"কখনো দেখেছ ঈশ্বরকে?? কখনো কথা বলেছ তার সাথে?? বুঝতে চেয়েছ তাকে??"
কান্নায় ভেজা কর্কশ বিকৃতস্বরে বলে উঠলেন বৃদ্ধ।
আমি তখন তীব্র ক্ষোভে তাকিয়ে ছিলাম অর্ধভুক্ত মৃত হরিণশিশুটির দিকে। ক্ষোভে, যন্ত্রণায় থুতু ফেলছিলাম। বলে যাচ্ছিলাম "ঘৃণা করি সেই বিকৃতমস্তিষ্কটিকে যে এই নৃশংসতা সৃষ্টি করেছে।"
তখন বৃদ্ধ কেঁদে উঠে চিৎকার করে বলে উঠলেন, "কখনো দেখেছ........"
আমি ঘৃণামিশ্রিত উত্তর করেছিলাম, "নাহ্ দেখার ইচ্ছাও করিনা সেই ঘৃণিত পাশব প্রবৃত্তিটিকে।"
বৃদ্ধ বললেন, "এসো আমার সাথে।"
তারপর আমাকে বনজঙ্গল ভেঙে নিয়ে গেছিলেন এক অন্ধকার গুহায়.....
তারপর বলেছিলেন, "দেখো....."
শিকার দেখে এসেছিলাম। এবার দেখলাম শিকারীকে। ঘোলাটে চোখ তুলে শ্বদন্ত বার করতে চাইল সে। কিন্তু পারল না। আমাকে দেখে উঠতে চাইল। ব্যর্থ হল। এককালের দুর্ধর্ষ শিকারী আজ অথর্ব। শিকারের ক্ষমতাহীন তাই মৃত্যুর প্রতীক্ষারত।
আমি অবাক হয়ে তাকালাম বৃদ্ধের দিকে। বৃদ্ধ জলভরা চোখে সেদিকে তাকিয়ে থেকেই বললেন, "কখনো নিজ সন্তানের মৃত্যু পরোয়ানা লিখেছ নিজে হাতে? আমাকে লিখতে হয় প্রতিনিয়ত, প্রতিমুহুর্তে। কখনো দন্ডাজ্ঞাপ্রাপ্ত সন্তানের জল্লাদ হয়ে দেখেছ?? আমাকে হতে হয় প্রতিদিন, প্রতিক্ষণে.... হয় শিকারের, অথবা শিকারীর। কারন..... কারন সৃষ্টির গতিকে রক্ষা করার প্রতিজ্ঞায় বদ্ধ আমি। আমাকে মুক্তি দাও... মুক্তি দাও আমায়... দেবে যুবক?? তোমায় নিজ অমরত্ব দান করব আমি"...
আমি অবাক হয়ে দেখছিলাম, ঝরঝর করে কাঁদছেন নিজের শক্তির কাছেই নিজে পরাজিত, নিজপ্রতিজ্ঞাবলেই অসহায় সর্বশক্তিমানরূপে পরিচিত ঈশ্বর। তার চোখের জল মিশে যাচ্ছিল পৃথিবীর তিনভাগ জলে... গড়ে তুলছিল নদী, সাগর, মহাসাগর.... যেখানে বহু বহু কাল আগে সৃষ্টি হয়েছিল প্রথম প্রাণ। আর তখন..... তখন শিকার ও শিকারী উভয়েই মিলেমিশে মিশে যাচ্ছিল মাটিতে.... গড়ে উঠছিল মহাদেশ.... দেশ..... জনপদ............. ........... .......
......
আমি অমরত্বের অভিশাপ গ্রহণে স্বীকৃত হইনি। মুক্তি দিইনি ঈশ্বরকে।
নিজ সৃষ্টির পাপের দায় বহন করুক সে। সেটা তার প্রাপ্য......
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ৯:০১