খাঁ খাঁ রৌদ্র
গাছের পাতাটাও নড়ছে না
পৃথিবী নিশ্চুপ অপেক্ষায়
একটা নাটক মঞ্চস্থ হবে – সবাই প্রস্তুত
নদীর পানি , তার স্রোতকে বেঁধে রেখেছে
আকাশের মেঘ খেলা বন্ধ করে তাকিয়ে ,
সবাই তাকিয়ে , নিথর অপেক্ষায়।
একটা উত্থিত , উদ্ধত রাইফেল
টগবগ করে ফুটতে থাকা
রক্তমাংসের পিছমোড়া কিশোর দাঁড়িয়ে।
কটকটে রঙের হলুদ দানবীয় উর্দি
সবুজের বুকে বড় বেমানান , বড় অপাংক্তেয়,
একটা গুলি চির অবিনাশী , সর্বগ্রাসী মৃত্যুক্ষুধা নিয়ে অপেক্ষায়,
কখন সে ছুটে যাবে – এফোঁড় ওফোঁড় করবে ।
মাথার প্রতিটা শিরা দপদপ করছে ,
সব মনে – পড়ছে , সব।
সাহানা – আর সেই নির্ঘুম রজনী
কুতকুতের ঢেলা নিয়ে সারাগ্রাম অস্থির দৌড়াদৌড়ি
দোলনার পিছে ... পুকুর পারে – কাঠফাটা রৌদ্রে গাছের উপরে –
আরো কত কি...
বুবুর জলপাই , মায়ের কত আনা যে চুরি করেছি
বাবার হুঁকায় কত লুকানো টান ,
রফিকের সাথে নতুন শেখা- বলাকার ধোঁয়ায় কত যে কেশেছি
কোথায় এখন তারা ...
দেশমাতৃকার ঋণ কি শোধ হতে চলেছে
শ্বাপদের নখর , ট্রিগার টেনে ধরেছে
ছুটে চলেছে – সর্বগ্রাসী ক্ষুধা নিয়ে – ছুটে চলেছে ,
ঠিক হৃদপিণ্ডের মাঝে ----- একটা ঝাঁকুনি।
চিনচিনে ব্যথা – সব পরিষ্কার।
ঐ-তো দূরের পাখিটা উড়ছে – দিগ্বিদিক কিছুই না বুঝে
অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে , পৃথিবী বিস্ময়ে
স্রস্টা কিভাবে সইলেন এই নিষ্ঠুরতা!
আবার একটা ঝাঁকুনি
সব স্থির , শব্দহীন হতে চলেছে
হাহাকার করে ছুটে ফিরছে – বুলেটের প্রতিধ্বনি
একোণ – থেকে ওকোণে – আর্জি নিয়ে,
কিন্তু কে শুনবে , কে বিচার করবে ।
একটা স্বপ্নের অবসান – কিংবা উত্থান ।
নদীর পানিতে ছুফ ছুফ শব্দ ,
চির-দুখিনী বাংলা মা আবার তার চিরদুখী সন্তানকে বুকে টেনে নিচ্ছে
চির-দুখিনীর তেরশো কান্নাধারার – যেকোনো একটিতে
আগলে নিচ্ছে – পরম মমতায় – পরম স্নেহে , একটুও যেন ব্যথা না পায়।
ছোট্ট একটা ঢেউ ,
লাল-রঙা পানি আরও লাল হল – তারপর ,
---- তারপর , আবার সব আগের মত।
দূরে হয়ত আরেকটি নাটক মঞ্চস্থ হচ্ছে।
পৃথিবী নীরব হয়ে অপেক্ষায় আছে – কেউ শব্দ করো না ...
_____________ *** __________
####একটা দশ পনেরো বছরের কিশোর যখন , দেশের জন্যে জীবন বিপন্ন করে ছুটে চলেছে – শত্রুর হাতে ধরা পড়ে – উত্থিত রাইফেলের সামনে গলা ফাটিয়ে স্লোগান দিয়েছে – কীজন্যে?
দেশকে ভালবেসে , ধর্ষিতা মা’দের পতাকা দিয়ে ঢেকে দেবার জন্যে , দেশের মানুষ দু’বেলা পেট ভরে খেয়ে – হাসিমুখে চলবে বলে... – অকাতরে কবিতার কিশোরটি যে কিনা প্রথম বলাকা ব্রান্ডের সিগারেটে টান দিতে শিখেছে – আর কিছু নয় – সে রাইফেল হাতে কচুরিপানায় মাথা ডুবিয়ে শত্রুকে শেষ করতে শিখেছে...শুধু মাত্র – একটা স্বপ্ন নিয়ে।আমি জানি স্রস্টা তাকে অনেক অনেক সুখে রেখেছে – কিন্তু সে এখনো কাঁদে – তার স্বপ্নকে এভাবে ভাঙতে – দেখে ।চুরমার হয়ে যেতে দেখে।লাখ লাখ মানুষ এখনো না খেয়ে ঘুমাতে দেখে।ক্ষমতার দণ্ডে – পশু হয়ে যেতেও ভ্রুক্ষেপ না করা দেখে।তাকে যারা মেরেছে – তারাই রীতিমত পতাকা নিয়ে ঘুরে বেড়াতে দেখে।সে এখন কাঁদে – বৃষ্টি হয়ে যা ঝরে পড়ে আমাদের এই প্রাঙ্গণে।
তার সে স্লোগান এখনো – আকাশ বাতাস কাঁপিয়ে ছুটে বেড়ায়।একটু কান পাতলেই শোনা যায়।কিন্তু , কে শোনে।
শুনলে কি আজকে – রাজপথে নেমে যুদ্ধে লিপ্ত হতে পারতো...
ঘাতকের পক্ষ নিয়ে কথা বলতে পারতো...
ক্ষমতার মোহে অন্ধ হয়ে যেতে পারতো...
দেশকে বিকিয়ে দিতে পারতো ...
উৎসর্গঃ যারা এখন কান পাতলে সেই কিশোরের বুক ভেদ করা বুলেটের প্রতিধ্বনি শুনতে পান – এখনো সেই কিশোরের স্বপ্নকে অনুভব করেন।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৩ রাত ১১:৫৭