somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রম্য : এক্সাম ডিউটি

২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ রাত ২:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নব্বইয়ের দশকে যখন পরীক্ষায় নকলের রমরমা অবস্থা চলছিল তখনকার কথা। কোনো এক কামিল পরীক্ষাকেন্দ্র পর্যবেক্ষণে এলেন আবদুল কুদ্দুস নামের এক সৎ ধার্মিক ম্যাজিস্ট্রেট। তার সঙ্গে আরও আছেন মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ডের কিছু অফিসার। তো জেলা পর্যায়ের এক প্রখ্যাত মাদ্রাসার পরীক্ষার হলে ঢুকে পর্যবেক্ষক দলের চোখ মার্বেলের মতো বড় হয়ে উঠল বিস্ময়ে। চারদিকে নকলের মহোৎসব! ক'জনকে এক্সপেল করবেন? প্রায় সবাই দেখে দেখে লিখছিল। ম্যাজিস্ট্রেটকে দেখেও কারো কোনো হেলদোল নেই দেখে কুদ্দুস সাহেবের মনের অভ্যন্তরে খানিকটা রাগ, খানিকটা অভিমান এবং খানিকটা ভয় তৈরি হলো। এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি উনি আগে কখনো হন নি। কত সন্ত্রাসী এলাকায় গিয়ে কতজনকে এক্সপেল করে বীরদর্পে ফিরে এলেন। পরীক্ষার্থী সবাই ঠক ঠক করে কাঁপে ম্যাজিস্ট্রেট হলে ঢুকলে অথচ এই মাদ্রাসায় শিক্ষার্থীরা সবাই বই খুলে লিখছে তাকে দেখার পরও। অবাক হয়ে হলের দায়িত্বরত শিক্ষককে ধরলেন ম্যাজিস্ট্রেট। কিছুটা অভিযোগ আর কিছুটা কর্তৃত্বসুলভ ধমকের সুরে শিক্ষককে বললেন:
আপনি কেমন এক্সাম ডিউটি করছেন? সবাই নকল করছে আর আপনি এক কোণে বসে বসে তছবি টিপছেন!
বয়স্ক কক্ষ-পরিদর্শক ম্যাজিস্ট্রেটের কথায় একদম বিচলিত হলেন না। সুফি স্ট্যাইলে শুক্ল শ্মশ্রুমণ্ডিত মুখে তার সুপ্ত মৃদু হাসি। হক্কানি কামেল পীরের মতো ম্যাজিস্ট্রেট কুদ্দুস সাহেবকে ইশারায় নিজের খুব কাছে ডাকলেন। যেন কোনো আল্লাহর ওলি তার মুরিদকে কাছে ডাকছেন আধ্যাত্মিক পরামর্শ দেয়ার জন্য। ধার্মিক ম্যাজিস্ট্রেট চাকুরির স্তরজ্ঞান ভুলে তারচেয়ে অধস্তন মাদ্রাসা শিক্ষকের ডাকে বাধ্য ছাত্রের মতো কাছে ছুটে গেলেন। মন্ত্রমুগ্ধের মতো পরামর্শ করার ভঙ্গিতে শুনতে চাইলেন দেখে দেখে লেখার রহস্যটা কী।
অবশেষে দরবেশী ভাবগাম্ভীর্যে বৃদ্ধ মাদ্রাসা শিক্ষক কানে কানে ধার্মিক দাড়িওয়ালা ম্যাজিস্ট্রেটকে বললেন : ওরা সবাই কী লিখছে খাতায়, আপনি কি তা জানেন?
ম্যাজিস্ট্রেট মাথা চুলকে বললেন : না।
দরবেশ শিক্ষক এবার বললেন ওরা যা লিখছে তার বেশির ভাগই কুরআন হাদিসের রেফারেন্স। যদি কুরআনের হরফ লিখতে গিয়ে নির্ভুল না হয়, যদি আয়াত বিকৃত হয়, তবে এর পাপ কাল হাশরের ময়দানে আপনি কি নেবেন? আল্লাহ প্রশ্ন করলে কী উত্তর দেবেন তখন?
আচমকা এমন অভিনব নকল করার ব্যাখ্যা পেয়ে ধার্মিক ম্যাজিস্ট্রেট এবার নিজের দাড়ি চুলকাতে শুরু করলেন। দরবেশ হুজুর তাকে বললেন—যান, প্রিন্সিপালের রুমে সামান্য মেহমানদারির ব্যবস্থা করা হয়েছে আপনার জন্য। সেখানে ফলফ্রুট খেয়ে জোহরের সালাত আদায় করুন মসজিদে। দুনিয়াবি ডিউটি পালনের জন্য আখিরাত নষ্ট করবেন না মেহেরবানি করে। :-P

লিখেছেনঃ Abdullah Al Tarek
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ রাত ২:০৫
৯টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বারবাজারে মাটির নিচ থেকে উঠে আসা মসজিদ

লিখেছেন কামরুল ইসলাম মান্না, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৪০

ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার বারবাজার ইউনিয়নে মাটির নিচ থেকে মসজিদ পাওয়া গেছে। এরকম গল্প অনেকের কাছেই শুনেছিলাম। তারপর মনে হলো একদিন যেয়ে দেখি কি ঘটনা। চলে গেলাম বারবাজার। জানলাম আসল... ...বাকিটুকু পড়ুন

সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮








আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

পরিবর্তন অপরিহার্য গত দেড়যুগের যন্ত্রণা জাতির ঘাড়ে,ব্যবসায়ীরা কোথায় কোথায় অসহায় জানেন কি?

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:৫৭


রমজানে বেশিরভাগ ব্যবসায়ীকে বেপরোয়া হতে দেখা যায়। সবাই গালমন্দ ব্যবসায়ীকেই করেন। আপনি জানেন কি তাতে কোন ব্যবসায়ীই আপনার মুখের দিকেও তাকায় না? বরং মনে মনে একটা চরম গালিই দেয়! আপনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯

মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা বলতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×