somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ফারুক ওয়াসিফের লেখা "বাঙলামি"

২৯ শে এপ্রিল, ২০১২ রাত ২:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ফারুক ওয়াসিফের লেখা, তার ফেসবুক পেজ থেকে কপি-পেষ্ট আর সাথে সেখানে লেখা আমার মন্তব্যঃ

[ফেসবুকের কোন লেখার পাবলিকলি যেকোন কাউকে লিঙ্ক-রেফারেন্স দেওয়া মুশকিল, ফেসবুক বাধা দিয়ে রেখেছে। কিন্তু তর্কের প্রসঙ্গটা জরুরী বিবেচনা করে এবং উপায়ন্ত না পেয়ে সাময়িক এখানে এভাবে কপিপেষ্ট করা হলো। তবে ওখানকার আরও অনেক মন্তব্য যার সবগুলো না এনে কেবল আমার সাথে কথপকথোন অংশটুকু এখানে আনা হয়েছে।


বৈশাখের বাঙলামি, নগুরে 'জাতিসত্তার' নতুন কার্নিভাল.
by Faruk Wasif on Wednesday, April 18, 2012 at 5:55pm ·
.
'একদিন বাঙালি ছিলাম রে’ বলে দুঃখ করে গেয়েছিলেন কুমার বিশ্বজিৎ। এই গানে বাঙালিত্ব আর গ্রামীণতা সমার্থক বলে দেখা দিলেও, এই দুঃখের ব্রতকথা শহুরে মধ্যবিত্তদেরই। বাঙালি থাকা না-থাকা নিয়ে এই পদের বিরহভাব অন্যদের মধ্যে দেখা যায় না। গ্রামীণ মানুষের উচ্ছিন্ন হওয়ার প্রকাশ রোমান্টিক চিত্তচাঞ্চল্যে কুলায় না, তা জীবনের ভিত নড়ানো ঘটনা। যাহোক, গানটার মতো দুঃখটাও জনপ্রিয়তা পায়। বৈশাখের প্রথম প্রভাতে সেই দুঃখের সরস উদযাপন এখন সাংবার্ষিক অভ্যাস।
‘উন্নতির’ জন্য যাদের বদলে যেতে হচ্ছে, এই আক্ষেপ সেই সব শহুরে মানুষের। বদলানোয় তাদের অনিচ্ছা নাই, কিন্তু পুরোনোকে একেবারে খুইয়ে বসাতেও রাজ্যের দ্বিধা। রাজনারায়ণ বসু ঊনিশ শতকের দ্বিতীয় ভাগে খেয়াল করেন, ‘যা কিছু সাবেকি তা কিছু ভাল’ এমন কাতরতা তাঁর প্রজন্মে নতুন না, আগের ও পরের প্রজন্মেও তা পৌন:পুনিকভাবে ভাবে উপস্থিত। এই কালেও সেই কাতরতা ঘাই মারে এবং বদলের অস্থিরতার মধ্যে এই আবেগ পিছল সময়ের পিঠে আংটার কাজ করে। একইসঙ্গে তা হস্তগত বর্তমানেরও একটা সমালোচনা, যদিও নিরিখটা অতীতের। আধুনিক ব্যক্তিমনে এই ধ্রুবপদ নিরন্তর বাজে।
বিশেষ করে মধ্যশ্রেণীর মধ্যে এই ধ্রুবপদ দারুণ জাগর। গ্রামের সঙ্গে যোগাযোগ পাতলা হয়ে এলে; গ্রামীণ স্মৃতি ঝাপসা হয়ে গেলে তাদের মনে একধরনের সাংস্কৃতিক ফাঁপর বা শূন্যতাবোধ দেখা যায়। কারণ, কসমোপলিটান ‘ভদ্রলোকশ্রেণী’র পক্ষে সনাতন বাঙালিয়ানাকে অটুট রেখে ‘বিশ্বায়িত আধুনিক’ জীবনধারা চর্চা করা কঠিন। জাতীয়তাবাদী পূর্বপুরুষেরা বাঙালি সংস্কৃতিকে মোটাদাগে গাঁ-গেরামের জীবনধারা দিয়ে বুঝে নিলেও আজকের মধ্যবিত্তচিত্তে তা বেমানান। বাঙালিপনাকে সংস্কার করে নগুরে বানানোর জরুরত তাই এর সেবকদের তাতাচ্ছিল। সংস্কৃতির গ্রামীণ উপাদানকে ঘষে-মেজে শহুরে ঠাটবাটে শাণিত করা না গেলে বাঙালিপনা জাদুঘরবাসী হয়ে পড়বে যে! বাঙালিত্ব নবায়নের এই গুরুদায়, অতএব বাংলা নববর্ষের ঘাড়েই বর্তায়। কৃষকের চৈত্রসংক্রান্তি আর হালখাতাকে আত্মসাত করে, এর গা থেকে শোষণ-চিহ্ন মুছে, ইংরেজি বর্ষবরণের আমেজে, নতুন এক উৎসব জন্মালো। আদলে গ্রামীণ কিন্তু মজ্জায় রীতিমতো আধুনিক। এ এক নতুন নাগরিক সৃষ্টি; যাকে বিনয় সরকারের পদ ধার করে বলা যায় নাগরিক ‘বাঙলামি’ বা নাগর ‘বাঙলামি’। এটা সনাতন গ্রামীণ বাঙালি কিষাণ-কিষাণীর প্রতিমাকে হঠিয়ে সেখানে বসায় জিন্স-ফতুয়া-গামছা-শাড়ি-দোতারা-পান্তালিশশোভিত নাগরিক দুলাল-দুলালীদের।
এটা সেইসময়েরই ঘটনা, যখন দেশী/’ফোক’ গান, দেশী ফ্যাশন, দেশী লাইফস্টাইলও ভারি মজা দিতে থাকে। আরেক অর্থে, এই টানাপড়েন থেকেই রূপ পায় দেশি আধুনিকতা। এই আধুনিকতা অতীত ও বর্তমান, পূর্ব ও পশ্চিম, গ্রাম ও শহর এবং ঐতিহ্য ও প্রগতির মধ্যে সংযোগসাধক হিসেবে আবির্ভূত হয়। পশ্চিমা সাংষ্কৃতিক হেজিমনির মধ্যে হারিয়ে যাওয়া ঠেকাতে এই জাতবোধ যেমন সহায়ক হয়, তেমনি ‘অনুন্নত’ দেশবাসী ও ‘উন্নত’ বিদেশি সংস্কৃতির মাঝখানে আপন আসনও নিশ্চিত করে। এটা কনজিউমারিস্ট কালচারের সঙ্গে মিতালিরও মওকা হয়। ঢাকাই আধুনিক বাঙালিবাদী সংস্কৃতিসেবকদের মধ্যে জাতি, জাতীয় সংষ্কৃতি, জাতীয়তাবাদ ইত্যাদি নিয়ে যে কল্পনাপ্রতিভা আকার পেয়েছিল, তার নবায়নের কোশেশ হিসেবেও দেখা যায় একে। পয়লা বৈশাখের উৎসব এভাবে বাঙালি খাসলতের নগরায়ন ও মধ্যবিত্তকরণের পথে আসলে সনাতন বাঙালি ঐতিহ্যের সঙ্গে বিচ্ছেদেরই জানাজা। এবং এটা গিয়ে শেষ হয় নিম্নবর্গীয় বাঙালি জনপুঞ্জের থেকে জৈবিক বিচ্ছিন্নতায়।
স্যাটেলাইট চ্যানেলের কল্যানে বিশ্বায়িত মার্কিন-ভারতীয় সাংস্কৃতিক আগ্রাসন মোকাবিলায় এই নতুন ঐতিহ্য ঢাল হিসেবে কাজে আসতে পারে বটে। বাংলাদেশের সংস্কৃতির মধ্যে এই মোকাবেলার রসদ এখনো বিস্তর। তবে, নতুন বাজারি হওয়া দেশগুলোয় এধরনের নতুন সামাজিক উৎসবের প্রবর্তনায় বাংলাদেশ অনন্য না। উত্তর ভারতের হোলি, উভয় বাংলার দুর্গোৎসব ইত্যাদি এরকমই আধুনিকায়িত উৎসব, উৎস্য যার সনাতনি। তবে, সেসবের সঙ্গে বৈশাখবরণের ফারাক এখানেই, বৈশাখ সংজ্ঞার্থে সর্বজনীন।
ঐতিহ্য কেবল অতীতের না, বর্তমানেও তা জন্মাতে পারে, বৈশাখী উৎসব তার প্রমাণ। প্রতিটি সমাজই নতুন যুগের অর্থনৈতিক বিধিব্যবস্থার অনুকূলে, বিবর্তিত মানসকাঠামোর চাহিদা মিটিয়ে নতুন ধরনের আচার-অভ্যাস রপ্ত করার চাপের মুখে পড়ে। সৃষ্টি হয় নতুন ঐতিহ্য। এই অনুসারে আধুনিক যুগের যে কোনো ধর্মীয় বা সাংস্কৃতিক জেল্লাদার উৎসবগুলোয় অতীতের জের সামান্যই, বেশিটাই নতুনের উদ্ভাবন। ‘জাতীয়তাবাদ’, ‘হাজার বছরের বাঙালি সংস্কৃতি’র দায় ও ভারকে হালকা ও উপভোগ্য করে নেওয়া যায় এসব উৎসবে। ষাট দশকের প্রতিরোধী জাতীয়তাবাদ বাঙালিত্বকে যে আদর্শ, ইতিহাস, নৈতিকতা ও রাজনীতিতে রঞ্জিত করেছিল, আপসকামী ও জনবিচ্ছিন্ন পর্যায়ে তার আর সেই রাজনৈতিক রঞ্জকের প্রয়োজন নাই। তার প্রয়োজন পুঁজির যোগান। কর্পোরেট মিডিয়া, বহুজাতিক পুঁজি ও কালচার ইন্ডাস্ট্রির সংষ্কৃতি-পণ্যের চাহিদা, বাঙালীবাদীদের সংকট আর উৎসব-তৃষিত তরুণ-তরুণীর আগ্রহ, সব মিলিয়ে একে বিনোদনধর্মী হিসেবে নবজস্ম দেওয়া হয়। এভাবেই তা তা সবার কাছে সহজে পরিবেশনযোগ্য হয়ে ওঠে। আধুনিক জাতীয়তাবাদের বিকাশে প্রিন্ট ক্যাপিটালিজমের মুখ্য ভুমিকার কথা বলেছিলেন বেনেডিক্ট অ্যান্ডারসন; সেটা ছিল প্রথম আধুনিক/শিল্পবিপ্লব/সলিড মডার্ন যুগের ঘটনা। সেসূত্রে এখনকার ইলেকট্রনিক মিডিয়া/ক্যাপিটালিজমের যুগের জাতীয়তাবাদ গড়ন-গঠনে 'উত্তরাধুনিক/লিকুইড মডার্ন ইত্যাদি না হয়ে যায় কই? বাঙালিত্বের’ ধারণা থেকে রাজনৈতিক ও ঐতিহাসিক ওজন অপসারিত হওয়ায় এই ‘বাঙলামি’ সহজেই গায়ে পরা যায়, মনে মাতানো যায়_ তা হয়ে ওঠে উপভোগের উদযাপন। অন্যদিকে, পুরুষপ্রাণ এই উৎসবে সনাতন বাঙালি নারীর হাজিরানাও পুলকরঞ্জিত করা নেওয়ার কায়দাকানুন-পোশাকআশাকও চলে আসে। এই উৎসবে বাঙালি পুরুষ ও নারীর রকমটাও নতুন করে নির্ধারিত হয়, যা অনেকটা পশ্চিমা যৌনতার ছোঁয়াচলাগা।
ষাট দশকে চালু হওয়া রমনায় ছায়ানটের বর্ষবরণের থেকে এখানেই তা আলাদা। গুরুগাম্ভীর্যের জন্য ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠান আর আম পাবলিকের বিষয় ছিল না, তা ছিল খাস (এলিট) বাঙালি আনুষ্ঠানিকতা এবং যা প্রায় ধর্মাচরণের পবিত্রতা উপভোগ করে আসছিল। স্বাধীনতার পর প্রতিরোধী মেরুদণ্ডটি হারিয়ে ফেলার তালে তালে প্রতিষ্ঠানটির জনবিচ্ছিন্নতা এবং প্রায় কাল্টিয় রক্ষণশীলতায় নিমজ্জিত হওয়ার কারণেও নতুন বিশ্বায়িত মধ্যবিত্তের কাছে এর অপরিহার্যতাও কমে আসে। এখানে বলা দরকার, ‘বাঙালিত্ব’ ও ‘বাঙলামি’ উভয়ই যে জাতিকল্পনা হাজির করে, তা ইতিহাসানুগ ও জনমনসঞ্জাত নয়। এই কল্পনা বাংলাদেশের বর্তমান সাংষ্কৃতিক-রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক স্ট্যাবলিশমেন্টের মনের মাধুরী মাখানো।
এই মাধুরীর খোলের মধ্যেই নবযৌবনপ্রাপ্ত পয়লা বৈশাখের রাজনৈতিক শাঁসটি মিলবে। ঢাকার চারুকলা প্রাঙ্গণের বৈশাখী শোভাযাত্রাকে বাঙলামির আদর্শ আদল ধরা হয়। এর পরিকল্পনাকরীরা সযতনে এতে বাংলাদেশের সব ধরনের সংস্কৃতির সুকুমার সমাবেশ ঘটান। এর মধ্যে রথযাত্রা ও তাজিয়া মিছিলের আভাস যেমন আছে, তেমনি গ্রামীণ মেলার আমেজের সঙ্গে আধুনিক ফ্যাশনের ঝিলিমিলিও চোখ এড়ায় না। ইংরেজি নববর্ষ, ইরানি নওরোজ, ভারতীয় হোলি, ল্যাটিন আমেরিকান কার্নিভাল; সবই এখানে দৃশ্যমান। অন্যদিকে, বাঙালি জাতীয়তাবাদী রাজনীতি যে বাঙালি সংস্কৃতিকে বন্দনা করে, এটা তারও প্রদর্শনী। সমসাময়িক রাজনৈতিক আবহাওয়ার প্রভাব;যেমন, গত নির্বাচনের আগে মুক্তিযুদ্ধ ও যুদ্ধাপরাধের বিচারের মোটিফ কিংবা এবারে সমুদ্রজয়ের প্রতীক হিসেবে মাঝিমাল্লাসমেত নৌকার মোটিফের কথা বলা যায়।
এই বৈশিষ্ঠ্যগুলোর মধ্যে মোটাদাগে বাঙালিত্বের মুসলিম ঐতিহ্য গরহাজির। হিন্দু বা আদিবাসী বা পশ্চিমা খ্রিস্টীয় ঐতিহ্যকে এটা যতটা প্রশ্নহীনভাবে গ্রহণ করে, মুসলিম ঐতিহ্য বিষয়ে ততটাই বিরাগ এর। হিন্দু জাতীয়তাবাদীদের সংজ্ঞায়িত বাঙালিত্ব অনুসরণ থেকেই এই বিরাগের জন্ম। বিপরীত দিকে ইসলামবাগীশদের মধ্যেও এই উৎসবের বিরেধিতা প্রবল। (হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টধর্ম যেমন ধর্মতন্ত্রের উপরিতলে একটা সংস্কৃতি নির্মাণ করে নিয়ে তার মধ্যে নিজেকে রক্ষিত করতে পেরেছে, প্রাতিষ্ঠানিক ইসলামপন্থা সেরকম কোনো সাংস্কৃতিক আধারকেই অস্বীকার করে। বাঙালিপনার সঙ্গে তার বিরোধের এটাই কারণ।) ফলত, এটা ষাট দশকীয় মুসলমান-বিযুক্ত বাঙালিপনার সংকটকেই আলিঙ্গন করে থাকে। এ কারণে এটা বহুলবন্দিত বাঙালি সংস্কৃতির সমন্বয়ধর্মিতার বিপরীত। এই সাংস্কৃতিক জাত্যাভিমান পুঁজির বলবর্ধক বটিকায় তেজবান হয়ে বাঙালিত্বকে আরো রক্ষণশীল ও একমাত্রিকই করে। আধুনিক ধর্মীয় চরমপন্থার মতো জাতীয়তাবাদও পুঁজির আশ্রয়ে, তার মাতব্বরিতে অগণতান্ত্রিক ও ভিন্নতাবিরোধী হয়ে ওঠে, এবং তৈরি পণ্যের মতোই ছাঁচের বাইরে যেতে ব্যর্থ হয়। আধুনিকতা মানেই উদারতা নয়, বরং তা জীবনজগতে একটি মাত্র মানদণ্ডের দাপট প্রতিষ্ঠাকেই প্রগতি বলে গণ্য করে। তাতে সমাজে অস্থিরতা ও টেনশন বাড়ে। সনাতন বাংলাদেশি সংস্কৃতির দো-আঁশলা চরিত্রকে এভাবে একস্বরিক একমাত্রিক এঁটেল হয়ে ওঠা ‘বাঙলামির’ অপর ‘মুসলমানি’ প্রতিক্রিয়ার সম্ভাবনা বাড়াচ্ছে।
বাঙলামির প্রকোপ এবার ঢাকার মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্পের বিহারি তরুণদের মধ্যেও পড়েছে। এবার তাঁরাও পালন করেছেন বাংলা নববর্ষ উৎসব। ঢাকার কিছু কিছু বস্তিতেও বৈশাখী উৎসবের আয়োজন হতে দেখা গেছে। এসব বাঙালীকরণ চালু থাকা এবং বাঙলামির হেজিমনিক বনবার আলামত। এবং সেটা সম্ভব হচ্ছে পুঁজি ও মিডিয়ার ঔরসে। কালচার ইন্ডাস্ট্রির বরাতে এই যে জনসংস্কৃতির বিস্তার, তা আদতে বাণিজ্যের আধারে বাজারের পরিধি ছড়ানোরই কাজ করছে। এই জাতীয়তা, আধুনিকতা, উৎসবমুখরতা, নবজাগ্রত জাত্যাভিমান তাই রাজনৈতিক দিক থেকে বন্ধ্যা, কিন্তু পুঁজির আধিপত্যের দিক থেকে সম্ভাবনাধর। এই জাতীয়তাবাদীরা যতটা শিল্পের গরিমা ও বড়াইয়ের অধিকার নেন, সৃজনশীলতার জমিনে কোনোকিছু সৃজনে ততটাই তাঁদের অক্ষমতা। জাতীয় পরিচয় ও জাতীয় সংস্কৃতি বিষয়ে কায়েমি চিন্তাভাবনার বৈধতা নির্মাণ ছাড়া তাঁদের আর কোনো ভূমিকা নাই।
খেয়াল করার বিষয়, পয়লা বৈশাখের এই দিগ্বিজয় বাংলাদেশে যত, পশ্চিমবঙ্গে তত নয়। পশ্চিমবঙ্গের আনন্দবাজার পত্রিকার পয়লা বৈশাখ সংখ্যায় শিশির রায় ‘বেহালখাতা খোলার দিন’ শিরোনামের লেখায় আক্ষেপ করে বলছেন, ‘পড়শি রাষ্ট্র যখন পয়লা বৈশাখ দিনটাকে রীতিমতো ঢুকিয়ে নিয়েছে হৃদয়ে-রক্তে, বৈশাখী উৎসবকে রূপ দিয়েছে একটা জাতিসত্তার ‘কার্নিভাল’-এ, গঙ্গার এপারে আমরা তখন হুজুগে বাঙালিয়ানার দেখনদারির মোচ্ছবে আকুল।’ এই জাতিসত্তার কার্নিভাল কীরূপ, তা আমরা ওপরে দেখালাম।
আধুনিক বাংলা ভাষা ও আধুনিক বাঙালিত্বের তীর্থভূমি হিসেবে কলকাতা সমাদর পায়। কিন্তু বাংলা ও বাঙালিত্ব যে সেখানে দিনকে দিন দম হারাতে বসেছে তা সেখানকার লেখক-শিল্পীদের অনেকের জবানীতেই জানা যাচ্ছে। এর কারণ হয়তো রাজনৈতিকভাবে বৃহতভারতীয়তার কাছে সমর্পণ, অর্থনৈতিকভাবে অবাঙালি পুঁজির অধীনতা এবং সাংস্কৃতিকভাবে বাঙালিত্বকে হিন্দুত্বের সমার্থক করা। তৃতীয় কারণটির ব্যাখ্যা প্রয়োজন। হিন্দুত্বের উদযাপনই যেখানে বাঙালিত্বের সৎকার, সেখানে আলাদা করে বাঙালিত্বের জন্য কোনো সেক্যুলার স্পেস আর থাকে না। এরই প্রতিক্রিয়া ঘটে মুসলমানদের মধ্যে বাঙালিত্বকে সন্দেহ করার মধ্যে। যাহোক, শত প্রতিকূলতার পরও, বাংলা ও বাঙালিত্বের ভবিষ্যত বাংলাদেশে থাকবে দুটো কারণে। প্রথমত বিরাট গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর উপস্থিতি, যাদের জীবনে বাংলাই বেশি। দ্বিতীয়ত, রাষ্ট্রীয় স্বাধীনতার সুবিধা। জাতিসত্তার কার্নিভাল তাই বাংলাদেশে চলবে এবং তা দ্বন্দ্বরত থাকবে বাঙালি বনাম মুসলমানের বিপরীত বিহারের পরিবেশে। বাঙালিত্বের সঙ্গে হিন্দু বা মুসলিম বা বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বনের কোনো বিরোধ এক কষ্টকল্পিত রাজনৈতিক ফাঁদ।
রাষ্ট্র বাঙালিত্বের জন্ম দেয়নি, বরং বাঙালিত্বই রাষ্ট্রকে পয়দা করেছে। বাঙলামি প্রসারের ধর্মপিতাও রাষ্ট্র নয়। সব সমালোচনা সত্ত্বেও এই উৎসবের জন্ম সমাজের আয়তনে, তরুণতরদের উদ্যমে। সবমিলিয়ে বাঙালিবাদী সংস্কৃতির অধিপতি হয়ে ওঠায় এর ভূমিকা ব্যাপক। আপন আপন শ্রেণী ও সংস্কৃতির আদলে অনেকেই এখন পয়লা বৈশাখকে কোলে তুলে নিয়েছে। বৈশাখের এই এক থেকে বহু হয়ে ছড়িয়ে পড়া নতুন ঘটনা এবং এ ঘটনা ঢাকাকেন্দ্রিক মধ্যবিত্ত সমাজেরই অবদান। এই ঘটনা রক্ষণশীল মুসলিম শুদ্ধতাবাদ এবং আগ্রাসী মার্কিন-ভারতীয় সাংস্কৃতিক ভাইরাসকে কিছুটা দমিতও রাখতে সক্ষম। ঢাকাই মধ্যবিত্ত শত দীনতা ও অসংগতি সত্ত্বেও নতুন ঐতিহ্য সৃষ্টির ক্ষমতা যে ফুরিয়ে ফেলেনি, এটাই নতুন সংবাদ। কিন্তু এই সক্ষমতা যতদিন না এ দেশের অধিকাংশ জনগণের সংস্কৃতির কেন্দ্রবিমুখীপনাকে, বহুবর্ণিলতাকে_ যাতে আবশ্যিকভাবেই ইসলাম বা হিন্দু-বৌদ্ধধর্মীয় মূল্যমান থাকবে_ গ্রহণ করতে পারবে, ততদিন এই সংষ্কৃতির উপনিবেশিক চরিত্রও ঘুচবে না, সাংষ্কৃতিক গৃহযুদ্ধেরও অবসান ঘটবে না। ‌'সেক্যুলার' জাতীয়তাবাদ যতদিন না তার সেক্যুলার চেতনে সাম্প্রদায়িকতার জের না কাটাবে, ততদিন বাঙালি মুসলমানের মনের সঙ্গে মুসলমান-বর্জিত বাঙালিমনের হৃদয়ভাগ চলবারই কথা।

আমার মন্তব্যঃ
Goutam Das April 22 at 11:20pm
সরি, আমি অনেক দেরিতে। প্রথম দিনই পড়েছি আগ্রহ নিয়ে, চেষ্টা করেছিলাম কিছু মন্তব্য জুড়ে দিতে কিন্তু শেষ করতে পারি নাই। আমাকে ট্যাগ করা সত্ত্বেও এখানে সময়ে হাজির না হওয়াটা ঠিক হয়নি। আমাকে মাফ করবেন।
বহু বিষয় এক সাথে সামনে আনার চেষ্টা করেছেন। তবে সবার আগে আপনাকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। যদিও মনের ভিতর একটা প্রশ্ন রয়ে গেছে যে আমাকে ট্যাগ করে পড়াবার ইচছাবোধ করলেন কেন, তা এখনো আমার ঠিক জানা নাই। যা মনে করেই করে থাকেন না কেন আপনার লেখাটা আমাকে কৌতুহলী করেছে, সন্দেহ নাই। আগে অনেক সময়ই আমি আপনাকে বুঝতে চেয়েছি আপনি ঠিক কী, কেমনটা চাচ্ছেন, অভিমুখটা কোনদিকে এসব। অনেকদিন হলো,আপনার লেখায় নতুন নোট নেবার মত তেমন কিছু দেখি নাই। এলেখা পেয়ে মনে হয়েছে আবার নোট নেবার মত এখানে অনেক কিছু আছে।
এই বৈশিষ্ঠ্যগুলোর মধ্যে মোটাদাগে বাঙালিত্বের মুসলিম ঐতিহ্য গরহাজির” – এই বাক্য দিয়ে শুরু হওয়া প্যারাগ্রাফটার পুরাটাই নোট করার মত। “মুসলিম ঐতিহ্য গরহাজির” কে আপনি “সমন্বয়ধর্মিতার বিপরীত” বলে চিনিয়েছেন। এটা কি কেবল সমন্বয়হীনতা এবং কালচারাল প্রশ্ন? ব্যপক বিস্তৃত গ্রাম বা সাধারণ মানুষের সাথে শহুরে “খাস (এলিট) বাঙালির” সমন্বয়হীনতা এবং কালচারাল সমস্যা?
আপনি আরও কঠিন এক মন্তব্য করেছেন, “এটা ষাট দশকীয় মুসলমান-বিযুক্ত বাঙালিপণার সংকটকেই আলিঙ্গন করে থাকে”। কিন্তু ষাট দশকের মুসলমান-বিযুক্ত বাঙালিপণার সংকটটা আসলে কী ছিল বলে আপনি দেখেন সেটা বিস্তার করে লিখেন নাই। আগেই বলেছি বহু বিষয় এক সাথে এখানে সামনে আনার চেষ্টা করেছেন। ফলে সময় জায়গায় কুলাতে পারেন নাই তা মানি। এটা যদি এখন বিস্তার করেন তবে আপনাকে বুঝতে সুবিধা পেতাম।
“মুসলিম ঐতিহ্য গরহাজির” বাক্যটা যেভাবে গঠন করে লিখছেন তাতে মনে হয়েছে হাজির থাক এটা আপনার কাম্য অর্থে আকাঙ্খা। কিন্তু আপনার এই আকাঙ্খার ভিত্তি কী লেখা পড়ে তা পরিস্কার হতে পারিনি।
আবার শেষ প্যারাতে মনে হয়েছে আগে ও উপরে শক্ত কথাগুলো বলার পর এখানে পিঠ চাপড়ে শান্ত্বনা দিচ্ছেন। এতে আগের কথাতে আপনাকে যতটা বুঝছি বলে মনে করছিলাম আসলে তা ঠিক বুঝিনি মনে হতে শুরু করল। ফলে কেবল নোট রাখলাম। আপনাকে বুঝেছি দাবি করতে পারলাম না। সাহায্য করতে পারেন।

Faruk Wasif April 23 at 4:44pm
Goutam Das @অনেকদিনই হলো নতুন লেখাও লিখি নাই। সাংবাদিক গদ্যে যা লিখি সেগুলো অ্যাডভোকেসি গোছের। আপনার জন্য সেখানে বিশেষ প্রসাদ থাকবার কথা না। এই লেখায় আপনাকে উদ্দিষ্ট করা সংহতি ও সংলাপের দরকারেই।
> সার্বিকভাবে দেখার চেষ্টা করেছি এ লেখায়, নিছক কালচারাল স্টাডি কিংবা একাডেমিক দড়বাজির সামর্থ্য আমার নাই। এই সার্বিকতাকে সংস্কৃতির রাজনীতিকতাও বলা যায়। সেখান থেকে দেখতে পাই, ‌তলায় তলায় একটা শিফট ঘটে যাচ্ছে। 'বাঙলামি' উতসব নতুন ঘটনা, যারা একে ব্যাক্তিত্ব দিচ্ছে এর উদযাপন করছে তারাও নতুন। নব্বইয়ের পরে যে মানস ও জীবনধারার চল দেখি, তার রাজনৈতিক সারাসারটার সঙ্গে এই বাংলাদেশের জনগোষ্ঠীর সম্পর্কটা খতিয়ে দেখাও অভিপ্রায়ের মধ্যে ছিল।
> হিন্দুর জন্য বাঙালিত্ব সমস্যা না, মুসলমানের জন্য সমস্যা, এইরকম একটা ভাবনা সেক্যুলার বাঙালি জাতীয়তাবাদের মজ্জারস হয়ে আছে। অসীম রায় মনে করেন, সমন্বয়ধর্মীতা বঙ্গীয় ইসলামের বৈশিষ্ঠ্য। আবার বিনয় সরকারের ধারণা, সমন্বয়ধর্মিতা বা দো-আঁশলামিই বাঙালি সংস্কৃতির আসল। আমার প্রশ্ন, উভয়ই যদি সমন্বয়ধর্মী হয়, তাহলে ইসলাম আর বাঙালিত্বের মধ্যে বিরোধ অপরিহার্যতা পায় কী করে? (প্রযোজ্য নয় হয়তো, তবু একটা তুলনা মাথায় আসছে। যেমন ধরেন, মাইকেল আফলাক থেকে এডওয়ার্ড সাঈদ পর্যন্ত ইসলামকে আরবের সব ধর্মালম্বীর সাধারণ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হিসেবে নিতে বলেছিলেন। আবার বিজেপি বলছে, বৌদ্ধধর্মের মতো ভারতীয় ইসলামও বৃহত্তর হিন্দু ঐতিহ্যের অংশ ভাবা শুরু করলে মুসলমানদের গ্রহণে তাদের সমস্যা নাই। সম্ভবত, হরপ্রসাদ শাস্ত্রীই লিখেছেন, ব্রাহ্মণের বাড়ির উঠানের একধারে মুসলমানের বাস। এটার মধ্যে অন্য এক ইশারা আছে, সেটা নিয়ে পরে ভাবা যাবে।)
> পরিচয় প্রশ্নে আমিও কাজী নজরুলের মতো সমন্বয়বাদী কিছুটা। বাঙালি পরিচয় আর ধর্ম পরিচয় যেহেতু আবশ্যকীয়ভাবে সাংঘর্ষিক না, সেহেতু এই সংঘাত বাঙালিবাদীদের বোধে থাকাটা তাদের সাংস্কৃতিক সংকটেরই প্রমাণ। এবং সেই সংকট থেকেই অনেকে সজ্ঞান না হয়েই ইসলামবিরোধী সাম্প্রদায়িকতায় ভোগেন। এটা দূর না হলে, বাংলাদেশের এবং পশ্চিম বঙ্গেরই রাজনীতি পুরনো বৃত্তেই ঘুরপাক খাবে। যাহোক, সংস্কৃতির সংকট বইয়ে বদরুদ্দীন উমর নজরুলকে যথার্থ বাঙালি ও অসাম্প্রদায়িক বলেছিলেন এজন্য যে, তিনি সংস্কৃতির ভেতরকার ধর্মীয় উপাদান বাতিল না করে সেগুলোকে সমন্বিত করে তার কাব্যে ব্যবহার করেছেন, ট্রানসেন্ড করে নিয়েছেন। এই সমন্বয় বাংলার সংস্কৃতির স্তরে স্তরে আছে বলে মানলে, সেটাকে সমস্যা মনে না করলে, আমার এই সাংস্কৃতিক যোগসাজশের আকাংখায় কোনো সমস্যা দেখি না। আপনি কি মনে করেন সেটা সমস্যা? নাকি, বঙ্গের ইতিহাসকে আমরা ভিন্ন ভাবে পাঠ করছি?

Faruk Wasif April 23 at 4:44pm
‎Goutam Das @ প্রশ্নটাকে আমি সংস্কৃতির ভেতর থেকে তুলেছি। এটাই এই লেখার সীমানা। রাজনৈতিকভাবে এর উত্থাপন আমি অন্যত্র বহুবার করেছি। এখানে সেটা মনে হয় জরুরি না গৌতম দা। তবে বিস্তারে গেলে সুবিধাই হবে বৈকি।
> সংস্কৃতি যেহেতু পত্তন করা যায় না, সংস্কৃতির ভেতর থেকেই আমাদের চিন্তা ও কাজ করে যেতে হয়, তখনই বিদ্যমান সংস্কৃতিসমূহের লেনাদেনা ও বাদপ্রতিবাদের একটা অভিমুখ হাজির করবার প্রয়োজন পড়ে। সাম্প্রদায়িকতা এখনো এখানে শক্তিশালী কাঠামো, এর মধ্যে পরিচয়-বোধ ও রাজনীতিবোধের প্রতিক্রিয়াশীল নির্মাণ হয়ে আছে। কেন তা আছে, কীভাবে এখান থেকে উত্তরিত হয়ে রাজনীতি জনগোষ্ঠীর রাজনৈতিক মুক্তিকে ত্বরান্বিত করা যায়, তার সাপেক্ষে এই আলোচনাকে আমি প্রাসঙ্গিকই ভাবি।
> পিঠ চাপড়াইনি, মধ্যবিত্ত যে এখনো ট্র্যাডিশন পয়দা করতে পারে, সেটা অস্বীকার করতে পারছি না। পয়লা বৈশাখ উদযাপনের শত ফাকিঝুঁকি সত্বেও এটা যেমন সত্য, তেমনি এর মধ্যে পুরাতন ব্যাধির পুণরুৱপাদনটাও খেয়াল করার বিষয়।
শেষ কথা এই, আমিও আপনাকে বুঝতে আগ্রহী। আপনার বই বেরুনো দরকার। আর বাজারে আমার যে দুটি বই আছে, সেগুলো পড়বার দাওয়াত রইল।

Goutam Das April 24 at 12:56am
Faruk Wasif@
আপনার লেখাকে আমি প্রায়ই সমালোচনা করেছি যে এতে অর্থনৈতিক দিক থেকে ভিত্তি মেনে ব্যাখ্যার প্রবল ঝোঁক থেকে যায়। এটা সত্যি যে কোন বিষয়কে ইকোনমিস্ট দিক থেকে দেখে ব্যাখ্যা করলে তা থেকে রাজনৈতিক দিকের ব্যাখ্যা ছাড়াও আরও অনেক নতুন দিক আলোকিত করা যায়। কিন্তু ইকোনমিস্ট ব্যাখ্যা যদি ইকোনমিস্টিক হয়ে যায় তবে তা মারাত্মক হয়ে যায়। তবুও কথা হলো রাজনৈতিক ঘটনার রাজনৈতিক ব্যাখ্যাই মুখ্য। কিন্তু আজ এখানে করব উলটা টা।
কথা তুলেছিলাম, বাংলাদেশের বাঙালীর "মুসলিম ঐতিহ্যের" প্রতি টানটা কি "বাঙলামিতে" তা গরহাজির ও সমন্বয়হীনতা্র সমস্যা কি না; আরও বড় করে দেখলে সমস্যাটা কেবল কালচারাল প্রশ্ন কি না। আপনি খোলশা করেছেন যে আপনি সাংস্কৃতিক দিক থেকেই তুলেছেন। কিন্তু লক্ষ্য করলাম, এলেখায় আপনি অর্থনৈতিক দিক একেবারেই আনেন নাই। কেন? এর জবাব খুজছিলাম।
আপনার এবারের জবাবে তা পেলাম। সেই সাথে পেলাম আপনি কেন সমন্বয়বাদের কথা বলছেন, হওয়ার আকাঙ্খা কেন করছেন। গরহাজির বলতে কি বুঝিয়েছেন ইত্যাদি। অসীম রায় বা বিনয় সরকারের কথা তুলেছেন। আমি সাথে জুড়ে দিতে চাই রণজিত গুহ এরও নাম। মেনষ্ট্রিমের বাইরে এরা সাবঅল্টার্ন বলে পরিচিতি আছে। অবশ্যই এরা ভিন্ন মনোযোগের দাবি রাখেন। তবে ঝোঁক হিসাবে এঁদেরকে আমি দেখি অতিমাত্রায় ইকোনমিষ্টক। সেজন্য এদের মিসিং লিঙ্ক হলো, রাজনীতি। রাজনৈতিক ব্যাখ্যা, মানে ধর্মতত্ত্ব, নৃতত্ত্বগত দিকসহ। ব্যাখ্যাগুলো শেষে ইকোনমিক্সের বাইরে বা উর্ধে গিয়ে রাজনৈতিক হয়ে উঠতে পারে না। ফলে তাদের উলটা আলটপকা আমদানি, সমস্যা কালচারাল বলে চিনানোর চেষ্টা। আর তা থেকে সমন্বয়ের লক্ষণ খুজার আগ্রহ ও সমন্বয়ে সমাধান বাতলানো।
তাই আমার প্রস্তাব হলো, পাকিস্তান আন্দোলন রিভিজিট করে দেখা, ওর অর্থনৈতিক ভিত্তি কী ছিল, জমিদার-প্রজা সম্পর্ক মুক্তি বাস্তবে কীভাবে ঘটেছিল –সেসবের তালাশ করা। এই অর্থশাস্ত্রীয় ব্যাখ্যা হাজির করতে পারলে দেখা যাবে মুসলমান এবং পরে বাঙালী মুসলমান পরিচিতি নেয়া বা হওয়া এক ঘোরতর রাজনৈতিক সংগ্রাম ও এর ফসল, মোটেও উপরি উপরি দেখা নেহাতই এটা কোন কালচারাল বিভেদ বা প্রশ্ন না। এটা এমনকি চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের আগের ২৫০ বছরের মোগল-মুসলমানের মত মুসলমানও আবার সে নয়। প্রজারা জমিদারতন্ত্রের বিরুদ্ধের সংগ্রামকে হিন্দুদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম হিসাবে নিয়েই জিতেছে। এটাই তার শ্রেণী সংগ্রাম বলতে পারেন আবার মুসলমান আইডেনটিটি ধারণ বলতে পারেন, যেটা পছন্দ। এটা কতটা ঠিক না ভুল হয়েছে এখন সেটা সেসব প্রশ্ন অবান্তর। কারণ বাস্তবতা হলো, অন্য সব পথে ব্যর্থ হয়ে একমাত্র এ পথেই ভুমি মালিকানা ও ব্যবস্থাপনার সমস্যার হাল হয়েছে বা হতে পেরেছে। যা আজকের স্বাধীন বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ভিত্তিমুল হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মনে রাখতে হবে, মোগল আমলে মানে আমাদের বাংলার সুলতান হোসেন শাহের আমলে (১৫২১) হোসেন শাহের পৃষ্ঠপোষকতায় শ্রীচৈতন্যের জাতবর্ণ বিরোধী বৈষ্ণব আন্দোলন হতে পেরেছে। ওখানে কালচারাল সমন্বয় খুজে পেতেও পারেন। এর মানে এই না যে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত (১৭৮৯) বা জমিদারী উচ্ছেদ ঘটছে (১৯৫০) সালে কালচারাল সমন্বয়বাদীতা দিয়ে বরং এর বিপরীতে, মুসলমান পরিচয়ের ঘোরতর রাজনৈতিক সংগ্রামের ভিতর দিয়ে। কালচারাল প্রশ্ন নয়, সরাসরি রাজনৈতিক প্রশ্ন হিসাবে মোকাবিলা করে। তবে মন্থনে অমৃতের সাথে বিষও উঠবারই কথা। এখন সাম্প্রদায়িক সেই বিষমুক্তির তালাশ চাইলে মন্থনের কথা এড়িয়ে তা পাওয়া যাবে না।
ভুল বুঝার বিপদের কথা মাথায় রেখেও ফেসবুক মাধ্যমের কথা মনে রেখে অনেক কথা ইঙ্গিতে বলতে হয়েছে। জানিনা কতটা নিজেকে বুঝাতে পারলাম।

Faruk Wasif Thursday at 5:08pm
‎Goutam Das@ আপনার কথার হেতুটা বুঝতে পারছি। অনেক কথা আমারো জমা থাকছে। একটু সুবিধা করে বসতে পারলেই উত্তর দিচ্ছি। বলার উতসাহটা পাচ্ছি।

--------------আলোচনাটা অসমাপ্ত আছে----------------
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে এপ্রিল, ২০১২ রাত ২:২১
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×