somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

স্বামীর দ্বিতীয় বিবাহ যা প্রথম স্ত্রীর জিহাদ স্বরূপ - পর্ব ১

২০ শে ডিসেম্বর, ২০১২ সকাল ১০:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



এই লেখাটিতে একজন নারীর আবেগ এবং অভিজ্ঞতা সমূহ তুলে ধরা হলো যার স্বামী দ্বিতীয় বিবাহ করেছিলো । প্রথম স্ত্রীর কস্টকর আবেগ অনুভূতি সমূহ এবং কিভাবে রাতারাতি তার অবস্হার পরিবর্তন হয়ে গিয়েছিলো মূলত তাই তুলে ধরা হবে এই লেখাতে। স্বামীর দ্বিতীয় বিবাহ প্রথম স্ত্রীর উপর বিরাট এক পরীক্ষারূপে আর্বিভূত হয় এবং এই কষ্টকর অভিজ্ঞতার মাধ্যমে আল্লাহ সুবাহানাতায়ালা কিভাবে বহু বিবাহের মত কঠিনতম অভিজ্ঞতা লাভের ভিতর দিয়ে মানুষের মধ্য থেকে তার ভালো বিষয়টা বের করে আনেন তা তুলে ধরা হবে ।


আমার স্বামী যখন আরেকটি স্ত্রী গ্রহণ করে তখন ব্যথা এবং কষ্টের যে তীব্রতা ও গভীরতা আমি পেয়েছিলাম তখন তা আমার কাছে আগে সর্ম্পূণই অপরিচিত ছিলো । আমরা বেশীরভাগই সাধারণতঃ ভালোবাসার মানুষকে হারানোর মত সর্বাপেক্ষা কষ্টকর অভিজ্ঞতার সম্মূখীন হই ।

আমি আজ থেকে পাচ বছর আগে যখন প্রথম এই বই লিখতে শুরু করি তখন পরিবারের তেমন কোন নিকটবর্তী কাউকে হারাইনি যে আমার কোন কষ্টকর অভিজ্ঞতা হবে । স্বামীর দ্বিতীয় বিবাহ এর পর থেকে আমার জীবনে কঠিন সময় পার হয়েছে । এই সময়ের প্রতিটি অবস্হাই ভিন্ন , তবে এটা ঠিক একেক জনের অভিজ্ঞতা একেক রকম । আমার মতে আমার জীবনে স্বামীর দ্বিতীয় বিবাহ-ই হলো সর্বাপেক্ষা কঠিনতম বিষয় যা আমাকে ফেস করতে হয়েছিলো । আল্লাহকে ধন্যবাদ জানাই আমাকে সকল অবস্হায় ধৈর্য্য ধারণ করার মত শক্তি প্রদান করার জন্য ।

আমি পরিস্কারভাবে মনে করতে পারছি সেদিনটার কথা যেদিন আমার স্বামী তার দ্বিতীয় বিবাহের সংবাদটি আমাকে প্রদান করে । আমি, আমার স্বামী এবং বাচ্চারা গাড়ী ড্রাইভ করে বাসায় আসছিলাম । আমার স্বামী গাড়ী পার্ক করে গাড়ীর ভিতরেই আমাকে বলল যে, আমি একজনকে বিবাহ করতে যাচ্ছি । আমি তৎক্ষণাৎ হতভম্ব হয়ে গেলাম । আমি গাড়ী থেকে বের হলাম , দরজা খুলে ঘরে প্রবেশ করলাম । আমার মনে হলো যেন আমি স্বপ্নের ঘোরের মধ্যে আছি । আমার মনে আছে আমি অপেক্ষা করছিলাম তাকে জিজ্ঞাসা করার জন্য যে , তুমি কি ফাজলামী করছ ? কিন্তু তাকে সেটা জিজ্ঞাসা করা হয়নি আর সেটা ফাজলামীও ছিলো না ।



সেই প্রথম রাত্রিটা ছিলো সব থেকে কষ্টের - যদিও আরও অনেক রাত্রিও ছিলো অনেকটা এরকম । আমি আসলে বুঝতে পারছিলাম না কি হচ্ছে এসব আমার ভিতর। যা বুঝতে পারলাম তা হলো চরম ব্যথা, একাকিত্ব এবং বিষন্নতা । একাকীত্বের পর একাকীত্ব - আমি প্রিয়জন কারো সঙ্গ খুব করে চাচ্ছিলাম । এই একাকীত্ব ছিলো নিঃস্ব হয়ে যাবার একাকীত্ব । তখন আমি আবিস্কার করলাম যে আমার আসলে আপন কেউ নেই - একমাত্র আল্লাহ ছাড়া ।

সেদিন রাত্রে আমি একটুও ঘুমাতে পারিনি । আমি শুধু আল্লাহর জিকির করেছি , নামাজ পড়েছি এবং আল্লাহর নিকট কান্নাকাটি করে মোনাজাত করেছি । হাদিসে আছে -

প্রতিটা ব্যথা যা একজন মুসলমান পেয়ে থাকে, এমনকি তা যদি আঙ্গুলে কাটা লাগা মত সামান্য আঘাতও হয় তবু এজন্য তার কিছু গুনাহ মাফ করা হয়ে থাকে । (বুখারী)

আমি প্রচুর কেঁদেছি । অনেকে মনে করে শুধু দুর্বল মানুষরাই কাঁদে । কিন্তু মহানবী (সাঃ) যিনি সর্বোত্তম মানুষ ছিলেন - যিনি ছিলেন আমাদের মডেল , তিনিও উনার সন্তানের মৃত্যুর সময় কেঁদে ছিলেন । এটা দেখে সাহাবীরা বিস্ময় প্রকাশ করলে তিনি বলেছিলেন, এটা হলো কষ্ট ও দয়ার কান্না । যারা দয়া দেখায় না আল্লাহও তাদেরকে দয়া দেখান না ।

প্রিয় কোন কিছু হারানোর ফলে দুঃখ এবং বিমর্ষতা হলো মানুষের সাধারণ প্রতিক্রিয়া । কান্নাটা তাই খুবই সাধারণ । বিষন্ন হওয়াও সাধারণ ব্যাপার। কিন্তু এটা আবার এমন একটা সময় যখন শয়তানের খারাপ যড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সতর্ক হওয়ারও সময় । মানুষের উপর শয়তানকে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে এবং সে আমাদের দুর্বলতা সমূহও জানে । এই রকম কঠিন অবস্হা হলো তার একটা সুযোগ নেয়ার মোক্ষম সময় । যেই রাত্রে আমার স্বামী দ্বিতীয় বিবাহ করার জন্য আমাকে ছেড়ে গেল, সেই রাত্রে আমি চিন্তা করছিলাম গলায় দড়ি দিব নাকি ধৈর্য্য ধারণ করব । আমার বার বার মনে হচ্ছিল আমার আর বেচে থেকে কি লাভ ? দয়াময় আল্লাহ আমার উপর রহম করলেন এবং আমাকে ধৈর্য্য ধারণ করার শক্তি দান করলেন । আমি খারাপ চিন্তা থেকে নিজেকে মুক্ত করলাম ।

মহানবী (সাঃ) বলেছেন,

"ধৈর্য্যই হলো কঠিন সময়ে টিকে থাকার প্রথম উপায়" (বুখারী)

প্রথম দিন থেকে আমার উপর যে কঠিন সময় গিয়েছে , আমি অনুভব করি যে তখন থেকে আল্লাহ আমাকে ধৈর্য্য ধারণ করার অসীম শক্তি প্রদান করে আমার প্রতি করুণা করেছেন । আল্লাহ ভালো জানেন ।

এই কঠিন সময়ে আল্লাহকে স্মরণ করার কোন বিকল্প নেই । মহানবী (সাঃ) আমাদের কিছু দোয়া শিখিয়ে দিয়েছেন কঠিন সময়ে পাঠ করার জন্য । হাদীস অনুসারে কঠিন সময়ের দোয়াগুলো হলোঃ

"ওহ আল্লাহ ! তোমার দয়ার উপর আমার আশা । সুতরাং আমাকে আমার ইচ্ছার উপর ফেলে রেখো না বরং তুমি আমার কষ্ট দূর করে দাও । তুমি ছাড়া আর কোন সৃষ্টিকর্তা নেই ।" (আবু দাউদ)

"হে চিরন্জীব ! তোমার দয়া ভিক্ষা চাচ্ছি । (তিরমিযি)


"আল্লাহ ছাড়া আর কোন মাবুদ নেই, তিনি সুমহান এবং করুণাময় । আল্লাহ ছাড়া আর কোন মাবুদ নেই । তিনি মহান আরশের অধিপতি । আল্লাহ ছাড়া আর কোন মাবুদ নেই , তিনি আসমান ও জমিনের সৃষ্টিকর্তা এবং সমুজ্জ্বল আরশের অধিপতি । " (বুখারী, মুসলিম)



স্বামীর দ্বিতীয় বিবাহের মত কঠিন সময়ে আমাদের টিকে থাকার মত সকল অস্ত্রই ব্যবহার করা উচিত এবং আমাদের তখন এটা ভুলে গেলে চলবে না যে কেন আমরা এখানে - শুধুমাত্র আল্লাহর ইবাদত করার জন্য ।

যখন আমি দেখলাম আমার স্বামী বিয়ের পর তার দ্বিতীয় স্ত্রীকে ঘরে নিয়ে আসছে সেই মুহুর্তটা ছিলো অন্যতম কঠিন সময় । তখন আমার মনে হচ্ছিল আমি কি কি করতে পারি আমার মনের রাগ দেখানোর জন্য । নিজেকে ধরে রাখা খুব কষ্টকর ছিলো । এবারও আল্লাহর অসীম অনুগ্রহে ধৈর্য্য ধারণ করলাম । যখন আল্লাহর কাছে বার বার সাহায্য চাওয়া হয় তখন তিনি সত্যিই সাহায্য করেন এবং আশ্চর্য্য হয়ে যেতে হয় তিনি কিভাবে আমাকে শক্তি দিয়েছিলেন তখন। উনি প্রকৃতপক্ষেই সব কিছুর উপর ক্ষমতাবান ।

একই ঘরে বাস করেও যেন নিজেকে পরাধীন মনে হচ্ছিল । নিজেকে সব কিছূর থেকে তুচ্ছ মনে হচ্ছিল । আমি যথা সম্ভব স্বামীর নতুন স্ত্রীকে এড়িয়ে যাচ্চিলাম । সেও পারতঃ পক্ষে আমার সাথে কথা বলত না । আমি আস্তে আস্তে অন্য সব কিছুর উপরও আগ্রহ হারিয়ে ফেলছিলাম । যদিও আমার প্রচন্ড রাগ হচ্ছিল এবং মনে হচ্ছিল আমাকে প্রতারিত করা হয়েছে, আমাকে অপমানিত করা হয়েছে । নিজের মনকে শক্ত করলাম এবং বিষন্নতা থেকে মুক্ত থাকার জন্য পরিচিত অন্যান্য সবার সাথে মেলামেশা শুরু করলাম । কারণ বেচে থাকতে হবে এবং নিজেকে শেষ করে দেয়া যাবে না । কিন্তু তারপরও এক বছর পর আমার মনে হচ্ছিল আমি সবার সাথে যত কম মিলামেশা করতে পারি ততই যেন ভালো । সবার সাথে আগের মত স্বাভাবিক হতে পারছিলাম না । নিজেকে লুকিয়ে রাখতে পারলেই যেন ভালো মনে হতো ।

চলবে....
সংগৃহীত এবং অনুদিত ।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে ডিসেম্বর, ২০১২ দুপুর ১২:২৫
৮টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন জুন, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৯

ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

×