মুখলেস ভোর ৪ টায় উঠেভতাড়াতাড়ি ওযু করে জায়নামাজ বিছিয়ে তাহাজ্জুদ পড়ল। তারপর সেহেরি খেল। অত:পর আবার দুই রাকাত হাজতের নামাজ পড়ল। দীর্ঘ মুনাজাত ধরে আল্লাহকে কেঁদে কঁদে বলছে - "আল্লাহ গো আজ ৬০ বছর ধরে দুয়া করছি আমারে অবস্থা একটু ভালো করে দেও, কিছু টেহা পয়সা দেও, এই বয়সে এসে কেমনে রিস্কা চালাই? রব গো এই রমজানে তুমি আমারে ফিরাইওনা, আমারে ১ টা সিঞ্জি (সি.এন.জি) কেনার টেহা দেও। তুমিই তো মহান বাদশা। তুমি তোমার নাম রাখলা 'মালিকুল মুলক' 'তুমি নিজেই বলছ কোন ফরিয়াদীকে ফিরিয়ে না দিতে, আজ আমি দুই জাহানের বাদশাহ এর কাছে ভিক্ষার হাত পাতছি, তুমি কেমন করে আমারে ফিরাইয়া দিবা ' 'তুমি তোমার নাম রেখেছ 'আল মুমিন ' - অর্থাৎ তোমারে যারা বিশ্বাস করে ডাকে তুমি তাগো লগে কখনোই প্রতারণা করনা।আজ ৬০ বছর ধরে তোমারে বিশ্বাস কইরা ডাকতাছি, কই বিশ্বাসের মর্যাদা তো রাখলানা " এসব বলতে বলতে মুখলেস এর গাল বেয়ে চোখের পানি জায়নামাজ এর উপর পড়ে।
মুখলেছ ৬০ বছর ধরে এভাবে দুয়া করতেই আছে। ১ থেকে ২৯ রমজান পর্যন্ত দোয়া করে ৩০ রমজানের সেহেরি খাওয়ার সময় মুখলেস ভাবে - আজকে শেষ রোজা। আমার আল্লাই আইজ দিবোই দিবো। এভাবে ৬০ বছর কেটে গেসে। বেচেরা মুখলেস সারাদিন রোজা রেখে রিক্সা চালায়। প্রতিদিন আশায় থাকে - এই বুঝি তার দুয়া কবুল হইল। কিন্তু হায়! ৩০ রোজা শেষ হওয়ার পর মুখলেস পকেটে হাতিয়ে দেখে সামান্য ২/৩ হাজার টাকার বাজার করার টাকা টুকুও মালিকুল মুলক তাকে দেন নি।পুরান ছেড়া পাঞ্জাবি, ছেড়া জুতা, পুরনো লুঙ্গি পড়ে ঈদগাহে যায় মুখলেস। ঈদের জামাত শেষে ইমাম সাহেব মুনাজাত ধরেন। মুখলেস আবার নতুন আশায় একটা সিঞ্জির জন্য হাউমাউ করে কাঁদে। এভাবে কেটে গেসে ৬০ বছর।
বেটা রিক্সা ওয়ালা আসলেই মফিজ। সে কি করে জানবে 'ঈশ্বর থাকেন ঐ ভদ্র পল্লিতে,তার বস্তিতে তাকে খুজিয়া পাওয়া যাবেনা। এক বুক হতাশা, কষ্ট, বেদনা নিয়ে মুখলেস ইমাম সাহেবের সাথে মোলাকাত ও কোলাকুলি করতে যায়। ইমাম দেখেও না দেখার ভান করে মহল্লার ধন কুবের দের সাথে কোলাকুলিতে ব্যস্ত।
উপায় না দেখে মুখলেস একদিন এক মাওলানাকে তার দু:খের কথা কইল। সব শুনিয়া মওলানা সাহেব কহিলেন - "ধৈর্য হারা হইওনা, দুনিয়ায় পাওনি তো কি হইছে - জান্নাতে - ফেরারি এফ-৫০ চালাবা। উত্তর শোনে মুখলেস এর অবচেতন মন বলে - একটা সিঞ্জিই তো। জান্নাতে ফেরারি এফ-৫০ দিবেন বলে দুনিয়ায় ১ টা সিঞ্জি দিলে তো বাদশাহ এর ধন ভান্ডারে কম পড়েনা। এই বয়সে কেমনে রিস্কা চালাই। এসব ভাবতে ভাবতে জোহরের আজান ভেসে আসে। মুখলেস দৌড়ে মসজিদে যায়। ৪ নিয়্যত ১২ রাকাত সালাত আদায় করে আবার কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে - " রব গো বি এম ডব্লু লাগবো না - এই বয়সে তো শরীর চলেনা, ১ টা সিঞ্জি দেও। আল্লাহ বললেন - তুমি যখন দুয়া করবা - আমি কখনোই না বলবনা। হয়তো তুমি যা চাইছ তাই পাবা, অথবা তার চেয়ে ভালো কিছু পাবা, অথবা আখিরাতে তোমারে ন্রকি দেয়া হবে, দুনিয়ার জীবন ক্ষণস্থায়ী,ছলনায় ভরপুর, তাই তুমি রিক্সা চালাতে চালাতে পঙ্গু হয়ে গেলেও তোমারে সি এন জি দেয়া যাবেনা। কারণ পরকালে তোমারে আমি ফেরারি এফ-৫০ দিমু।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই মার্চ, ২০২৪ রাত ১:১১