somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রম্য : লক্ষ হীরার মাছ !!

১৮ ই নভেম্বর, ২০২৩ রাত ১২:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমাদের বাংলার স্যার তারকবাবু মাধ্যমিক-উচ্চমাধ্যমিকের খাতা দেখতেন। মার্চ-এপ্রিল মাস। খাতা এসে গেলে উনি আমাকে বলতেন বিকেলের দিকে ওঁর বাড়ি যেতে। উনি খাতা দেখতেন, আমার কাজ ছিল নাম্বারগুলোতে যোগের ভুল যাতে না হয়, সেটা দেখা। উনি নাম্বার যোগ দিয়ে লিখেই রাখতেন, আমি সেটা ডাবল-চেক করে দেখতাম ঠিক আছে কিনা।
শুধু কি আর নাম্বার যোগ করতাম? চিত্তাকর্ষক কিছু দেখলে সেটা পড়েও ফেলতাম অবশ্যই। এই খাতা-দেখা থেকে হাতের লেখা পড়ে মর্ম বোঝার অধ্যয়ন হয়ে যেত আমার। তাই পরের দিকে ডাক্তারদের প্রেসক্রিপশন – যদিও সেটা ইংরাজিতে আর খাতাগুলো বাংলায় – বুঝতে অসুবিধা হ’ত না। স্যারদের ক্লাশে পড়ানো থেকে যা শিখেছি, সাহিত্য ও ভাষা তার চেয়ে অনেক বেশি শিখেছি এই খাতা-দেখা থেকে।
সে আপনার চল্লিশ বছরেরও আগের কথা। তার কথা হুবহু নামিয়ে দেব, আমি তো স্বামী বিবেকানন্দর মতো তেমন স্মৃতিধর নই। তবে যেটুকু মনে আছে, একটা উদাহরণ দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করি।
আমাদের সময় অশোকবিজয় রাহার ‘মায়াতরু’ নামে একটা কবিতা ছিল। সেই যে – এক যে ছিল গাছ, সন্ধে হলেই দু-হাত তুলে জুড়ত ভূতের নাচ – সেই কবিতাটা। তার দুটো লাইন ছিল এই রকম -
কোথায়-বা সেই ভালুক গেল, কোথায়-বা সেই গাছ,
মুকুট হয়ে ঝাঁক বেঁধেছে লক্ষ হীরার মাছ।
এই লাইন দুটো তুলে পরীক্ষায় প্রশ্ন এসেছিল, এখানে কবি ‘লক্ষ হীরার মাছ’ বলতে কী বোঝাতে চেয়েছেন?
তো একজন বেশ ফেনিয়ে লিখেছে এর উত্তর। দু-পাতা জোড়া শুধু এরই উত্তর। স্যার তাতে শূন্য দিয়েছেন দেখে বুঝলাম উত্তরটা স্যারের পছন্দ হয়নি। এমনিতে স্যারের কাছে যেটুকু শুনেছিলাম, বাংলা পরীক্ষা বেশ উদারধর্মী। বানান ভুলে সামান্য নম্বর কাটা যায় বটে, তবে হেড-এগজামিনারদের নির্দেশ ছিল, মোটামুটি কেউ যদি প্রশ্ন বুঝতে পারে, তবে তাকে একেবারে নিরাশ না করা। মানে যাই লিখুক, আধ নম্বর দেওয়া যায় আর-কি। স্যার এখানে এতখানি লেখার জন্য আধও দেননি দেখে আমার প্রবল কৌতূহল হ’ল, কী লিখেছে দেখি।
হাতের লেখা যে কাগের ঠ্যাং বগের ঠ্যাং, তাও না। গোটা গোটা অক্ষরে লেখা। দেখে মনে হ’ল মেয়েদের। কিন্তু এ ব্যাপারে বাজি ধরতে গেলে আমাকে অনেকে পুরুষতান্ত্রিক শূকর বলে গালাগালি দিতে পারে ভেবে সেই ঝুঁকি নিচ্ছি না। উত্তরটা পড়ে আমি বেশ মজাই পেলাম, এ জন্যই হয়ত আজও ভাসা ভাসা মনে আছে। বানানগুলোও।
উত্তরদাতা – দাত্রীও হ’তে পারে – শুরুতেই অফেন্সিভ খেলেছে। লিখেছে, কবিদের মনে নানা সময় নানারকম ভাব আসে। তারা সেই অনুজায়ি কবিতা লেখে। আমাদের সার বলেছেন কবিতায় শব্দের মানে বোঝা অনেক কঠিন। তা অনেক রকম হোতে পারে। এখানে উনি কি বোঝাতে চেয়েছেন, সেটা উনিই জানেন। আমি শিসু, এটা তো আমার জানার কথা না।
তবে আগের লাইনে গাছ আছে বলে কবিতায় মিল দিতে উনি মাছ শব্দটা বেবহার করেছেন। গাছের সঙ্গে মাছ মেলে বলে। এর ফলে কবিতাটা সুন্দর হোয়েছে।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে উনি একে লক্ষ হীরার মাছ কেন বলেছেন। এটা একটা অত্তন্তো জটিল প্রশ্ন। মনের ভাব অনুজায়ি কবিতা লেখা হয়। কুমোর পাড়ার গরুর গাড়ি কবিতায় কবি যেমন কুমোর পাড়া শব্দটা বেবহার করেছেন, কিন্তু আমরা জানি কুমোর পাড়া ছারাও কামার পাড়া হয়, জেলে পাড়া হয়, চাসাপাড়া হয়, অনেক রকম হয়। কিন্তু তা শত্তেও তিনি কুমোর পাড়া লিখেছিলেন, কেননা তিনি কুমোরদের দুক্ষ কষ্ট খুব ভালো বুজতেন। কুমোরদের কস্টে তার পরানটা ফেটে যেত। সেই কারনে তিনি কামার পাড়া জেলে পাড়া না লিখে কুমোর পাড়া লিখেছিলেন। এখানেও তেমন এই কবি লক্ষ হীরার মাছ শব্দটি লিখেছেন। আমাদের গ্রামে আমরা রুই মাছ, কাতলা মাছ, ইলিস মাছ, বোয়াল মাছ এইসব খাই। এখানে পুকুরে বা বাজারে আমরা লক্ষ হীরার মাছ দেখতে পাই না। হয়ত কবি শহরের মানুষ, সেখানে লক্ষ হীরার মাছ পাওয়া যায়। এমনিতেই নাম দেখে মনে হচ্ছে মাছটা খুব সুন্দর। আমি জোদিও দেখিনি, তাও লক্ষ হীরার মাছের দুটি চোখ, একটি কাঁটা, দুটি কানকো, দুটি পিঠ অ্যাবং একটি লেজ আছে। এই মাছটি খুবই সুন্দর দেখতে অ্যাবং খুবই সুস্যাদু। এই মাছ ভাজা অ্যাবং ঝোল উভয়ই খাওয়া যায়। এই সব কারনে কবির মুড ভালো থাকায় উনি একে এই সুন্দর কবিতাটায় লক্ষ হীরার মাছ বলেছেন বলে আমার মনে হয়। এর আরও অনেক কারন হোতে পারে।
স্যার পাশে খাতা দেখছিলেন। আমি খুব দুঃখ পাওয়ার ভঙ্গিতে স্যারকে বললাম, স্যার, এতখানি গুছিয়ে লিখেছে, এত সুন্দর বর্ণনা, এতে একেবারে শূন্য দিলেন?
স্যার বললেন, যোগ ঠিক করেছি কিনা চেক করেছিস?
আমি বললাম, স্যার, শূন্য যার সঙ্গেই যোগ করা হোক, তা তো বাড়েও না, কমেও না। =p~ =p~ =p~
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই নভেম্বর, ২০২৩ রাত ১২:২৭
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ঢাকার মানুষের জীবন

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১৪


ঢাকাতে মানুষ বড় বিচিত্র ভাবে বেঁচে থাকে। নিয়মিত ঢাকার রাস্তার ঘুরে বেড়ানোর কারণে এই রকম অনেক কিছু আমার চোখে পড়ে। সেগুলো দেখে মনে হয় মানুষ কত ভাবেই... ...বাকিটুকু পড়ুন

পৃথিবীর কিছু অঞ্চলে প্রায় সারা বছর বৃষ্টিপাতের কারণ কী?

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪৯

পৃথিবীর কিছু অঞ্চলে প্রায় সারা বছর বৃষ্টিপাতের কারণ কী?



পৃথিবীর কিছু অঞ্চলে প্রায় সারা বছরই বৃষ্টিপাত হয়। মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, আফ্রিকার কিছু দেশ এবং দক্ষিন আমেরিকার কিছু দেশ ও অঞ্চলে বছরের... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশ কখনো এমন করে বলতে পেরেছে কি?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:০৫


ভারতে গরু ও গোমাংস নিয়ে হত্যা বা সহিংসতার নির্দিষ্ট সংখ্যা বলা কঠিন কারণ এটি রাজ্য, সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং 'গরু রক্ষা' বাহিনী ইত্যাদীর কারণে একেক যায়গাতে একেক রকম। ভারত গোমাংস... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশ, পাকিস্তানের ধর্মীয় জংগীবাদ ভারতের মুসলমানদের সাহায্য করছে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৪০



এনসিপির জল্লাদরা, ফেইসবুক জেনারেলরা ও ৫/১০ জন ব্লগার মিলে ৭ সিষ্টার্সকে আলাদা করে দিবে বলে চীৎকার দিয়ে ভারতের মানুষজনকে অবজ্ঞা ও বিরক্ত করার ফলে ভারতের ২২ কোটী... ...বাকিটুকু পড়ুন

গৃহবধূ থেকে প্রধানমন্ত্রী; অভিভাবক শূন্য হলো বাংলাদেশ |

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:১২


খালেদা জিয়া। ইস্পাতসম বজ্রকঠিন দেশপ্রেমের নাম খালেদা জিয়া। যিনি ভালো বেসেছেন দেশকে, নিজের জীবনের চেয়েও দেশকে ভালো বেসেছেন। দেশের বাহিরে যার নেই কোন লুকানো সম্পদ। নেই বাড়ি, গাড়ি অথবা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×