somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

লেখাটা তোমাদের জন্যে - এসএসসি রেজাল্টের আশায় বুক ঢিপঢিপ করা ছেলে - মেয়েদের জন্যে।

৩০ শে মে, ২০১৫ রাত ২:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


প্রায় দুশো বছর আগের ঘটনা। ছেলেটার মা না মারা যায়। যেই বাবা , মার সাথে একসাথে ছোটবেলায় আদর করে করে রূপকথা শোনাতো ছেলেকে , সেই বাবাই কেমন যে বদলে গেলো। আরেক বিয়ে করে বসলো। ১৫ বছরের ছেলেটাকে সহ্যই করতে পারে না।

ছেলেটা কোথায় যাবে। যাওয়ার জায়গা কোথায় ? এই ঘরেই তো থাকতে হবে। বন্ধু-বান্ধব , ওটা ভুয়া কথা। শেষমেশ বাধ্য হয়েই বই পড়া শুরু করলো , সারাদিন পড়েতো পড়েই , এই সাহিত্যিক ছেড়ে ঐ সাহিত্যিক। এভাবেই সারাদিন চলতেই থাকলো , নিজের ভেতরে একটা বলয় তৈরি করে নিলো। বইয়ের চরিত্র , উপন্যাস , কাহিনীর ভেতরে এমনই মজে গেলো যে - বাবা গালি দিলে এক কান দিয়ে ঢুকে অন্যদিকে বের হয়ে যাওয়ার বদলে কথা মাথার উপর দিয়ে চলে যেতে থাকলো। ড্রাগস যারা নেয় তাদের এমন হয় , দুনিয়ার সব ভুলে গিয়ে ড্রাগে বুঁদ হয়ে থাকার চেষ্টা করে। জীবনটাকে ড্রাগ দিয়ে ভুলিয়ে দিতে চায়। মানুষগুলোর মাথায় ঐ ছেলেটার মতোও বুদ্ধি নেই।

(এখানে একটু নিজের কথা বলি , স্কুল-কলেজ জীবনে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের সদস্য হয়ে সাড়ে সাত বছর ধরে , নিজেও ঐ বছরগুলোতে অন্তত হাজারটা বই পড়েছি। কেউ জানে না , এটা আমি সম্মোহিতের মত পড়তাম ড্রাগ ধরে নিয়েই। ঐসব চিরায়ত , ফিরায়ত , জীবন গড়া এইসব কিচ্ছু না। শুধু , পড়তাম , কিছুক্ষণের জন্যে ভুলে যেতে। ফলাফল হিসেবে অবশ্য কিছুই পাইনি - বাজে একাডেমিক রেজাল্ট , সারাদিন গালাগাল , একগাদা উপরি অপমান এইসবই। শেষমেশ , কিছুই হতে পারিনি জীবনে , উল্লেখযোগ্য কিছু হওয়ার সম্ভাবনাও খুব কম। ভাগ্য খুব ভাল থাকলে , কর্পোরেট ফার্মের পেটমোটা মুরগী হতে পারি। অবশ্য এসবই মেনে নিয়েছি , কারণ ড্রাগ নিলে এইটুকুন সাইড এফ্যেক্ট তো মেনে নিতেই হবে। )

মানুষ সুযোগ পেলেই নিজের কথা বলে। আমিও বলা শুরু করে দিয়েছিলাম। যাক , ছেলেটার কথায় ফিরে আসি। ছেলেটা , বড় হল। এতো বড় হল যে , ছেলে তুমি বললে রাগ করবে , আপনি বলতে হবে। বিপ্লবী আন্দোলনের সাথে জড়িয়ে গেলো ছেলেটা। অভিযোগ আনা হল - এই ছেলে রাশিয়ার রাজনীতি নিয়ে সমালোচনা করেছে। দস্তয়েভস্কি অস্বীকার করলো। কিন্তু রাশিয়ার জার বলে কথা , ফায়ারিং স্কোয়াডে মৃত্যুদণ্ডের রায় হয়ে গেলো। । শান্ত এক সকাল বেলা মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত সবাইকে - ফায়ারিং স্কোয়াডে এনে হাজির করা হল। নাটকীয় ঘটনা , মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ার শেষমুহুর্তে জারের চিঠি এলো। মৃত্যুদণ্ড হবে না , এদের নির্বাসন দাও। সাইবেরিয়ায় সশ্রম নির্বাসন। আট আটটা বছর খসে গেলো সাইবেরিয়াতে গিয়ে। এই আট আটটা বছর কেটেছে , শীতে হাত , পা ফাটা রক্তে রক্তাক্ত হয়ে , না খেয়ে , হাড়ভাঙ্গা খাটুনি করে। এই বন্দি ছিল , টপ লিস্টেড। তাই , এই আট আটটা বছর হাতে পায়ে শিকল পরেই কেটেছিলো।

বইপত্র পড়ার সুযোগ ছিলো না। কিন্তু রক্ত কি আর মিথ্যে বলে। নির্বাসন থেকে বেরিয়েই আবার একগাদা সাহিত্যের , দর্শনের বই জোগাড় করে ফেললেন। কিন্তু তিনি তখন এক ভিন্ন মানুষ - ধার্মিক একজন মানুষ। পরে , ধীরে ধীরে লিখলেন , তার ক্লাসিক উপন্যাসগুলো। তার নাম কি বলার দরকার আছে - বলেই ফেলি , ফিওদর দস্তয়েভস্কি।

উনাকে হঠাৎ স্মরণ হল কেন , এটা যদি বলতেই হয় , তাহলে বলি - উনার "জুয়াড়ি" উপন্যাসটা কিছুদিন আগে পড়ছিলাম। প্রায় এক বৈঠকেই শেষ করলাম। যদিও বইয়ের ভূমিকায় লিখা ছিল , এক বৈঠকেই পড়ার মত বই এটা। বিশ্বাস করি নি , পড়তে গিয়ে বাধ্য হলাম।

জুয়া খেলে সর্বস্বান্ত একজন যুবকের গল্প বলা হচ্ছিল , উপন্যাসে। সত্যি কথা বলতে কি , দস্তয়েভস্কি নিজেই জুয়া খেলে ফতুর হয়ে , টাকা যোগানোর জন্যে মাত্র কয়েক সপ্তাহে উপন্যাসটি লিখে শেষ করেন। সম্ভবত , কম সময়ে লেখা একমাত্র সার্থক ক্লাসিক পৃথিবীর ইতিহাসে এই একটিই।



উপন্যাসের একটা উক্তি আমার খুব মনে ধরেছিলো , যেটা বলার জন্যেই এতো কিছু বলা , কথাটা প্রায় এরকম - "মানুষ জীবনের যেকোন পর্যায়ে থেকে , মর্যাদার জন্যে লড়তে পারে।"

মানুষটা লড়ে গেছে। সব ধ্বংস হবার পরও লড়ে গিয়েছে। শুধু মর্যাদার জন্যে ... শেষমেষ পেয়েছেও - সেই নির্বাসনে থাকা তুচ্ছতম কয়েদির জন্যে আজকে দুশো বছর পরও মাথা নত করে আছি।


( যারা বুদ্ধিমান ছেলে-মেয়ে , তারা বুঝার কথা কি বলেছিলাম। কিন্তু ভুলেই গিয়েছিলাম , এত্ত প্যাঁচানো অনুপ্রেরণার লেখা ছেলে মেয়েদের এই মুহূর্তে মাথায় ঢুকার কথা না। লেখাটা তোমাদের জন্যে - এসএসসি রেজাল্টের আশায় বুক ঢিপঢিপ করা ছেলে মেয়েদের জন্যে। আমার সমস্যাটা পুরাতন - কথাকে সোজাসুজি বলতে পারি না , একটু প্যাঁচিয়েই বলি। কিছু মনে করো না। অবশ্য , একটা উদ্দেশ্যও আছে। প্যাঁচিয়ে লেখার প্যাঁচ যখন উদ্ধার করবে , তখন কথা অনেকদিন মনে থাকবে। সোজাসুজি কথা মনে থাকে না। এই যাহ , আমিও তো সোজাসুজিই সব প্যাঁচ বলে দিলাম। এখন কি হবে ! :P )
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে মে, ২০১৫ রাত ৩:০৯
৬টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=হিংসা যে পুষো মনে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৫৮


হাদী হাদী করে সবাই- ভালোবাসে হাদীরে,
হিংসায় পুড়ো - কোন গাধা গাধিরে,
জ্বলে পুড়ে ছাই হও, বল হাদী কেডা রে,
হাদী ছিল যোদ্ধা, সাহসী বেডা রে।

কত কও বদনাম, হাদী নাকি জঙ্গি,
ভেংচিয়ে রাগ মুখে,... ...বাকিটুকু পড়ুন

গণমাধ্যম আক্রমণ: হাটে হাঁড়ি ভেঙে দিলেন নূরুল কবীর ও নাহিদ ইসলাম !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:০৫


জুলাই গণঅভ্যুত্থানের রক্তস্নাত পথ পেরিয়ে আমরা যে নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলাম, সাম্প্রতিক মব ভায়োলেন্স এবং গণমাধ্যমের ওপর আক্রমণ সেই স্বপ্নকে এক গভীর সংকটের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। নিউ এজ... ...বাকিটুকু পড়ুন

রিকশাওয়ালাদের দেশে রাজনীতি

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৪৯

রিকশাওয়ালাদের দেশে রাজনীতি

সবাই যখন ওসমান হাদিকে নিয়ে রিকশাওয়ালাদের মহাকাব্য শেয়ার করছে, তখন ভাবলাম—আমার অভিজ্ঞতাটাও দলিল হিসেবে রেখে যাই। ভবিষ্যতে কেউ যদি জানতে চায়, এই দেশটা কীভাবে চলে—তখন কাজে লাগবে।

রিকশায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিএনপিকেই নির্ধারণ করতে হবে তারা কোন পথে হাটবে?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:০৫




অতি সাম্প্রতিক সময়ে তারেক রহমানের বক্তব্য ও বিএনপির অন্যান্য নেতাদের বক্তব্যের মধ্যে ইদানীং আওয়ামীসুরের অনুরণন পরিলক্ষিত হচ্ছে। বিএনপি এখন জামাতের মধ্যে ৭১ এর অপকর্ম খুঁজে পাচ্ছে! বিএনপি যখন জোট... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় আগ্রাসনবিরোধী বিপ্লবীর মৃত্যু নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৩৭



শরিফ ওসমান হাদি। তার হাদির অবশ্য মৃত্যুভয় ছিল না। তিনি বিভিন্ন সভা-সমাবেশ, আলোচনা ও সাক্ষাৎকারে বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনি অনেকবার তার অস্বাভাবিক মৃত্যুর কথা বলেছেন। আওয়ামী ফ্যাসিবাদ ও ভারতবিরোধী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×