বিভিন্ন সাইজের বিভিন্ন দামের ইলিশ। আজ ইলিশ নেবই। বউ অবশ্য পই পই করে বারণ করেছে।
ওর বক্তব্য হল, এই সময় এত দাম দিয়ে ইলিশ খাওয়া ঠিক নয়।
আমি ভাবলাম যা হয় হোক আজ একটা নিতেই হবে। আমি একটা কেজি দেড়েকের ইলিশ নিলাম। ষোলোশো টাকা করে কেজি। চব্বিশশো টাকা দিয়ে কিনলাম। কাটিয়ে-কুটিয়ে পিস করিয়ে নিলাম।
.
মাছের পরিমাণ আর মাছের মাথার সাইজ দেখেই বউ চেঁচিয়ে উঠল, "তুমি সেই একগাদা দাম দিয়ে ইলিশ আনলে? তোমাকে বারণ করলাম তাও আনলে? কত পড়ল শুনি?"
আমি বললাম, "আরে দাম শুনে কী হবে। রোজ কী ইলিশ খাচ্ছি নাকি! আর আজ সস্তাও হয়েছে খুব।"
বউ পিস গুনতে গুনতে বলল, "ওরে বাবা এ মাছ নির্ঘাত দু কেজির!"
আমি বললাম, "না না দেড় কেজি। আর বাংলাদেশ থেকে প্রচুর আমদানি হয়েছে বলে দামও পড়ে গেছে। একেবারে জলের দর!"
বউ ভুরু কুঁচকে বলল, "কত পড়ল বলছ না কেন?"
আমি বললাম, "বারোশো টাকা। দেড় কেজির ইলিশ মাত্র আটশো টাকা করে কেজি বলেই তো নিলাম। নইলে কী আর নিতাম?"
দাম কমিয়ে বলতেই হল। নইলে বউ সারাটা দিন ভ্যাজর ভ্যাজর করে কানের পোকা খেয়ে দেবে। শান্তিতে খাওয়াও যাবে না।
বউয়ের ভুরু আর সোজা হচ্ছে না, বলল, "বলছ কী? দেড় কেজির ইলিশ আটশো টাকা করে? এত সস্তা?"
আমি বললাম, "তা নাহলে আর বলছি কী! ইলিশের দাম এত সস্তা কক্ষনো দেখিনি!"
তারপরেই কথা ঘুরিয়ে বললাম, "আজ ভাপা করবে বুঝলে? তুমি ভাপাটা হেব্বি করো!"
বউ বলল, "ঠিক আছে তুমি এখন যাও, চা, বিস্কুট শেষ হয়ে গেছে। নিয়ে এসো।"
.
বেরোলাম আবার। চকে গিয়ে দেখি ভজহরিদা একজনের সঙ্গে কোভিড-ভ্যাক্সিন নিয়ে গভীর আলোচনায় মত্ত। কাছে গিয়ে দাঁড়াতে শুনলাম ভজহরিদা বলছে, "শালা নাক দিয়ে নাকি ভ্যাক্সিন দেবে! এরপর শুনব পেছনে গুঁজতে হবে ভ্যাক্সিন!"
ভদ্রলোককে চিনি না, ভজহরিদার কথা শুনে হাসতে হাসতে চলে গেলেন।
ভজহরিদার সঙ্গে গ্যাঁজাতে গ্যাঁজাতে ঘন্টা দেড়েক কোথা দিয়ে চলে গেল। তারপর চা-বিস্কুট কিনে বাড়ি ফিরলাম।
.
বউকে বললাম, "ফ্রিজে ভাগ করে রেখে দিয়েছ তো? কদিন জমিয়ে শুধু ইলিশ খাব। জি বাংলার 'রান্নাঘর' দেখে দেখে যত রকম রেসিপি শিখেছ সব এক এক করে বানাবে।"
বউ বলল, "পাগল! ওই মাছ আমি রাখব? সব বিদেয় করেছি?"
বলে কী! আমার সামনে আলমারি, খাট সব একবার বোঁ করে ঘুরে গেল!
চেঁচিয়ে উঠলাম, "বিদেয় করেছ মানে কী?"
বউ বলল, "বাবা এসেছিল। বলল আটশোর ইলিশ মানে নির্ঘাত পচা। বাবাও বাজারে গেছিল। বলল টাটকা বাংলাদেশি ইলিশের দাম দেড় হাজার থেকে দু হাজার টাকা। জামাই পচা ইলিশ এনেছে নইলে অত কম দামে কেউ দেবে না। তখন কী করি, অতটা মাছ। তো মণ্ডলবউদি একদিন দুঃখ করছিলেন, ওঁর মাছ এনে দেওয়ার কেউ নেই। ইলিশ ওঁর খুব প্রিয়। তাই ফোন করে ডেকে ওঁকেই দিয়ে দিলাম পুরো মাছটা। আমি বউদিকে স্পষ্ট বলে দিয়েছি, মাছ খারাপ হলে আমায় দোষ দিতে পারবে না। আমার স্বামী পচা মাছ আনায় এক্সপার্ট। বউদি অবশ্য টুপ করে বারোশো টাকা দিয়ে মাছ নিয়ে চলে গেলেন। বুঝবেন যখন ভাজা হবে ওই পচা মাছ! যাই বলো ওই সস্তার পচা মাছ আমি যে গছাতে পেরেছি এই ঢের! এই নাও বারোশো টাকা!"
আমি রাগে দুঃখে মাথার চুল ছিঁড়তে লাগলাম... বউ থামিয়ে না দিলে মাথায় আর এক গাছি চুলও থাকত না...
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ২:১৬