somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তুমি অবাক তাকিয়েছিলে জানালার শিক ধরে

২২ শে জুন, ২০১২ রাত ৮:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমি এখন আর কারো কাছ থেকে চিঠি পাই না। সেই অর্থে কারো চিঠির জন্য যে উদগ্র প্রতীক্ষা, সে রকম কেউ আসলে কোনো দিনই ছিল না। পাতাবাহারের সবুজে ছড়ানো-ছিটানো বিবিধ রঙের মতো আনন্দ নিয়ে আসা বর্ণিল চিঠি বন্ধ হয়ে গেছে এক যুগ আগেই। তবু, বৃষ্টি যখনই নামে; হোক সে মাঝদুপুরে বা ভোর সকালে কিংবা নিওন সন্ধ্যায়, না হয় নিশুতি রাতে; আমার খালি মনে হয়_একজন পোস্টম্যান, তার বুড়োটে সাইকেলে চেপে ভিজতে ভিজতে আমার জন্য একটা চিঠি বয়ে আনছে। সারাটা বৃষ্টিক্ষণ আমি অপেক্ষায় থাকি কলবেল বেজে ওঠার...


দুপুরের ঝলমলে রোদ ভেঙে ছুটে যাওয়া রিকশার টুনটুন শুনে বুকের ভেতর চাপচাপ ব্যথা জমা হতে থাকে। তুমি যেদিন চলে গিয়েছিলে আমার নিজস্ব নগর থেকে, সেদিন এমনই টুনটুন রিকশা ছুটে গিয়েছিল। ভাঙা চুড়ির মতো ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ছিল শব্দগুলো এসফল্টের রাস্তাজুড়ে।
দূর আকাশের কোণে, একপাল কাফরি মেঘের জমায়েত ছিল সেদিন। তাই বুঝি বিদ্যুতের চাবুক হাতে নেমেছিল সোনালি সন্ধ্যা। নিঃশব্দ চাবুক চমকাচ্ছিল সূর্যকে ঘিরতে উদ্যত মেঘেদের পিঠে। নির্যাতনে অভ্যস্ত কাফরি মেঘেরা আনন্দে খলখল হেসে উঠছিল থেকে থেকেই। আর বেড়ে চলছিল সংখ্যায়। শোঁ শোঁ করে কাফরি মেঘদলের বন্ধু, বাউল বাতাস ছুটে এসেছিল তখন। গাছের পাতায় কাঁপন তুলে উপস্থিতি জানান দিচ্ছিল তারা। মেঘদলের সঙ্গে সংগত তুলছিল রাস্তায় নানা শব্দের ওড়াওড়ি। বাউল বাতাসের বাঁশি শুনে চারদিক থেকেই দলে দলে ছুটে আসছিল কাফরি মেঘের ঝাঁক। সূর্যের বিদায় নেওয়ার আগেই তাকে ঘিরে ফেলেছিল। স্বৈরাচারী সূর্যের দাপট কমিয়ে দিয়েছিল এক লহমায়। শুধু সূর্যের বরকন্দাজেরা রয়ে গিয়েছিল চাবুকের বিদ্যুৎ হাতে নিয়েই। চাবুকের আঘাত বেড়েই চলছিল সময়ের সঙ্গে সঙ্গে। মেঘেদেরও ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে পড়ছিল একটু একটু করে। তাই তারা মৃদু লয়ের গান শুরু করেছিল বৃষ্টিছন্দের আড়ালে। বিদ্যুতের শপাং শপাং চাবুকের সঙ্গে সঙ্গে বাতাসের বাঁশি বেজেই চলেছিল, আর জোর গলায় নামছিল মেঘেদের উত্তাল গান।
কৃষ্ণচূড়ারা কাফরি মেঘদলের গান শুনে বদলে নিয়েছিল নিজেদের চরিত্র। আর ঝুম বৃষ্টি নেমেছিল সেদিন। এই বর্ষানগরের রোদজ্বলা পথগুলো নিমেষেই হয়ে উঠেছিল থই থই নদী...


তুমি অবাক তাকিয়েছিলে জানালার শিক ধরে। মেঘেদের ঘন কালো ছায়া পড়েছিল তোমার চোখে। বিষণ্ন আকাশের শোকে, তোমার চোখের কোলেও জমেছিল জল। ছিটেফোঁটা বৃষ্টিরা, ঠিকানা খুঁজে খুঁজে হয়রান। দু-দণ্ড বিশ্রামে তোমার গালের শ্যামলা মাঠে নিয়েছিল আশ্রয়। আমি অপেক্ষায় ছিলাম, গাঢ় বৃষ্টির কিংবা তোমার জানালা ছেড়ে চলে যাওয়ার। কে বলবে, পাওয়াতে বেশি সুখ? না কি হারানোতে?


এক রোদ ঝলমল দুপুরে তুমি নীল শাড়ি আর সাদা ব্লাউজ পরে হেঁটে গিয়েছিলে পথ ধরে। রোদের চোখ রাঙানি থেকে বাঁচতে মাথায় তুলে দিয়েছিলে আঁচল। তোমার ঠোঁটের ওপর নাকের ডগায় বৃষ্টি বিন্দুর মতো ঘাম জমেছিল। হঠাৎ কোত্থেকে এক ঝলক ঠাণ্ডা হাওয়া দৌড়ে এলো তোমাকে সঙ্গ দিতে। সঙ্গে করে নিয়ে এলো মেঘেদের। একটু আগের খাঁ খাঁ রাস্তাটা নিমেষেই ঠাণ্ডা নদী হয়ে উঠল। তুমি হেঁটে চলেছিলে, আর মেঘেরা তোমাকে ছায়া দিতে ঢেকে ফেলেছিল সূর্যকে। তোমার ঘামের বিন্দুগুলোর সাথি হতে নেমেছিল ইলশেগুঁড়ি বৃষ্টি। বাতাস আঁচল নামিয়ে দিয়েছিল তোমার মাথা থেকে। আর ইলশেগুঁড়ি বৃষ্টির ফোঁটাগুলো তোমার চুলে সাজিয়ে দিয়েছিল মুক্তো।
তুমি কি কখনো ভিজেছিলে আমার সঙ্গে? বৃষ্টিতে? ভালোবাসায়?
আমি... আমরা, দাঁড়িয়েছিলাম জবুথবু, ঝাপ-আধাখোলা দোকানের সামনে। তুমি শাঁই শাঁই চলে গিয়েছিলে পর্দা ঢাকা রিকশা চেপে।
আমি... আমরা, বোকাবোকা চেহারা করে দোকানির কাছ থেকে চা খেয়েছিলাম।


এমন কখনো হয়নি, বৃষ্টি আমাকে বঞ্চিত করেছে। আমি খোলা আকাশের নিচে, আর বৃষ্টি আমার কপালে তার প্রথম চুমু দেয়নি, এ রকম ঘটনা আমার মনে পড়ে না। তাই সুযোগ পেলেই বৃষ্টিকে আলিঙ্গন করতে ছুটে যাই।
সেদিন হাঁটছিলাম রাস্তায়, না থেকেও তুমি ছিলে পাশে। আবোল-তাবোল এটা-সেটা নিয়ে কথা বলছিলাম। হাসছিলাম হো-হো করে। হঠাৎ তুমি বললে_'দ্যাখো দ্যাখো, আকাশের মন আজকে অনেক খারাপ।' আমি মুখ তুলে তাকালাম, দূরে মেঘের কাজল লেপটে আছে আকাশের চোখে। তুমি আবার বললে_'আকাশের মনে আজকে অনেক অ-নে-ক কষ্ট, দেখো ও আজকে চিৎকার করে কাঁদবে।' আমি সঙ্গে সঙ্গে শুনলাম মেঘেদের চাপা বিলাপ। আমি বিষণ্ন হাঁটি একা একা...
দূরের বটগাছটাতে উথাল-পাতাল বাতাসের ঢেউ এসে আছড়ে পড়ছে। তরুণ গাছটার বুড়োটে হলুদ পাতাগুলো এলোমেলো ছুটছে মুক্তির আনন্দে। পিচঢালা পথটা যেন নদী। বর্ষায় ভরভরন্ত যৌবন। ওই বাঁকে, এলোমেলো ওড়না নিয়ে ব্যস্ত কিশোরী। আমি হেঁটে চলেছি... না... না..., আমি নৌকা বেয়ে চলেছি পিচঢালা নদীতে। বাতাসের মাতলামিতে বারবার নিভে যাচ্ছে হাতের ম্যাচ, তবুও চেষ্টা করে চলেছি।


এখনকার সব বাড়িতেই মেঝেগুলো টাইলসের হয়। কেমন যেন কৃৃত্রিমতা। আগেকার শান বাঁধানো মেঝেতে পা রাখলেই পুকুরে পা ডোবানোর অনুভব পাওয়া যেত। মনে হতো, পুকুরের পানিতে ছায়া ফেলেছে আকাশের কালো মেঘ_এই বুঝি বৃষ্টি নামবে।
সুযোগ পেলে আমি একটা বৃষ্টিঘর বানাব। যার ছাদ হবে টিনের। সামনে এক চিলতে বারান্দা থাকবে আর থাকবে এক টুকরো উঠোন। মেঝেটা হবে শান বাঁধানো। আমি ঘরের জানালায় বসে টিনের চালে বৃষ্টির গান শুনব, উঠোনের সবুজ ঘাসে দেখব বৃষ্টির নাচ।

আমার ব্লগে আপনাকে স্বাগতম।
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদিসের সনদের মান নির্ধারণ করা শয়তানী কাজ

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:৪০



সূরাঃ ৯ তাওবা, ১০১ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০১। মরুবাসীদের মধ্যে যারা তোমাদের আশেপাশে আছে তাদের কেউ কেউ মুনাফিক। মদীনাবাসীদের মধ্যেও কেউ কেউ মোনাফেকী রোগে আক্রান্ত। তুমি তাদের সম্পর্কে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছায়ানটের ‘বটমূল’ নামকরণ নিয়ে মৌলবাদীদের ব্যঙ্গোক্তি

লিখেছেন মিশু মিলন, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



পহেলা বৈশাখ পালনের বিরোধীতাকারী কূপমণ্ডুক মৌলবাদীগোষ্ঠী তাদের ফেইসবুক পেইজগুলোতে এই ফটোকার্ডটি পোস্ট করে ব্যঙ্গোক্তি, হাসাহাসি করছে। কেন করছে? এতদিনে তারা উদঘাটন করতে পেরেছে রমনার যে বৃক্ষতলায় ছায়ানটের বর্ষবরণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

বয়কটের সাথে ধর্মের সম্পর্কে নাই, আছে সম্পর্ক ব্যবসার।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৫০


ভারতীয় প্রোডাক্ট বয়কটটা আসলে মুখ্য না, তারা চায় সব প্রোডাক্ট বয়কট করে শুধু তাদের নতুন প্রোডাক্ট দিয়ে বাজার দখলে নিতে। তাই তারা দেশীয় প্রতিষ্ঠিত ড্রিংককেও বয়কট করছে। কোকাকোলা, সেভেন আপ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানুষের জন্য নিয়ম নয়, নিয়মের জন্য মানুষ?

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৫:৪৭



কুমিল্লা থেকে বাসযোগে (রূপান্তর পরিবহণ) ঢাকায় আসছিলাম। সাইনবোর্ড এলাকায় আসার পর ট্রাফিক পুলিশ গাড়ি আটকালেন। ঘটনা কী জানতে চাইলে বললেন, আপনাদের অন্য গাড়িতে তুলে দেওয়া হবে। আপনারা নামুন।

এটা তো... ...বাকিটুকু পড়ুন

একজন খাঁটি ব্যবসায়ী ও তার গ্রাহক ভিক্ষুকের গল্প!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৪


ভারতের রাজস্থানী ও মাড়ওয়ার সম্প্রদায়ের লোকজনকে মূলত মাড়ওয়ারি বলে আমরা জানি। এরা মূলত ভারতবর্ষের সবচাইতে সফল ব্যবসায়িক সম্প্রদায়- মাড়ওয়ারি ব্যবসায়ীরা ঐতিহাসিকভাবে অভ্যাসগতভাবে পরিযায়ী। বাংলাদেশ-ভারত নেপাল পাকিস্তান থেকে শুরু করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×