মন ছুঁয়ে গেল লেখাটি। ধন্যবাদ মনজুরুল হক। আর উপমার জন্য দোয়া- মানুষের মমতায় নিশ্চয় ভালো হয়ে উঠবে মেয়েটি।
উপমা ভালো হয়ে উঠবে এই বিশ্বাস আছে। কারণটা বলি, মনজুরুল হকের এই লেখাটি পড়তে পড়তেই মনে পড়ছিল সব...
আমার স্ত্রীর প্রিয় বান্ধবীর স্বামীর হঠাৎ ক্যান্সার ধরা পড়ল। ক্যান্সার তো ধরা পড়ে নাম, পুরো পরিবারের ওপর আকাশ ভেঙ্গে পড়ে ওই মেডিকেল রিপোর্টে। আমি ওদের নাম এখানে বলব না, কিছু যুক্তিসংগত কারণেই।
আমার স্ত্রী আর মেয়েটি একই সঙ্গে পড়ত। বিয়ের পরেও ওদের পারস্পরিক সম্পর্ক আগের মতো। নিয়মিত যোগযোগ, সুখ-দুঃখ ভাগাভাগি।
তো ওর স্বামীর যখন ক্যান্সার ধরা পড়ল, ওদের কী হলো সে শুধু আমরা অনুমান করতে পারি। আমরা নিজেরাই তো রীতিমতো স্তব্ধ।
ছেলেটা এত ভালো! নিষ্পাপ চেহারা। চুপচাপ থাকে। তবে আমাদের সব কিছুতে সে আছে। চাকির একটা ছোটখাট। বেতন অল্পই। তবু ওরা সুখে-শান্তিতে ছিল। ছোট্ট একটি মেয়ে ওদের।
ছেলেটা ভালোই পরিমিত জীবন-যাপন করে। একটা সিগারেট পর্যন্ত খায় না। তার ক্যান্সার! আর ওর অল্প বেতনের টাকায় এই মহারোগের চিকিৎসা হবে কী করে!
প্রথমে ছেলেটির ভাই-বোনরা কিছু সাহায্য দিল, বান্ধবীর বাবা কিছু দিলেন। আমার স্ত্রী আর মেয়েটির দুই বান্ধবী থাকে যুক্তরাষ্ট্রে। ওরা বেশ কিছু টাকা পাঠাল। আমরা যারা ঢাকায়, তারা কিছু দিলাম।
এই করে ছেলেটির কেমোথেরাপি শুরু হলো। ভীষণ খরুচে চিকিৎসা। কষ্টকরও। পয়সা যায়, ওষুধের পার্শ্বপ্রতক্রিয়ায় অর্ধেক জীবনই যায় যায়...।
কপাল এমন খারাপ! পুরো এক কোর্স কেমো শেষ করার পর পরীক্ষা করে দেখা গেল, ক্যান্সার দমন হয়নি। আবার ছড়াতে শুরু করেছে। আরেক দফা কেমো দিতে হবে। তারপর রেডিও থেরাপি। এরই মধ্যে তো টাকা-পয়সা সব শেষ।
এবারের কেমোর একেকটা ডোজ আরো দামি। একেকবারে লাগবে ৭৫ হাজার টাকা। এভাবে পাঁচবার দিতে হবে। তার রেডিও থেরাপি আছে...!
টাকা নাই, আশা নাই! যারা একবার দিয়েছে, তারা আর কোত্থেকে দেবে! আর ওরাই বা চিকিৎসার আর কোথায় পাবে! টাকা-পয়সা সব আগের বারেই শেষ।
তারপরও আশাকে তো হারতে দেয়া যাবে না। ওরা জোগাড় করল কিছু। বন্ধুরাও আবার অল্প-স্বল্প দিলো। শুরু হলো আবার কেমো। একটা শেষ হয়, ২০-২২ দিনের মাথায় আবার ৭৫ হাজার টাকার দুশ্চিন্তা পাথরের মতো চেপে বসে...।
আমার এক বন্ধু, ডাক্তার। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় চাকরি করে। ওঁর অফিস দিল্লি আর মিসরে। ওঁর হাসবেন্ড আর্কিটেক্ট। পুরো ঘটনাটা বললাম ওদেঁর। ওঁ মিসর থেকে ৩০ হাজার টাকা পাঠিয়ে দিল আমার কাছে। ওঁরা দেখেতোনিই, জানেও না কাকে ওঁরা ৩০ হাজার টাকা দিয়ে সাহায্য করল।
আমার আরেক বন্ধু, সেও আর্কিটেক্ট। ওদেঁর বণ্ধুদের একটি সংগটন আছে। আমার কাছে সব শুনে, সেও ওই সংগঠন থেকে ২০ হাজার টাকা এনে দিল। বললাম, ‘তুমি চলো, তুমি নিজের হাতে ওদের টাকাটা দাও।‘ বন্ধু বলল, ‘দূর! তুমিই দিয়ে দিও।‘
নাদেখা-আচেনা মানুষকে পাঠিয়ে দিল ওঁরা ভালোবাসা- বাঁচার আশ্বাস। এই তো মানুষ। এই তো আমরা।
তাহলে আমরা হারব কেন...!
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ সন্ধ্যা ৬:১৫