somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঘটনা চক্রটি নিতান্তই কাল্পনিক

২৮ শে এপ্রিল, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এই ঘটনাটা নিতান্তই কাল্পনিক। বাস্তবতার সঙ্গে লেখাটার কোন মিল পেলে লেখক তিল পরিমাণ দায়ী নয়।
[লেখাটা সবার জন্য না। আর আশা করি খুনি রানা সহ অন্যান্য হত্যাকারীর ফাঁসি এই ২০১৩ তেই হবে]

ধরুন, রানাকে এই সরকার বিভিন্ন ধরনের তাল বাহানা করে ছেড়ে দিলো অথবা অতি স্বচ্ছ এবং আন্তর্জাতিক মানের ট্রাইব্যুনাল রানাকে দোষী সাব্যস্ত করতে পারলনা। আর এই সুযোগে রানা বিদেশ পালিয়ে দেশের জনগণকে তার মধ্যাঙ্গুলি দেখিয়ে বহাল তবিয়তে মাস্তিময় জীবন যাপন শুরু করলো। ৮-১০ বছর পর দেশে ফিরে আবার যুক্ত হল রাজনীতিতে। প্রথম দিকে কিছুটা গোপনে গোপনে। তারপর চারপাশটা গোছাতে শুরু করল। এবার আর কোন ভুল নয়। এবার জাল বিছাতে হবে। সারা দেশের অর্থনীতি, রাজনীতির রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে যেতে হবে। চারিদিকে বিস্তৃত হতে থাকলো রানার অর্থ আর পেশী শক্তির। এভাবে চলতে থাকার কয়েক বছর পর রাজনীতির সুফল হিসেবে রানা বনে গেল শ্রম মন্ত্রী। দেশের শ্রমিকের ভালো মন্দ, সকল ধরনের সুবিধা অসুবিধা দেখা এখন তার ঘাড়ে। সে এখন শ্রমিক দরদী একজন মানুষ। শ্রমিকের কল্যান ছাড়া এখন সে কিছুই বোঝেনা। আহা! কতইনা ভালো লোক।

হঠাৎ করেই পটের পরিবর্তন। কোথা থেকে যেন কি হয়ে গেল! এমন তো কথা ছিলনা। গনহত্যার মামলায় রানাকে দাড়াতে হল কাঠগড়ায়। এতটা বছর রাজনীতি কি বিফলে গেল? বাঙ্গালীকে তো জেলিফিশ বলেই জানত সে। দিকবিদিক হয়ে রানা দেশের উকিল ব্যারিস্টার বাদেও বিদেশে কয়েকশ কোটি টাকা দিয়ে নিয়োগ করে লবিইস্ট। এভাবে তো মরতে পারেনা সে। তার যে অনেক কাজ বাকি। দেশকে নিয়ে যেতে হবে অন্ধকার এক যুগে। হীরক রাজার মত সেও অনেক কল তৈরি করেছিল। এই কলগুলির এক দিক দিয়ে দেশের নতুন পুরাতন সকল প্রজন্মকে ঢোকানো হত আর আর অন্য পাশ দিয়ে বের করা হত সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়া দেশপ্রমিক। পুরনো প্রজন্মের যত স্মৃতি সব চুষে খেত এই জাদুকরী কল গুলো আর নতুন প্রজন্মকে শেখান হতো দেশপ্রেম। শেখানো হতো দেশের ইতিহাসের স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়ংকর হত্যাকাণ্ডকে ভুলে যেতে। মাত্র কয়েক ঘন্টায় ৫০০ মানুষ হত্যা করা, কয়েক হাজার মানুষকে দিনের পর দিন কবরের ভেতর অক্সিজেন, পানি না দিয়ে অমানবিকভাবে অত্যাচার করা, দম নিতে না পেরে হাত পা ছুড়তে ছুড়তে মানুষগুলো আস্তে আস্তে প্রচন্ড কষ্ট নিয়ে মৃত্যুবরন করা এই সমস্ত ইতিহাস গুলোকে মুছে দিতেই তৈরি হয়েছিল ওই জাদুকরী কল গুলো। বেশ ভালোই কাজ করছিল এগুলো।

কিন্তু এই সুখ বেশিদিন সহ্য হলনা। ফাজিল এক সরকার এসে তাদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিল করার জন্য গ্রেফতার করে রানাকে। আন্তর্জাতিক মানের বিশেষ ট্রাইব্যুনাল তৈরি করে শুরু হয় তার বিচার। কিন্তু পোড়া কপাল বাঙ্গালীর। এতগুলো মানুষ হত্যা করার পরও ফাঁসি হয়না তার। শাস্তি কেবল যাবজ্জীবন। এ কেমন বিচার? কিছু মানুষ যাদেরকে ওই কল গুলোর ভেতরে ঢোকানো যায়নাই, তারা এই প্রহসনমুলক বিচারের প্রতিবাদে নেমে পরল রাস্তায়। মাত্র কয়েকজন শুরু করলো এই প্রতিবাদ। দেখতে না দেখতেই লাখ লাখ মানুষ জমা হতে থাকলো এই প্রতিবাদের সঙ্গে একাত্মতা জানাতে। সবার একটাই দাবি। ফাঁসি ফাঁসি। "স" তে সোহেল রানা, তুই জল্লাদ, তুই জল্লাদ। ৬ বছরের শিশু থেকে ৮০ বছরের বৃদ্ধ পর্যন্ত। সবার কন্ঠে একই সুর, একই ক্ষোভ। তৈরি হয় ফাঁসির প্রতীকী মঞ্চ। একে একে পুরো দেশের মানুষ একাত্মতা জানায় রানার ফাঁসির দাবিতে। দেশের গন্ডি ছাড়িয়ে বিদেশেও জোরালো হতে থাকে ফাঁসির দাবি। কোন কিছুইতো এই হতচ্ছাড়া বাঙ্গালীরা ভুলেনাই। তাহলে কি হীরকের ওই কল গুলো কাজ করেনি?

চলতে থাকে রানার বিচার। আর এদিক দিয়ে আরও প্রতিবাদী হয়ে ওঠে মানুষগুলো। সারা দেশ ফুঁসতে থাকে রানার ফাঁসির দাবিতে। কিন্তু কপাল ভালো বলতে হবে রানার। হীরকের কল কাজ না করলেও এবার কাজ করলো অন্য এক কল। প্রোপাগান্ডা ছড়ানো হল, মানুষকে ভুল বোঝানো হল। রানার ফাঁসির দাবিতে যারা আন্দোলন করছে তারা আসলে অত্যন্ত খারাপ মানুষ। তারা এই দিন দুনিয়া জাহানের মালিককে বিশ্বাস করেনা। তার ও তার নবীদের সম্পর্কে কটূক্তি করে। এদের সঙ্গে আর আন্দোলন না। হাজার হলেও এরা নাস্তিক। এতেই শেষ না। সরকারের সঙ্গে সখ্যতারও কিছু প্রমান পাওয়া যায়। সো, এই নাস্তিক, নষ্ট আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আর না। খামাকা এতদিনের পুরনো ঘটনার বিচার চেয়ে কি লাভ? এখন সময় দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার। রানার বিচার করলেই কি আর না করলেই কি?

নষ্ট ছেলে মেয়েগুলো বুজতে পারেনা, কিভাবে এই মানুষগুলো ভুলে গেল রানার এই অপকর্মের কথা, কিভাবে ভুলে গেল সেই অসহনীয় অমানবিকভাবে এতগুলো মানুষকে তিলে তিলে হত্যা করার কথা। এরা কি আসলেই মানুষ? পৈশাচিক ওই হত্যাযজ্ঞগুলো কি ভুলতে পারবে মর্মান্তিকভাবে নিহতের পরিবারগুলো? ওরা কি ভুলতে পারবে কিভাবে ওদের প্রানপ্রিয় আপনজনদের ভয়াবহ কষ্ট দিয়ে হত্যা করা হয়েছে? ওদেরই সামনে আপনজনগুলো মৃত্যু যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছিল, ওদেরই সামনে আপনজনগুলো বাঁচার জন্য মিনতি জানাচ্ছিল। জাতি কি আজ কলংকমুক্ত হতে পারবে? আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম যখন আমাদের জিজ্ঞেস করবে, কি করে এত বড় খুনি আইনের ফাক ফোঁকর দিয়ে বের হয়ে গেল? আমরা কি তাদের দিকে চোখ তুলে তাকাতে পারবো? এতটুকু কি লজ্জা হবেনা?

এতো কিছুর পরেও অবশ্য একটা কাজ ভালোই হয়েছে, এই সুযোগে মানুষ চেনা গেল। কিন্তু কিছু মানুষ হাল ছাড়েনা। এরা আদাজল খেয়ে লেগে থাকে রানার ফাঁসির দাবিতে। অনেক চরাই উতরাই পেরিয়ে এগোতে থাকে এরা। এই মানুষগুলো জানে ফাঁসি হতেই হবে। কারন ফাঁসি ছাড়া আর কোন বিকল্প নাই। তাদের নয়নে স্বপনে দেখা স্বপ্ন, তাদের আত্মার দাবি বিফলে যায়নি। রানার ফাঁসি হয়েছিল ঠিকই।

বাংলার জনগন মানুষরুপী কোন পশুর আস্ফালন দেখতে পছন্দ করেনা।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে এপ্রিল, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:১৪
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

প্রজাতির শেষ জীবিত প্রাণ !

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৩ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫১



বিবিসির একটা খবর চোখে এল সেদিন । উত্তরাঞ্চলীয় সাদা গন্ডার প্রজাতির শেষ পুরুষ গন্ডারটি মারা গেছে । তার নাম ছিল সুদান । মৃত্যুর সময় তার বয়স ৪৫। বিবিসির সংবাদটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটর মধ্যে সে একজন ।।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ১৩ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯



আপনারা কতজন Umma Kulsum Popi চেনেন, আমি ঠিক জানি না। আমার পর্যবেক্ষণ মতে, বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের একজন হলেন উনি। যদি বলি দেশের সেরা পাঁচজন কনটেন্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিস অস্বীকার করে রাসূলের (সা.) আনুগত্য সম্ভব

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৩ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সূরাঃ ৪ নিসা, ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি তোমরা আল্লাহ ও আখিরাতে বিশ্বাস কর তবে তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর, আর আনুগত্য কর রাসুলের, আর যারা তোমাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

=কবিতাগুলো যেনো এক একটি মধুমঞ্জুরী ফুল=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৩ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:২০



©কাজী ফাতেমা ছবি
মনের মাধুরী মিশিয়ে যে কবিতা লিখি
কবিতাগুলো যেনো আমার এক একটি মঞ্জুরী লতা ফুল,
মনের ডালে ডালে রঙবাহারী রূপ নিয়ে
ঝুলে থাকে কবিতা দিবানিশি
যে কবিতার সাথে নিত্য বাস,
তাদের আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

পোষ্ট যদি ক্রমাগতভাবে ০, কিংবা ২/১'টি মন্তব্য পেতে থাকে, বুঝবেন যে, সোনাগাজী সেমি-ব্যানে আছে!

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৩ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৭



আপনার পোষ্ট যদি ক্রমাগতভাবে ০ কিংবা ১'টি মন্তব্য পেতে থাকে, তখন খোঁজ নিলে দেখবেন যে, সোনাগাজী সেমি-ব্যানে আছে!

কোন বিষয়ের উপর অনেক মানসম্পন্ন পোষ্ট লিখলেও সামুতে আপনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×