স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প এবং যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম কেনার ব্যাপারে খোজ নিয়ে যানা যায়, আইসিইউতে ব্যবহৃত একটি পর্দার দাম ৩৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা ছাড়াও একটি অক্সিজেন জেনারেটিং প্ল্যান্ট কেনার খরচ দেখানো হয়েছে ৫ কোটি ২৭ লাখ টাকা। একটি ভ্যাকুয়াম প্ল্যান্ট ৮৭ লাখ ৫০ হাজার, একটি বিএইইস মনিটরিং প্ল্যান্ট ২৩ লাখ ৭৫ হাজার, তিনটি ডিজিটাল ব্লাড প্রেসার মেশিন ৩০ লাখ ৭৫ হাজার, আর একটি হেডকার্ডিয়াক স্টেথোসকোপের দাম ১ লাখ ১২ হাজার টাকা। এমন অবিশ্বাস্য দামে ১৬৬টি যন্ত্র ও সরঞ্জাম কিনেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
#২# ১৬ মে প্রথম পত্রিকার মাধ্যমে সবার সামনে চলে আসলো রুপপুর পারমানবিক কেন্দ্রের কেনাকাটা আর আসবাবপত্র উঠা নামার নামে হরিলুটের বিষয়টা । একটি বালিশ এর দাম ধরা হয়েছিল ৫৯৫৭ টাকা এবং ঊঠানোর খরচ দেখানো হয়েছিল ৭৬০ টাকা।
পাবনায় নির্মাণাধীন রূপপুরে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবাসিক এলাকায় আসবাবপত্র কেনাকাটা এবং সেগুলোর বহন খরচ নিয়ে যে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে, গত কয়েক দিন ধরে দেশের বেশিরভাগ গণমাধ্যমসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পে আসবাবপত্রসহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক পণ্য অস্বাভাবিক দামে কেনা ও সেগুলো ফ্ল্যাটে তোলার ব্যয় নিয়ে বেশ বিতর্ক চলছে।
একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত তথ্যানুযায়ী, ওই ভবনের জন্য এক হাজার ৩২০টি বালিশ কেনা হয়েছে। এদের প্রতিটির মূল্য দেখানো হয়েছে ৫ হাজার ৯৫৭ টাকা। আর সেই প্রতিটি বালিশ নিচ থেকে ভবনের ওপরে তুলতে খরচ দেখানো হয়েছে ৭৬০ টাকা!
প্রতিবেদন থেকে আরও জানা গেছে, শুধু বালিশের বিষয়েই নয় প্রকল্পের আসবাবপত্র কেনার নথিপত্র পর্যালোচনা করে আসবাবপত্র কেনা ও ফ্ল্যাটে তোলার ব্যয়ে অসঙ্গতি পাওয়া গেছে।
#৩# সপ্তাহখানেক আগে হঠাৎ একটা বিষয় নজরে আসলো সেটা হল, পুকুর খনন শিখতে ১ কোটি ২৮ লক্ষ টাকা ব্যয়ে বিদেশ যাচ্ছেন ১৬ সরকারি কর্মকর্তা। তবে সবকিছুকে ছাপিয়ে প্রকল্পের ১৬ কর্মকর্তার পুকুর খনন প্রশিক্ষণে বিদেশ যাওয়ার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সহ-উপাচার্য ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক চৌধুরী সারোয়ার জাহান দেশের ভূগর্ভস্থ জলাধার ব্যবস্থাপনা জাতীয় কৌশল নির্ধারণী কমিটির সদস্য। ১৬ কর্মকর্তার বিদেশ সফর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নতুন কোনো প্রকল্প হলেই তার সঙ্গে বিদেশ সফর রাখার মানেই হচ্ছে জনগণের ওপর করের চাপ বাড়ানো।তিনি মনে করেন, আগে দেশীয় জ্ঞান ও বিবেচনা কাজে লাগিয়ে দেখতে হবে। তাতে একান্তই সম্ভব না হলে একজন বিদেশি বিশেষজ্ঞ আনা যেতে পারে।
সারোয়ার জাহান বলেন, এখন ইন্টারনেটে সার্চ দিলেই অনেক বিষয়ে জানা যায়। নেটেই অনেক পড়াশোনা করা যায়। ঘরে বসেই অনেক তথ্য জানা যায়। আর পুকুর খনন ও সেই পানি সেচে ব্যবহার করার জ্ঞান লাভের জন্য প্রথমেই বিদেশ সফরের প্রয়োজন আছে বলে তিনি মনে করেন না।
#৪# এরপর একদিন পরেই আমরা জানতে পারলাম সাড়ে ৫ হাজার টাকা দামের একটি বই স্বাস্থ্য অধিদফতর কিনেছে মাত্র ৮৫,৫০০ টাকায়।
সার্জারির ছাত্র ও শিক্ষানবিশদের টেক্সট বই ‘প্রিন্সিপাল অ্যান্ড প্র্যাকটিস অব সার্জারি’। গোপালগঞ্জের শেখ সায়েরা খাতুন মেডিক্যাল কলেজের জন্য এই বইয়ের ১০টি কপি কিনেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। বইটির বাজার মূল্য সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা হলেও স্বাস্থ্য অধিদফতর প্রতিটি বই কিনেছে ৮৫ হাজার ৫০০ টাকা করে। সেই হিসাবে ১০ কপি বইয়ের মোট দাম পরিশোধ করা হয়েছে ৮ লাখ ৫৫ হাজার টাকা। অর্থাৎ বাজার দামের তুলনায় ৮ লাখ টাকা বেশি খরচ করে এ বই কিনেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।
এই দুর্নীতি কিন্তু যুগের পর যুগ ধরে চলে আসতেছে। তবে এই দুর্নীতির খবর প্রকাশের মাধ্যমে আস্তে আস্তে সব থলের কালো বেড়াল বেরিয়ে আসছে। এখন আমরা আশা করতেই পারি দিনকে দিন আরো দুর্নীতির খবর প্রাকশের মাধ্যমে এগুলার বিরুদ্ধে সচেতনতা তৈরির পথ সুগম হচ্ছে।
একটা সুখী ও সুন্দর দুর্নীতি মুক্ত বাংলাদেশ দেখার অপেক্ষায় রইলাম
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৯ দুপুর ১২:২৪