somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কোন ফকির-রে খবর দিবা?

২৮ শে আগস্ট, ২০১০ সকাল ৯:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

’মিস্টার, ডরাইও না। ফাতেমা খালি মাইয়ালোকের উপর আছর করে। তুমার উপর অর কুন খায়েশ নাই।’
ওঁঝা ব্যাটা আমার থরথরে কম্পমান কাঁধে হাত রেখে আশ্বাস দিল। যাক্‌, আমি তাহলে নিরাপদ!
এরমধ্যে আমার ধর্মবোন প্রায় অচেতন অবস'ায় ড্রইং-র"মের সোফার উপর পড়ে আছে। ঘামে ভিজে চুপচুপে। প্রলাপ বকছে অনর্গল।
’বলতে গেলে, এইসব ভূত-পেত্নীর আছর আকছারই অয়; বেশী পাত্তা দিও না!’
মাইয়ালোকের উপর প্রতিহিংসাপরায়ন ভূত-পেত্নীর আছর করা কি খুবই সাধারণ ব্যাপার, সামান্য ঘটনা! নির্ভর করে আপনি কোথায় আছেন।
ইন্দোনেশিয়ার সূলাওয়াসী শহরের এক স্ব"ছল, সম্ভ্রান- পরিবারে ”আনর্-জাতিক শিক্ষাকর্মসূচির” প্রধান অংশ হিসেবে আমার আতিথ্যগ্রহণ। ইবু(মা), বাপাক(বাবা) আর প্রানো"ছল, সদালাপি দুই কিশোরী বোন-সারি এবং ওয়াতি, তিতি আর কিছু বিল্লিদল-এই নিয়ে সুখি-সমৃদ্ধ সংসার। প্রথাগতভাবে ইন্দোনেশিয়ায় খাবার টেবিলে খাবার খেতে খেতে নতুন কোন বিষয়, সলা-পরামর্ষ বা পরিচয়পর্ব ঘটে-আলোচনা, সমালোচনা, আড্ডা, গিবত, পরচর্চা ইত্যাদি, ইত্যাদি। এবারও এর ব্যতিক্রম হল না। অসরীরি আতমা, ভূত-প্রেতের অসি-ত্ব ও ওদের আচার ব্যবস'ার উপর পাহেলা সবক বা পরিচয় হয়ে গেল।
অন্যান্য আর এক সাধারণ সন্ধ্যার মতই সামবাল(ভাজা ভাত আর রগরগে ঝাল মশলা দিয়ে রান্না করা মাছের বিরিয়ানী বিশেষ) দিয়ে রাতের খাবারটা শেষ করছিলাম। অন্যরা সবাই টেলিভিশন দেখায় ব্যস-। কয়েক লোক্‌মা মুখে পোরার পর হঠাৎ কেন জানি মনে হল পুরো বাড়িটা অস্বাভাবিকভাবে শান- হয়ে গেছে। শুনশান নিস-ব্দ পরিবেশ। প্রায় তিনমাস হল এই বাড়িটাতে উঠেছি-এই প্রথমবারের মত পুরো পরিবারটা কেমন যেন ঝিম্‌ মেরে চুপচাপ হয়ে গেল। তিতি নামের কাকাতুয়া পাখিটা কিচির-মিচির করে সারাক্ষণ কান ঝালাপালা করে রাখত। সেটাও দেখি ঠোঁটে কুলুপ এঁটে ডানাদু’টো শরীরের সাথে সাপটে রেখে ঘরের সবচেয়ে উঁচু জায়গাটায় থির হয়ে বসে রইল। বেড়ালমশাইদেরও অবস'া বেশি ভাল ঠেকল না। অথচ অন্যান্য সময় খাবার সময় হলেই কোনটা টেবিলের নীচে, কোনটা চেয়ারের উপর উঠে আমার কুশলাদি জিজ্ঞেস করে এটা ওটা খাবার জন্য আব্দার জুড়ে দিত। ক্যাঁ মেঁয়াভাই, শইলডা বাঁলা, মঁনডা বাঁলা? তা, এগাঁনা মঁৎস এদিকে চালান দেয়া যায় না? মিঁয়াও, মিঁয়াও। নিঁদেনপক্ষে, কঁন্টকসমৃদ্ধ মৎসের মাথাটা? অমন কর ক্যাঁ পেঁয়ারের ধলাচাঁন! ওদিকে বোনদু’টো তাদের স্বভাবসুলভ নিজেদের মধ্যকার সান্ধ্যকালিন গুসুর-গুসুর গালগপ্প বন্ধ করে দিয়েছে। এমনকি, ১৮ ঘন্টা চলা টেলিভিশনের শব্দটাও কেমন যেন ম্রিয়মাণ।
প্রায় দুই সেকেন্ডের মাথায় ভৌতিক কিছু একটা ঘটে গেল। বিড়ালগুষ্ঠি তীক্ষ্ণস্বরে ঘ্যাঁও ম্যাঁও করছে। তিতি সমানে ডানা ঝাঁপা"েছ আর তারস্বরে চেচামেচি করছে। ওয়াতি রক্তহীম করা প্রচন্ড তীক্ষ্ণ চিকন স্বরে এক চিৎকার দিয়ে সোফায় এলিয়ে পড়ল।
আমার আক্কেল গুড়ুম। একেবারে স-ব্দ-সোজাকথায়, টাশকি লেগে গেছে। কিন', পরিবারের অন্য সবাই দেখছি ব্যাপারটা নিয়ে তেমন মাথা ঘামাল না। বাপাক(বাবা) সহজাত পিতৃসেহে পরম আদরে ওয়াতিকে সোফায় শুইয়ে মাথার নীচে একটা বালিশ টেনে দিলেন। ইবু(মা) কোথা থেকে একটা তশবি জোগার করে আরবী ভাষায় কি একটা মন্ত্র বা দোয়া আউরে ওয়াতির মাথায় হাত বুলিয়ে বারবার ফুঁ দিয়ে যা"েছন। অন্য বোন-সারি আলমিরাতে রাখা এক বোতল তেল বের করে ওয়াতির হাত-পায়ে মালিশ করছে। সবাই কেমন উদ্বিগ্ন হলেও তেমন গভীর দু:শ্চিন-াগ্রস' না। মনে হ"িছল, সাধারণ কোন একটা একঘেয়ে বৈরি সময় পার করছে। সাংঘাতিক কোন জীবন-মরণ সমস্যা নয়।
হঠাৎ চোখ মেলে তাকাল ওয়াতি। এই চাউনি আমার চেনা ওয়াতির নয়। চোখের মনি বিস-ৃত। তীক্ষ্ণ সুচাল দৃষ্টি। সাধারণত: সুন্দর লাবন্যময়, মায়াবী চেহারাটা ফ্যাকাসে আর বিকৃত। একটা গোংগানী দিয়ে আবার জ্ঞান হারিয়ে ফেলল।
’হ"েছটা কি?”-হতভম্ব ভাবটা কাটার পর স্বর ফিরে পেতেই ওদের কাছে জানতে চাইলাম। আমার অসি-ত্ব ওরা যেন ভুলেই গিয়েছিল। চমকে উঠল সবাই। সারিই প্রথমে কথা বলল-’চিন-ার কিছু রাই, ব্রেট। এইটা প্রায়ই ঘটে। এইটা, এইটা........,”-কথার খেই হারিয়ে ফেলল।
আশ্বাসের হাসি দিয়ে আমার ইবু বললেন-’এইটা একটা পেত্নী, ব্রেট। কিন', টথস' হবার প্রয়োজন নেই। এটা শুধু মেয়েদের ঘাড়ে চাপে। সে তোমার প্রেমে পড়বে না।”
আশ্বস-বোধ করার বদলে আমার ভয়টা আরো জেঁকে বসল। ’পেত্নী, এখানে পেত্নী আছে?’-আমার সাদা মুখ আরো সাদা হয়ে গেল।
শান-ভাবে ঘুমা"েছ এখন ওয়াতি। ইবু ওর মাথায় তেল মেখে দি"েছন আর তশবী জপে সমানে ফুঁ দি"েছন। বাপাক টেলিফোনটা নিয়ে রান্নাঘরের দিকে চলে গেলেন। সারি-ই এখন আমার আশা-ভরসার কান্ডারী।
’প্রায় দুই বছর আগে এই শহর থেকে দক্ষিণ দিকে সেলাজার নামের এক দ্বীপে ওয়াতে বেড়াতে গিয়েছিল।
ওখানে ঘুরে বেড়াবার সময় নিজের অজানে- এই পিচাশ অশরিরী আতার কবরটা মাড়িয়েছিল। সেই থেকে এই পেত্নীটা ওয়াতির উপর সোয়ার হয়েছে। চিন-া মাৎ, ব্রেট। বড় কোন আশংকার বিষয় নয়। প্রায় অনেকেরই এই ভূতে ধরা ব্যাপারটা ঘটে এখানে সময় সময়।’
সিয়াটলে থাকতে এখানে আসার আগে আমাদের এই ইন্দোনেশিয়ার কৃষ্টি-কলা, সমাজব্যবস'া, আচার-আচরণ সম্বন্ধে জ্ঞান দেয়া হয়েছিল। অনেক উপদেশের মধ্যে একটা সতর্কবানী ছিল-নিমন্ত্রক দেশের কৃষ্টি-ব্যবস'া নিয়ে চুল-চেরা বিশ্লেষণ করতে যেও না। ওদের দৃষ্টিকোণ থেকে বোঝার চেষ্টা কর। তাদের দৃষ্টিভংগি? ভূতে আছর করাটা কি একটা সাধারণ ছেলেখেলা ব্যাপার? পাশ্চাত্যের অহমিকা বজায় রেখে যুক্তিপূর্ণভাবে এই ঘটনাটা ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করলাম। ওয়াতির হয়ত:বা মৃগীরোগ বা হূৎপিন্ডের অস্বাভাবিকতা আছে। হয়তবা: সে ভয়ানক রকম মানসিকভাবে অসুস'। দেখেই বুঝতে পারছি ওয়াতি ভান করছে না।
’এ...এটা কি প্রায়ই ঘটে?’-তোতলাতে তোতলাতে বলতে পারলাম।
বাপাক ফোনটা নিয়ে ড্রইং-রূমে ফিরে এলেন। ইবু আর বাপাক চোখাচোখি করে কিছু একটা বিষয়ে মনসি'র করলেন। ওয়াতির চেয়ে আমাকে নিয়েই যেন ওনাদের উদ্বেগ বেশি।
অবশেষে বাপাক আমার অমূলক ভয়টা দূর করার জন্য বললেন-’এই নিয়ে তিনবার ঘটল। ভয় পেও না, ব্যাটা ব্রেট। আমি নিশ্চিত এই পেত্নীটা অচিরেই সেলাজারে ফিরে যাবে। ”দুকুন”-এর সাথে এইমাত্র কথা শেষ করলাম। সে ওয়াতির ঘাঁড় থেকে পেত্নীটাকে ঝেটিয়ে বিদায় করবে।’
এরমধ্যে আমার বোন মনে হ"েছ শানি-তে বিশ্রাম নি"েছ। যদিও সে ঠোঁট নেড়ে কিছু একটা বলছে কিন' কোন শব্দ হচছে না।
যদিও আমি ওয়াতির ব্যাপারটা নিয়ে খুব উদ্বিগ্ন কিন' অন্যদিকে আবার বেশ উত্তেজিত-এই প্রথমবারের মত কোন ওঝাঁর সাথে আমার মোলাকাত হবে। পড়াপানি, ধূপধুনা, মরিচপোড়া, হাড্ডিগুড্ডি, শিকরবাকর আর চোখ ধাঁধান ইকরি-বিকরি দিয়ে কিভাবে ভূত তাড়ান হয় সেটা সামনে বসে দেখতে পারব এটা ভেবে যারপরনাই নিজেকে ভাগ্যবান মনে হ"েছ। ওঁঝা ব্যাটা-টা দেখতে নিশ্চয়ই কঠিন মনের বয়োবৃদ্ধ একজন লোক যার সারা শরীরে উল্কি আঁকা, জট পাকান কাঁচা-পাঁকা লম্বা চুল কোন বন্য পশুপাখির হাঁড় দিয়ে আটকে রেখেছেন। রণ হুংকার দিয়ে ওইসব অশরিরী আতাদের সাথে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে লিপ্ত হবেন এটা ভেবে আমার সমস- রোমকূপ সটান দন্ডায়মান, হূৎপিন্ড ধ্রীম ধ্রীম আফ্রিকান ঢোল।
সমস- উৎকন্ঠা, আশা-আকাংখায় এক বালতি হিমশীতল ঠান্ডা পানি সরাৎ করে ঢেলে দিয়ে প্রায় এক ঘন্টা পর ফকিরবাবা হাজির হলেন। ভিনগ্রহের বাসিন্দার ছবি আঁকা টি-শার্ট আর লিভাইস জিন্স পরা শুকনা প্যাকাটে চেহরার এক যুবাছেলে দরজায় কড়া নাড়ল। শিশুসারল্যে ভরা মুখখানা। দেখে মনে হবে সবে মাত্র হাইস্কুলের গন্ডি পার হয়েছে। যদিও আদতে তার বয়স প্রায় সাতাইশ। আর সে একজন ”জুনিয়র দুকুন” অর্থাৎ শিক্ষানবীশ ফকির, ওঁঝা। তার গুর" এই মূহুর্তে অন্য এক ”কলে” আছেন। মহা ব্যস- অন্য ভুত-পেত্নীদের নিয়ে। তবে আশ্বাসের বানী হল-ঊনি ”এখানে” পদধূলি দেবেন যদি তার এই চ্যেংড়া শিষ্য ফাতেমার সাথে ভাব জমাতে না পারে। শিষ্য ফকিরবাবা, থুড়ি, ফকিরভাইজানের মটর সাইকেলের গায়ে ”নির্ভানা” রক গোষ্ঠীর ষ্টিকার লাগান।
’কার্ট কোবাইন(নির্ভানার প্রয়াত গিটারবাদক) কি নতুন কোন এলবামের উপর কাজ করছে? নাকি জিমি হেন্ড্রিক্স(আর এক প্রয়াত গিটারবাদক)-এরসাথে দ্বৈত এলবাম বের করার চেষ্ট করছে?’-ফোঁড়ন কাঁটা থেকে বিরত রইলাম।
”দুকুনভাই”(বাবা ডাকতে সায় দি"েছ না মন) ঘরে ঢোকার মুখে আমার ভীতিময় ফ্যাকাসে চেহারাটা লক্ষ্য করল যা পরিবারের অন্যান্য সবার চেহারার সাথে কোন মিল নাই। আশার আলো জ্বালিয়ে বলল-’ঘাবড়াও মাৎ, এই ভূত-পেত্নীগুলান সাদা চামরার মানুষজন থেইক্কা দূরে থাহে।’
আমি তার আশ্বাসবানীতে আশ্বস- হব নাকি ব্যাটা আমাকে অপমান করল বুঝে উঠতে পারছি না। আমার কাছ থেকে চলে গিয়ে ”দুকুন ভাইজান” ওয়াতির হাত-পায়ে মন্ত্রসিদ্ধ তেল মর্দন করতে ব্যস- হয়ে গেলেন। তেল মর্দনে ওয়াতির একটু আধোজাগরণ হল। তেলের তেলেসমাতি নাকি ভাইজানের হাতের আদুরে আদর কে জানে! প্রেমিক-প্রেমিকাদের মত দেখ আবার খুব নীচু স্বরে দুকুন ছোকরাটার সাথে খোশগপ্পে মত্ত হয়েছে। ভাষাটা খুব অপরিচিত ঠেকল। নীচু, মৃদু স্বর হলেও ঘোঁৎ ঘোঁৎ আর হিস্‌হিস্‌্‌ শব্দে বুঝলাম কোন প্রণয়লীলা জমে নাই। আমারও ভুল হতে পারে! ভুত-পেত্নীদের প্রেম-প্রণয়লীলা তো এর আগে দেখার সৌভাগ্য হয়নি। আমাদের আগুন-ক ”জামাইব্যাটা”-ই ওয়াতি(বা ফাতেমা)-র মনের ভাব বুঝতে পারছেন।
’সে আম্বন ভাষায় কথা বলছে, অতি পুরাতন মলোকান গোষ্ঠির ভাষা’-সারি ফিসফিস করে আমায় জানাল।
এইভাবে কিছুক্ষণ বাক-বাকুম চলার পর ওয়াতি আবার নেতিয়ে পড়ল।
’আবার সেই ফাতেমা বেগমই। তারে গতবার চইলা যাইতে বলার পরও অয় সেলাজারএ চইলা যায় নাই। এহনও ওয়াতির উপর রাগে ফুঁসতাছে’-দুকুন ভাই উঠে দাঁড়িয়ে পরিবারের সবার উদ্দেশ্যে ধারাবিবরনী দিলেন।
’এই মাইয়াটা একটা কর"ণ জীবন কাটাইছে। এহনও অর অশরীরি কালটা কষ্টের মইদ্যে পার করতে হইতাছে। শিশুকালে মলুক্কাস এলাকা থেইক্কা পর্তুগিজরা ওরে ধইরা নিয়া যায়। ওইহান থেইক্কা টেরনাটে চালান কইরা দেয়। পেরায় ১৫ বছর বান্দী হিসাবে খাটাইছে। বলা নেই, কওয়া নেই, হঠাৎ একদিন ওরে আবার অন্য আরেকটা জাহাজে তুইলা দেয়। খুব সম্ভবত: অন্য কোনহানে দাসীর কাজে পাডাইতেছেল। ওর জানা নাই।’-পেত্নীটার উপর পরম মমতায় একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে মাথা ঝাকিয়ে দুকুন আমাকে ফাতেমার জীবনবৃত্তান- জানালেন।
’সোলাজারের কাছাকাছি ঝড়ের কবলে পইরা জাহাজটা ডুইব্বা যায়। ঠিকমত সৎকার না হওয়ায় আর অর জন্য শোক পালন করার মত কোন কাছের আত্মীয়-পরিজন না থাকায় ব্যাচারী গত ৪০০ বছরেরও বেশী সময় ধইরা এই সেলাজারের চারপাশে বাউলা বাতাসের মত ঘুইরা বেড়াইতাছে। আমি ওরে ভুলাইয়া-ভালাইয়া এইবারের মত চইলা যাইতে কমু। এইরমদ্যে ওয়াতিরে কিছু মন্ত্র, দোয়া-দর"দ আর আচার-অনুষ্ঠানাদি শিখাইয়া দিমু যাতে ভবিষ্যতে নিজেরে রক্ষা করতে পারে।’
দুকুন ফকিরের কেরামতি দেখে আমি মন্ত্রমুগ্ধ আর সম্মোহিত হয়ে গেলাম । যদিও ইবু, বাপাক এবং সারি দুকুনের কথা শুনে ঘন ঘন মাথা ঝাকিয়ে সায় দিয়ে যা"েছ । ডাক্তার সাহেব যে রোগী ”ডেঙ্গুজ্বর”-এ ভুগছে এটা নির্ণয় করতে পেরেছেন তাতেই তারা খুশি!
’আগেরবারই কইছিলাম, আবারও কই-সবচেয়ে গুর"ত্বপূর্ণ খবরটা হইতাছে এই পেত্নীটা তেমন খাটাশ কিসিমের না। ছোডখাড সাদারণ গো-বেচারা টাইপের’-দুকুন ভাইয়ের সর্বশেষ ডাক্তারী ডায়াগনসিস।
’ফাতেমা কিছুটা মজাক করতাছে ওয়াতির লগে। বিরক্ত আর অয়রান হইয়া গেলে ওরে ছাইড়া চইলা যাইব। তয় জানে মারত না’-আশ্বাসের বানী দিয়ে ওঝাঁমশাই আবার ফকিরি কাজে লেগে গেলেন। মিষ্টি, আবেশ করা ঘন্ধে ভরা কয়েকটা আগরবাতি জ্বালালেন আর এক পোঁটলা কুচ্‌কুচে কাল মাটি ঘরের কিছু নির্দিষ্ট জায়গায ছিটিয়ে দিলেন। ওয়াতির মাথায়, কপালে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে আরবীতে কি একটা প্রার্থনা বা দোয়া পড়ছেন। পুরো ব্যাপারটায় এক ধরণের পবিত্রতা আর শান- ভাব চলে এল। আসে- আসে- ওয়াতি সবার দিকে ঘোলা চোখে তাকা"েছ। ইবু তাড়াতাড়ি এক গ্লাস পানি ধরলেন ওয়াতির ঠোঁটে। বাপাক ”দুকুন” সাহেবকে বিদায় জানাতে দ্বেরগোড়া পর্যন- এগুলেন।
’আমি জানি সাদা লোকজন ভূত-পেত্নীগ অনেক ডরায়। আর সেজন্যই আমার মনে অয় তুমারে না বলাই ভাল।’
কৌতুহল চেপে না রাখতে পেরে ফকির সাহেবের আরো কাছে এগিয়ে গেলাম।
’আমার কাছে ব্যাপারটা খুব খটকা লাগতাছে। সাধারণত: এই জাতের পেত্নীগুলান মাইয়ালোকগই জ্বালায় বেশী। যাই হোক্‌, মনে হইতাছে অয় তুমার উপর কিছুকটা দুর্বল হইয়া যাইতাছে। মজার ব্যাপার হইতাছে, ফাতেমা তুমার ব্যাপারে অনেক কিছু জানতে চাইতাছে। তুমি নাকি দেখতে অর সেই পর্তুগিজ মালিকের লাহানই। বুঝতেই পারতাছ, দুর্বলতাটা ঠিক সেই ধরণের দুর্বলতা না। এক ধরনের ঘিন্না-পিত্তেশ জইম্মা আছে ফাতেমার ভিতর। তুমারে বেশী পছন্দ করে নাই’-খৈনি খাওয়া দাঁত কেলিয়ে হাসতে হাসতে ফকির সাহেব তার মটর সাইকেল ষ্টার্ট দিলেন।
’আমি তুমার জায়গায় হইলে ডড়াইতাম না! মনে অয় না আদতেই তুমারে কুনদিন জ্বালাইব!’
আদতেই?
এই ঘটনার পর প্রায় কয়েক সপ্তাহ ঘরের বাতি জ্বালিয়ে ঘুমাতে গেছি।
আশার কথা এর পর ফাতেমা আর বেড়াতে আসেনি এদিকটায়।
তবে, এখন পর্যন- না!
মূল লেখক:- ব্রেট হ্যারিস একজন অর্থনীতিবিদ। হনলুলুর ঈষ্ট-ওয়েষ্ট কেন্দ্র থেকে দুই বৎসরের জন্য ইন্দোনেশিয়ায় কাটিয়েছিলেন।
ভাষান-র:-সেলিম
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদির হত্যাকান্ড ও সরকারের পরবর্তি করণীয়!

লিখেছেন আহলান, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৫১

হাদির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা। সে দেশকে ভালোবেসে, দেশের মানুষকে ইনসাফের জীবন এনে দিতে সংগ্রাম করেছে। তাকে বাঁচতে দিলো না খুনিরা। অনেক দিন ধরেই তাকে ফোনে জীবন নাশের হুমকি দিয়ে এসেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব রাজ্যে উত্তেজনা: হাদির মৃত্যুতে রাজনৈতিক পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪২

রোম যখন পুড়ছিল নিরো নাকি তখন বাঁশি বাজাচ্ছিল; গতরাতের ঘটনায় ইউনুস কে কি বাংলার নিরো বলা যায়?



বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পদটি সবসময় ছিল চ্যালেঞ্জিং।‌ "আল্লাহর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্টেরিম সরকারের শেষদিন : গঠিত হতে যাচ্ছে বিপ্লবী সরকার ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২২


ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়াকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার আন্তঃদেশীয় প্রকল্পটা সফল হতে অনেক দিন লেগে গিয়েছিল। বাংলাদেশে সে তুলনায় সংশ্লিষ্ট শক্তিসমূহের সফলতা স্বল্প সময়ে অনেক ভালো। এটা বিস্ময়কর ব্যাপার, ‘রাষ্ট্র’... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব সন্ত্রাস, আগুন ও ব্লাসফেমি: হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:৫২


ময়মনসিংহে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন মানুষকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মধ্যযুগীয় এই ঘটনা এই বার্তা দেয় যে, জঙ্গিরা মবতন্ত্রের মাধ্যমে ব্লাসফেমি ও শরিয়া কার্যকর করে ফেলেছে। এখন তারই... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×