”স্বামী কোথায়?” জিজ্ঞেস করতেই ”হামার স্বামী আইসবে, মোবাইল করিছে” এভাবেই উত্তর দিলেন তিনি। ৮ মাস আগে গর্ভবতী স্ত্রীকে ফেলে ঢাকা চলে গেছেন রুমি বেগমের স্বামী বড়খাতা ইউনিয়নের সামাদ। আজ অবধি তার কোন খোঁজ নেই। রুমি বেগম আজও জানে না তার স্বামী ঢাকার কোথায় থাকে বা আদৌ ঢাকা থাকে কি না। রিক্সা চালক বাবা আবুল হোসেন বড় শখ করে তার দুই মেয়ের বড়জন রুমি বেগম (২৫) কে চার বৎসর আগে তুলে দেন বড়খাতা ইউনিয়নের মো: সামাদের হাতে । সামাদ জানায় তার ২ বিঘা আবাদি জমি ও দুটি বাধাঁনো ঘর আছে। কিন্তু বিয়ের পর স্বামীর বাড়িতে গিয়ে জানতে পারেন তার স্বামীর কোন সহায় সম্পত্তি নেই। আরো জানতে পারেন তার স্বামী সামাদ এর আগে আরও দুটি বিয়ে করেছেন, যা রুমি বেগম বা তার বাবা মা জানতেন না। তারপরও রুমি বেগম সবকিছু মেনে নিয়ে স্বামীর সংসারে সুখ স্বাচ্ছন্দ্য আনার জন্য বাবার কাছে হাত পাতেন। বাবা আবুল হোসেন ঋণ নিয়ে একটি সেলাই মেশিন মেয়েকে কিনে দেন। রুমি বেগম তার শ্বশুর বাড়িতে মাত্র এক মাস ছিলেন এর মধ্যেই স্বামী সামাদ তাকে বলে যে, ” সেলাই মেশিন বেইচে হামি ইস্কা (রিক্সা) কিনবো আর তাই চালায়ে হামার সংসার চলিবে” সহজ সরল গ্রাম্য নারী রুমি বেগম সরল বিশ্বাসে স্বামীর হাতে তুলে দেন সেলাই মেশিন। সামাদ সেই মেশিন বিক্রি করে টাকা কি করলো সেই জানে। কিন্তু জায়গা জমি না থাকায় রুমি বেগমকে ঠিকই তার বাবার বাড়িতে পাঠিয়ে দেন। কিছুদিন পর নিজেও শ্বশুর বাড়িতে উঠেন। বাধ্য হয়ে রুমি বেগমের বাবা মেয়েকে নিজের ৪ শতক বসত ভিটায় একটি ঘর তুলে দেন থাকার জন্য। এরই মধ্যে রুমি বেগমের কোলে আসে একটি মেয়ে সন্তান । স্বামী সামাদ শহরে রিক্সা চালায় কখনও তাকে খাবার খরচ দেয় কখনও দেয় না। এভাবেই দিন কাটছিল রুমি বেগমের। ৮ মাস আগে রুমি বেগমের ছোট বোন আফরোজা (১৯) কে চাকুরী দিবে এই বলে সামাদ, আফরোজাকে নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। তার পর আজ অবধি তাদের আর কোন খোঁজ নেই। এর মধ্যে একদিন সামাদ ফোন করে জানায় সে ঢাকায় আছে কিন্তু তার একদিন পর তার বোন ফোন করে জানায় সে চট্টগ্রাম আছে। তারপরও ৯ মাসের অন্তঃসত্তা রুমি বেগম আশায় বুক বাঁধে হয়ত কোন একদিন তার স্বামী এসে দ্বারগোড়ায় দাড়িয়ে তাকে ঢাকবে। আজও রুমি বেগম রিক্সা চালক বাবার সংসারে খায় । কাজ পাওয়ার আশায় থাকে কিন্তু বণ্যা প্রবণ এই অঞ্চলে তাকে দেওয়ার মতো কোন কাজ যেন নেই।
একিট েবসরকারী ত্রাণ সংস্থা থেেক, ত্রাণ দেয়ার প্রায় ১ মাস পর তার বাড়িতে গিয়ে দেখি ৩ দিনের এক ফুটফুটে কন্যা সন্তান তার কোলে । ত্রাণের সবটুকু চাল আজ শেষ কিন্তু ত্রাণের কম্বল দিয়ে সুন্দর করে শীতাবরণ করে রেখেছেন নব্যজাত কন্যা সন্তানকে। ” আর কিছু কি আপনার চাওয়ার আছে?” জিজ্ঞেস করতেই রুমি বেগম বললো ” একটা সিলাই মেশিন দ্যাও, যাতে হামি কইরে খাতি পারি”

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




