somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোশাকশিল্প: বাংলাদেশের বিকল্প খুঁজছে বিদেশি ক্রেতারা।

১৬ ই মে, ২০১৩ রাত ৮:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




বিশ্ব তৈরি পোশাক কারখানার ইতিহাসে সবচেয়ে বড় দুর্ঘটনার পর বিদেশি ক্রেতারা বাংলাদেশের বিকল্প খুঁজছে। এ লক্ষ্যে এরই মধ্যে বিভিন্ন কোম্পানির নির্বাহীরা সফর শুরু করেছেন।

বৃহস্পতিবার নিউইয়র্কভিত্তিক একটি সংবাদ মাধ্যম এ খবর প্রকাশ করেছে।

এতে নিউইয়র্কের ফ্যাশন কোম্পানি জোসেফ মডেল অ্যাসোসিয়েটস-এর প্রধান নির্বাহী বেনেট মডেলের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, তার কোম্পানি গুয়েতেমালা থেকে ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া থেকে সর্বত্র চষে বেড়াচ্ছে। এসব দেশে শীর্ষ খুচরা বিক্রেতা বার্গডর্ফ গুডম্যান ও নিম্যান মারকাসের পোশাক তৈরি হয়।

বেনেট মডেল ১৯৭৫ সালে চীন থেকে তৈরি পোশাক রপ্তানির ব্যবসা চালু করার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন।

গত ২৪ এপ্রিল বহুতল ভবন রানা প্লাজা ধসে পড়ার ঘটনায় ১১২৭ জনের প্রাণহানি হয়। এরপরই বিদেশি বহু ক্রেতা নিরবচ্ছিন্নভাবে নতুন স্থানের সন্ধানে রয়েছে, যেখানে তাদের পোশাক তৈরি হবে।

বেনেট মডেল সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, “বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক কেনা রাজনৈতিক বিবেচনায় ভুল, দেশটিতে সংঘাত শুরু হওয়ার পর থেকেই এই অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। এ কারণে বড় বড় অনেক ক্রেতা বিকল্প স্থান খুঁজছে।”

আমেরিকার বৃহৎ একটি খুচরা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানের একজন জ্যেষ্ঠ নির্বাহী গত সপ্তাহে বেনেটের কাছে বাংলাদেশের সাপ্লায়ারদের নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং বিকল্প অনুসন্ধানের জন্য ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া সফরের জন্য বলেন। বেনেট এই পরামর্শ নিয়ে যোগ করেন, “ইন্দোনেশিয়াতেও একটু থেমে দেখতে পারেন।”

মডেল বলেন, “ঠিক এই মুহূর্তে বাংলাদেশের নাম একটি কোম্পানির জন্য দুর্নাম বয়ে আনছে।”

পশ্চিমা ক্রেতারা তাদের সম্ভাব্য সাপ্লায়ার খুঁজছে ভিয়েতনাম, মধ্য কম্বোডিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার জাভায়। তবু নিরাপত্তার বিষয়টি যে কোনো স্থানেই সমস্যা। বৃহস্পতিবার সকালেই কম্বোডিয়ার একটি কারখানার সিলিং ভেঙে পড়ে দুইজন নিহত হয়। আহত হয় নয়জন।

সম্প্রতি জাকার্তায় জেডব্লিউ ম্যারিয়ট হোটেল পশ্চিমা ক্রেতাদের জন্য প্রিয় স্থান হয়ে উঠেছে। সংক্ষিপ্ত নোটিশে কেউ চাইলেই এই হোটেলে রুম বুকিং দিতে পারছেন না। পশ্চিমা নির্বাহীদের ভিড় লেগেই রয়েছে হোটেলটিতে। ইন্দোনেশিয়ার তৈরি পোশাক কারখানার নির্বাহীরা জানান, গত কয়েক সপ্তাহে বা মাসে পশ্চিমা ক্রেতাদের তারা বেশ ভিড় লক্ষ্য করেছেন। ক্রেতারা বারবার তাদের একই প্রশ্ন করেছেন। রাজনৈতিক পরিস্থিতি কেমন, শ্রম আইন মেনে চলা হয় কিনা, নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও শ্রমিকের বেতন ইত্যাদি প্রসঙ্গে।

ইন্দোনেশিয়ান টেক্সটাইল অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান আদে সুদ্রাদজাত বলেন, “প্রথমত, চীনে অনেক ব্যয়বহুল, তারপর বাংলাদেশে ট্র্যাজেডি ও দেশটির নানাবিধ সমস্যার কারণে ক্রেতারা এখানে আসছে। তারা বাংলাদেশে অর্ডার দিতে অস্বস্তি বোধ করছে।”

চীনের পর বাংলাদেশই দ্বিতীয় বৃহত্তম পোশাক রপ্তানিকারী দেশ। অথচ হরতাল, রাস্তায় সংঘর্ষ ইত্যাদির মধ্য দিয়ে যাওয়া বাংলাদেশের পরিস্থিতি খারাপ থেকে খারাপতর হচ্ছে। আর এ কারণেই অনেক বহুজাতিক কোম্পানি অন্য পথ দেখছেন। সম্প্রতি দেশটির ইসলামপন্থীদের নতুন অংশ আরো সহিংসতায় লিপ্ত হয়, এতে কারখানা বন্ধ থাকে।

হংকংভিত্তিক লি অ্যান্ড ফুং-এর প্রধান নির্বাহী ও প্রেসিডেন্ট ব্রুস রকোউইটজ বলেছেন, “পরিস্থিতি আরো খারাপ হওয়ার আশঙ্কায় লোকজন অনিশ্চয়তার দিকে ঝুঁকে পড়ছে। কিছু কোম্পানি বাংলাদেশ থেকে ব্যবসা গুটিয়ে নিলেও তাদের সংখ্যা খুব কম।”

তিনি জানান, বাংলাদেশে রাজনৈতিক সহিংসতা তীব্র হলেও বছরে মাত্র ১০ থেকে ২০ শতাংশ (বা ২০০ কোটি ৪০০ কোটি ডলার) পণ্যের অর্ডার অন্য দেশে চলে যাবে। আগামী ৯ মাসে এই পরিবর্তন আসবে।

বেনেট মডেল জানান, খরিদ্দারদের জন্য তিনি সবসময় বাংলাদেশকে অর্ডার দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। বাংলাদেশের উঁচু দালান নিয়ে তিনি ও তার পরিচিত কয়েকজন সাপ্লায়ার সবসময় উদ্বিগ্ন থাকতেন। অগ্নিকাণ্ডের সময় বহুতল ভবনে শ্রমিকরা আটকে যেতে পারে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় দোতলা ভবনের কারখানা এটা হবে না।

উদাহরণস্বরূপ ইন্দোনেশিয়ার কথা বলা যেতে পারে, দেশটির শিল্প কারখানার ক্ষেত্রে একটি বিধান (কোড) রয়েছে। তা হচ্ছে দোতলার বেশি উঁচু ভবন নির্মাণ করতে পারবে না, যাতে অগ্নিকাণ্ড, অগ্ন্যুৎপাত ও ভূমিকম্পে সহজেই শ্রমিকদের অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়। শ্রমিক সংগঠনগুলো জানাচ্ছে, ইন্দোনেশিয়ার উঁচু ভবন নেই বললেই চলে। এই নিয়ম তারা আগে থেকেই মেনে চলে। এমনকি দোতলা কারখানাগুলোকে এটা নিশ্চিত করতে হবে যে, দোতলার সঙ্গে নিচতলার যোগাযোগের জন্য উন্মুক্ত ব্যালকনি বা চওড়া আঙ্গিনা থাকে, যাতে শ্রমিকরা সহজেই বেরোতে পারে। তবে ইন্দোনেশিয়ায় অন্য ধরনের শ্রমশোষণ রয়েছে।

ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তাভিত্তিক পোশাক প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান বুসানা অ্যাপারেল গ্রুপের প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা সঞ্জয় কুমার গয়াল বলেন, “আমাদের যা সামর্থ্য আছে তার চেয়ে বেশি প্রত্যাশা করছেন ক্রেতারা। কারণ তারা বাংলাদেশ থেকে, চীন থেকে অর্ডার সরিয়ে নিতে চান।”

সূএ: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই মে, ২০১৩ রাত ৮:২৫
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×