কিছুদিন আগে বলিউডের অভিনেতা রণভীর সিং
উলঙ্গ কিছু ছবি তুলেছেন একটি ম্যাগাজিনের জন্য। ফেবু, ইউটুব,ইনস্টা তে কদিন ধরে শুধু রণভীর আর রণভীর। বেশ ভাইরাল হয়েছে ছবি গুলো।সমকামীদের খুশী দেখার মত। ফটোশ্যুট এর সময় স্ত্রী দীপিকা পাড়ুকোনে সামনেই ছিল। শোবিজে বিষয়টা খুবই স্বাভাবিক। অনেক গে কোরিওগ্রাফার এবং ফটোগ্রাফার বাংলাদেশও এমন শ্যুট করে থাকেন। কিন্তু দীপিকার জামাই এর মত ভাইরাল বা আলোচিত হওয়া কোন মডেলের পক্ষে সম্ভব না। তার উপর রণভীর কোটি কোটি তরুণীদের ও সমকামী দের ক্রাশ।
এই ব্যাপারে প্রখ্যাত লেখিকা তসলিমা নাসরিন বাংলাদেশ প্রতিদিনে একটি কলাম লিখেন, সেখানে তিনি বলেন, একসময় পত্রপত্রিকা মেয়েদের উলঙ্গ ছবি পাওয়ার জন্য মুখিয়ে থাকতো। সেই দিন এখনও চলে যায়নি। যে দিনটি ছিল না এই উপমহাদেশে, সেটি হলো পুরুষের সুঠাম শরীরের ছবির জন্য ক্রেজ। এটি একদিক থেকে ভালো। নারীর শরীর দেখে পুরুষ যেমন পুলকিত হয়, পুরুষের শরীর দেখেও নারী পুলকিত হয়। পুলকিত হওয়া, উত্তেজিত হওয়া, আনন্দ পাওয়া, সুখ পাওয়ার অধিকার শুধু পুরুষের নয়, নারীরও আছে। পুরুষের উলঙ্গ শরীরের ছবি ছাপিয়ে ম্যাগাজিন যে বের হয় না, তা নয়, হয়, তবে সেসব সমকামী পুরুষদের জন্য।
সুযোগ পেয়ে তসলিমা নাসলিম বাংলাদেশ প্রতিদিন এ লেখা একটা ফিচারে নারী-পুরুষের বৈষম্যের আরেকবার সমালোচনা করলেন। সমালোচনা করতে গিয়ে তিনি লিখেন - পর্নোগ্রাফিতে শারীরিক যন্ত্রণা পেতে পেতে নারীর যখন নো নো বলার কথা, তখন ইয়েস ইয়েস বলে। কারণ পর্নোগ্রাফির পরিচালক বলে দিয়েছেন, নো নো না বলে ইয়েস ইয়েস বলতে। এই ইয়েস ইয়েস পুরুষকে দ্বিগুণ উত্তেজিত করে। নারীর যৌন-আনন্দকে তো পুরুষশাসিত সমাজ স্বীকার করে না। সমাজের লোকেরা মনে করে যৌন-আনন্দ মন্দ মেয়েদের দরকার হলেও হতে পারে, ভালো মেয়েদের দরকার হয় না। ভালো মেয়েরা সন্তান উৎপাদনের জন্য স্বামী সহবাস করে, সন্তান জন্ম নেওয়ার পর তাদের প্রধান কাজ, সন্তানকে লালন পালন করা। এসব নতুন কোনও তথ্য নয়, এই তথ্য সকলের জানা।
আমাদের এও জানা আজ যারা রণভীর সিং-এর সম্পূর্ণ উলঙ্গ শরীর দেখে যারা ব্রাভো বলে লাফালো, তারাই আলিয়া ভাট বা ক্যাট্রিনা কাইফ বা কারিনা কাপুর বা ঐশ্বর্য রাই-এর সম্পূর্ণ উলঙ্গ ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়লে চুক চুক করে দুঃখ করবে। বলবে, কী করে তাদের স্বামী রণভীর কাপুর বা ভিকি কৌশাল বা সইফ আলি খান বা অভিষেক বচ্চন এই কাজটি করতে স্ত্রীদের ‘এলাও’ করলেন। কোনও স্বামী কি দীপিকার মতো বলবেন যে, ওঁদের উলঙ্গ ছবি আমার কাছে দারুণ লেগেছে। আলিয়া ভাট, ক্যাট্রিনা কাইফ, কারিনা কাপুর, ঐশ্বর্য রাই-কারও শরীরই স্থূল নয়। তাহলে রণভীর সিং যা পারেন, তা তাঁর সহনায়িকারা পারেন না কেন? কোথায় সমস্যা?
তিনি আবারও সে বিতর্কিত বিষয়টি লিখেন যা নিশ্চিত বডি শেমিং। তিনি বলেন, বোল্ড শব্দটা এ দেশে দেখলাম কিছুটা স্তন দেখা যাওয়া মেয়েদের বেলায় ব্যবহার করা হয়। অবশ্য সেই মেয়েদের সিনেমা থিয়েটার মিউজিক ইত্যাদির অর্থাৎ শোবিজের মেয়ে হতে হবে, অথবা ফ্যাশন সচেতন উচ্চবিত্ত বা উচ্চমধ্যবিত্ত শ্রেণির মেয়ে হতে হবে। হ্যাঁ মেয়ে হতে হবে, ছেলে হলে হবে না। শার্ট খুলে সিক্স প্যাক দেখালেও হবে না। অবশ্য সব মেয়ের শরীর দেখা গেলেই বোল্ড বলা হয় না। রাস্তার দরিদ্র ভিখিরি মেয়েদের হাড্ডিসার শরীর উন্মুক্ত হয়ে থাকলে কেউ তাকে বোল্ড বলবে না।
বোল্ড শব্দটার মিসইউজ দেখলে খারাপ লাগে। স্তন দেখাতে সাহস লাগে নাকি? যত তার স্তন দেখা যাবে, তত তার শোবিজের বাজার রমরমা হবে। এতে সাহসের চেয়ে বেশি আছে বাণিজ্য-কৌশল।
বোল্ড তো আসলে তাদের কাজ যারা সত্যিকার সাহসী। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যারা এমন কাজ করে, যে কাজ করলে মু-ুটা কাটা পড়বে, অথবা জীবনযাপনে বিস্তর সমস্যা হবে। আমি কাদের কাজকে বোল্ড বলি, তার দু-একটা উদাহরণ দিচ্ছি। যারা ভিন্ন ধর্মের, ভিন্ন বর্ণের, ভিন্ন জাতের কাউকে ভালোবেসে বিয়ে করে এবং সমাজের বাধা সত্ত্বেও নিজের সিদ্ধান্তে অনড় থাকে; যে সমকামীরা, রূপান্তরকামীরা ঘোষণা দিয়ে ক্লোজেট থেকে বেরিয়ে আসে; যে মেয়েরা স্বামীকে ডিভোর্স দিয়ে একা থাকে; যারা ধর্মান্ধ কট্টরপন্থি আর উগ্রবাদী সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে একা যুদ্ধ করে; স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়; ... ওরাই প্রকৃত বোল্ড।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে জুলাই, ২০২২ রাত ২:৩৭