somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ফেসবুক বাংলা অনুবাদ: গ্রামীণফোনের আহ্বান নাকি কৃতিত্ব বাগানোর ধান্ধা?

০৫ ই মার্চ, ২০১১ বিকাল ৫:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

(এই লেখাটা নিয়ে অনেকগুলো দৈনিক পত্রিকার দ্বারে দ্বারে ঘুরেছি। কেউ ছাপায় নাই। মুখের উপরে না বলে দিয়েছে।)

সম্প্রতি একটি জাতীয় দৈনিকে মোবাইল ফোন কোম্পানি গ্রামীণফোন ‘জরুরিভত্তিতে ফেসবুক অনুবাদক আবশ্যক’ বিজ্ঞাপন দিয়েছে। বিজ্ঞাপনটি দেখে শুরুতে মনে হয়েছিল, গ্রামীণফোন কিছু অনুবাদক নিয়োগ দিতে যাচ্ছে যাদের কাজ হবে ফেসবুকের যাবতীয় বিষয়-আশয় অনুবাদ করা। বিজ্ঞাপনটির আউটলুক এমন যেন এটি একটি চাকুরির বিজ্ঞপ্তি এবং অনুবাদক নিয়োগ করে অনুবাদের কাজটি করার জন্য ফেসবুক গ্রামীণফোনকে দায়িত্ব দিয়েছে।

স্বল্পপরিমাণে হলেও একসময় ফেসবুক বাংলা অনুবাদের কাজ করেছি, এখনও মাঝে মাঝে করি। ফলে কৌতুহলভরে বিজ্ঞাপনের বাকি অংশগুলো পড়লাম এবং চরমভাবে হতাশ হলাম। একই বিজ্ঞাপনের অংশ হিসেবে ভেতরের পাতায় আরেকটি ছোট বিজ্ঞাপনে কীভাবে ফেসবুক বাংলা অনুবাদ করা যায়, তার বিভ্রান্তিকর নির্দেশনাও দেয়া ছিল। পরদিন ওই পত্রিকার প্রতিদিনের তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগে এ সম্পর্কিত খবরও প্রকাশিত হয়। তাতে জানানো হয়, “গ্রামীণফোন ও ফেসবুক যৌথ উদ্যোগে বাংলা ভাষাভাষীদের জন্য আনছে বাংলায় জনপ্রিয় এই সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ব্যবহারের সুযোগ।” খবরে এও বলা হয়, “এর আগে কিছু উৎসাহী ফেসবুক ব্যবহকারকারী বাংলা ভাষায় ফেসবুকের রূপান্তর কাজ শুরু করলেও এর উল্লেখযোগ্য অংশই অসম্পূর্ণ থেকে গেছে।” খবর আর বিজ্ঞাপনটি মিলিয়ে পড়ার পর পুরো বিষয়টি বুঝা গেলো এবং একই সাথে গ্রামীণফোন যে মিথ্যাচার করে সাধারণ ফেসবুক ব্যবহারকারীদের কৃতিত্ব হাইজ্যাক করার ধান্ধা করছে, তাও পরিষ্কার হলো।

মিথ্যাচারের বিষয়টি পরিষ্কার করার আগে ফেসবুক বাংলা অনুবাদ সম্পর্কে কিছু বলা দরকার। ফেসবুক বাংলা অনুবাদ আসলে নতুন কিছু নয়। প্রায় আড়াই বছর আগে থেকেই বাংলাদেশ ও ভারতের বেশ কিছু ব্যবহারকারী নিজ উদ্যোগে, নিজ সময় ব্যয় করে এই ফেসবুক অনুবাদের কাজটি করে আসছেন। গ্রামীণফোন যেদিন বিজ্ঞাপনটি পত্রিকায় প্রকাশ করেছে সেদিন পর্যন্ত ফেসবুক অনুবাদের ৭০ শতাংশ কাজ শেষ হয়ে গেছে। তাছাড়া শুধু ইংরেজি থেকে বাংলাতে রূপান্তর করাই অনুবাদের একমাত্র কাজ নয়। এ সমস্ত অনুবাদের ক্ষেত্রে লোকালাইজেশনের প্রয়োজন পড়ে। এই ব্যবহারকারীরা লোকালাইজেশনের কাজটিও করে যাচ্ছে নিরলসভাবে। উল্লেখ্য, এই একই ধরনের কাজের জন্য ইন্টারনেট জায়ান্ট গুগল যেখানে রীতিমতো পয়সা দিয়ে লোক নিয়োগ করে, সেখানে ফেসবুক বাংলা অনুবাদের কাজে এখন পর্যন্ত ফেসবুক কর্তৃপক্ষকে কোনো প্রকার অর্থ খরচ করতে হয় নি। অনুবাদকরা নিজে থেকেই এই কাজটি করছে। পাশাপাশি একজন অনুবাদে ভুলত্রুটি থাকলে অন্যজন ধরিয়ে দিচ্ছে, একাধিক ভালো অনুবাদের মধ্যে সবচেয়ে ভালোটি বেছে নেওয়ার জন্য ভোটাভুটি হচ্ছে এবং এই করতে করতেই ফেসবুক বাংলা অনুবাদের কাজটির প্রায় তিন-চতুর্থাংশ শেষ হয়ে গেছে। কোনো ধরনের অর্থকড়ি ছাড়া মানুষের নিজ উৎসাহে এই অনুবাদের ফল হচ্ছে-- অনেকক্ষেত্রে গুগলের অনুবাদের চেয়েও ফেসবুকের অনুবাদ গুণগতভাবে ভালো অবস্থায় আছে। ফেসবুকে এখন পর্যন্ত কে কতোটি বাংলা অনুবাদ করেছে, ভোট দিয়েছে- তার সবকিছুরই রেকর্ড রয়েছে। বাংলাদেশের একজন তরুণ ওয়েব প্রোগ্রামার লেনিন ২২০০-এরও বেশি অনুবাদ করে এ কাজের শীর্ষে রয়েছেন। তিনিসহ যারা এ কাজের সাথে যুক্ত আছেন তারা কোনো প্রকার লাভের উদ্দেশ্যে কাজটি করছেন না, বরং কাজের তালিকায় নিজের নাম দেখা আর বাংলা ভাষার জন্য কিছু একটা করা ছাড়া আর কোনো তৃপ্তি বা পাওনা এ কাজের সাথে জড়িয়ে নেই।

ঠিক এই জায়গাতেই মিথ্যাচার করেছে গ্রামীণফোন। খবরে বলা হয়েছে, গ্রামীণফোন ও ফেসবুক যৌথ উদ্যোগে এই অনুবাদের কাজটি করছে। খোঁজ নিয়ে যতোদুর জানা গেছে, এটা এমন কোনো উদ্যোগ নয় যেখানে একমাত্র গ্রামীণফোন ও ফেসবুক যৌথ উদ্যোগে সেটি করবে। গ্রামীণফোন কর্তৃপক্ষ ফেসবুক কর্তৃপক্ষের কাছে অনুবাদের কাজে আগ্রহ দেখিয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই ফেসবুক এতে সম্মতি দিয়েছে এবং এর ফলে গ্রামীণফোন ফেসবুকের লোগোটি তাদের বিজ্ঞাপনে ব্যবহারের অনুমতি জোগাড় করতে পেরেছে। যে সাধারণ ব্যবহারকারীরা এতোদিন ধরে অনুবাদের কাজটি করে আসছে, তার চেয়ে গ্রামীণফোন আলাদা কিছু করতে যাচ্ছে না। ফেসবুক কর্তৃপক্ষ প্রতিটি ভাষাতেই তাদের সেবা দিতে চায় এবং এ কাজে যে কেউই এগিয়ে আসতে পারে। ব্যবসায়িক কোনো উদ্দেশ্য না থাকলে এই অনুবাদ কাজ করার জন্য ফেসবুকের অনুমতিরও প্রয়োজন পড়ে না। তারা অনুবাদ করার যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা দিয়েই রেখেছে, যে সুবিধা ব্যবহার করে গত আড়াই বছরে ফেসবুক অনুবাদের অধিকাংশ কাজ সম্পন্ন করা হয়ে গেছে। ফলে খবরের পরের অংশে গ্রামীণফোন কর্তৃপক্ষ যে দাবি করছে ‘এর উল্লেখযোগ্য অংশই অসম্পূর্ণ রয়ে গেছে’, তা ডাহা মিথ্যা ও কুরুচিপূর্ণ ছাড়া আর কিছু নয়। পুরো বিজ্ঞাপনটিই আসলে এক ধরনের মিথ্যে কথার সমষ্টি যেখানে ফেসবুক বাংলা অনুবাদকদের কৃতিত্ব হাইজ্যাক করা ছাড়া আর কোনো উদ্দেশ্য চোখে পড়ে না।

এটা ঠিক, ফেসবুক যে বাংলাতে ব্যবহার করা যায়, তা অনেকেই জানেন না। এটা যে অনুবাদ করা যায়, তাও অনেকে জানেন না। গ্রামীণফোন দেশের শীর্ষস্থানীয় মোবাইল ফোন কোম্পানি, তার ওপর বিজ্ঞাপনটি যেহেতু শীর্ষ জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত হয়েছে, সুতরাং এর মাধ্যমে অনেকেই ফেসবুক বাংলার কথা জেনে গেছেন। অনেকে নিশ্চয়ই অনুবাদেও আগ্রহী হয়েছেন। ফেসবুকসহ নানা ধরনের ওপেন সোর্স প্রজেক্টে যে কেউ বাংলায় অনুবাদ করতে পারেন, লোকালাইজেশন করতে পারেন। তাতে আমাদেরই লাভ বেশি। এই কাজে অংশ নেয়ার জন্য গ্রামীণফোন কেন, যে কেউই আহ্বান জানাতে পারে। কিন্তু তার মানে কি এই-- অন্যদের কৃতিত্ব হাইজ্যাক করে এই কাজটি করতে হবে? অধিকাংশ মানুষের না জানাকে পুঁজি করে ব্যবসা করতে হবে? অন্যের কৃতিত্ব চুরি করতে হবে? মোবাইল ফোন কোম্পানিসহ অনেক কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান দিন দিন সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে নানা ধরনের কাজে অংশ নিচ্ছে। এটাও গ্রামীণের সে ধরনেরই উদ্যোগ বলে মনে হয়। কিন্তু সেটি করতে গিয়ে প্রতারণার আশ্রয় নেয়া তো অপরাধের শামিল। একটি প্রায় সম্পন্ন হতে যাওয়া কাজে এ ধরনের একটি বিজ্ঞাপন প্রচার করে এবং অনুবাদের কাজ সম্পন্নকারীদের অবদানকে বেমালুম অস্বীকার করে, মিথ্যাচার করে গ্রামীণফোন যে কাজটি করেছে, সেটি প্রতারণা ছাড়া আর কিছুই নয়। গ্রামীণফোনের এই প্রতারণা ও কুরুচিপূর্ণ কাজকে ধিক্কার জানাই।
১৫টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:০২



ইউটিউব হুজুর বললেন, মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে। তখন নাকি নিজ যোগ্যতায় ঈমান রক্ষা করতে হয়। আল্লাহ নাকি তখন মুমিনের সহায়তায় এগিয়ে আসেন না। তাই শুনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মহিলা আম্পায়ার, কিছু খেলোয়ারদের নারী বিদ্বেষী মনোভাব লুকানো যায় নি

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯



গত বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল প্রাইম ব্যাংক ও মোহামেডানের ম্যাচে আম্পায়ার হিসেবে ছিলেন সাথিরা জাকির জেসি। অভিযোগ উঠেছে, লিগে দুইয়ে থাকা মোহামেডান ও পাঁচে থাকা প্রাইমের মধ্যকার ম্যাচে নারী আম্পায়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

জানা আপুর আপডেট

লিখেছেন আরাফআহনাফ, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭

জানা আপুর কোন আপডেট পাচ্ছি না অনেকদিন!
কেমন আছেন তিনি - জানলে কেউ কী জানবেন -প্লিজ?
প্রিয় আপুর জন্য অজস্র শুভ কামনা।



বি:দ্র:
নেটে খুঁজে পেলাম এই লিন্ক টা - সবার প্রোফাইল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×