আমার জন্ম বাংলাদেশের সর্ব -দক্ষিণের সমুদ্র বেষ্টনকারী দ্বীপ হাতিয়া। আধুনিক সভ্যতার বিন্দুমাত্র ছোঁয়া লাগেনি তার কোন পরতে। আজ থেকে ২০ বছর আগে যখন প্রাইমারির গণ্ডী পার হয়ে উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলে পা রাখি, তখন কোন বিকেলে ভারত বনাম পাকিস্তানের কোন এক টানটান উত্তেজনাপূর্ণ ক্রিকেট ম্যাচ দিয়েই ক্রিকেট জগতে আমার পদার্পণ। আস্তে আস্তে বুঝতে শিখি ক্রিকেটের সকল নিয়ম কানুন ভাষা। ভালোবাসাটাও দিনদিন গাঢ় থেকে গাঢ়তর হতে লাগল। ক্রিকেট বিশ্বে বাংলাদেশের প্রবেশকে দিল সে ভালবাসায় নতুন মাত্রা। দিন দিন সে ভালবাসা এমন উচ্চতায় পোঁছাল যে, ক্রিকেট আমাদের/ আমার জীবনের অংশ হয়ে গেল।
যেখানে কুপির আলোয় গ্রামিন প্রান্তিক মানুষের রাতের জীবন শুরু হয়, সেখানে বিদ্যুতের কথা ভাবা পাগলামো ছাড়া কিছু নয়। আমার জানামতে আমার এলাকায় কারো বাড়িতে টেলিভিশন নামক বস্তুটি ছিল না। তাই ক্রিকেটের টানে সেই ছোট বেলায় আমার ছোট ছোট পায়ে
বাড়ি থেকে ৫/৭ কি মি দূরে গ্রাম্য বাজারে চায়ের স্টলে ২/৩/৫ টাকার বিনিময়ে ঘন্টার পর ঘন্টা ঠাই দাঁড়িয়ে থেকে খেলা দেখেছি।
এই ক্রিকেটের প্রতি ভালবাসার জন্য মা-বাবার বুকুনি পিটুনিও কম হয়নি। এভাবে বড় হতে লাগলাম, আর আমাদের ভালবাসায় আমাদের দেশও ক্রিকেট বিশ্বে স্থান পাকা করে নিতে লাগল।
উপরের কথাগুলি গল্প নয়, সত্যি। এ রকম আমাদের হাজারো গল্পে গড়া আমাদের ক্রিকেট। জাতি হিসেবে আমরা বিশ্বে অর্থনৈতিক ভাবে পিছিয়ে হলেও ক্রিকেট বিশ্বে আমরা তেজবান, ক্ষিপ্র, দাপুটে এক বাঘ। আমাদের আছে প্রতিভাবান এক একটি করে ১১ জন বাঘ। যারা আমাদের হাজার প্রতিকূলতার মাঝে আমাদের এক মতের কাছে নিয়ে আসে। যেখানে ক্ষুধা নেই, দারিদ্র নেই, হিংসা নেই, হানাহানি নেই, রাজনৈতিক বিভেদ নেই, ধনী নেই, গরীব নেই, নেই কোন মতভেদ। আমরা এক হয়ে যায়। ১৬ কোটি প্রাণ এসে মিশে যায় একটি প্রাণে।
সেই আবেগে গড়া আমাদের প্রাণে, বৈশ্বিক বুর্জুয়ারা বারবার আঘাত হানছে। আমরা হতবাক হয়ে যায়, আমরা হয়ে যায় নির্ভাক, আশাহত হই, বিচলিত হয়ে যায় মন। কখন আবার মনের অজান্তে চোখের কোনে জমে ভারী জল। কেন আমাদের গেম স্পিরীট টাকে হাতে ধরে ধ্বংস করা হচ্ছে?
গত বছর বিশ্বকাপে আমাদের গেম স্পিরীটকে ধ্বংস করা হয়েছে। সেই খত এখনও আমাদের হৃদয় থেকে মুছে যায়নি। নতুন করে
আমরা আবার উজ্জীবিত হতেই আবার সেই বুর্জুয়ারা সরব হয়ে ঊঠল! টি২০ বিশ্বকাপ ২০১৬ তে যখন আমরা বাঘের ক্ষিপ্রতায় এগিয়ে যাচ্ছি তখন আমাদের থামিয়ে দেয়ার অপচেষ্টা কি ক্রিকেটের স্পিরিটকে হুমকির মুখে ঠেলে দেয়নি?
-----< বড় বড় কয়েকটি টুর্নামেন্ট শেষ করার পর কেন তাসকিন আহমেদের এবং আরাফাত সানির বোলিং অবৈধ ঘোষনা করা হল?
------< যে বোলিং তাসকিন নেদারল্যান্ডের বিপক্ষে করেনিইনি সে বোলিং কেন ল্যাবে করানো হল?
-------< সল্প সময়ের মধ্যে কেন তাকে একই বোলিং বারবার করতে বলা হল?
------< একই রকমের ৯টি বলের মধ্যে ৩টি সন্দেহ প্রকাশ করা হয়েছে। যাহা উদর পিন্ডি বুদোর গাড়ে ছাপিয়ে দেয়া মত নয় কি?
আরাফাত সানিকে ক্রিকেট থেকে নির্বাসন দিলেও আমরা ১৬ কোটি মানুষ তাসকিনকে দূরে সরিয়ে দেয়াকে ষড়যন্ত্র বলে মনে করছি। যেখানে ক্রিকেটের স্পিরীট বলে আই সি সি যে ফাঁকা বুলি আওড়ায়, সে স্পিরীটকে স্বমূলে গলা টিপে হত্যা করেছে। আই সি সি কোন বিশেষ কয়েকটি দেশের উদ্দেশ্য হাসিলকারী সংস্থা বলে আমরা মনে করি না।
আশা করি ক্রিকেটের জয় হবে।
জয় হবে বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষের আবেগের কেন্দ্রস্থল।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে মার্চ, ২০১৬ বিকাল ৩:১৮