somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ওদের নাম যে কারনে "ছাগু" হলো

১৭ ই নভেম্বর, ২০১১ রাত ১:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজ চার বছর ধরে বিভিন্ন ব্লগে ব্লগিং করলেও, প্রথম দুই বছর কিন্তু ব্লগে জামাতীদের কেন ছাগু বলা হয়,এর কারন জানা ছিলো না কিংবা জানতে পারিনি। অনেককেই জিজ্ঞেস করেছি ছাগু কেন? গরু না কেন? গাধা না কেন? গর্দভ না কেন? কেন শুধু আপনারা “ছাগু” বলে ওদের ডাকেন? আমার এই প্রশ্নে এক একজন একেক রকম উত্তর দিয়েছে। সেসব ব্যাক্তিদের উত্তরগুলো যদিও ইন্টারেস্টিং ছিলো কিন্তু আমার কেন যেন সে উত্তরগুলো মনেরমত হয়নি কখনো। মনে হয়েছে, ছাগুর থেকে আরো তীব্র সম্বোধন কি এরা ডিজার্ভ করে না?


কেননা যেই সম্প্রদায়ের প্রথম সারির নেতারা বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় আমাদের মুক্তিকামী জনতাকে তথা আমদের মা’কে, বোনকে, ভাইকে, বাবাকে, চাচাকে, মামাকে পাকি হানাদারদের কাছে তুলে দিলো, ধর্ষন করলো, লুট করলো তারা তো ভয়াবহ একটি নাম ডিজার্ভ করে। কিন্তু সেসব ভয়াবহ নাম বাদ দিয়ে খানিকটা ফানি টাইপ “ছাগু” কেন?? এমনটি ভাবতে ভাবতেই দিন যাচ্ছিলো। কিন্তু হঠাৎ করেই এই ছাগু নামটির পেছনের রহস্য পুরোপুরি উন্মোচন করে ফেলাতেই আজকে এক ধরনের স্বস্তি অনুভব করছি। মনে হচ্ছে, জামাতীদের নামটি ছাগু হবার পেছনে আসলে এই হচ্ছে কারন।এবং এটি বেশ যৌক্তিক।


যুদ্ধাপরাধ বিষয়ক কিছু বই পড়ছিলাম।ইনফ্যাক্ট এই বিষয়ে যেহেতু কাজ করছি তাই পড়তে হচ্ছে। দেশ থেকেও কিছু গুরুত্বপূর্ন কাগজ-পত্র এসেছে আমার কাছে। তেমনি সেসব কাগজ পত্রের ভেতর কিছু গুরুত্ব্বপূর্ণ কাগজ হচ্ছে, ১৯৭২ সালের দালাল আইনে যারা যারা সাজাপ্রাপ্ত হয়েছে তাদের কেস হিস্টোরী এবং তৎকালীন সংবাদপত্রে সেসব বিষয়ে প্রতিবেদন, দালাল-রাজাকারদের গ্রেফতারের তালিকা সহ আরো অনেক অনেক গুরুত্বপূর্ন ডকুমেন্টস। এই দালাল আইনে সাজাপ্রাপ্তদের কেইস হিস্টোরী পড়তে গিয়েই একটি মামলার দিকে আমার চোখ আটকে গেলো।যেটি ছিলো যশোর জেলায় নিষ্পত্তি হওয়া প্রথম মামলা।



এর মধ্যে দালাল আইন সম্পর্কিত একটা ছোট্ট তথ্য দিয়ে নেই পাঠকদের। জেনে রাখা ভালো।

১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে ১৬ ই ডিসেম্বর আমরা যখন পাকিস্তানী ঘাতক সৈন্যদের আমাদের কাছে আত্নসমর্পনে বাধ্য করেছিলাম ঠিক তার ৩৯ দিনের মাথায় অর্থ্যাৎ ২৪ শে জানুয়ারী পাকিস্তানী হানাদারদের যারা সাহায্য ও সহযোগিতা করেছিলো তাদের শাস্তি নিশ্চিত করতে ১৯৭২ সালে তৎকালীন সরকার " বাংলাদেশ দালাল (বিশেষ ট্রাইবুনাল) আদেশ ১৯৭২" জারি করে । পরবর্তীতে ১৯৭২ সালেরই ৬ ফেব্রুয়ারি, ১ জুন এবং ২৯ আগস্ট তারিখে এই আইনে তিনটি সংশোধনী আনা হয় এবং শুরু হয় বিচার কার্যক্রম।

এক নজরে দালাল আইনে গ্রেফতারকৃতদের ও শাস্তি পাওয়াদের পরিসংখ্যান তুলে ধরা হলো-

এই দালাল আইনে -

আটক হয় - ৩৭ হাজার ৪ শত ৯১ জন

ট্রাইবুনাল গঠিত হয়- ৭৩ টি ( সারা বাংলাদেশে )

১৯৭৩ সালের অক্টোবর পর্যন্ত উক্ত ট্রাইবুনাল গুলোতে দায়ের করা মামলার মধ্যে নিষ্পত্তি হয় মোট ২ হাজার ৮ শত ৪৮ টি মামলা ।

দোষী প্রমাণিত হয় - মোট ৭৫২ জন (এর মধ্যে মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত হয় প্রায় ২০ জন)

মামলায় খালাশ পায় - ২ হাজার ৯৬ জন ।

নাগরিকত্ব বাতিল হয় ১৪৫ জনের



এবার আসা যাক মূল কথায়ঃ

এই দালাল আইনে সাজাপ্রাপ্ত অপরাধীদের একটা কেইস হিস্ট্রিতে হঠাৎ চোখ আটকে গেলো। তারই সারাংশ আপনাদের বলছি,

১৯৭২ সালের জুলাইয়ের ১১ তারিখে দৈনিক পূর্ব দেশ পত্রিকার একটি রিপোর্টে বলা হয়-


“যশোর জেলাতে গত ৯ই জুলাই, দালাল আইনের অধীনে ৪নং বিশেষ ট্রাইবুনাল দুই জন রাজাকারকে এক বছরের সশ্রম কারাদন্ড ও ৫০০ টাকা জরিমানা করে। এবং সেটি যদি অনাদায়ী হয়, তাহলে আরো ৬ মাসের সশ্রম কারাদন্ডের কথা রায়ে বলা হয়। এই ট্রাইবুনালের প্রধান ছিলেন জেলার অতিরিক্ত দায়রা জজ জনাব আনোয়ার হোসেন সর্দার।


২ জন অভিযুক্ত ব্যাক্তি কাওসার আলী ও মতিউর রহমান জামায়াতে ইসলামীর কর্মী ছিলো। পরবর্তীকালে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় তারা পাকিস্থানী অক্সিলারী ফোর্সের অনেকগুলোর মধ্যে একটি, “রাজাকার বাহিনী” সদস্য ছিলো। এই দুই রাজাকার মামলার বাদী হারান সরকারের বাড়ীতে হানা দেয় হারান সরকার এবং মুক্তিবাহিনীর খোঁজে। হারান সরকার আগে থেকে টের পেয়ে বাড়ীর পাশে একটি ঝোপে লুকিয়ে থাকেন। রাজাকাররা মুক্তিবাহিনী ও হারান সরকারের খোঁজ না পেয়ে হারান সরকারের দুইটি ছাগল চুরি করে নিয়ে যায়।


হারান সরকার একজন দরিদ্র কৃষক ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে তিনি মামলা করলে আদালত দালাল আইনের ১১(সি) এর আওতায় ছাগল চোর রাজাকার মতিউর রহমান এবং কাওসার আলীকে এক বছরের সশ্রম কারাদন্ড এবং ৫০০ টাকা জরিমানা করেন। অনাদায়ে আরো ৬ মাসের সশ্রম কারাদন্ডের কথাও রায়ে বলা হয়। উল্লেখ্য যে, এই রাজাকার দ্বয় ছিলো সক্রিয় জামায়াতে ইসলামীর কর্মী।মামলায় সরকার পক্ষের কৌসুলী ছিলেন এডভোকেট মোস্তাফিজুর রহমান। এবং ছাগল চোর রাজাকারদ্বয়ের পক্ষে ছিলো এডভোকেট নুরুল ইসলাম।



(উপরের ছবিতে ১৯৭১ সালের ঘৃণ্য রাজাকার মীর কাশিমের বড় ছেলে মীর মোহাম্মদ বিন কাশিমকে তার দুলাইভাই ও একটি ছাগল সহ পোজ় দিতে দেখা যাচ্ছে)



পাঠক, আমার মত আপনারাও কি বুঝতে পারলেন কেন ওদের “ছাগু” নামে অভিহিত করা হয়েছে?


৪৬টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন জুন, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৯

ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

×