১৯৭১-এ বাংলাদেশে কোন নতুন জাতির জন্ম হয়নি। মানচিত্রে একটি নুতন নাম সংযুক্ত হয়েছে। যেটা আগে ছিল পুর্ব পাকিস্তন সেটা এখন হয়েছে বাংলাদেশ। ধর্মীয় গোষ্ঠী হিসাবে মুসলমান ছিল নব্বই ভাগ। এখনো তাই রয়েগেছে। গরিষ্ঠ মুসলিম জনগোষ্ঠীর কারনে এলাকাটা এক সময় পুর্ব পাকিস্তান,আবার সেই একই কারণে হয়েছে সাধীন বাংলাদেশ।
একক স্বতন্্র চেতনায় উদ্ধুদ্ধ হয়ে একটা মুসলিম দেশে থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে আর একটা স্বাধীন মুসলিম দেশের জন্ম হয়েছে।এই বিচ্ছিন্নতা সাভাবিক রাজনৈতিক পথে হয়নি হয়েছে বরং হয়েছে একটা রক্তয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে। ইসলামের শত্র“রা একে ইসলামী আদর্শবাদ ও মুসলিম ভ্রাতৃত্ববোধের বিরুদ্ধে একটা বিজয় মনে করেছিল। কিন্তু আসলে তা হয়নি। স্বধীনতা লাভের তিন দশক পার হবার পর আজও ইসলামী চেতনা ও মুসলিম ভ্রাতৃত্ববোধের েেত্র এ ভুখন্ডের মুসলমানদের মধ্যে কোন কমতি দেখা যাচ্ছেনা।
এটা ইতিহাসেরই একটা অমোঘ সত্য। আসলাম থেকে মুসলমানের জন্ম। মুসলমান ইসলামের সাহায্যে বেছে থাকে এবং ইসলামের সাহায্যে উন্নতি অগ্রগতি লাভ করে। ইসলাম থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলে মুসলমানের অস্তিত্বই বিলুপ্ত হয়ে যায়। তাই মুসলমানদের রাষ্ট বা দেশ যতগুলো হকনা কেন এবং মুসলমানদের একটা দেশ ভেঙ্গে তিনটে হয়ে গেলেও তার ফলে তাদের ইসলামী চেতনা ও ইসলাম প্রীতিতে চিড় ধরেনা । এজন্য একটা মুসলিম দেশের বুকচিরে বাংলাদেশ নামে আর একটা মুসলিম দেশের জন্ম হলেও এদেশের মুসলিম জনতার ইসলামী চেতনা ও ইসলাম বিশ্বাস আগের মতই অপরিবর্তিত রয়েগেছে।মুসলমান বাংলাদেশী হক ,ভারতীয় হক ,নেপালী হক, তারা পুর্বেও একটা বিশাল জনপদ ভারতবর্ষ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে অপোকৃত ছোট ছোট স্বতন্ত্র দেশে পরিণত হয়েছে বলে তাদেও পুর্ব পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশে উত্তরণ তাই এদেশের ইসলামী চেতনায় পরিবর্তন আনেনি।
ঈসায়ী তের শতকের শুরুতে উপমহাদেশের গঙ্গা-ব্রপুত্রের এ অববাহিকায় প্রথম যে বিধিবদ্ধ ইসলামী সমাজ গঠনের সুচনা হয়েছিল এবং যার পেছনে রাস্ট্রশক্তির পুর্ন সহয়তা কাজ করছিল, সে সমাজ দিনের পর দিন বলিস্ঠ স্ফীত ও প্রসারিত হচ্ছিল। ইসলামী জ্ঞানচর্চা এবং জীবনধারা ও চারিত্র্যনীতির নিয়মিত ও লাগাতার অনুশীলনের মাধ্যমে সমাজের ইসলামী বৈশিস্টগুলি সুস্পষ্ট হয়ে উঠছিল। এটা হাজার বছরের প্রক্রিয়া। দু-চার দশক বা বিচ্ছিন্ন কোনো এক শতাব্দীকালের কোনো থিওরী বা দার্শনিক মতবাদেও পরী নিরীা নয়। হাজার বছরের প্রক্রিয়ায় এর শিকড় পাতালের গভীরতর দেশে প্রবেশ কওে মজবুতভাবে জেকে বসেছে। এর শাখা প্রশাখা ভুপৃষ্ঠে দুর দুরান্তে প্রসারিত হয়েছে। কাজেই একেই সহজেই উতপাটিত করা সম্ভব নয়।
বাংলাদেশের এই ইসলামী আদর্শবাদেও মজবুত ভিত্তি বাংলাদেশী জাতিসত্তাকে মহিমাম্বিত ও বলিষ্ঠতর করেছে। বিগত অন্তত পাচ হাজার বছর থেকে গঙ্গা-ব্রপুত্রের বদ্বীপের এ ক্রমবর্ধমান এলাকাটির পরিচিতি গড়ে উঠেছে। পাচ হাজার বছর পুর্বে উপমহাদেশে উত্তর পশ্চিম অঞ্চলে সিন্ধু তথা দ্রাবিড় সভ্যতার সাথে বাংলাদেশের পুর্বাঞ্চলের ময়নামতি সভ্যতার মিল দেখা গেছে। এর উত্তর অঞ্চলে গৌড় সভ্যতাও প্রাচিন। খ্রিষ্টপুর্বকালের বাংলা বলতে এই গৌড় বাংলাকেই বুঝানো হতো। দেিনর বদ্বীপ এলাকার বিপুল অংশ তখনো ছিল ইতিহাসের অপরিচিত গর্ভে । প্রাগৈতিহাসিক বাংলা বলতে আমরা দ্রাবিড়ীয় বাংলাকেই চিহ্নিত করতে পারি। আর ইতিহাসের উপস্থিতি সাড়া পাওয়া যায় বিজেতা আলেকজন্ডারের ভারত আক্রমনকালে বাংলার সুবিশাল ও দুর্জয় গজবাহিনীর আলোচনায় । প্লীনী প্লুতর্ক ইত্যাদি সমকালিন ও পর্বতী কালিন গ্রীক ভুগোল ও ইতিহাসবিদগন তাদের গ্রন্থে প্রায় দুইহাজার বছর আগের বাংলা এলাকা ,জাতীসত্তা ও রাষ্ট্রশক্তির প্রসঙ্গ উত্থাপন করেছেন। সময়ের তার পুর্ববর্তী অথবা পরবর্তী কালে ভারতবর্ষীয় আর্য পুরাণ গড়্রন্থগুলিতেও বাংলার ও বাংলার অধিবাসীদেও প্রসঙ্গ উত্থাপিত হয়েছে। এই পুরাতন গ্রন্থগুলি ঐতিহাসিক কাল নির্ণয় প্রশ্নবিদ্ধ হলেও এর সাংস্কৃতিক মুল্য অস্বীকার করার উপায় নেই। এগুলিতে উপমহাদেশের এই এলাকার আর্য ও দাবিড়দের দের মধ্যে একটা জাতীগত ,সামাজিক সাংস্কৃতিক দ্বন্দেও ধারাবাহিকতার সন্ধান পাওয়া যায়।
এর পর আসি আমরা জৈন ও বৌদ্ধ প্রভাবিত বাংলায় । এতদিনে আমরা ইতিহাসের যুগে প্রবেশ করতে পেরেছি। বৈদিক আর্য ধর্মানুসারী রাজা শশাংকের জুলুম শাসনের পর সারা এলাকা জুড়ে যে মাৎস্যান্যায় দেখা দেয় তার মধ্য দিয়ে এগিয়ে আসে বৌদ্ধ পাল যুগের শাসন। ততদিনে এশিয়ার আরব ভুখন্ডে ইসলাম রবির উদয়ের পর সারা আকাশ তারা আলয় ঝলমল করে উঠেছিলো। মুসলমানরা দিকে দিকে ইসলামের বিজয়ের অভিযান চালাচ্ছিল। এই অভিজানে সর্বত্র তলোয়ার ব্যাবহ্নত হয়নি। অভিজানের মুল শক্তি ছিল আল্লাহর কিতাব আলকোরান এবং আমাদের প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মাদ (সাঃ) এর আর্দশ ও চরিত্র নীতির আদলে গঠিত একটি মানব গোষ্ঠীর উন্নত চরিত্র মাধুর্য।
ইসলামপুর্ব কাল থেকে আরবরা বাংলার উপকুল এলাকার সাথে পরিচিত ছিল। আরব বণিকদেও বাণিজ্য বহর ভারতবষেূও উপকুল এলাকা পেরিয়ে বাংলার উপকুলে পাড়ি দিতো এবং এখান থেকে চীনের পুর্বএলাকা পর্যন্ত তাদেও উপকুল বাণিজ্য বি¯তৃত ছিল। ভারত মহাসাগর বঙ্গোপ সাগর ও চিন সাগরে তাদের বানিজ্য জাহাজ গুলি ঘোরাফেরা করতো। এ দীর্ঘপথে বাংলার উপকুল এলাকা ছিল তাদেও মধ্যবর্তী মনযিল তথা বিশ্রামের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত ও উত্তম এলাকা। তাই কখনো এখানে তাদেও বসবাস দীর্ঘস্থাযী হতো । সে সময় এখানে বিয়ে শাদী কওে তারা আবাসও গড়ে তুলতো । ফলে ইসলামের আবির্ভাবের শুরুতেই প্রত্যেকটি আরবীয় মুসলমানের মনে ইসলামের যে বিদ্যুতপ্রবাহ সঞ্চারিত হয় তা অতি দ্রুত বাংলার উপকুল এলাকায় বি¯তৃত হয় । সে সময়কার সারা বিশ্বেও মানবিক চারিত্রিক, অর্থনৈতিক রাজনৈতিক নৈতিক ও ধর্মীয় সংকটে মানুষেরা এমনি ধরনের একটি সুষম, সুসাঞ্জস্য ও স্বাভাবিক মানবিক ইনসাফভিত্তিক জাগতিক ব্যবস্থ এবং মানুষিক প্রশান্তি বিধানের আধ্যাতিœক ও পারলৌক বিধানের আগমনের অপেয় অধির আগ্রহে প্রহর গুনে চলছিল । বাংলার মজলুম নিপিড়িত মানুষের প্রতিার অবসান ঘটেছিল। ইসলামের আলো তাদের মোন জগতকে যেমন আলোকিত করেছিল তেমনি তাদের তাদের জীবন ধারা ও পরিবর্তন সুচিত হয়েছিল। আর এ পরিবর্তন ইতিপুর্বেকার বৈদিক,জৈন ও বৌদ্ধ সামাজিক পরিবর্তনের তুলনায় অতি সুগভির ও সুদুরপ্রসারি । ফলে পরবর্তী কএকশ বছরের মধ্যে বাংলায় মুসলিম রাষ্ট্রশক্তি গোড়াপত্তনের সাথে সাথেই সারা দেশে ভিন্ন এলাকায় অতি দ্রুত ইসলামী সমাজ ব্যাবস্থা গড়ে উঠতে থাকে। বিজিত মুসলিম নায়কগণ দেশ জয় রাজ্য শাসন ও সিংহাসন দখলে ব্যস্ত ছিলেন। কারন পরিবেশ তাদের অনুকুলে ছিল । স্থানীয় শাষকরা ছিল ব্যর্থ ও ধিকৃত। কাজেই তুর্কি মোঘল পাঠান শাসকগণ তাদেও রাজনৈতিক দ্বন্দ ও মতার লিপ্সা পুর্ণ কওে চলছিল মাত্র।
কিন্ত ইসলামের আলো তার দ্যুতি ছড়িয়ে চলছিল। একের পর এক আকাশের সীমানা আলোকিত হয়ে উঠছিল । গ্রামের পর গ্রাম, জনপদের পর জনপদ, গঞ্জের পর গঞ্জ ,লোকালয় , পল্লী সমগ্র বাংলায় গভির অভ্যান্তরে ইসলামের ন্যয় ও সৌভ্রাতৃত্বেও বাণী ঝংকৃত হচ্ছিল। হ্নদয়ের আগুন ছিল জঙ্গলের আগুন। জঙ্গলে আগুন গাছে গাছে ছড়িয়ে পড়ে। একের উত্তাপে আর একটি উত্তাপ্ত হয়। বাংলার মুমিন মুসলমানের আগুন এক মুসলমানের হ্নদয় হতে আর এক হ্নদয়ে ছড়িয়ে পড়ছিল অতি দ্রুত। যেন এ আগুনে ঝলসে উঠার জন্য সবাই অপো করছিল। কুফরী ,মুসরিক , সামাজিক বৈষম্য, মানুষে মানুষে উচু নিচু ভেদাভেদ, মানুষকে দেবতা ভাবা আবার মানুষকে ইতর পশুর ন্যয় ভাবা মানবতার অবমাননা তথা সকল প্রকার সামাজিক অন্যায় অবিচার অন্ধকার বিবরে মুখ লুকাচ্ছিল। ইসলাম আগমনের ফলে এই সব দুর হয়ে গিয়াছিল। মানুষ হয়ে গিয়াছিল মানুষের ভাই ভাই ,প্রকৃত মানুষ।
বাংলার জনপদে এক নুতন সভ্যতার জন্ম হলো। ইসলামী সভ্যতা , ইসলামী সমাজ । আজকের বাংলাদেশের মুসলমানরা এবং মুসলিম সমাজ তারই উত্তরসুরি। ইসলামী সভ্যতা ও সমাজের একটি বিষ্টি রুপ বৈচিত্র ওকাঠামো রয়েছে। এর গুনাবলি কোরান ও সুন্নার রঙ্গে রঙ্গিত। এতে গুনগত পরিবর্তন আসে কেবল মাত্র কোরান ও সুন্নার পথে। কোন অমুসলিম সমাযের প্রতি এর কোন আক্রশ বা রেসারেসি নেই। যে কেউ এর আলো গ্রহন করতে পারে। কিন্তু অন্ধকারে একে শরিক করার অধিকার কারো নেই।
বাংলাদেশে যে জাতীসত্তার বিকাশ ঘটেছে সেটা হচ্ছে ইসলামী জাতিসত্তা । আমাদের জাতিয় জীবনে দশ ভাগের নয় ভাগই এর অবস্থান । বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির এই জাতিসত্তার সার্থক উত্তরসুরি।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




