somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দুষ্টামিঃ এক শীতের সন্ধ্যায় আমি আর আরিয়ান :)

১৭ ই জানুয়ারি, ২০১১ রাত ৯:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


গতবছর শীতের ঘঠনা। আমি, বোন আর চার বছরের ভাগ্নে আরিয়ান আমাদের এক আত্মীয়ের বাসায় বেড়াতে গেছি। গল্প করতে করতে একসময় সন্ধ্যা হয়ে যায়।
বাসায় ফেরার জন্য সিএনজি আনতে বের হব এমন সময় আরিয়ান বায়না ধরল সেও আমার সাথে যাবে। মেইন রোডে না আসলে সি এন জি পাওয়া যাবে না। আর বাসা থেকে মেইন রোড খানিকটা দূরেই। ঠান্ডার মধ্যে তাই আরিয়ান কে নিয়ে আসা ঠিক হবে না। আমি তাকে বললাম তোমার যাবার দরকার নাই। আমি যাব আর আসব।
সাথে সাথে সে বলল.. আমিও তোমার সাথে এই যাব, এই আসব।
আমি দেখলাম পোলা তো ভালই ত্যাদর।

এবার একটু ডিফেনসিভ মুডে গিয়ে গলার স্বর যতদূর পারা যায় মোলায়েম করে বললাম, মামা! বাইরে তো ঠান্ডা। ঠান্ডা লেগে তোমার শরীর খারাপ ...।
কথা শেষ করার আগেই তার জবাব, কিচ্ছু হবে না। দেখছ না জ্যাকেট পড়ে আছি।
আমি বললাম, মাথায় তো কিছু নেই। কানও খোলা। কান দিয়ে ঠান্ডা বাতাস ঢুকে মাথার ভেতর গিয়ে বাসা তৈরি করে ফেলবে। তখন কিছু শুনতে পাবে না।
সে তখন আমার মাথায় উলের ক্যাপের দিকে ইশারা করে বলল, ওটা আমাকে দিয়ে দাও।
ওটা তোমাকে দিলে আমার কি হবে? আমার তো ঠান্ডা লেগে যাবে।
অ্যারে না। তোমার কিচ্ছু হবে না। তুমি বড় ব্যাটা না?

আমি কিছুটা বিরক্ত হয়ে বললাম, এরকম দুষ্টামি করে না। মা জানলে পিটুনি দিবে।
আমার এ কথা সে পাত্তাই দিল না। তার এক কথা, আমাকে নিয়ে যাও।

আমি দরজা খুলতে যাব..এমন সময় তার চিৎকার, এই ব্যাটা আমারে নিয়ে যা।
আমি দেখলাম পোলা তুই তোকারীতে নেমে এসেছে। ফাজিল পোলা। তবে পাত্তা দিলাম না।
আমি দরজা খুলে বের হয়ে আসব..দৌড়ে এসে আমার হাটু জড়িয়ে শুরু করল কান্না কাটি। কান্না জড়ানো কন্ঠে আবদার, মামা! প্নিজ..আমাকে নিয়ে যাও।

কান্না দেখে আমার খারপাই লাগল। কিন্তু করি কি। ফার্মের মুরগ টাইপের এই সব বাচ্চাদের ঠান্ডা লাগলে বিরাটা যন্ত্রনা।
কান্না শুনে তার মা সহ অন্যরা এসে হাজির। আরিয়ান তখনো আমার হাটু জড়িয়ে আছে। এটা দেখে অনেকে বিশেষ করে মেয়েরা আফসুস করে বলছে..
আহারে! বেচারার বাইরে যাবার কি শখ। কি হয় একটু নিয়ে গেলে?

তার মা দেখলাম কই থেকে একটা মাফলার এনে মাথা গলা কান ভালভাবে জড়িয়ে দিয়ে বলল, নিয়ে যাও। না হলে আযরাইল ঠান্ডা হবে না।


বাসা থেকে বের হয়ে আরিয়ান আমার হাত ধরে হাটছিল। আমার মাথায় এই সময় একটা দুষ্ট বুদ্বি আসল..আজকে ব্যাটারে একটা শিক্ষা দিতে হবে।
কিছুদূর আসার পর আমি আমার হাতটা ছাড়িয়ে নিলাম।
আরিয়ান ধরার চেষ্টা করল।
আমি হাত সরিয়ে নিলাম।
এবার সে গলার স্বর মোলায়েম করে বলল, মামা..দেখছ...কি অন্ধকার!
আমি শুনেও না শোনার ভাণ করলাম।
সে আবার আমার দিকে তাকিয়ে বেশ লম্বা করে বলল, মা..মাআআ!
আমি এবার আমার গলার স্বর পরিবর্তন করে বললাম, তুমি কে?
সে দেখলাম কিছুটা অবাক হলো। কিন্তু কিছু বলল না।



মেইন রোডে গাড়ী নাই বললেই চলে। সিলেটে দিনের বেলাই কিছুই পাওয়া যায় না। আর সেটা ছিল শীতের সন্ধা। রাস্তাঘাট পুরোটাই ফাকা। আরিয়ান আমার পাশে দাড়িয়ে আছে। আমি একটু দূরে গেলেই আরিয়ানও আমার সাথে যাচ্ছে। আমি ল্যাম্প পোস্টের পাশে গিয়ে দাড়ালাম যাতে আরিয়ান আমাকে স্পষ্ট দেখতে পায়। এবার শুরু করলাম আসল খেলা। :)

ইয়াহু বলে..শুন্যে লাফিয়ে উঠলাম। তারপর শুরু করলাম বিড়বিড় করে কথা বলা। আরিয়ান আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। আমি তার কাছে গিয়ে চোখ বড় বড় করে, চোখের দুই মণি কে কাছে নিয়ে এসে গলার স্বরকে ভূতুরে করে বললাম, তুই কে রে??
তারপর দুই হাত উচিয়ে বিকট স্বরে বললাম, হালুম!
আরিয়ান...কাঁদু কাঁদু গলায় বলল..মামা! আমি ভয় পাচ্ছি।
ভাগ্না দেখি মামার চেয়েও ডরপুক। :P

'মো হু হা হা..হা হা..' বলে বিকট স্বরে হাসতে লাগলাম আর বলতে লাগলাম আর দুষ্টামি করবি? না কি তোর ঘাড় মটকে খাব।
আরিয়ান কাতর স্বরে বলে...মামা প্লিজ! থামো মামা। আমি সত্যি ভয় পাচ্ছি।
আমি আরিয়ান কে ভয় দেখিয়ে যখন তার দিকে যাই..সে দৌড়ে সরে যায়। আবার আমি যখন আরিয়ানের উল্টোদিকে আস্তে দৌড় দিই তখন সে আমার পিছু পিছু আসতে থাকে। :)

এক সময় আরিয়ানের মা ফোন করে বলে...সিএনজি খুঁজার দরকার নাই। চলে আস। আরিয়ানের বাবা গাড়ী পাঠাচ্ছে।

বাসায় ফেরার পথে আরিয়ান গাড়ীতে দাড়িয়ে আছে। ওর মা বলল সিটে বস না হলে ব্রেক ধরলে পড়ে ব্যাথা পাবে। সে শুনছে না। এবার আমি তাকে একটা চিমটি দিলাম। পেছন দিকে তাকাকেই চোখ দুটি বড় করে চোখের মনি এক করে তার দিকে তাকালাম। উদ্দেশ্য কিছুক্ষণ আগের ঘঠনা মনে করিয়ে দেয়া। কিন্তু আমি কিছু বুঝার আগেই দুম করে আমার গালে আরিয়ানের পাঞ্চ। :(
আর বলছে, আমাকে ভয় দেখাস, আমার সাথে পাগলামী করিস..না?

ওর মা বলছে..ছি ছি..বেয়াদব ছেলে! মামা কে কেউ মারে? আজকে বাসায় যাও। তোমার বাবাই কে বলব।

'মামা কেন আমাকে ভয় দেখায়? আমিও নানা ভাই কে ফোন করে বলব।'
১৪টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×