somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রাসায়নিক অস্ত্র কী?এর আদ্যোপান্ত জানুন এক পোস্টে !!

১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ১১:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রাসায়নিক অস্ত্র কী?


এটি এমন এক ধরনের অস্ত্র, যেখানে মানব স্বাস্থ্যর জন্য ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করা হয়। রাসায়নিক অস্ত্র স্বাভাবিকভাবেই মানব দেহ বা পরিবেশের ওপর এমন কুপ্রভাব ফেলে যা অনাকাঙ্ক্ষিত। তবে ক্ষতির পরিমাণটা নির্ভর করবে রাসায়নিক পদার্থ কী পরিমাণে ব্যবহার করা হচ্ছে তার ওপর। যেমন- কাঁদানে গ্যাস বা টিয়ার গ্যাসও এক ধরনের রাসায়নিক অস্ত্র। এই টিয়ার গ্যাস চোখে জ্বালাপোড়ার প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। তবে ক্ষতির মাত্রাটা নির্ভর করে কী পরিমাণে প্রয়োগ করা হয়েছে তার ওপর। হালকা মাত্রায় প্রয়োগ করা হলে ক্ষতি এক রকম, আবার বেশি মাত্রায় প্রয়োগ করা হলে তার প্রভাব আরেক রকম। রাসায়নিক অস্ত্রে ক্ষতি শুধু মানুষেরই হয় না, যেখানে প্রয়োগ করা হয়েছে সেই এলাকায় বসবাসকারী অন্যান্য প্রাণী এবং গাছপালার ওপরও প্রভাব পড়ে।



বিদ্বেষ ও বিষের দ্বৈরথ

ইতিহাসের ব্যাখ্যা বলছে, ভৌগলিক কিংবা তেল-খনিজেসমৃদ্ধ দেশগুলোয় সর্বদাই ক্ষমতা দখলের লড়াইয়ে 'কনভেনশনাল ওয়্যার' সবসময় কাজে দেয় না। বরং রাসায়নিক অস্ত্র কাজে আসে ঘরের শত্রু ঠেকিয়ে রাখতে, কখনো বা প্রতিবেশীকে অস্থির করে তুলতে। রাসায়নিক প্রয়োগ করলে শত্রুপক্ষের বহু লোক নির্মমভাবে মরে তো বটেই, ভয়াবহ মানসিক চাপেও পড়ে যায় শত্রু। জন্ম নেয় এক ধরনের অসহায় 'ফিয়ার সাইকোসিস'। আর তাতে নিজেদের স্বার্থ দেখতে গিয়ে তাতে আরও ইন্ধন জোগায় বিদেশি শক্তিগুলো। ফলে মারণ রাসায়নিকের প্রয়োগ বেড়ে চলে সমান তালে।

রাসায়নিক অস্ত্রের বিস্তার যেভাবে

রাসায়নিক অস্ত্রের সবচেয়ে বড় শিকার বৃহত্তর এশিয়ার সাধারণ মানুষ এবং প্রকৃতি। ক্ষমতালিপসু যুদ্ধবাজ নেতারা এই মরণ খেলায় মেতে উঠলেও এর পেছনে কখন ছিল পশ্চিমা সম্রাজ্যবাদ শক্তি কখনো বা তাদের ব্যবসায়িক স্বার্থ। এই যে বর্তমানে সিরিয়ার রাসায়নিক অস্ত্র নিয়ে যে এত সমালোচনা। সেই অস্ত্রের জোগানদাতাও কিন্তু পশ্চিমা বিশ্ব।

শীতল যুদ্ধ উত্তর বিশ্বের একমাত্র পরাশক্তি, আধুনিত গণতন্ত্রের ধারক ও বাহক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কম নিন্দনীয় নয় রাসায়নিক অস্ত্রের প্রয়োগ ও বিস্তারে। পৃথিবীর যুদ্ধের ইতিহাসে সর্বাধিক সংখ্যক রাসায়নিক হামলা চালানোর রেকর্ড রয়েছে খোদ মার্কিন প্রশাসন।

১৯৭০-এর দশকে এজেন্ট অরেঞ্জ হামলার মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র আধুনিক যুদ্ধের ইতিহাসে রাসায়নিক অস্ত্র হামলার সূচনা করে। যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনী ভিয়েতনামের জঙ্গল ধ্বংস করার জন্য ব্যবহার করেছিল এজেন্ট অরেঞ্জ নামক এই ভয়ঙ্কর রাসায়নিক অস্ত্র। তরল গ্যাস দিয়ে গাছের পাতা এবং ডাল পুড়িয়ে দিয়েছিল যাতে করে বিরোধীরা গহিন অরণ্যে আত্দগোপন করতে না পারে। ভিয়েতনাম যুদ্ধে এই রাসায়নিক অস্ত্র জঙ্গলের বাসিন্দা এবং আশপাশের বিপুলসংখ্যক মানুষের প্রাণহানি ঘটায়। খোদ মার্কিন সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে এই রাসায়নিক পদার্থের ক্ষতিকর দিকগুলোর কথা ঊধর্্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হলেও তারা দীর্ঘসময় ধরে এ হামলা চালায়। ভিয়েতনামে মার্কিন বাহিনীর নাপাম এবং সাদা ফসফরাস বোমা ব্যবহার প্রমাণিত। যুক্তরাষ্ট্রের এই প্রকল্প এতটাই গোপন ছিল যে, ২০০১ সালের আগে পর্যন্ত খোদ যুক্তরাষ্ট্র্রের জনগণও এ ব্যাপারে কিছু জানত না। যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবহৃত রাসায়নিক অস্ত্রের কারণে প্রায় দুই লাখ পঞ্চাশ হাজার ভিয়েতনামী সেনা আজও মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
১৯৭০ সালে 'অপারেশন টেইলউইন্ড'-এর মাধ্যমে লাওসে বিদ্রোহীদের হত্যা করতে যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিশেষ বাহিনী গোপনে সারিন গ্যাস ব্যবহার করে। ১৯৯৮ সালে সিএনএন-এই এই তথ্য প্রকাশ করে এপ্রিল অলিভার ও জ্যাক স্মিথ নামের দুই সাংবাদিক এবং পুলিৎজার জয়ী আলোকচিত্রী পিটার আরনেট।

১৯৯০ দশকে ইরাক-ইরান যুদ্ধে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট রোলান্ড রিগ্যান ও জর্জ হার্বার্ট ওয়াকার বুশ (সিনিয়র বুশ) প্রশাসন ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য ইরাককে সহায়তা করে। এ সময় যুক্তরাষ্ট্র ইরাককে অর্থনৈতিকভাবে এবং সমরাস্ত্র দিয়েও সহায়তা করে। এ সময় ইরানকে প্রতিহত করতে যুক্তরাষ্ট্র 'ক্রপ ডাস্টার' নামে রাসায়নিক অস্ত্র দেয়। হেলিকপ্টারের মাধ্যমে এই অস্ত্র নির্বিচারে মানুষ হত্যার জন্য ব্যবহার করা হয় সেসময়।

অভিযোগ রয়েছে, ১৯৯১ সালের উপসাগরীয় যুদ্ধ এবং এরপরের সব যুদ্ধেই যুক্তরাষ্ট্র রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করেছে। সম্প্রতি পাকিস্তানে যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক পরিচালিত অপারেশন জেনোয়াতেও সারিন গ্যাস ব্যবহার করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
ঊাসার আল-আসাদ সরকারের রাসায়নিক অস্ত্র প্রয়োগের কথা বলে ওবামা প্রশাসন যে সিরিয়াতে হামলা চালাতে চাইছেন; কিন্তু সেই একই অভিযোগে তো বহু দেশ যুক্তরাষ্ট্রে কয়েকশ'বার হামলা চালানোর বৈধতা রাখে।

রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের ইতিহাস

>> গত শতাব্দীর রণাঙ্গনে রাসায়নিক অস্ত্রের ব্যাপক প্রচলন শুরু হলেও তীর বা বর্শার ডগায় বিষের ব্যবহার শুরু সেই আদিম যুগে। প্রস্তর যুগের শেষ ভাগে আফ্রিকার দক্ষিণাংশে শিকারিরা কাঠ-পাথরের মাথায় সাপ বা বিছের বিষ মাখিয়ে শত্রুপক্ষকে ঘায়েলের চেষ্টা করত।

>> প্রাচীন গ্রিক পুরাণেও বিষ-অস্ত্র ব্যবহারের কথা রয়েছে।

>> বিষ-তীরের উল্লেখ আছে ভারতীয় মহাকাব্য রামায়ণ ও মহাভারতেও।

>> খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ শতকে ভারত আক্রমণের সময় বিষ-অস্ত্রের মুখে পড়েছিলেন সম্রাট আলেকজান্ডার।

>> তবে চীনে যুদ্ধক্ষেত্রে বিষের ধোঁয়া ব্যবহারের উল্লেখ মেলে এর বহু আগে।

>> দ্বাদশ শতকের পর ইংরেজদের হাতে পর্যুদস্ত হয় ফরাসি নৌবাহিনী। আগুয়ান ফরাসি রণতরীর নাবিকদের চোখ চুন ছুড়ে অন্ধ করে দেয় ইংরেজরা।

>> ব্যাপক হারে রাসায়নিক অস্ত্র তৈরি শুরু প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর। ওই মহাযুদ্ধে ফরাসিরা প্রথম কাঁদানে গ্যাস ব্যবহার করে। ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে রাসায়নিকভর্তি গোলা ব্যবহার করে জার্মানরাও।

>> ১৯১৯ সালে রাশিয়ার গৃহযুদ্ধে ব্রিটেনের সেনাবাহিনী মাস্টার্ড বা ভারি গ্যাস ব্যবহার করে।

>> ১৯৩০-এর দশকজুড়ে চীনে সোভিয়েত বাহিনী এ দু'ধরনের গ্যাস ব্যবহার করে।

>> ১৯৩৫-এ ইথিওপিয়ায় অভিযান চালায় ফাসিস্ত ইতালি। ব্যবহার করা হয় মাস্টার্ড গ্যাস।

>> ১৯৩৮-১৯৩৯-এ কুয়োমিংতাং এবং কমিউনিস্টদের বিরুদ্ধে মাস্টার্ড গ্যাস ব্যবহার করে জাপানিরা।

>> প্রায় এই সময়ই সারিন নার্ভ গ্যাস তৈরি হয় জার্মানিতে। অপ্রচলিত যুদ্ধে হাত পাকানোর জন্য সে দেশে আগেই তৈরি হয়েছে 'নার্ভ এজেন্ট' ট্যাবুন। রাসায়নিক যুদ্ধের জন্য বাহিনীও গড়েছিলেন হিটলার।

>> শুরু হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। হিটলার ব্রিটেন আক্রমণ করলে আত্দরক্ষার্থে রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের কথা ভেবেছিল ইংরেজরাও।

>> ১৯৪২-এর মে মাসে পূর্ব ক্রিমিয়ার রণাঙ্গনে বিষ-গ্যাস ব্যবহার করে নাৎসিরা।

>> ১৯৪৩-এর ডিসেম্বরে দক্ষিণ ইতালির আকাশে আক্রমণ শানায় জার্মান বোমারু বিমান। ডুবে যায় বেশ কয়েকটি মার্কিন রণতরী। একটি ছিল মাস্টার্ড গ্যাসে বোঝাই। মৃত্যু হয় বেশ কিছু সাধারণ নাগরিকেরও।

>> ভিয়েতনাম যুদ্ধে 'এজেন্ট অরেঞ্জ' ব্যবহার করে হানাদার মার্কিন ফৌজ। গাছপালা ঝরিয়ে শত্রুপক্ষকে কাবু করার জন্যই ব্যবহার করা হয় ওই নার্ভ গ্যাস। 'এজেন্ট অরেঞ্জ'-এর সাহায্যে ভিয়েতনামের প্রায় ৬০ লাখ একর জায়গার গাছের পাতা ঝরিয়ে দিয়েছিল আমেরিকা।

>> ইরাক-ইরান (১৯৮০-৮৮) যুদ্ধ চলাকালীন সাদ্দাম হোসেন আটের দশকের গোড়ায় ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে মুড়ি-মুড়কির মতো বিষ গ্যাসে ভর্তি বোমা ফেলে সাদ্দাম হোসেনের ইরাক। বিভিন্ন মার্কিন, সাবেক পশ্চিম জার্মান, ডাচ এবং ব্রিটিশ সংস্থা রাসায়নিক অস্ত্র তৈরিতে সাহায্য করেছিল সাদ্দামকে।

>> ১৯৮৮তে উত্তর ইরাকের বিদ্রোহী কুর্দি জনপদ হালাবজায় গুচ্ছ গুচ্ছ রাসায়নিক অস্ত্র সারিন ও মাস্টার্ড গ্যাস প্রয়োগ করে সাদ্দাম ও তার দলবল। প্রাণ হারিয়েছিলেন অন্তত পাঁচ হাজার কুর্দি, গুরুতর আহতের সংখ্যা সাত হাজারেরও বেশি।

>> ১৯৬৯ সালে জাতিসংঘ কড়া সমালোচনা করেছে মার্কিন দ্বিচারিতার, নিঙ্নের আমলে মার্কিন সিনেটে অনুমোদন না-পাওয়ায় থমকে গেছে রাসায়নিকের উৎপাদন, তবু সোভিয়েত জুজুর অজুহাতে থেমে থাকেনি আঙ্কেল স্যাম।

>> জাপানের জঙ্গি সংগঠন অম সিরিং কো ১৯৯৫ সালে টোকিও সাবওয়েতে সারিন গ্যাস ব্যবহার করে বিশ্বজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করে।

>> ২০০২-এ মস্কো থিয়েটারে চেচেন জঙ্গিদের হাতে ১২০ জিম্মির মৃত্যু হয় রুশ স্পেশাল ফোর্সের ব্যবহার করা রাসায়নিক অস্ত্রে। খতম হয় ৪২ জঙ্গিও।

>> শ্রীলঙ্কা সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধেও অভিযোগ ওঠে রাসায়নিক গ্যাস ব্যবহারের। অভিযোগ, ২০০৯ সালের ১৮ মে শেষ হওয়া এলটিটিই-র সঙ্গে লড়াইয়ে সময় তামিল অধ্যুষিত এলাকাগুলিতে এমন গ্যাস ছড়িয়ে বহু মানুষকে হত্যা করা হয়।

>> ১৯ মার্চ, ২০১৩। সিরিয়ায় রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে সানার এক রিপোর্টের বরাত দিয়ে বিবিসি জানায়, খান আল আসালয় বিরোধীদের ছোড়া এক রাসায়নিক অস্ত্র সমৃদ্ধ রকেট হামলায় প্রাথমিকভাবে ১৬ জন মারা গেলেও পরে মৃতের সংখ্যা দাঁড়ায় ৩১-এ।

>> ১৯ মার্চ, ২০১৩। রাজধানী দামেস্কের কাছে আল অটরিয়া গ্রামে বাশার বাহিনী এক বোমা হামলা করে। ভিডিওতে দেখা যায় বোমা হামলার পরই স্থানীয়দের শ্বাসকষ্ট এবং বমি শুরু হয়।

>> ২৪ মার্চ ২০১৩। সিরিয়ার আদরা শহরে রাসায়নিক ফসফরাস বোমা হামলা-পরবর্তী সময়ে আক্রান্তদের শ্বাসতন্ত্রে রক্তক্ষরণ, রক্তবমি শুরু হয়।

>> ১৩ এপ্রিল, ২০১৩। বিবিসির ভিডিও ফুটেজ অনুযায়ী বিমান থেকে ছোড়া বোমায় শেখ মাকসুদ এলাকার বাতাস ভারি হয়ে পড়ে। আক্রান্তদের চিকিৎসা কেন্দ্রের ডাক্তার ক্যান্সারের প্রাথমিক ধাপে আছে বলে ঘোষণা করেন।

হরেক রকম রাসায়নিক গ্যাস

রাসায়নিক অস্ত্র কেন ব্যবহার করা হয়? এক কথায় বলা যায়- একসঙ্গে বহু মানুষকে নিমিষে 'শেষ' করতে অত্যন্ত কার্যকর এই রাসায়নিক অস্ত্র। কোন ঘনত্বে রাসায়নিক ব্যবহার করা হচ্ছে, তার ওপর নির্ভর করে বিষক্রিয়ার পরিমাণ ও মৃত্যুর আশঙ্কা। কার্যকারিতা অনুসারে এই অস্ত্রকে বেশ কয়েক ভাগে ভাগ করা যায়।

চোকিং এজেন্ট: পালমোনারি এজেন্ট নামেও পরিচিত। শ্বাসযন্ত্রের ওপর প্রভাব ফেলে। আক্রমণের স্থান ফুসফুস, ক্রমশ পানি জমতে থাকে ফুসফুসে। শুরু হয়: গলাজ্বালা, কাশি, বমি, শ্বাসকষ্ট। রাসায়নিক উপাদান হলো : ফসজিন, ক্লোরিন, ডাইফসজিন, অ্যাক্রোলিন। চাকিং এজেন্ট বা পালমোনারি এজেন্ট অন্তর্ভুক্ত অস্ত্রগুলো হলো:

ক্লোরোপিকরিন : বর্ণহীন তরল, শ্বাসনালি ও ত্বকের ওপর সঙ্গে সঙ্গে প্রভাব। বিষক্রিয়া : চোখ ও ত্বকের ক্ষতি, ফুসফুসের প্রদাহ, মৃত্যু। এখন ব্যবহার করা হয় কীটনাশক যৌগ হিসেবে।

ফসজিন: বর্ণহীন গ্যাস কিছুক্ষণের মধ্যেই ফুসফুসের অ্যালভিওলাইয়ের প্রোটিনের সঙ্গে বিক্রিয়া। বিষক্রিয়া : ফুসফুসে রক্তের সঙ্গে অঙ্েিজন আদান-প্রদানের কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়া, মৃত্যু। ভারতের ভোপাল গ্যাস ট্যাজেডির অন্যতম ঘাতক।

ডাইফসজিন : বর্ণহীন তরল কিছুক্ষণের মধ্যেই ফুসফুসের অ্যালভিওলাইয়ের প্রোটিনের সঙ্গে বিক্রিয়া। বিষক্রিয়া : ফুসফুসে রক্তের সঙ্গে অঙ্েিজন আদান-প্রদানের কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়া, মৃত্যু।

ক্লোরিন : ঝাঁজাল গন্ধের হলদে-সবুজ গ্যাস কিছুক্ষণের মধ্যেই গলা ও ফুসফুসের মিউকাসে উপস্থিত জলের সঙ্গে বিক্রিয়া। বিষক্রিয়া : হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড গঠিত হয়ে ফুসফুস ধ্বংস করে দেওয়া, মৃত্যু।

বি্লস্টার এজেন্ট :আক্রমণ করে ত্বকের ওপর। চামড়া বা চোখের সংস্পর্শে এলে শুরু হয় কার্যকারিতা। চামড়ায় বড় বড় বিষাক্ত ফোস্কা পড়ে, আক্রান্তরা অন্ধত্বের শিকার হয়। রাসায়নিক উপাদান : মাস্টার্ড গ্যাস, মিথাইল ডাইক্লোরো আরসিন, লিউইসাইট। বি্লস্টার এজেন্ট অন্তর্ভুক্ত রাসায়নিক অস্ত্র হলো:

ফসজিন অঙ্াইম : বর্ণহীন কঠিন বা হলদে-বাদামি তরল, উগ্র ঝাঁজাল গন্ধত্বক, চোখ, পৌষ্টিক তন্ত্র বা শ্বাসনালির সংস্পর্শে আসার প্রায় সঙ্গে সঙ্গে প্রতিক্রিয়া। বিষক্রিয়া : গায়ে লাল চাকা চাকা দাগ, অন্ধত্ব, রক্তক্ষরণ, শ্বাসকষ্ট, থ্রম্ব্বোসিস, মৃত্যু।

লিউইসাইট : বর্ণহীন গন্ধহীন কঠিন বা হলদে-বাদামি তরলত্বক বা শ্বাসনালির সংস্পর্শে আসার প্রায় সঙ্গে সঙ্গে প্রতিক্রিয়া, পোশাক বা রাবার ভেদে সক্ষম। বিষক্রিয়া : ফোস্কা, পোড়া, বমি, ফুসফুসের প্রদাহ, যকৃতে নেক্রোসিস, মৃত্যু।

সালফার মাস্টার্ড : মাস্টার্ড গ্যাস বা ওয়াইপেরাইট নামেও পরিচিত। বর্ণহীন বা হালকা হলদেটে থকথকে তরল, সর্ষে বা রসুনের মতো গন্ধত্বক বা শ্বাসনালির সংস্পর্শে আসার ১২ ঘণ্টার মধ্যে প্রভাব, পোশাক ভেদে সক্ষম। বিষক্রিয়া : ত্বকের জ্বলুনি-চুলকানি ও ফোস্কা, ভয়াবহ যন্ত্রণাদায়ক পোড়া, অন্ধত্ব, ফুসফুসে প্রদাহ, মৃত্যু।

ব্লাড এজেন্ট :রক্তের ওপর প্রভাব ব্লাড এজেন্ট অন্তর্ভুক্ত রাসায়নিক অস্ত্র। শ্বাস-প্রশ্বাসের সঙ্গে মানুষের রক্তে মিশে যায়। এর লক্ষণ : মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ এবং পক্ষাঘাত। রাসায়নিক উপাদান হলো : সায়ানোজেন ক্লোরাইড, হাইড্রোজেন সায়ানাইড। ব্লাড এজেন্ট অন্তরর্ভুক্ত অস্ত্র হলো:

হাইড্রোজেন সায়ানাইড : বর্ণহীন তরল, হালকা অ্যামন্ডের গন্ধ সাইটোক্রোম সি অঙ্েিডজ উৎসেচকের ওপর প্রভাব, এক মিনিট থেকে এক ঘণ্টার মধ্যে প্রভাব। হাইড্রোজেন সায়ানাইড প্রাসিক অ্যাসিড নামেও পরিচিত।
বিষক্রিয়া : সব কোষের শ্বাসপ্রশ্বাস বন্ধ হয়ে মৃত্যু। নাৎসি জার্মানিতে ইহুদি মৃত্যুশিবিরে 'জাইক্লন বি' নামে ব্যবহৃত হয়।

সায়ানোজেন ক্লোরাইড : বর্ণহীন গ্যাস চোখ বা শ্বাসনালির সংস্পর্শে এলে সঙ্গে সঙ্গে প্রতিক্রিয়া। বিষক্রিয়া : কাশি, বমি, প্রদাহ, জ্ঞান হারিয়ে ফেলা, খিঁচুনি, পক্ষাঘাত, মৃত্যু।

নার্ভ এজেন্ট : স্নায়ুতন্ত্রের ওপর আক্রমণ করে। শ্বাস-প্রশ্বাসের সঙ্গে মানুষের শরীরে প্রবেশ করে। শুরু হয় : কাঁপুনি, লালাক্ষরণ, শরীরে খিঁচুনি, শ্বাসকষ্ট। রাসায়নিক উপাদান হলো : সারিন, টাবুন, সোমান, সাইক্লোসারিন। নার্ভ এজেন্ট অন্তর্ভুক্ত রাসায়নিক অস্ত্রগুলো জাতিসংঘ কর্তৃক 'গণবিধ্বংসী মারণাস্ত্র' হিসেবে চিহ্নিত। সেগুলো :

ট্যাবুন: স্বচ্ছ, বর্ণহীন, স্বাদহীন তরল, হালকা ফলের মতো গন্ধ সঙ্গে সঙ্গে প্রতিক্রিয়া। বিষক্রিয়া : শ্বাসকষ্ট, ফুসফুসে ফোস্কা, সংজ্ঞা হারানো, খিঁচুনি, পক্ষাঘাত।

সারিন: র্জামানির কয়েকজন রসায়নবিদ শক্তিশালী কীটনাশকের জন্য গবেষণা করতে গিয়ে কাকতালীয়ভাবে সারিন গ্যাস আবিষ্কার করেন। এর নামকরণও তাদেরই করা। জার্মানির সেনাবাহিনী ১৯৩৯ সালে একে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহারের উদ্যোগ নেয়। বর্ণহীন, গন্ধহীন উদ্বায়ী তরলত্বক ও শ্বাসনালির ওপর সঙ্গে সঙ্গে প্রতিক্রিয়া, অ্যাসেটাইলকোলিনএস্টারেজ উৎসেচকের সঙ্গে বিক্রিয়া।

বিষক্রিয়া : স্নায়ুতন্ত্রের অপূরণীয় ক্ষতি, ফুসফুসের পেশি সঞ্চালন বন্ধ হয়ে এক মিনিটের মধ্যে শ্বাসরোধ, মৃত্যু।

সাইক্লোসারিন : বর্ণহীন তরল, হালকা ফলের গন্ধ কিছুক্ষণের মধ্যেই স্নায়ুতন্ত্রের ওপর প্রতিক্রিয়া। বিষক্রিয়া : স্নায়ুতন্ত্রের ক্ষতি, ফুসফুসের পেশি বিকল হয়ে কিছুক্ষণের মধ্যে শ্বাসরোধ, মৃত্যু।

সোমান : উদ্বায়ী ঝাঁজাল, বর্ণহীন তরল স্নায়ুতন্ত্রের ওপর ১০ মিনিটের মধ্যে প্রভাব, অ্যাসেটাইলকোলিন এস্টারেজ উৎসেচকের সঙ্গে বিক্রিয়া। বিষক্রিয়া : স্নায়ুতন্ত্রের অপূরণীয় ক্ষতি, পেশিতে অসম্ভব যন্ত্রণা, সমাজবিরোধী চিন্তাভাবনা, ফুসফুসের পেশি বিকল হয়ে কিছুক্ষণের মধ্যে শ্বাসরোধ, মৃত্যু।

ভিএক্স : গাড়ির তেলের মতো পুরু, অনুদ্বায়ী, বর্ণহীন ও গন্ধহীন তরল অ্যাসেটাইলকোলিন এস্টারেজ উৎসেচকের ওপর কিছুটা দেরিতে প্রতিক্রিয়া। বিষক্রিয়া : ডায়াফ্রামের পেশির ওপর প্রভাবের ফলে কিছুক্ষণের মধ্যেই ফুসফুসের কাজ বন্ধ, শ্বাসরোধ হয়ে মৃত্যু।

অস্ত্রমুক্ত স্বপ্নের বিশ্ব

নীরব রাসায়নিক মারণাস্ত্র প্রয়োগ করা হয় কেবল রাজনৈতিক শত্রুতা কিংবা তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে, কিন্তু এর পরিণাম ভোগ করে নিরীহ নিরপরাধ মানুষ। সে অসহায় মানুষদের আহাজারি থেকে ভূলুণ্ঠিত মানবতা স্বপ্ন দেখে অস্ত্রমুক্ত বিশ্বের। নব্বইয়ের দশকে সার্বিয়া-বসনিয়া গৃহযুদ্ধে স্লোবোদান মিলোসেভিচ প্রশাসনের বিরুদ্ধেও রাসায়নিক গ্যাস ব্যবহারের অভিযোগ ওঠে। কিন্তু যথেষ্ট প্রমাণের অভাবে আন্তত্দর্জাতিক অপরাধ দমন আদালতে এই অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি। সেদিক থেকে দেখতে গেলে ইতিহাসে রাসায়নিক প্রয়োগের শাস্তি পেয়েছে শুধু সাদ্দাম অ্যান্ড কোং। কিন্তু সাদ্দাম হোসেন আল-তিকরিতির সহায়তাকারীরা দিবি্ব রাষ্ট্রীয় সম্মান নিয়ে অবসরকালীন জীবন কাটাচ্ছে কিংবা চলে গেছে ধরাছোঁয়ার বাইরে_ পরপারে। ১৯২৫-এর জেনিভা প্রোটোকলকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ইতিহাস আবারও পুনরাবৃত্তি হবে নতুন কায়দায়। যুদ্ধবাজদের অনুগামী বাহিনীর ছোড়া বিষাক্ত গ্যাসে মৃত্যুপুরী হবে নতুন কোনো জনপদ।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ১১:২৬
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বরিষ ধরা-মাঝে শান্তির বারি

লিখেছেন বিষাদ সময়, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:১৬





মাসের আধিক কাল ধরে দাবদাহে মানব প্রাণ ওষ্ঠাগত। সেই যে অগ্নি স্নানে ধরা শুচি হওয়া শুরু হলো, তো হলোই। ধরা ম্লান হয়ে, শুষ্ক হয়, মুমূর্ষ হয়ে গেল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নীল আকাশের প্রান্ত ছুঁয়ে-৭ (আকাশ ভালোবেসে)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:১৯

০১।



=আকাশের মন খারাপ আজ, অথচ ফুলেরা হাসে=
আকাশের মন খারাপ, মেঘ কাজল চোখ তার,
কেঁদে দিলেই লেপ্টে যাবে চোখের কাজল,
আকাশের বুকে বিষাদের ছাউনি,
ধ্বস নামলেই ডুবে যাবে মাটি!
================================================
অনেক দিন পর আকাশের ছবি নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সমস্যা মিয়ার সমস্যা

লিখেছেন রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ), ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

সমস্যা মিয়ার সিঙ্গারা সমুচার দোকানে প্রতিদিন আমরা এসে জমায়েত হই, যখন বিকালের বিষণ্ন রোদ গড়িয়ে গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে, সন্ধ্যা পেরিয়ে আকাশের রঙিন আলোর আভা মিলিয়ে যেতে শুরু করে। সন্ধ্যা সাড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই মুহূর্তে তারেক জিয়ার দরকার নিজেকে আরও উন্মুক্ত করে দেওয়া।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৬ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৬


তারেক জিয়া ও বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে আমি ব্লগে অনেকবারই পোস্ট দিয়েছি এবং বিএনপি'র নেতৃত্ব সংকটের কথা খুব স্পষ্টভাবে দেখিয়েছি ও বলেছি। এটার জন্য বিএনপিকে সমর্থন করে কিংবা বিএনপি'র প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×