
জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে আমার নিজস্ব পর্যবেক্ষণ একজন জানতে চেয়েছেন ইনবক্সে। মোটাদাগে এই ঘোষণাপত্র নিয়ে আমার আগ্রহ কম। কারণ যেকোনো ফৌজদারি অপরাধের সাংবিধানিক দায়মুক্তি বা ইনডেমনিটি দেয়ার আয়োজন আমাকে আকৃষ্ট করে না। এটাও ঠিক একই কারণে করেনি। তারপরেও আগ্রহী ফেসবুক বন্ধুর উদ্দেশে কয়েকটি পর্যবেক্ষণ-
* এই ঘোষণাপত্রে জুলাই-আগস্টে আওয়ামী লীগবিরোধী শক্তির সব কর্মকাণ্ডকে রাজনৈতিক ও আইনি দুই দিক থেকে 'যুক্তিসংগত, বৈধ ও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত' বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ফলে এটা নির্বাচন-পরবর্তী সংসদের অনুমোদন সাপেক্ষে পরিবর্তিত সংবিধানে তফসিলভুক্ত হলে সব ঘটনাই দায়মুক্তি বা ইনডেমনিটি পাবে। এসব কর্মকাণ্ডের মধ্যে গুরুতর ফৌজদারি অপরাধ, যেমন হ*ত্যার ঘটনারও বিচার চাওয়া বা করা যাবে না।
সরকারি হিসাবে জুলাই-আগস্টে ৪৪ পুলিশকে হ*ত্যা করা হয়েছে। তবে জুলাই ঘোষণাপত্রের দাবি অনুযায়ী এই সব হ*ত্যাই 'যুক্তিসংগত, বৈধ ও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত'। এমনকি জাতিসংঘ রিপোর্টের ৬৩ পৃষ্ঠার ২২০ নম্বর পয়েন্টে যে ছাত্রলীগ কর্মীর ধর্ষণের শিকার হওয়ার তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে, সেটিও 'যুক্তিসংগত, বৈধ ও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত' হিসেবে আমাদের মেনে নিতে হবে। ফৌজদারি অপরাধ কখনো তামাদি হয় না বলা হলেও এগুলোর কোনো বিচার বাংলাদেশের কোনো আদালত বা আইনে চাওয়া যাবে না। আমাদের মেনে নিতে হবে 'দেশের প্রয়োজনেই' ওই পুলিশদের হত্যা করা 'যুক্তসঙ্গত ও বৈধ' ছিল (আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের কথা নাইবা তুললাম), এমনকি ওই ছাত্রলীগ কর্মীকে ধর্ষণ করাটিও 'অপরিহার্য এবং বৈধ' ছিল!
* ঘোষণাপত্রের ১৭ নম্বরে সামরিক বাহিনীকে দায়মুক্তি দেয়া হয়েছে। ফলে একমাত্র আওয়ামী লীগ এবং পুলিশের মতো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযোগের বিচার করা যাবে, সামরিক বাহিনীর কাউকে নয়।
* ঘোষণাপত্রে মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে গণতান্ত্রিক অন্য কোনো আন্দোলনে আওয়ামী লীগের ভূমিকার কোনো উল্লেখ নেই। এই দলটি কেবল তাদের সরকার পরিচালনার সময়কালে হঠাৎ 'আকাশ থেকে হাজির হয়েছিল এবং প্রতিবারই ফ্যাসিবাদ কায়েম করেছিল।' বাকি সময়ে দেশে গণতন্ত্র ও সাম্যবাদের নহর বয়ে গেছে।
* ইন্টারেস্টিংলি জুলাই ঘোষণাপত্রে এরশাদবিরোধী আন্দোলনকেও 'ছাত্র-জনতার আন্দোলন' বলা হয়েছে। এমনকি সেখানে বিএনপির ভূমিকারও উল্লেখ নেই। অন্য দলগুলোর হিসাব, এমনকি তিনজোটের রূপরেখাও বাদ!
* স্বাধীন বাংলাদেশের ১৯৭২ সালের সংবিধান প্রণয়নপদ্ধতি, এর কাঠামোগত দুর্বলতার কথা বলা হয়েছে জুলাই ঘোষণাপত্রে। ফলে দৃশ্যত বাহাত্তরের সংবিধান পরিত্যাজ্য।
* ঘোষণাপত্রের ৬ নম্বরটি খুবই ইন্টারেস্টিং। সেখানে দেশি-বিদেশি চক্রান্তে ১/১১-এর ষড়যন্ত্রমূলক ব্যবস্থা এসেছিল বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ফলে ১/১১-এর কুশীলবদের বিচার করার যথেষ্ট সুযোগ থাকছে। সে সময়ে নতুন রাজনৈতিক দলের জন্মদাতা এবং মাইনাস টু ফর্মুলায় সমর্থনদাতা পত্রিকা সম্পাদকদের জন্য কিন্তু যথেষ্ট ঝুঁকি থেকে যাচ্ছে।
* জুলাই ঘোষণাপত্রে এনজিওগুলোর জন্য স্পেস রাখা হয়েছে। ২৬ নম্বরের 'পরিবেশ ও জলবায়ুসহিষ্ণু অন্তর্ভুক্তিমূলক ও টেকসই উন্নয়ন কৌশল'-এর সাংবিধানিক স্বীকৃতির সুযোগ থাকায় পরিবেশবাদী এনজিওগুলো বিশেষভাবে উপকৃত হতে পারে
* সবশেষ পর্যবেক্ষণ হলো যদি নির্বাচন হয় এবং তাতে বিএনপি বিজয়ী হয় তাহলে এই ঘোষণাপত্র সংবিধানের তফশিলভুক্ত করার প্রধান দায় ও দায়িত্ব তাদের ঘাড়েই চাপবে। সে কারণেই সম্ভবত মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বৃষ্টি মাথায় নিয়েও ড. ইউনূসের সবচেয়ে কাছে দাঁড়িয়ে ছিলেন। তবে সে সময়ে কেবল একটি ছাতা ড. ইউনূসের মাথায় ধরে রাখা খুব দৃষ্টিকটূ লেগেছে। বর্তমান ও ভবিষ্যতের দায় ও দায়িত্বকে স্বীকৃতি দিয়ে মঞ্চে অন্তত আরেকটি ছাতার বন্দোবস্ত করলে দেখতে ভাল্লাগতো...

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


