যা হোক এবার আমাদের গন্তব্য বান্দারবানের আলি কদম উপজেলার আলি সুরুং যা আলি কদম গুহা বলেই বেশি পরিচিত।বেশি প্যাচাল না দিয়ে শুরু করি।
৩১ ২০১১ ফার্স্ট কিভাবে উদযাপন করবে সেই নিয়ে বন্ধুবান্ধবের মাঝে অনেক কথা বার্তা চলতেছিল।কেউ ডিজে পার্টি,কেউ কক্সবাজার বিচ পার্টি ,বার্বি কিউ ইত্যাদি কাপঝাপ --আমার এসব কোন দিনই ভালো লাগে না।আমরা কয়েকজন রতন,সম্রাট,কামরুল মিলে রওনা হলাম।যা হোক ৩০ ডিসেম্বর ২০১১ রাত দুইটায় সিদ্ধান্ত হল আলি কদম আর কুতুবদিয়া ।উৎসাহের অভাব নাই ,কিন্তু পকেটে কারও পাতি নাই।আসলে প্রথমে ইচ্ছা ছিল আশে পাশে কোথাও যাওয়া।যা হোক রাত তিনটা পর্যন্ত বিভিন্ন জনের ধর্ণা দিয়ে টাকা যোগাড় হল।পরদিন সকাল ৭।৩০ এ যাত্রা শুরু চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজারের চকোরিয়ার উদ্দেশ্যে।সময় লাগল প্রায় ৩ ঘন্টা।
চকরিয়া থেকে লোকাল জিপে চেপে বসলাম আলি কদমের উদ্দেশ্যে।এখানে সময় আমাদের জন্য অপেক্ষা করল না।প্রায় ১।৩০ ঘন্টা খেয়ে নিল।তবে জার্নি টা অসাধারণ ।বেশ উচু পাহাড়ি রাস্তা আবার কখনও একেবারে সমতল।
মাঝে মাঝে বনের মাঝে শীর্ণ ছড়া ,দু একটা মুরুব্বি গাছ মাথা উচু করে দাঁড়িয়ে যেন বন বিভাগের লাগানো কচিকাচাদের দেখে শুনে রাখার দায়িত্বটা ওনাদেরই।
বন বিভাগের মুরুব্বি
আমি বান্দবান/খাগড়াছড়ি/রাঙ্গামাটির পার্বত্য এলাকায় অনেক গহীনে গিয়েছি অনেক উচু খাড়া পাহাড়ি পথেও গিয়েছি---অনেকেই তো নীলগিরি গিয়েছেন।কিন্তু এমন সাপের মত রাস্তা আমার চোখে পড়েনি ।একেবারে প্রকৃত অর্থেই সাপের মত আকাবাকা রাস্তা।না নীলগিরির মত উচু নয় ,কিন্তু প্রথম বার কেউ যদি এই রাস্তায় গাড়ি চালায় তাহলে তার মাথা চক্কড় মারবেই।আমার মাথাও বেশ চক্কর মারছিল।
তো যা হোক চকরিয়া থেকে মাথা চক্কর দেয়া পিচঢালা চমৎকার আকাবাক পথে অবশেষে পৌছলাম আলি কদমে।প্রায় ১।বেজে গেছে ।দ্রুত করতে হবে ।কভাবে যাব তা নিয়ে আমরা একটু ধন্দে ছিলাম।যা হোক বাজারের মসজিদে একজন পরহেযগার রিক্সাওয়ালার সাথে আমাদের কথা হল।আমারা দুটো রিক্সা নিয়ে চললাম আলির সুরুং দেখতে। ২০/২৫ মিনিটে আলি কদমের গুহার নিকটবর্তী গ্রামে পৌছে গেলাম।
গুহার পাশের গ্রাম
সেখানে আমাদের গাইড ও রিক্সাচালক আলমগীর ভাই এবং হাকিম ভাইয়ের পরিচিতের বাড়িতে ব্যাগট্যাগ রেখে রওনা হলাম সুরুং এ ঢুকতে।প্রথমেই টয়াইন খাল। হাটু ডুবিয়ে টয়াইন খাল অতিক্রম করলাম।
টয়াইন খাল
খালে বেশ স্রোত।
খালের পারে তামাকের বিশাল ক্ষেত মেজাজাটাই দিল বিগড়ে।
ট্রেকিং শুরু ....
যা হোক আমাদের ট্রেকিং শুরু হল।এরপর উপরের দিকে উঠার পালা।বেশি উচ্চতা নয়।প্রকৃত পক্ষে আলি কদম গুহায় ট্রেকিং টা খুব একটা কঠিন কিছু নয়।
ট্রেকিং চলছে
চতবে ট্রেইলটা খুবই পিচ্ছিল আর ভেজা ভেজা।কারণ সারা বছরই পাহাড়ের চুয়ানো পানি পড়ে এবং ট্রেইলটা রোদ থেকে প্রায় সারা বছর থাকে বঞ্চিত।আর বর্ষায় এই দিকে পা দেওয়ার সাহসও কারও নেই।
এখানে তিনটি গুহা আছে।গ্রাম থেকে প্রথম গুহায় যেতে প্রায় ৪০ মিনিট লাগে।যথাসময়ে প্রথম গুহার দেখা মিলল।গুহামুখ ভূমি থেকে ১৫/১০ ফিট উচুতে।গুহার নাগাল পেতে আগে গাছ বেয়ে উঠতে হত।এখন আর্মি একটা লোহার মই দিয়ে দিয়েছে।প্রথম গুহা প্রায় ৪০ ফিট লম্বা এবং দুইটা শাখা আছে।প্রথম টা আমাদের হতাশ করল।
প্রথম গুহা
এই ম্যাড়মেড়ে গুহা দেখার জন্য এতদুর নিয়ে আসলি-আমার দিকে অভিযোগ।
হতাশা নিয়ে আমরা ২য় গুহার উদ্দেশে চললাম।এটা বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় গুহা।এর দুটি মুখ আছে।গুহামুখটা বেশ সরু।আর্মিদের মত ক্রল করে ঢুকতে হয়।তার উপর আবার গুহার ভিতর থেকে পানি বেরচ্ছে।কাদাময় মুখটা।সবাই কিছুটা নার্ভাস।এবার বোঝো বাবারা অ্যাডভেঞ্চার করবা।
২য় গুহামুখ
অদ্ভুত এক পাথর।অনেকটা কচ্ছপের মত দেখতে।
সারাটা পথ এরকমই ছাদ ছিল মাথার উপর।আর দু পাশে খাড়া পাহাড়ের মাঝে সরু ট্রেইল।
সাহস থাকলে ঢুকে পর বললাম সবাইকে ।সবার আগে ঢুকল সম্রাট এবং রতন।
আমিও ঢুকে পড়লাম ।হামাগুড়ি দিয়ে কিছু দূর এগনোর পর গুহা প্রশস্ততা বাড়ল।
২য় গুহার অপর মুখটা অসাধারণ।ঠিক mysterious island এ দেখা সেই গুহার মত অসাধারণ।
এখানে গুহাটা আবার দুই ভাগে ভাগ হয়ে অনেক খানি ভিতরে ঢুকে গেছে।প্রতি শাখায় আবার একাধিক উপশাখা আছে।
সেগুলোতে ঢোকা খুবই চ্যালেঞ্জিং।
একটা সরু শাখায় ঢোকার ব্যার্থ চেষ্টা।
যাদের অন্ধকারে দম বন্ধ হয়ে আসে কিংবা আবদ্ধ স্থানে স্বাস্তি বোধ করেন না তারা ২ নম্বর গুহায় না ঢোকাই ভাল।
কিন্তু হাতে সময় নেই।সাঝ নেমেছে ।ফলে ইচ্ছা থাকা সত্বেও ওগুলো try করা হয় নি।
গাইড আলমগির ভাই বললেন ৩য় গুহার কথা।কিন্তু আধার হয়ে আসছে।ফলে ৩য় গুহায়ও যেতে পারলাম না।শুনলাম সেটা ১৫/২০ ফিটের বেশি হবে না।অবশেষে ফিরতি পথে আলি কদম বাজারে ফিরে এলাম।আমি কবি সাহিত্যিক নই।এটা অসাধারণ একটা ট্রেকিং ছিল।
বাজার থেকে মাতামুহুরি কে দেখতে গেলাম।
মাতামুহুরিতে সূর্যাস্ত অসাধারণ।
নদীর পাশে সেনাবাহিনির চমৎকার ক্যান্টিন।সেখানে কিছু মুখে গুজে বেড়িয়ে পড়লাম।
আমরা ৬ টার জীপে চকরিয়া ফিরে এলাম।
এবার কুতুবদিয়া।
আলি কদম এর রুটঃ ঢাকা থেকে কক্সবাজারগামি বাসে উঠতে হবে।
ঢাকা>বহদ্দারহাট(চট্টগ্রাম)>চকরিয়ায় নেমে বাস/ জিপে আলি কদম বাজার।সেখান থেকে রিক্সা/অটো রিক্সায় যোগে টয়াইন খালের পার্শ্ববর্তী গ্রামে নেমে ট্রেকিং।
খরচ ঃ
ঢাকা-চকরিয়া ৫০০/৬০০টাকা নন এসি।চকরিয়া-আলি কদম ৬০/৭০ টাকা।
আলি কদম বাজার এ নেমে স্থানীয় মসজিদের ইমামের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি একটা ব্যাবস্থা করে দেবেন।এছাড়া আলমগীর ভাই(০১৮২১-৯২৮১৯১/০১৫৫৩-২৪৫০০৩) যোগাযোগ করলে তিনিই গাইড করে নিয়ে যাবেন।
প্রকৃতপক্ষে গাইডের কোন প্রয়োজন নেই।একটা ব্যাটারি টমটম/রিক্সা নিয়ে সহজেই চলে যেতে পারেন।
তবে আলমগীর ভাই/হাকিম ভাই খুবই সৎ এবং বিশ্বশ্ত মানুষ।
এবং অসাধারণ ব্যক্তিত্বের অধিকারী।
আলি কদমে থাকার জন্য একটি বোর্ডিং আছে।চলনসই।এছাড়া আর্মি রেস্ট হাউজে অনুমতি সাপেক্ষে থাকতে পারেন।
এছাড়া এই ভ্রমণে পাহাড়-সাগরের যুগলবন্দি দেখতে লামার মিরিঞ্জা পর্যটন কমপ্লেক্স যেতে পারেন যদি সময় থাকে।
এছাড়াও এই ট্যুরের সাথে মিরিঞ্জার পাশাপাশি কুতুবদিয়া,ডুলাহাজরা সাফারি পার্কও ঘুরে আসতে পারেন।
তাহলে আপনাকে চকোরিয়ায় থাকতে হবে।
চকোরিয়ায় থাকার ভালো হোটেল আছে।সর্বোচ্চ ৩০০ টাকা রেট
আরও কিছু জায়গা ঘুরলে মন হয় না নাকি বলেন ,
কথা না বাড়িয়ে চলেন তাইলে
ট্রাভেল লগঃ কুতুবদিয়া
রাঙ্গামাটির পথে হেটে হেটে
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১২ দুপুর ১:১৭

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



