somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

জিএম হারুন -অর -রশিদ
আমার কারো কাছে নেই কোন অভিমানের দেনাপাওনা, নেই কোন কষ্টের হিসাব, তবুও লুকিয়ে থাকা হাহাকার পরম যতনে আগলে রাখি-- প্রথম পাওয়া চিঠির মত, আমি এই রকমই বন্ধু ।

১১৯ নং শরণার্থীর লেখা শেষ চিঠি

১৭ ই এপ্রিল, ২০১৯ দুপুর ১২:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


প্রিয়তমা,


আমি ভাসছি আর ভাসছি,
সমুদ্রের জল আমার খুব পছন্দ ছিলো,
কিন্তু অর্থের অভাবে সমুদ্রই দেখা হয়নি আগে কখনো,
কিছু ডলার জমলে তোমাকে নিয়ে সমুদ্রে ঘুরতে যাবো ঠিক করেছিলাম,
অথচ আজ গত কয়েক’দিন সমুদ্রের উপরই দিনরাত্রি পার করছি,
পার করছি বলা ঠিক হয়নি
আমার ভুল জন্মস্হানের কোনো অভিশাপে,
সমুদ্রের মধ্যেই আটকে আছি,
আটকে আছি একটি বড় ইন্জিন নৌকায়।


কতোদিন হয়েছে,
আমার হিসাব নেই
আমার মতো আরো অনেকের কাছেই বোধহয় হিসাব নেই,
দশ-বারো’দিন হতে পারে,
কম বেশিও হতে পারে,
কম বেশি হলেও কারো কিছু আসে যায়না,
এখানে আমাদের কারো কোনো নাম ধরে ডাকা হয়না,
আমাদের সবার কপালে লাল রং দিয়ে নাম্বার লেখা হয়েছে,
আমি হচ্ছি ১১৯ নং শরণার্থী,
হা আমরা সবাই নাম্বারধারী শরণার্থী,
আর আছে অস্ত্র হাতে কিছু দালাল,
তারা আমাদের সব শরণার্থীকে একটি নিরাপদ সীমানায় ঢুকিয়ে দিবে,
এখানে কোনো মানুষ নেই।


প্রিয়তমা,
প্রথমে আমরা প্রায় তিনশত শরণার্থী ছিলাম,
ইরাক,সিরিয়া,আফগানিস্তান,মায়ানমার,
আফ্রিকা আর সুদানেরই ছিলো প্রায় সবাই,
তিনদিন পর থেকে আমরা কমতে শুরু করেছি,
কেউ অসুখে ভুগে, কেউ খাবারের অভাবে,
কেউ খাবারের জলের অভাবে, অথবা কেউ দালালের অত্যাচারে,
সব লাশই সমুদ্রে মাছের খাবার হয়েছে।


চারিদিকে এতো জল আর জল
অথচ খাবারের জন্য কোনো জল দেয়না ওরা,
আমার তৃষ্ণায় বুক শুকিয়ে গেছে,
শেষ কবে গরম রুটি খেয়েছিলাম তাও ভুলে গেছি,
তবুও এতোটুকু মনে আছে
গরম রুটি’র ছোয়া ঠোঁটে লাগতেই তোমার গরম ঠোঁটের কথা মনে পরেছিলো,
তোমার তপ্ত চুম্বনের কথা মনে পড়েছিল,
আমি রুটির প্রতিটি অংশ চুষে চুষে খেয়েছি,
তোমার ঠোঁট চোষার মত করে,
দেখো আমি আজকাল গরম রুটি আর তোমার গরম ঠোঁটের পার্থক্য করতে পারিনা।


প্রিয়তমা,
আমিতো মানুষ ছিলাম কিছুদিন আগেও
হাসতাম, খেলতাম, ভালোবাসতাম,
আমি রাতারাতি মানুষ থেকে শরণার্থী হয়ে গেছি,
তুমি যদি এর পেছনের কারণ জানতে চাও,
তবে অস্ত্র আর তেলের ব্যবসা তোমাকে বুঝতে হবে,
আমেরিকা, রশিয়া, চীন আর প্রথম বিশ্ব আমাদের শরণার্থী বানিয়েছে,
জাতিসংঘ আর বিশ্বব্যাংক তাদের সহযোগিতা করেছে,
যুদ্ধ যুদ্ধ খেলায় তারা শরণার্থী বানায়,
সবই হচ্ছে অস্ত্র আর তেলের গোপন কারবার,
পৃথিবীর সকল অস্ত্র আর তেলের কারবারীদের হাতে লেগে আছে আমার মত শরণার্থী’দের রক্ত।


একজন মানুষ’কে শরণার্থী বানাতে ওরা কতো সময় আর ডলার ব্যয় করে,
আমাদের কল্পনাও তা কখনো ছুঁতে পারবেনা,
অথচ ওরা ক্ষুধার্থ মানুষ’কে গরম রুটি দিবেনা,
রুটি পেলেই আমরা মানুষ হয়ে বেঁচে যাবো ,
তখন থাকার জন্য রাষ্ট্রও চাইব,
তাই তারা আমাদের গরম রুটি দিবেনা,
নিঃশ্বাস নেওয়ার স্বাধীনতাটুকুও কেড়ে নেবে,
অথচ মানুষ মারতে অস্ত্র চাইলেই কাড়ি কাড়ি অস্ত্র প্রথমে বিনে পয়সায় দিবে,
তারপর তোমাকে বাঁচতে হলে তাদের কাছ থেকে অস্ত্র কিনতে হবে।
পৃথিবীতে শান্তির নামে প্রথম বিশ্ব এখন শরণার্থী বানানোর কারখানা খুলেছে,
ধর্ম, বর্ণ, আর ডলার হচ্ছে এই শরণার্থী বানানোর কাঁচামাল ।


প্রিয়তমা,

তোমার শরীরের গরম আর কোনোদিন পাবো না জানি,
আজকাল সূর্যের গরমে আমার শরীর পুড়ে কয়লা হয়ে গেছে,
তিনদিন যাবত কোনো খাবার দেয়নি ওরা,
অথচ সবার শেষ ডলারটুকুও ওরা কেড়ে নিয়েছে,
আমাদের গভীর সমুদ্রে রেখে দালাল’রা বড় জাহাজে করে পালিয়েছে।


একজন মা তার সন্তানের জন্য এক টুকরো রুটি বেশি চেয়েছিলো
তারা দেয়নি,
মা নিজে না খেয়ে তার অংশ দিয়েছিলো তার সন্তান’কে,
প্রথমে শিশুটির বাবা মরেছিলো আকাশ থেকে পরা বোমা’তে
মা’ মরল না খেয়ে,
কতো সহজে বোমা পাওয়া যায়
অথচ গরম রুটি পাওয়া যায়না,
এই শিশুটি যদি বেঁচে যায় ভাগ্যক্রমে,
সে কার কাছে ভালোবাসা শিখবে,
একদিন সে অস্ত্রের কাছেই যাবে প্রতিশোধ নিতে,
আমিও তাই চাইবো সে যেনো প্রতিশোধ নিতে পারে।


প্রিয়তমা,
আমি কি ভাবে এখনো বেঁচে আছি জানিনা,
কার বোমার আঘাতে আমাদের সব ধ্বংস হলো এখনো জানিনা,
আমারা কার শত্রু এখনো বুঝলাম না,
আমার বন্ধু কে তাও জানি না,
আমার জ্ঞান যখন ফিরেছে,
শুধু দেখলাম তুমি আমাকে আকড়ে শুয়ে আছো,
তোমার শরীর ছেড়ে তুমি আকাশে চলে গেছো অনেক আগেই,
চারিদিকে শুধু তোমার পোড়া রক্ত,
আমি পালিয়েছি তোমার পোড়া শরীরের গন্ধ থেকে।


প্রিয়তমা
আমাদের ইন্জিন নৌকা কোনো রাষ্ট্রই ভিড়তে দিচ্ছে না তাদের সীমানায়,
সব রাষ্ট্রই তীরের কাছে গেলে গুলি করে তাড়িয়ে দিচ্ছে আমাদের,
আমাদের আর কোনো রাষ্ট্র নেই,
নিজের কোন ভূমি নেই,
যেখানে মরে গেলেও মাটিতে রাখবে আমাদের।


প্রিয়তমা,
আর কতক্ষণ বেঁচে থাকবো জানিনা,
আমার এই চিঠি আমি আকাশের কাছে দিয়ে দিলাম তোমার কাছে পৌছাতে,
শরণার্থী’দের কোনো মাটি থাকে না,
তাদের কোনো রাষ্ট্র থাকেনা,
তাই তুমি আমার জন্য আকাশেই ঘর বানিয়ে রেখো,
আমাকে ক্ষমা করো,
তোমাকে কথা দিয়েছিলাম জীবন মরন
এক সাথেই থাকব,
আমি পারিনি,
আমি পালাচ্ছি জীবন থেকে।


ইতি
১১৯ নং শরণার্থী।


বি.দ্র: গত কয়েক’দিনে আমার নাম ভুলে গেছি, কপালে লাল রং দিয়ে লেখা নাম্বারটাই নাম হয়ে গেছে।
———————————
রশিদ হারুন
০৭/০৪/২০১৯

সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই এপ্রিল, ২০১৯ দুপুর ১২:৪০
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×