somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

“যদিও আসে কহর, তবু ছেড়োনা শহর।“

৩১ শে জুলাই, ২০১০ রাত ৯:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার একটি ছোট এবং সুন্দর দেশ সিঙ্গাপুর। আমাদের দেশের কিছু লোক সেখানে স্বাস্থ্য পরীক্ষা তথা চিকিৎসার জন্য যায় অঢেল টাকা খরচ করে। কেননা, সিঙ্গাপুর নগরপ্রধান দেশ এবং নগরেই সবকিছু পাওয়া যায়। নগরকেন্দ্রিক সিঙ্গাপুর উন্নত দেশের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে। নগর জীবন পল্লীজীবনের চেয়ে উন্নত না হলে তারা সারাদিন খামারে কাজ করে সন্ধ্যায় নগরে ফিরে আসতো না।
সুজলা-সুফলা শস্য-শ্যামলা বাংলা মায়ের কোলে অফুরন্ত প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সম্ভার থাকলেও জীবন ও জীবিকার তাগিদে আজ আমরা সেগুলো উপেক্ষা করে পিতা-মাতার কাছ থেকে অনেক দূরে রূঢ় বাস্তবতাকে বরণ করে নগর জীবনে বাধ্য হয়েছি। কারন পিতা-মাতার অনায়াসলব্ধ স্নেহের দানে আজ আমাদের সকল প্রয়োজন মেটে না।
জনসংখ্যা বা বংশবৃদ্ধির কারনে জমিজমা ভাগ হতে হতে অনেকে আদিম পেশা কৃষি ত্যাগ করে অন্য পেশায় নিয়োজিত হচ্ছে। এ কারনে অনেকেই মমতাময়ী মায়ের ন্যায় গ্রামকে উপেক্ষা করে নগরবাসে বাধ্য হচ্ছে। মাথাপিছু জমির পরিমাণ কমতে কমতে দেশে এখন অনেক লোক ভূমিহীন হয়ে পড়ছে। গ্রামে ভূমিহীন মানুষের অবস্থা চাতক পাখির চেয়েও খারাপ বলা যায়। অপরদিকে শহরে অনেক লোক জমাজমি দালানকোঠা ছাড়াও যেনতেন উপায়ে দু’বেলা আহার জোটাবার ব্যবস্থা করতে পারছে। ঘর না থাকলেও রাস্তা বা স্টেশনে বেওয়ারিশের মত ঘুমাতে পারে।
একসময় অধিকাংশের গোলাভরা ধান ছিলো, পুকুর ভরা মাছ ছিলো, গোয়াল ভরা গরু ছিলো। গ্রাম ছিলো শান্তির নীড়। এখন সে চিত্র একেবারেই বিরল। গ্রামে এখন অভাব, অভাব আর অভাব। অভাব যে কত রকমের তা বলে শেষ করা যাবে না। কাজের অভাব, শিক্ষার অভাব, চিকিৎসার অভাব, নিরাপত্তার অভাব, সম্ভ্রমবোধের অভাব, ইত্যাকার নানা অভাবের কারনে গ্রাম ছেড়ে মানুষ শহরমূখী হচ্ছে। গতিময় পৃথিবীর সভ্যতার পরিবর্তনের সাথে তাল রেখে এগিয়ে চলেছে নগর জীবন।পল্লী জীবনে মানব সভ্যতার অনেক কিছুরই সংযোগ নেই।
প্রাচীনকালে আরব, ইরান, তুরান ইত্যাকার অনেক দেশের মহারথীগণ বাগদাদে এসে নিজেদের সাধনার সমৃদ্ধি ঘটান এবং বাগদাদকে তৎকালীন পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ নগরীর খেতাব দান করেন। তাদের অনেকের জীবনের শেষ বছরগুলো কেটেছে বাগদাদে। কেননা ধনী-দরিদ্র, শিক্ষিত-অশিক্ষিত, ছাত্র-শিক্ষক, রোগী ও চিকিৎসক সকলেরই প্রয়োজন মেটে শহরে। গ্রামে কেউ আছে কেউ নেই। তাইতো সেখানে কেবল সমস্যা আর সমস্যা। আমাদের গ্রামগুলোতে আধুনিকতার নোংরা কিছু বর্জ্য পৌঁছাতে পারলেও সভ্যতার সোনার কাঠি সেখানকার কোনো কুমারীর শয্যায় কেউ রাখেনি।
বিধাতার আশীর্বাদে গ্রাম পুষ্ট। মানুষ বিধাতাপ্রদত্ত বুদ্ধি এবং স্বীয় কৌশলে নগর সভ্যতার গোড়াপত্তন করেছে। ধীরে ধীরে নগরকে আধুনিক এবং অত্যাধুনিক পর্যায়ে নিয়ে যাচ্ছে। সবই মানুষের প্রয়োজনে এবং যুগের সাথে তাল রেখে। একবিংশ শতাব্দীর মানুষের শুধু কোকিলের ডাক শুনে সময় কাটালে চলে না। প্রগতির পথে নব নব প্রযুক্তির সফল প্রয়োগ এবং নিত্যনতুন উদ্ভাবনের মাধ্যমে জীবনমান উন্নত করাই যেখানে চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে, সেখানে পল্লী জননীর মেঠো পথে হাঁটার সুখ ভোগ করবার ফুরসৎ কোথায়?
অবোধ শিশুর কাছে মাতৃক্রোড় যেমন নিরাপদ আশ্রয়, শহরও ঠিক তেমনি ধনী-নির্ধন, সবল-দুর্বল সকলের আশ্রয়স্থল আজ। এখানে কেউ শিখতে আসে, কেউ শেখাতে আসেন, কেউ কাজের খোঁজে, কেউ কাজ ফেলে সময় কাটাতে। কেউ বাণিজ্য করতে, কেউ খেলা করতে, কেউ খেলা দেখতে। সবাই এখানে অবাধ বিচরণ করতে পারেন। শহরের অসংখ্য মানুষের ভীঁড়ে কে কার খবর রাখে? শহরে পরকে নিয়ে মাতামাতি করার সময় নেই। নিজের চরকায় তেল দিতেই ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে সবাই হিমশিম খায়। এর ফলে অনেক লোকই এখানে ঝামেলাহীন জীবন উপভোগ করতে পারে। বর্তমানে গ্রামে যা কল্পনাও করা যায় না। নগরপ্রধান জীবনের সুবিধার কথা বলে শেশ করা না গেলেও কিছু বলতেই হয়। মানুষের জীবন সবচেয়ে বড় যে প্রয়োজন শিক্ষা, তার জন্য সবাইকে শহরে আসতে হয়। কেননা বড় বড় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কোনো পাড়াগাঁয়ে গড়ে ওঠে না। বড় বড় হাসপাতাল, সরকারী-বেসরকারী দপ্তর সবই তো শহরে, কল কারখানা তথা মানুষে কর্মসংস্থানের যাবতীয় সুব্যবস্থা শহরেই একের পর এক গড়ে উঠেছে, দেশের নামকরা শিক্ষক, কবি, সাহিত্যিক, চিকিৎসক সবাই নগরে বাস করেন। আমোদ-প্রমোদ, নাট্যশালা নানা রকম মিডিয়া সেণ্টার সবই নগরে। নগর হচ্ছে ধনীর বিলাস-সাগর আর দরিদ্রের কর্মসংস্থান ক্ষেত্র। এখানে কেউ ফেরেনা খালি হাতে। শান্তিপ্রিয় ভদ্রলোকেরা আজকাল বাপ-দাদার ভিটা ছেড়ে দেখি শহরেই বসবাস শুরু করেছেন।
এককালে যারা শহরের কোলাহলকে অসহ্য মনে করে গ্রামের শ্যামলীমায় অবগাহণের দাওয়াত দিতেন, আজ তারাই শহরের কোণে ছোট্ট একটি বাড়ি বানিয়ে নিশ্চিন্তে বসবাস শুরু করছেন। মাঝে মাঝে কুমীরে না কামড়িয়ে লেজ দিয়ে আঘাত করে। সে আঘাত সবচেয়ে বড় প্রাণীকেও কাবু করে ফেলতে পারে। আমাদের গ্রামীণ কুম্ভীররা নিজেদের পেট ভরা থাকে বলে জলচর কুমীরের ন্যায় গ্রাস না করে লেজ দিয়ে ক্ষত-বিক্ষত করে। সে জ্বালা সইতে না পেরে মধ্যবিত্ত ভদ্র মানুষেরাও অনন্যোপায় হয়ে শহরে বসবাস শুরু করেছেন। নিজের খেয়ে নিজের পরেও গ্রামে ভালো থাকা যায় না। সেখানে হাসলেও দোষ, কাঁদলেও দোষ। স্বচ্ছলতাও কেউ ভালো চোখে দেখে না, আবার অস্বচ্ছল হলেও কেউ পোছে না। এক কথায় গ্রাম ভদ্রজনের বসবাসের একপ্রকার অযোগ্য স্থানে পরিণত হয়েছে।
উপোরোক্ত এবম্বিধ কারনেই সিঙ্গাপুর সিটিকে মনে পড়ে। সেখানে সবাই দিনে কাজ করে এসে রাতে শান্তিতে ঘুমায়, কেউ কাউকে লেজ দিয়ে বাড়ি মারে না।
একটি নূতন বিষয়ের অবতারণা না করে পারছিনা। পাবনার এক মানবদরদী বন্ধু অসহায় বয়স্ক মানুষদের জন্য একটি নিরাপদ বসবাসের স্থান করেছেন গাজীপুরের উপকণ্ঠে। এটিও কেনো শহরের কোল ঘেঁষে গড়ে উঠল? মিরপুর চিড়িয়াখানাও তো প্রকৃতির সন্তানদেরই, সেগুলো শহরে কেন স্থাপিত হলো? এসব প্রশ্নের উত্তর আমরা আগেই পেয়েছি। কেউ দেখতে আসে, কেউ দেখাতে আসে। সবাই শহরে আসে, সবাই গ্রামে যায় না। কারন একটিই, গ্রামীণ জীবনের চেয়ে নগর জীবন অনেকটা স্বচ্ছল, গতিময়, ঝামেলাহীন এবং নিরাপদ।
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ মিসড কল

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইল বিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ০৩ রা মে, ২০২৪ সকাল ৮:০২

গাজায় হামাস উচ্ছেদ অতি সন্নিকটে হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক ও লসএঞ্জেলসে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরেছিল। আস্তে আস্তে নিউ ইয়র্ক ও অন্যান্ন ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভকারীরা রীতিমত তাঁবু টানিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়েছিল।


... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×