somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চলতে চলতে পরিপক্ক হয়ে ওঠা।

২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৮ সকাল ৯:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

স্রেফ গালগল্প

ইফতারের আর মাত্র মিনিট দশেক বাকি। বিলাসবহুল, কয় তারকা তা বলতে পারবোনা, হোটেলের স্যুট-টাই পরা ক্রুরা উপস্থিত সবার সামনে দুই গ্লাস করে সরবত দিয়েই খালাস, ইফতারের প্লেট এখনও দিচ্ছেন না, দেওয়ার কোন আয়োজনও চোখে পড়ছেনা, ঘটনা কি? একজন ধনাঢ্য ব্যবসায়ীর উদ্যোগে সীমতি পরিসরে নিজস্ব লোকজন নিয়ে ইফতার। টেবিলের চারপাশে আমরা মোট তেরজন বসা। টুকটাক কথা চলছে কর্তা ব্যাক্তিদের মাঝে। বাকিরা বিনয়ী ও মনোযোগী শ্রোতা। আমিই সর্ব-কনিষ্ঠ অংশগ্রহণকারী, ঘটনাক্রমে সেখানে দাওয়াত পেয়েছি।

বিবিধ ভাবতে ভাবছি, হঠাৎ হোস্ট ব্যবসায়ী উপস্থিত প্রধান মেহমানকে বললেন, স্যার, একটু কষ্ট করে উঠতে হবে, মেনু চয়েজ করে প্লেটে নিয়ে নিতে হবে। মেহমান উঠতে উঠতে বললেন, ও বুফে সিস্টেম? চলুন, সমস্যা নেই। 'বুফে' শুনে আমার মন চনমনিয়ে উঠলো। ভর্তি কোচিংয়ে প্রথম বুফে শব্দের সাথে পরিচয়। শব্দটির শেষে টি আছে কিন্তু উচ্চারণ টি বর্জিত। মনে পড়ে, অর্থ তখনই শিখে রেখেছিলাম, বুফে মানে ইচ্ছেমত খাওয়া দাওয়া- ধনী লোকদের কারবার, অপচয়ের মহাসড়ক। যা হোক, শব্দটি শেখার অর্ধযুগ পর আজ প্রাকটিকালি তার সাথে পরিচিত হতে যাচ্ছি- ভাবতে ভালোই লাগছে।

সবার পেছনে পেছনে আমিও চললাম। পরিচিত অপরিচিত অসংখ্য আইটেম থেকে একপিস দুইপিস করে প্লেটে উঠিয়ে নিচ্ছি। কোনটিই ছাড়তে মন চাচ্ছেনা, শত হলেও আদম সন্তান তো, মাটি ছাড়া পেট ভরেনা। এক পর্যায়ে দেখি , প্লেট পূর্ণ। প্লেট নিয়ে সবার সাথে ফিরে চললাম টেবিলে।

ইতোমধ্যে আযান শুনতে পেয়ে খেজুর দিয়ে ইফতার শুরু করলাম। চলছে খাবার, তবে শেষ করতে পারলাম না। বাছাই করে নিয়ে, সংযম করেও প্লেটে যা নিলাম, শেষ করতে পারলামনা। তবে উপস্থিত সবাই-ই আমার চেয়ে বেশি নিয়েও দেখলাম প্লেট ফর্সা করে ফেললেন। ঘটনা যা-ই হোক, আমি আজ নতুন এক খাবার পদ্ধতির সাথে পরিচিত হলাম, বুফে। পরিচিত জনকে বলতে পারব। খাবারদাবার পর মনে হল, শুরুতে 'বুফে' শুনে যতটুকু থ্রিল অনুভব করছিলাম, এখন কেন যেন বিষয়টাকে খুব স্বাভাবিক মনে হচ্ছে- প্রয়োজনমত ও পছন্দমত প্লেটে উঠিয়ে নিয়ে খাওয়া । আসলে এরই নাম অভিজ্ঞতা। আরেকটি ভুল ভাঙলো, বুফে মানেই ভাবতাম, অন্তত এতদিন মনে মনে পুষে রেখেছিলাম- বুফে মানেই হচ্ছে বিপুল খাদ্যোৎসব, বিপুল খাদ্য অপচয়ের মহোৎসব। এখন মনে হচ্ছে- বুফে সিস্টেমই তো ভালো। অপচয়ের সম্ভাবনা শুন্যের কোটায়। অভিজ্ঞরা ভালো বলতে পারবেন। আমি এখানেই বর্ণনার খান্ত দেই।

শেষ করার আগে একটি গল্প বলি, ইফতারের পূর্বে মেহমান বলেছিলেন। এক ভদ্রলোক ঘুমের মধ্যে স্বপ্নে দেখলেন, একটি সিংহ তাকে ভয়ংকর গতিতে তাড়া করে ফিরছে। তিনি দৌড়াতে দৌড়াতে একটি গাছে উঠলেন, কোনরকম একটি ডালো আশ্রয় নিয়ে হাফ ছাড়লেন। হঠাৎ দেখেন ডালটির একপাশে ছোট্ট একটি মৌচাক থেকে ফোটায় ফোটায় মধু পড়ছে। তিনি খুশি মনে দুফোটা মধু মুখে দিলেন। হঠাৎ ডালের গোড়ার দিকে চোখ পড়লো। কিন্তু একি, একটি সাদা আর একটি কালো ইদুর সমানে ডালটির গোড়া কেটে চলছে। তিনি শংকিত হয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে দেখেন একটি বিরাটাকায় অজগর হা করে আছে ঠিক তারই দিকে মুখ করে . . .।

আতঙ্কে ঘর্মাক্ত শরীরে ঘুম থেকে জেগে উঠলেন ভদ্রলোক। সকালে একজন বিজ্ঞ লোকের নিকট স্বপ্নটি বর্ণনা করলেন। জিজ্ঞেস করলেন, জনাব, এই স্বপ্নের কি কোন মানে আছে? বিজ্ঞ লোক জবাব দিলেন হ্যা, আছে। যে সিংহটি তোমাকে তাড়া করেছে সেটি হচ্ছে মৃত্যু। মৃত্যু মানুষকে সবসময় তাড়া করে ফেরে। যে ডালে উঠলে সেটি হচ্ছে পৃথিবী। ফোটায় ফোটায় ঝড়া মধূ হচ্ছে পৃথিবীর সাময়ীক কিছু সুখ আর বিলাস সামগ্রী। সাদা আর কালো ইদুর হচ্ছে দিন আর রাত্রি যা অনবরত তোমার জীবন থেকে গত হচ্ছে, কমিয়ে দিচ্ছে তোমার আয়ু। আর অজগরটি হচ্ছে কবর, যা তোমাকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে। - - - - প্রিয় উপস্থিতি, আমরা যেখানে যে অবস্থানেই থাকিনা কেন, মৃত্য আমাদের তাড়া করে ফিরছে, আর কবর আমাদের হাতছানি দিয়ে ডাকছে। যেখানে যেতেই হবে অনিবার্যভাবে। সুতরাং বুদ্ধিমানের কাজ হচ্ছে, দুরন্ত গতিময় পৃথিবীর কাজগুলো করার ক্ষেত্রে কবরের জবাবদিহীতা আর আখিরাতের অনন্ত জীবনের মহাসত্যকে সর্বদা সামনে রাখা। তাহলেই দুনিয়ার যেমন কল্যাণ, আখিরাতের চিরস্থায়ী জান্নাত। এই মাহে রমজান তেমনই এক আত্মশক্তি জাগ্রত করে, যা শত প্রলোভন আর সুযোগ সত্ত্বেও কেবলই মহাশক্তিশালী আল্লাহর ভয়ে যাবতীয় কাজে সততা আর নীতিকে অটুট রাখতে উদ্বুদ্ধ করে, প্ররোচিত করে এবং বাধ্য করে। রমজান শেষে নিজেদের মাঝে যদি তেমন এক শক্তিশালী পুলিশের অস্তিত্ব অনুভব করতে পারি তবেই একমাসের সিয়াম সাধনা স্বার্থক। আসুন সে শিক্ষাকে সামনে রেখে রমজানকে বিদায় জানাই।

মেহমানের বক্তব্য স্মরণ করতে করতে গৃহে ফিরলাম। মেহমানের সাথে সাথে আমিও একটি প্যাকেট পেয়েছিলাম। গৃহে এসে প্যাকেট খুলে দেখি, একটি টি শার্ট, একটি ডিজিটাল ওয়াল কাম টেবিল ঘরি, এবং কোম্পানীর লোগে খচিত একটি সিরামিকের মগ। ভালোই তো, খেলাম, শুনলাম, আবার পেলাম। এলোমেলো গল্প এখানেই শেষ।
১২টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিনেতা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৫



বলতে, আমি নাকি পাক্কা অভিনেতা ,
অভিনয়ে সেরা,খুব ভালো করবো অভিনয় করলে।
আমিও বলতাম, যেদিন হবো সেদিন তুমি দেখবে তো ?
এক গাল হেসে দিয়ে বলতে, সে সময় হলে দেখা যাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×