somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রম্য : রবীন্দ্রসংগীত লেখার সহজ উপায় ! B-)

২৬ শে অক্টোবর, ২০২৩ রাত ১১:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


রবীন্দ্রসংগীত লিখতে গেলে প্রথমে অ, আ, ক, খ ইত্যাদি বর্ণগুলো এবং স্ক, হ্য, ক্ষ ইত্যাদি যুক্তবর্ণগুলো লেখা শিখে নিতে হবে। রবীন্দ্রনাথের ‘সহজ পাঠ’ অথবা রবীন্দ্রনাথের বাবার বন্ধু ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ‘বর্ণপরিচয় প্রথম ও দ্বিতীয় ভাগ’ বইগুলো থেকে সহজেই এগুলো শিখে নেওয়া যেতে পারে।
এটা লেখা অভ্যাস হয়ে গেলে তারপর রবীন্দ্রসংগীত লেখা শুরু করা যেতে পারে। এর জন্য মূল উপকরণ রবীন্দ্রসংগীতে ব্যবহৃত কিছু শব্দ বা শব্দবন্ধ। তবে সেগুলো সংগ্রহ করার আগে জানতে হবে আপনি যে রবীন্দ্রসংগীতটা লিখতে চান, সেটা কোন্‌ পর্যায়ের। প্রেম-পূজা-প্রকৃতি-বিচিত্র ইত্যাদি অনেকগুলো পর্যায়ের রবীন্দ্রসংগীত অলরেডি বাজারে আছে। আপনার রবীন্দ্রসংগীতটাকেও ওগুলোর মধ্যেই ফিট করতে হবে। নতুন কোনো পর্যায়, যেমন সুমন পর্যায়, অনুপম পর্যায়, অরিজিৎসিং পর্যায় ইত্যাদি এক্ষেত্রে অ্যালাউড নয়।
ধরে নেওয়া যাক আপনি প্রেম পর্যায়ের রবীন্দ্রসংগীত লিখতে চান। যে পর্যায়েরই চান, আপনাকে জোগাড় করতে হবে অন্যূন হাফ ডজন রবীন্দ্রসংগীত, যার অর্ধেক সেই পর্যায়ের হ’লে ভালো হয়। মানে প্রেম পর্যায়ের লিখতে হলে প্রেম পর্যায়ের তিনখানা আর বাদবাকি পর্যায়গুলো থেকে বাকি তিনখানা জোগাড় করুন।
ধরে নিচ্ছি আপনি জোগাড় করেছেন এইগুলো –
প্রেম পর্যায় থেকেঃ
১। আমার পরান যাহা চায় তুমি তাই, তুমি তাই গো
২। তুমি রবে নীরবে হৃদয়ে মম
৩। ঘরেতে ভ্রমর এল গুনগুনিয়ে
পূজা পর্যায় থেকে
৪। আমার হৃদয় তোমার আপন হাতের দোলে দোলাও
প্রকৃতি পর্যায় থেকে
৫। আকাশভরা সূর্য-তারা বিশ্বভরা প্রাণ
বিচিত্র পর্যায় থেকে
৬। দিনগুলি মোর সোনার খাঁচায় রইল না
তাহলে আপনার ইনগ্রেডিয়েন্টস রেডি। এবার দরকার রেসিপি। রান্না করার আগে সবজি যেমন দরকার অনুযায়ী খোসা ছুলিয়ে কেটেকুটে ধুয়ে দরকারে কিছু মশলা মাখিয়ে মজাতে হয়, রবীন্দ্রসংগীত লিখতে হ’লেও এই গানগুলো থেকে খোসা বাদ দিয়ে এক একটা গান থেকে পাঁচটা করে বাছাই করা শব্দ বা শব্দবন্ধ তুলে আনতে হবে। কিছুদিন প্র্যাকটিশ করতে থাকলেই এই ব্যাপারটাতে আপনি পোক্ত হয়ে যাবেন। আপনার সুবিধার্থে আমি কয়েকটা উদাহরণ সাজিয়ে দিচ্ছি নীচে। এগুলো সবই ওপরের ওই রবীন্দ্রসংগীত কেটেকুটেই তুলে আনা।
১। পরান, সুখের সন্ধানে, হৃদয়মাঝে, রহিব বিলীন, দীর্ঘ রজনী
২। নিবিড় নিভৃত, পূর্ণিমানিশীথিনী, জীবন যৌবন, করুণ আঁখি, অঞ্চলছায়া
৩। ভ্রমর, মাধবী, ফুল-জাগানো, দেয় বুলায়ে, কাজ ভুলায়ে
৪। আপন হাতের দোলে, কথার পাকে, বাঁশির ডাকে, খেলার সাথী, খেলার সে ঢেউ
৫। বিশ্বভরা প্রাণ, হিল্লোল, ভুবন দোলে, চমক লেগে, আমার গান
৬। সোনার খাঁচায়, কান্নাহাসির বাঁধন, ছায়ার পাখি, স্বপন, আকাশ-পারে
কানাঘুষোয় শুনেছেন নিশ্চয় যে রবীন্দ্রসংগীতের যে বাণী, তাতে সাধারণভাবে ছন্দ আর অন্ত্যমিল নিখুঁতভাবে বজায় থাকে। ছন্দটা করায়ত্ত করা অতটা সহজ না হলেও অন্ত্যমিলটা অপেক্ষাকৃত অকঠিন। তবে খাঁচায়-এর সঙ্গে পাছায়, হাতের দোলের-র সঙ্গে ব্যোমভোলে বা আকাশ-পারে-র সঙ্গে ‘বাঁশের ঝাড়ে’ মিল দিতে যাবেন না, ওগুলো অরাবীন্দ্রিক। এটা বুঝতে হ’লে হাল আমলের আধুনিক বাংলা গান শোনা যথাসম্ভব কমিয়ে দিন।
তো আর অপেক্ষা কীসের? এবার এই শব্দগুলো ব্যবহার করে লিখে ফেলুন যা মন চায়। কী বলছেন? একপিস এগজাম্পল না দিলে ধরতে পারছেন না? ঠিক হ্যায়।
ছায়ার পাখি উঠল ডাকি নিবিড় নিভৃত হিল্লোলে
দীর্ঘ রজনী পার হয়ে আজি ফুল জাগানোর কল্লোলে।।
ভুবন দোলে বাঁশির ডাকে;
হৃদয়মাঝে পাইনে তাকে!
পূর্ণিমানিশীথিনী কোন বাঁকে আকাশ-পারে যায় চলে।।
মাধবীকুঞ্জে ভ্রমর যে আজ দেয় বুলায়ে তার গীতি।
খেলার সে ঢেউ চমক লাগায় দেয় ভুলায়ে বার-তিথি।
অঞ্চলছায়া কেটে দিয়ে যায় কান্নাহাসির কোন বাঁধন।
রহিবে বিলীন তার সনে আজি করুণ আঁখির গুঞ্জরণ।
আপন হাতের দোলে যে স্বপন
সুখের সন্ধানে করে বিপণন,
আমার এ গান জীবন যৌবন সঁপে দিয়ে যাই তার কোলে।।
দেখুন, ওপরের পাঁচ-ছয়ে তিরিশটার মধ্যে পঁচিশটা কাজে লাগিয়ে দিয়েছি। সুতরাং এটা রবীন্দ্রসংগীত।
এবার এতে সুর লাগিয়ে গাইবেন? তাহলে আগে আপনাকে জানতে হবে কোন তালে গাইবেন। দাদরা-কাহারবা-তেওড়া-ঝাঁপতালেই রবীন্দ্রসংগীতের নাইন্টি পার্সেন্ট। এর মধ্যে একটা পছন্দ করে আগে সেটা অন্নু মালিকের মতো টেবিল বাজানো প্র্যাকটিশ করে নিন। অভ্যাস হয়ে গেলে আমি ফের এসে শিখিয়ে দেব’খন, ঠিক আছে? =p~
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে অক্টোবর, ২০২৩ রাত ১১:৫৮
৮টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মাদ্রাসা শিক্ষা, বৈশ্বিক রাজনীতি, সহিংসতা ও জঙ্গিবাদ

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৪:৪৫


লেখাটির শুরুতে একটি ভূমিকা দেওয়া যাক। সর্বশেষ দেশে গিয়ে কয়েকদিন গ্রামের বাড়িতে ছিলাম। উত্তরবঙ্গে, নিতান্ত অনুন্নত আমাদের সেই গ্রামে এতগুলো কওমি মাদ্রাসা হয়েছে দেখে অবাক হয়েছিলাম। আগে গ্রামে... ...বাকিটুকু পড়ুন

চোখের জল

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৪৬


সুদীর্ঘ ১৭ বছরের জমে থাকা
বিনম্র চোখের এক কোণে জল!
প্রকাশে এলো এই জনসমুদ্রে-
জনসমুদ্র তুলছে আনন্দাশ্রুর
ঢেউ- দেখছে নতুন ফুলের গন্ধ;
এ নৈঃশব্দের আর্তনাদ বুঝতে
হবে শুধু তোমাকে- আমাকে
গড়ে তুলতে হবে মনুষ্যের প্রণয়ে
সূর্য ভোর- যেখানে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকার মানুষের জীবন

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১৪


ঢাকাতে মানুষ বড় বিচিত্র ভাবে বেঁচে থাকে। নিয়মিত ঢাকার রাস্তার ঘুরে বেড়ানোর কারণে এই রকম অনেক কিছু আমার চোখে পড়ে। সেগুলো দেখে মনে হয় মানুষ কত ভাবেই... ...বাকিটুকু পড়ুন

পৃথিবীর কিছু অঞ্চলে প্রায় সারা বছর বৃষ্টিপাতের কারণ কী?

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪৯

পৃথিবীর কিছু অঞ্চলে প্রায় সারা বছর বৃষ্টিপাতের কারণ কী?



পৃথিবীর কিছু অঞ্চলে প্রায় সারা বছরই বৃষ্টিপাত হয়। মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, আফ্রিকার কিছু দেশ এবং দক্ষিন আমেরিকার কিছু দেশ ও অঞ্চলে বছরের... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশ কখনো এমন করে বলতে পেরেছে কি?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:০৫


ভারতে গরু ও গোমাংস নিয়ে হত্যা বা সহিংসতার নির্দিষ্ট সংখ্যা বলা কঠিন কারণ এটি রাজ্য, সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং 'গরু রক্ষা' বাহিনী ইত্যাদীর কারণে একেক যায়গাতে একেক রকম। ভারত গোমাংস... ...বাকিটুকু পড়ুন

×