somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্প : কাঠের পা

০৬ ই জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ১১:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


(একটি মন ভালো করা গল্প)
সূর্য কি অস্ত গেছে? কে জানে! আমার ঘর থেকে আকাশ দেখা যায় না। বাইরের আলো এ ঘরে পৌঁছয় না। ফলে রাতই হোক বা দিন আমার ঘরে কৃত্রিম আলো।
.
কতদিন শুয়ে আছি বিছানায়? দশ মাসের বেশি হবে। আমার জীবনটা সিগনালের লাল আলোয় আটকে গিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, দাঁড়িয়েই আছে। সিগনাল আর কোনও দিন সবুজ হবে না।
বাবা ঘরে এসে বলল, "হ্যাঁ রে বাথরুম করবি?"
বুড়ো ঢ্যাঙা মানুষটা কুঁজো হয়ে গেল এই ক'মাসেই। আগে কেমন সোজা হয়ে দৃপ্ত ভঙ্গীতে হাঁটত।
আমি ঘাড় নেড়ে হ্যাঁ বললাম। বাবা নীচু হল খাটের তলা থেকে ইউরিন পট নিতে। এক ছাব্বিশ বছরের যুবক অসহায় ভাবে সেইদিকে তাকিয়ে রইল।
.
সেদিনটা কখনও ভুলব না। ভয়ংকর সেই দিনটাকে ভুলতে চাইলেও ভুলতে পারব না আজীবন।
আমার সাইকেলের পেছনে একটা ট্রাক ধাক্কা মারল। ব্যাস তারপরেই সব অন্ধকার। একটা সবুজ রঙের ট্রাক, জ্ঞান হারানোর আগে এক পলকের জন্য শুধু দেখেছিলাম।
জ্ঞান যখন ফিরল তখন দেখলাম আমি হাসপাতালের বেডে শুয়ে আছি। প্রথমে কিছু বুঝতেই পারিনি। আরও অনেক পরে বুঝলাম আমার পা নেই। হাঁটুর ওপর থেকে দুটো পা'ই নেই।
.
বাবা একটু পরে আবার এল খবরের কাগজটা নিয়ে। একটা খবর দেখিয়ে বলল, "এটা পড়েছিলি?"
আমি হেডলাইনটা দেখলাম।
'শারীরিক প্রতিবন্ধীর শৃঙ্গ জয়।'
আমি পড়িনি। পড়ার বিন্দুমাত্র ইচ্ছেও নেই। তবু বললাম, "রেখে যাও, দেখব।" বাবা খুশি হয়ে চলে গেল।
এই ধরণের কিছু খবর, কাগজে বেরোলেই বাবা আমাকে পড়তে বলে। কখনও বিশেষ বিশেষ খবরগুলো পেন দিয়ে আন্ডারলাইন করে আমাকে দিয়ে যায়।
আগে, মানে দশ মাস আগে খবরের কাগজ খুলে সোজা খেলার পাতায় চলে যেতাম। এখন ফুটবলারদের সুঠাম পা দেখলে আমার ভেতরটা যন্ত্রণায় দুমড়ে-মুচড়ে যায়। তাই খবরের কাগজ উল্টেও দেখি না।
.
কৃত্রিম দুটো পা রাখা আছে এক ধারে। পরলেই অসহ্য ব্যথা। বাবার সাহায্যে একটুখানি পরে নিয়েই আমি খুলে ফেলি। বাবা বলে, "চেষ্টা কর, ঠিক পারবি।"
এত যন্ত্রণা! আমি পারি না। কোনও দিন পারব না।
.
ঘরে খুব ইঁদুর হয়েছে। ইঁদুর ধরা কল পাতা হয়েছে। রাতে একটা ইঁদুর পড়ে গেল কলে। আমি সেদিকেই তাকিয়ে রইলাম। বেচারার দুটো পা আটকে গেছে কলে। প্রাণপণ ঝাপটাচ্ছে, পা ছাড়ানোর চেষ্টা করছে।
বাবা বলল, "থাক ওখানেই, কাল সকালে ফেলে দেব।"
আমি যতক্ষণ জেগে ছিলাম, অপলকে ওই ইঁদুরটাকেই দেখছিলাম। দেখছিলাম ওর লড়াই। ও চেষ্টা করেই যাচ্ছে নিজেকে ছাড়ানোর। কিন্তু পারছে না। পারবে না, পারার কথা নয়।
.
সকালে ঘুম ভাঙতেই ইঁদুর কলের দিকে চোখ চলে গেল। নাইট ল্যাম্পের নীলাভ আলোয় দেখলাম ইঁদুরটা নেই! আমি তাড়াতাড়ি বেড সুইচ অন করে টিউবলাইটটা জ্বাললাম।
নেই! শুধু পা দুটো পড়ে আছে!
বাবাও অবাক হয়ে গেল। সারা বাড়ি খুঁজল। কোথাও ইঁদুরটাকে দেখতে পেল না। দুটো পা ছাড়াই অন্য দু-পায়ে ঘষটে ঘষটে পালিয়েছে!
.
একটা ইঁদুর এত জীবনীশক্তি পেল কেমন করে? কেমন করে?
আমি "বাবা" "বাবা" করে চেঁচিয়ে ডাকতে বাবা পড়ি-মরি করে দৌড়ে এল। টেবিলের ওপর পড়ে থাকা প্রস্থেটিক পা দুটোর দিকে ইঙ্গিত করে বললাম, "ওগুলো নিয়ে এসো..."
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ১১:২৫
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=আকাশে তাকিয়ে ডাকি আল্লাহকে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০১


জীবনে দুঃখ... আসলে নেমে
শান্তি গেলে থেমে;
আমি বারান্দায় দাঁড়িয়ে হই উর্ধ্বমুখী,
আল্লাহকে বলি সব খুলে, কমে যায় কষ্টের ঝুঁকি।

আমি আল্লাহকে বলি আকাশে চেয়ে,
জীবন নাজেহাল প্রভু দুনিয়ায় কিঞ্চিত কষ্ট পেয়ে;
দূর করে দাও সব... ...বাকিটুকু পড়ুন

"ছাত্র-জনতার বেপ্লবের" ১৮ মাস পরে, আপনার ভাবনাচিন্তা ঠিক আগের মতোই আছে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৭



২০২৪ সালের পহেলা জুলাই "ছাত্র-জনতার বেপ্লব শুরু হয়, "৩৬শে জুলাই" উহা বাংলাদেশে "নতুন বাংলাদেশ" আনে; তখন আপনি ইহাকে ব্যাখ্যা করেছেন, ইহার উপর পোষ্ট লিখেছেন, কমেন্ট করেছেন; আপনার... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪০


ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন

টাঙ্গাইল শাড়িঃ অবশেষে মিললো ইউনস্কর স্বীকৃতি

লিখেছেন কিরকুট, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৭



চারিদিকে যে পরিমান দুঃসংবাদ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এর মধ্যে নতুন এক গৌরবময় অধ্যায়ের সূচনা হলো বাংলাদেশের টাঙ্গাইলের তাতের শাড়ি এর জন্য, ইউনেস্কো এই প্রাচীন হ্যান্ডলুম বুননের শিল্পকে Intangible Cultural... ...বাকিটুকু পড়ুন

×