পৃথিবীর সবচেয়ে অদ্ভুত দেশ আমাদের বাংলাদেশ। এখানে বয়স ৩০ পার হলে সরকারী চাকরি পাওয়া যায়না। বি সি এস দেওয়া যায়না। কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে ডেডিকেটেডলি ছাত্রলীগ এর রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলাম। বর্তমানেও আছি, ভবিষ্যতেও থাকবো। তবে লীগ করি বলেই অন্ধভাবে দলের সবকিছুতে সাপোর্ট করব এটা আমার পারসোনালিটির সাথে যায়না। আমি কোটা বিরোধীদের একজন। কোটা টোটা সব বাদ দিয়ে ৫ থেকে ৬% ছাত্র ছাত্রী সরকারী চাকরি পায়। বাকি সবার ভরসা কর্পোরেট বা প্রাইভেট জব।
প্রাইভেট কোম্পানি গুলো মাল্টিন্যাশনাল, ন্যাশনাল ও লোকাল বেইস হয়ে থাকে। সরকারি চাকরিতে ৭০% ঘুষ মামা চাচা দাদা কাকা কোটা ইত্যাদিতে দখল। ফলে মেধাবীদের একটা বড় অংশ প্রাইভেট বা কর্পোরেট জব করতে বাধ্য হয়।
আর কর্পোরেটে টিকে থাকা সত্যি চ্যালেঞ্জিং। সবচেয়ে বেশী চ্যালেঞ্জ নেয় মেয়েরা।প্রতিটি কোম্পানি ভালো পুরুষ এমপ্লয়ী বা বস যে নাই তাহা নয়, তবে বেশীরভাগ পার্ভাট।আমাদের দেশে একটি মেয়ে কি ইচ্ছে করে কলগার্ল হয়? প্রশ্নই আসেনা। মেয়েটি যখন ইন্টারভিউ দিতে যায়, তখনই বস যদি পার্ভাট হয় তবে সিডাকটিভ আচরণ করবে। ধরে নিলাম বস ভালো। মেধা দিয়ে চাকুরী পাওয়ার পর দেখা যাবে রিপোর্টিং বস পার্ভাট। রিপোর্ট বসও যদি ভালো হয় তবে দেখা যাবে স্বয়ং কোম্পানির এম ডি বা চ্যায়ারম্যান সিডউস করছে। আমাদের মত দরিদ্র দেশে ভাতের অভাবে মেয়েরা এসব মেনে নিয়েই জব কনটিনিউ করে। বিগত ১০ বছর আগেও মেধা দিয়ে বিভিন্ন কোম্পানি নারী কর্মী নিয়োগ দিত। কিন্তু ইদানীং দেখা যাচ্ছে কর্পোরেট জব পাওয়ার জন্য সব চেয়ে বড় যোগ্যতা যা থাকতে হবে তা হলো, সাদা চামড়া, এক্সপোজিং ড্রেসাপ ও মাস্ট ওয়েল পলিসড হতে হবে। এভাবেই পেটের দায়ে অনেক মেয়ে হয়ে উঠে কর্পোরেট কলগার্ল।
এবার মডেল প্রসংগে আসি।জিমে গিয়ে ফিগার মেন্টেন করা, পার্লারে গিয়ে নিয়মিত ওয়েল পলিশড হওয়ার কারণে, নিয়মিত গ্রুমিং করার কারণে একজন মডেল এর কনফিডেন্ট লেভেল এতোই হাই হয়ে যায় যে, ভ্যান গাড়ি থেকে ৭০ টাকায় ১ টা টিশার্ট, স্টেডিয়াম মার্কেট থেকে ৩০০ টাকায় একটা ট্রাক, ও ফুটফাত থেকে একজোড়া ক্যাডস পড়লেও তাকে অন্য সবার থেকে সুন্দর দেখায়। মডেল মাত্রই লাস্যময়ী হয়। মডেলদের বয়স হয়ে থাকে ২২ থেকে ২৮। এরপরে আসলে ফিগার ধরে রাখা কঠিন হয়ে যায়। আমাদের দেশ রক্ষণশীল। এদেশে ৯৮% মানুষ মডেলদের কলগার্ল মনে করে। কারণ তাদের অধিকাংশই দেহ ব্যাবসার সাথে জড়িত।
দেখুন, যারা জব করছে তাদের অনেকে জব পাওয়ার জন্য, প্রমোশন পাওয়ার জন্য, সেলারি ইনক্রিমেন্ট এর জন্য দেহ দিচ্ছে আর মডেলেদের অনেকেই টাকা নিয়ে দেহ দিচ্ছে। কর্পোরেট জব করা মেয়েটি একই কাজ করার পরও তাকে সম্মানের সাথে ট্রিট করা হচ্ছে, আর অন্য একটি মেয়ে মডেলিং করার পাশাপাশি কারও সাথে রাত কাটাক আর না কাটাক তাকে কলগার্ল বলে অপমান করা হচ্ছে।
সত্যি সেলুকাস বড়ই বিচিত্র এই দেশের মানুষের মানসিকতা। মেয়েটি মডেলিং না করে যদি দারিদ্র্যতার নির্মম আঘাতে চূর্ণবিচূর্ণ হতো তবে তাকে ভালো বলা হতো। আর যদি দারিদ্র্যতা কে বৃদ্ধ আংগুল দেখিয়ে যদি সে মডেল হয় তাকে বলা হচ্ছে কলগার্ল! অথচ মডেল হওয়ার আগে যখন দিনের পর দিন উপোস করতো, ক্ষুধার যন্ত্রণায় আর্তনাদ করতো তখন যারা ওদের কলগার্ল বলে নাক সিটকায় তারা একবেলা খাবার পর্যন্ত কিনে দেয়নি।
ছবিতে যাকে দেখতে পাচ্ছেন ও দেশের অন্যতম সেরা ফ্যাশন মডেল। দেখুন সে বিখ্যাত জুয়েলারি ব্রান্ড "জরুয়া হাউজ" এর ব্রান্ড এম্বাসাডর। এবারের কান উৎসবে বাংলাদেশ থেকে আমন্ত্রণ পাওয়া একমাত্র মডেল সে।প্যারিস ফ্যাশন উইকের মতো প্রেস্টিজিয়াস রানওয়েতে গত আসরে সে ক্যাটওয়াক করেছে।তার নিজের পরিশ্রমের টাকায় রোজগার করা একটি অডি গাড়ি আছে ও একটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট আছে।সুযোগ পেলেই পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ঘুরতে যায় সে। এটাই তাঁর একমাত্র অপরাধ। পত্রিকা গুলো নিউজ করছে কিভাবে মডেলিং করে এই বিলাসবহুল জীবনযাপন করা সম্ভব। আচ্চা সে কিভাবে এমন লাক্সারিয়াস লাইফ লিড করছে তার জবাবদিহি করতে সে কি বাধ্য? সে তো অবৈধভাবে রোজগার করছেনা।
ব্লগার সাড়ে চুয়াত্তর ভাই পোস্ট দিয়েছেন "ভাত চুরির শাস্তি নির্মম শারীরিক নির্যাতন হলে হাজার কোটি টাকা চুরির শাস্তি কি হওয়া উচিত?" আমিও বলতে চাই মডেলিং করে রোজগার যারা করে তারা কলগার্ল হলে যারা একটি চাকরির জন্য বসের সাথে বিচানায় যায় ওরা কি? যারা জামাই থাকার পরও পরকিয়া করে ওরা কি? মডেলিং করেনা কিন্তু টাকার জন্য যে সকল স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীরা সুগার ড্যাডি মেন্টেন করে ওরা কি?
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে মে, ২০২৩ রাত ১১:৪৯