
অর্থাৎ জমিদারি না করে কেবল পাবলিক ট্রান্সপোর্টে অফিসে আসতে-যেতে আমার মোট খরচ হচ্ছে ১৬০ টাকা। সাপ্তাহে ছয় দিনে এই খরচ হচ্ছে ৯৬০ টাকা। চার সাপ্তাহে এক মাস হলে এই খরচ এসে দাঁড়াচ্ছে ৪০০০ টাকায়। যদি কোন বিপদ-আপদ হয়, যদি কখনো তাড়া থাকে তখন মোটরবাইকে আসা-যাওয়া করতে হয় সবাইকেই, এছাড়া অফডের দিন তো কোথাও না কোথাও যেতেই হচ্ছে। অর্থাৎ শুধু পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ব্যবহার করে আমার মাসিক যাতায়ত খরচ প্রায় ৬০০০ টাকা!
ঢাকা শহরের অধিকাংশ মানুষের যাতায়ত খরচ এরকমই। যার বেতন ৩০ হাজার টাকা তার বেতনের ২০% খরচ হচ্ছে পাবলিক ট্রান্সপোর্টে। যার বেতন ২০ হাজার টাকা তার ৩০% আর যার বেতন ১৫ হাজার টাকা তার আয়ের ৪০% খরচ হচ্ছে রাস্তায়!
জাতিসংঘের ডেফিনেশন অনুসারে সুন্দর শার্ট গায়ে দিয়ে আর ফেসবুকে চেক-ইন দেয়া আমরা ঢাকা শহরের লোকেরা 'আরবান পোভার্টি', 'সিচুয়েশনাল পোভার্টি' আর 'রেলিটিভ পোভার্টি'-এর অধিকাংশ শর্ত ফুলফিল করি।
কবিতা, সাহিত্য আর দর্শন কপচানো আমরা সবাই আসলে দরিদ্র। নূন্যতম একটা মেডিক্যাল ইমারজেন্সি আসলে আমরা কলাপ্স করি। দেশের ভেতরে একটা চাপা দেয়া দুর্ভিক্ষ চলমান আছে। শহরের অধিকাংশ মানুষ শিক্ষিত হয়ে যাওয়ায় তারা হাউকাউ করে না। আমাদের মায়েরা আমাদের শিখিয়েছেন সরিষার তেল দিয়ে আলু ভর্তা খুব মজার একটা জিনিস।
এই পোশাকি 'মধ্যবিত্ত' তকমা ধরে রাখার ঐকান্তিক প্রচেষ্টা আর আমাদের 'স্যুডো শিক্ষিত ভাব' ধরের রাখার ঐতিহাসিক আকাঙ্ক্ষার কারণেই আমাদের ওপর এইসব অনাচার সহজে চাপানো যায়। বহু রিকশাওয়ালা, জেলে, কারপেন্টার এমনকি অনেকক্ষেত্রে একজন ভিক্ষুকের চাইতে আপনার-আমার আয় কোন ভাবেই বেশি না (ব্যতিক্রম অবশ্যই আছে)। বরং তার নিজের জীবনের উপর নিয়ন্ত্রণ আপনার আমার চেয়ে বেশি।
আর আপনি-আমি-আমরা তাদের মুক্ত করার চিন্তায় গভীরভাবে নিমগ্ন।
অন্যের আগে নিজেদের মুক্ত করার চিন্তা করতে না পারলে আসলে কিছুই পরিবর্তন হবে না। হয় নাই কখনো!
আগে স্বীকার করেন আপনি দরিদ্র। খুব শিগগিরই হবেন অতি-দরিদ্র। আগে স্বীকার করেন দেশে দুর্ভিক্ষ চলছে। স্বীকার করেন আপনার নিজের, নিজের মায়ের, নিজের সন্তানের পর্যাপ্ত পুষ্টির সংস্থান করার মত আয় আপনি করতে পারেন না। স্বীকার করেন আপনার জীবনের নিরাপত্তা নাই। স্বীকার করেন আপনার মধ্যবিত্ত তকমাটা কেবল একটা তকমাই। স্বীকার করেন ইলেক্ট্রিকের প্রিপেইড মিটারে বিকাশে মাসে দেড় হাজার টাকা ভরতে গিয়ে আপনার ফাটে। স্বীকার করেন খোলা আটার দাম কেজিতে পাঁচ টাকা বাড়লে আপনার পাতে রুটি কমে। চালের দাম বাড়লে আপনার চালের মান কমে, ক্রমশ মোটা হয়।
মায়ের ওষুধ কেনার সময় এখন আর আপনি পুরা পাতা কিনতে পারেন না। আপনার কলিজার ওপর দিয়ে কাঁচি চলার মত কইরা স্ট্রিপটা কাটা পড়ে। স্বীকার করেন আজকে আপনার বাপ মারা গেলে বাড়িতে লাশটা এম্ব্যুলেন্সে করে নিয়ে যাওয়ার মুরোদ আপনার নাই। স্বীকার করেন। স্বীকার করেন।
তারপর আলাপের শুরুটা শুরু হবে...
( আমার বন্ধু আরিফ রহমান এর লেখা।)
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই নভেম্বর, ২০২৩ রাত ১২:১৪

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




