। ছবিতে - পিয়া জান্নাতুল। ছবিতে কপি রাইট আছে।
এক রাতে বাসায় ফিরতে বেশ দেরী হয়ে গিয়েছিল। রাত সম্ভবত ২ টা হবে। নগরীর বাদামতলীতে সি এন জির জন্য অপেক্ষারত। এমন সময় এক ভদ্র মহিলা এসে সামনে দাঁড়িয়ে বললেন আপনাকে দেখে ভদ্রলোক মনে হচ্ছে। আমার একটু উপকার করবেন? এতো রাতে হঠাৎ মোটামুটি স্মার্ট গেটাপের ভদ্রমহিলার উপস্থিতিতে বিব্রতবোধ এবং ভীত অনুভব করলাম। আপুটার বয়স ৩৭-৪০ এর মধ্যে হবে।এলোমেলো চুল।লালচে চোখ! বোরকা পড়া কিন্তু দেখতে খুবই সুন্দর। দুয়া ইইনুছ পড়লাম। এই দুয়াটি অনেক শক্তিশালী।পড়লেই বিপদ কেটে যায়। আশে পাশে তাকিয়ে দেখলাম কয়েকটা রিক্সাওয়ালা, চা ওয়ালা ও দিন মজুর শ্রেণীর লোক লোভনীয় দৃষ্টিতে মহিলার দিকে তাকিয়ে আছে। কি করবো কিছুই বুঝতে পারছিলাম না! মনে সাহস এনে বললাম বলুন কি সমস্যা?
মহিলা ইতস্তত অনুভব করলেন। ভয়ে ভয়ে বললেন আমায় একটু খাবারের ব্যবস্থা করে দিন। আমি না খেয়ে বাসা থেকে না খেয়ে বের হয়ে এসেছি এক কাপড়ে।
আপনার বাসা কোথায়?
উত্তর দিলেন।
রাত ২ টায় কোন কিছুই তো খোলা থাকার কথা না। কোথায় খাবেন?
মহিলাঃ আমি তো কিছু চিনিনা। আপনি সাহায্য করুন।
আমার মনের ভয় বাড়ছে। এরকম অনেক মহিলা ছিনতাইকারী আছে। ধাপ্পাবাজ আছে। মানি ব্যাগে ৪০০০ এর মত ক্যাশ ছিল। কার্ড ছিল। আমি ৫০০ টাকার একটা নোট বের করে মহিলার দিকে এগিয়ে দিলাম। এবার দেখি মহিলা চোখের পানি ছেড়ে দিসেন। বললেন আমি ভিক্ষুক নই। এই মুহুর্তে হেল্পলেস। আমি একা মুভ করতে ভয় পাচ্ছি। হেল্পলেস ও মুভ শন্দগুলো শুনে ও চোখের পানি দেখে মনে কিছুটা জোর এলো। আমি আসলে তখন প্রচন্ড নার্ভাস। ভদ্র মহিলা পার্স খোলে এক বান্ডেল টাকার দিকে ইশারা করলেন। আমার টাকা চায়না, একটু আশ্রয় চাই।আমি কি করবো কিছুই বুঝতে পারছিলাম না।ভয় এবং নার্ভাসনেস বেড়ে যাচ্ছে যত সময় পার হচ্ছে। পকেটে মোটামুটি দামী মুবাইল ছিল।বের করতেও ভয় লাগছিল।
অল্প দূরে তাকিয়ে দেখলাম এক চা ওয়ালা চা বিক্রি করছে। বললাম আসুন আপাতত চা- কেক খান পরে দেখি কি করা যায়। চা ওয়ার্ডার করে মুবাইল থেকে মেসেঞ্জারে দেখলাম ঐ এলাকার কেউ অনলাইন আছে কিনা। মহিলা ভাগ্যবতী।ঠিক যাকে দরকার তাকেই পেয়ে গেলাম। ধরে নেই ওর নাম মাধবী । বাসা আগ্রাবাদ বাদামতলি থেকে একটু দূরে বারেক বিল্ডিং এর কাছে। ওরে কল দিলাম। দুয়া ইউনুছ এর শক্তি মনে হয় শুরু হয়ে গেলো। সব শোনে ও ওর এক স্থানীয় পরিচিত প্রভাবশালী ছাত্র নেতা কে পাঠালো। তার সাথে আরো ১ জোড়া বাইকে মোট ৫ জন ১৫-২০ মিনিটের মধ্যেই পৌঁছে গেল। সে আসার পর মন থেকে ভয় টয় সব চলে গেল। গ্রেট দুয়া ইউনুস এর শক্তি অনুভব করে আলহামদুলিল্লাহ বললাম। চা খেয়েই রওনা দিলাম মাধবীর বাসায়।মাধবী একজন মানবিক মানুষ। সে রাতে তার বাসার জমিদারের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করেই মহিলাকে আশ্রয় দিয়েছিল।পেশায় একজন র্যাম্প মডেল। মডেল হওয়ায় তার বেশ কিছু শাড়ি কালেকশানে ছিল। মহিলা চ্যাঞ্জ করলেন, ফ্রেশ হলেন। আগে এক পোষ্টে বলেছিলাম মডেদের পাওয়ার অনেক। এই পাওয়ায় সৌন্দর্য গুণের ও স্বাধীন ভাবে টাকা ইনকাম করতে পারার পাওয়ার। এতোই পাওয়ার যে রাত ২ টা ৩০ এ ফোন করার ১৫ মিনিটের মধ্যেই স্থানীয় প্রভাবশালী নেতা চলে আসে।
রাতের ভাত তরকারি ছিলোই। মহিলা কিছু খেলো না ১ কাপ ফফি ছাড়া। হয়তো ক্ষুধা নষ্ট হয়ে গেছে। মনে হল মহিলা উল্টো এখন আমাদের ভয় পাচ্ছেন। আমি বুঝতে পেরে মাধবীকে ইশারায় নেতা ছেলে গুলো কে পাঠিয়ে দিতে বললাম। ওরা চলে যাওয়ার পর মহিলা কিছুটা স্বাভাবিক হলো। মাধবী খুবই ভাল মানবিক এবং স্মার্ট মেয়ে। আস্তে আস্তে মহিলা তার করুণ কাহিনী বলল। অনেক লম্বা কাহিনি। সব বলতে গেলে ১০ পর্ব লিখতে হবে। সংক্ষেপে বলছি। স্বামী মোল্লা মানসিকতার। আধুনিকা স্ত্রীকে মানসিক নির্যাতনের পাশাপাশি গৃহ বন্দী করে রাখতে চায়। মহিলার বাবাও মোল্লা মানসিকতার। মোল্লা মানসিকতা বলতে এখানে বুঝানো হয়েছে যারা স্ত্রী ও মেয়েদেরকে দাসী মনে করে তাদের। অনেক অনেক ঘটনা আছে। সেগুলো একান্তই ব্যক্তিগত। এক্ পর্যায়ে অত্যাচারের পরিমাণ এতো বেড়ে গেসে মহিলা কে গৃহ বন্দী করে রাখে। সুযোগ পেয়ে মহিলা সেদিন বাসা থেকে পালিয়ে এসেছিল। উল্লেখ্য মহিলা একটি মফস্বলে থাকতেন। গ্রাম থেকে মফস্বল হয়েছে। মেট্টো থেকে ৬৫ ক.মি দূরের একটি মফস্বল এলাকা থেকে পালিয়ে আসা মেয়েটার শেষ সম্বল ছিল এক জোড়া স্বর্নের কানের দূল, ১ টি চেইন ও ৩০-৩২ হাজার ক্যাশ টাকা ও একটি মুবাইল।
মাধবী মডেলিং এর পাশাপাশি একজন হাই ক্লাস পতিতা। সে গোপন রাখলেও আমি জানতাম। তবে না জানার ভান করতাম। পেটের দায়ে যারা পতিতা হয় তাদের আমি পতিতা মনে করিনা।তারা আমার কাছে ঘুষ-সুদ খোর কোটিপতি দের চেয়েও বেশী সম্মানের। এই নষ্ট সমাজে কেউ নিঃস্বার্থ ভাবে ২ বেলার বেশী খেতে দেয়না।আত্নীয় স্বজন সর্বোচ্চ হয়তো ১ বছর খাওয়াবে, রাখবে, পড়াবে। এর পর তো খোটা দিবেই। মহিলা ১ বছর ছিল মাধবীর বাসায়। শিক্ষিতা মহিলা মাধবীর ও আমার সহযোগিতায় এখন একটি কেজি স্কুলের শিক্ষিকা। মডেলদের সাথে যারা থাকে তারাও অটো গ্রুমড হয়ে যায়। মাধবীর সাথে মিশে মিশে মহিলা ভিষন স্মার্ট এবং ফাস্ট এখন।বাসা ভাড়া খাওয়া ২ জনে শেয়ার করে দেয়। সুখে কেটে যাচ্ছে দুজনের দিনকাল|
এখন আমায় বলুন তো কে নষ্টা?
১) মহিলার পরিবার।
২) তার শ্বশুর বাড়ির লোকজন।
৩) মাধবী যাদের কাছে চাকুরী চাইতে গিয়ে কুপ্রস্তাব পেয়ে মডেলিং কে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছিল ওরা?
৪) ১,২,৩
৫) নাকি মাধবী!
গল্পটা সত্য। গল্পের শিরোনাম ব্লগার মাইদুল সরকার ভাই থেকে ধার করা।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই আগস্ট, ২০২২ ভোর ৫:৩০