somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বেড়ালে খেয়ে যায় দুধের সর

০৯ ই এপ্রিল, ২০০৮ রাত ৮:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মজার বিষয় হচ্ছে ক্রিসপি তথা মুড়মুড়ে আইটেমের মধ্যে চানাচুরের চেয়ে চিপসের মার্কেট বেশি বড়। অথচ তুলনা করতে বললে যে কেউই বলবেন, চানাচুর একটি মৌল এবং বহুল প্রচলিত খাদ্য আইটেম। দেখুন পরিসংখ্যান কি বলে। একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে, গবেষণাটি একটি বেসরকারি সংস্থা কর্তৃক অনুষ্ঠিত,- ক্রিসপি আইটেমের ৫২% চিপসের দখলে, ৪৪% মার্কেট চানাচুরের, এবং অবশিষ্ট ৪% অন্যান্য আইটেমের যথা ডাল, বাদাম, বুট, ইত্যাদি ইত্যাদি।

আপনাকে যদি বলি বাংলাদেশে চিপসের কথা শুনলে আপনার মাথায় সবার আগে কোন ব্রান্ডের নাম আসবে? আমি নিশ্চিত আপনি বলবেন 'পটেটো ক্রাকার্স'’। যদি বলি তারপর? আপনি সম্ভবত বলবেন- 'মিস্টার টুইস্টের' কথা। বিষয় হচ্ছে, উভয়ই একই কোম্পানির ব্রান্ড। অর্থাৎ, বোম্বে সুইটস লি:। হ্যা, চিপসের মার্কেটৈর প্রায় ৬০% দখল করে আছে বম্বে সুইটস। এ কথা আমার নয়, বরং বম্বে সুইটসের প্রতিদ্বন্ধী প্রাণ ফুডের একজন পদস্থ কর্মকর্তা আমার নিকট এ স্বীকারোক্তি দিলেন। বাকি ৪০% -এ আছে প্রাণ, হক, আল-আমিন, ইত্যাদি চেনা অচেনা অনেক কোম্পানি।

চিপসে বম্বে সুইটসের ধারে কাছে কেউ আসতে পারেনি। এর অন্যতম কারণ বম্বের চেয়ে স্বতন্ত্র কোন ব্রান্ড কেউ প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি। যারা যাই করুক, প্রায় বম্বের সমগোত্রিয়। সেই সবুজ রংয়ের প্যাকেট, প্রায় একই ধরণের প্যাকেট সাইজ ও পণ্যের ধরণ। ফলে কাস্টমার দোকানে দেখতে পান স্তুপ করা চিপস, ধরণ প্রায় একই, মনে করেন- সবই বম্বের। কাছে এসে যখন দেখেন ভিন্ন কিছু চিপসও আছে, তখন রিস্ক না নিয়ে বম্বেরটাই কিনে ফেলেন। এখন, মাঝখানে স্বাতন্ত্র নিয়ে এলো মিস্টার টুইস্ট। কিন্তু সেও বম্বেরই পণ্য।

আপানি যদি ধানমন্ডি, গুলশান বা এজাতীয় অভিজাত এলাকায় বাস করেন, তবে সন্দেহ নেই আমার সাথে দ্বিমত করবেন। আপনি বলবেন, আমিতো পটেটোও কিনিনা, মিস্টার টুইস্টও কিনিনা। হ্যা ভাই আমি জানি আপনি কি কেনেন। আপনি দোকান থেকে কিনে আনেন 'লেইস'- এর চিপস-'কুড়কুড়ে'।

সত্য কথা হচ্ছে- আমি যতদূর সার্ভে করেছি, বম্বের চিপসের মার্কেটে ফাটল ধরাতে পেরেছে একমাত্র এই 'লেস'। খেয়াল করে শুনুন, এই লেস হচ্ছে ভারতীয় কোম্পানি। এরা এসে বোম্বের সাথে সরাসরি ফাইট না দিয়ে কৌশলে শুধু অভিজাত কাস্টমারদের দখল করে নিয়েছে। অর্থাৎ সারা বাংলাদেশকে টার্গেট মার্কেট না করে অভিজাত ও পয়সাওয়ালাগ্রুপকে টার্গেট করে অল্প পরিশ্রমে অধিক মুনাফা বাগিয়ে নিচ্ছে। লেসের একেক আইটেম চিপসের দাম নিম্নপক্ষে ২০ টাকা। আপনি কুড়কুড়ের নাম শুনে থাকবেন। আর উর্ধ্বে এর দাম পঞ্চাশ ছাড়িয়ে যাবে। আপনি বলেবেন, সমস্যা কোথায়, এরা যদি ভাল পণ্য দিয়ে বেশি টাকা নেয়- আপনার অসুবিধা কোথায়?

হ্যা ভাই, একটু অসুবিধা আছে। চিপস এমনিতেই কোন মৌল কিংবা জরুরীপণ্য নয়, তারপরেও শুধুমাত্র আভিজাত্য বোধ উস্কে দিয়ে, মনোহর প্যাকেট দিয়ে অধিক দাম বাগিয়ে নেয়াকে আমি পকেট কাটাই বলবো। ব্যবসায়ীক পরিভাষায় একে বলে প্রাইস স্কিমিং। স্কিমিং বলতে দুধের সর তুলে নেয়া বোঝায়। অর্থাৎ ক্ষুদ্র মার্কেটে হাই প্রাইস ফিক্স করে অধিক মুনাফা তুলে নেয়ার পদ্ধতিই হচ্ছে প্রাইস স্কিমিং। আর ফাক বুঝে এ কাজটিই করছে লেস। ভিন্ন মার্কেট ধরার ক্ষেত্রে আমরা পূর্ব থেকেই ব্যার্থ, আর নিজ পাতিলের দুধের সরটুকুও চুপিসারে খেয়ে যায় প্রতিবেশি বেড়াল।




আলোচনার সারমর্মঃ

প্রথমত, বাংলাদেশে চিপসের একটি বড় বাজার রয়েছে যা সাদা চোখে ধরা পড়েনা।

দ্বিতীয়ত, চিপস মার্কেটের সিংহভাগ অধিকার করে আছে বম্বে সুইটসের বিভিন্ন আইটেম।

তৃতীয়ত, বম্বের থেকে কেউ স্বতন্ত্র কিছু সৃষ্টি করতে না পারায় এখন পর্যন্ত বম্বের মার্কেটে কেউ হাত দিতে পারছেনা।

তৃতীয়ত, বাংলাদেশের চিপস মার্কেট থেকে কৌশলে মুনাফার সিংহভাগ তুলে নিচ্ছে ভারতীয় ব্রান্ড লেস- কুড়কুড়ে।





- - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - -
চিপস নিয়ে কাজ করছি কয়েকদিন। কাজের সুবিধার্থে আপনার নিকট কয়েকটি প্রশ্ন, জরিপ বলতে পারেন। উত্তর দিলে উপকৃত হবঃ

০১. আপনি যদি মাসে দশ প্যাকেট চিপস ক্রয় করেন, তার মধ্যে নিজের জন্য কয়টি আর অপরের জন্য (শিশু হতে পারে) কয়টি?

০২. কোন ব্রান্ডের চিপস কিনবেন তা কি আগে থেকেই ঠিক করে যান, নাকি দোকানে গিয়ে নির্ধারণ করেন?

০৩. আপনার পছন্দের চিপস না পেলে কি ফিরে আসবেন, নাকি উপস্থিত যা আছে তা থেকেই ক্রয় করবেন?
- - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - -



বিষয়টি নিয়ে সামনে ভিন্ন ধরণের পর্যালোচনার ইচ্ছে রয়েছে।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই এপ্রিল, ২০০৮ বিকাল ৪:৪০
৪টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিজয়ের আগে রাজাকারের গুলিতে নিহত আফজাল

লিখেছেন প্রামানিক, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:১৩


ঘটনা স্থল গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি থানার উড়িয়া ইউনিয়নের গুণভরি ওয়াপদা বাঁধ।

১৯৭১সালের ১৬ই ডিসেম্বরের কয়েক দিন আগের ঘটনা। আফজাল নামের ভদ্রলোক এসেছিলেন শ্বশুর বাড়ি বেড়াতে। আমাদের পাশের গ্রামেই তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫৫ বছর আগে কি ঘটেছে, উহা কি ইডিয়টদের মনে থাকে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৮




ব্লগের অনেক প্রশ্নফাঁস ( Gen-F ) ১ দিন আগে পড়া নিউটনের ২য় সুত্রের প্রমাণ মনে করতে পারে না বলেই ফাঁসকরা প্রশ্নপত্র কিনে, বইয়ের পাতা কেটে পরীক্ষার হলে নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিজামী, মুজাহিদ, বেগম জিয়াও বিজয় দিবস পালন করেছিলো!!

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৭:২০



মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বেগম জিয়ার মুরগী মগজে এই যুদ্ধ সম্পর্কে কোন ধারণা ছিলো না; বেগম জিয়া বিশ্বাস করতো না যে, বাংগালীরা পাকীদের মতো শক্তিশালী সেনাবাহিনীকে পরাজিত করতে পারে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯


দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা গান্ধীর চোখে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক: ওরিয়ানা ফলাচির সাক্ষাৎকার থেকে

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৫


১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইতালীয় সাংবাদিক ওরিয়ানা ফলাচি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাক্ষাৎকার নেন। এই সাক্ষাৎকারে মুক্তিযুদ্ধ, শরনার্থী সমস্যা, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক, আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী পররাষ্ট্রনীতি এবং পাকিস্তানে তাদের সামরিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×