলক্ষে ঊনিশ শতকের কলকাতায় যেমনটি ঘটতো, এখন তার চেয়ে হাজারগুণ বেশি দুর্গাপূজার নামে অশ্লীল ও বিকৃত দুর্গোৎসবে পরিণত হতে দেখে অনেক হিন্দু ধর্মবিশ্বাসী মানুষও বেদনায় ভারাক্রান্ত হয়ে উঠে।
অতীতে ইংরেজদের আকৃষ্ট করতে হিন্দু জমিদাররা যেমন দুর্গাপূজায় অবাধ অশ্লীলতার ব্যবস্থা করতো বর্তমানে মুসলমানদেরকে দুর্গাপূজায় আকৃষ্ট করতে অতীতের চেয়ে বহুগুণ বেশি অশ্লীলতার অবাধ সুযোগ করে দিচ্ছে।

এবার পাঠকগন কি বলবেন?
ভাবুন তো!

৭২টি মন্তব্য ১৬টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×