somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জাতির বিজয়ের পথে তুমিই অন্তরায়

২১ শে এপ্রিল, ২০১২ রাত ৩:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সারা দুনিয়াতে মুসলমানদের দুরবস্থার খবর পড়ে আমি যখন চিন্তিত; তখন আমার মন আমাকে সম্বোধন করে বলে উঠলো- হে মুসলমান পরিচয়ের দাবিদার! মুসলিম জাতির বিজয়ের পথে তুমিই প্রতিবন্ধক। মুসলমানদের উপর এত সব মুসিবতের জন্য তুমিই দায়ী।

আমি অবাক হলাম। বললাম আমি একজন নগণ্য মানুষ। আমার কাছে শক্তি নেই, ক্ষমতাও নেই। কে মানবে আমার হুকুম! আর উপদেশ দিলেও গ্রহণ করবে কে? আমি কিভাবে দায়ী হলাম?

তখন আমার মন দ্রুত বলে উঠল দায়ী তোমার গুনাহ। যে গুনাহ তুমি আল্লাহর অবাধ্য হয়ে করেছ, দায়ী তোমার ফরজ ওয়াজিবসমূহ থেকে পলায়নপরতা এবং দায়ী নিষিদ্ধ জিনিসের প্রতি তোমার লোভ ও তীব্র আকর্ষণবোধ।

বললাম, আমি এমন কি করেছি যে জাতির মুসিবতের জন্য তুমি আমাকে দায়ী করছো?

সে বলল, আচ্ছা একটু দাঁড়াও! আমি দেখিয়ে দিই তুমি কী করেছ আর কী করোনি! তুমি কি ফজরের নামাজ জামাতে পড়?

বললাম মাঝে মাঝে পড়ি।

সে বলল, এটাই তোমার দুর্বলতা। তুমি কিভাবে আশা কর যুদ্ধে শত্রুকে পরাস্ত করবে অথচ তুমি নিজের সাথে যুদ্ধে পরাজিত হয়েছ? তাও এমন একটি কাজে যাতে জানও লাগে না আবার সম্পদ খরচেরও দরকার পড়ে না। কয়েক মিনিটের বেশি সময়ও লাগে না আল্লাহ তালার বিধান সেই ফরজ নামাজটা আদায় করতে।

কিভাবে তুমি জিহাদ করবে আশা কর? অথচ ফরজ নামাজটা তুমি ঠিক মত আদায় কর না। সুন্নাতের উপর আমল কর না, কোরআনের কিছু অংশ তেলাওয়াত কর না। সকাল সন্ধ্যার দোয়া গুলো তুমি ভুলে যাও। নিষিদ্ধ বস্তু থেকে দৃষ্টি সরাতে পার না। মা বাবার সেবা কর না, আত্মীয় স্বজনের খোঁজ রাখ না।

আমাকে আরও বলল কিভাবে তুমি তোমার দেশে শরিয়তের বিধান চালু করবে অথচ তুমি নিজের মধ্যে বা নিজের পরিবারে শরিয়তের হুকুম চালু করতে পারনি। পরিবারের ব্যাপারে তুমি আল্লাকে ভয় কর নাই, তাদেরকে দীনের দাওয়াত দাও নাই। এবং তাদেরকে হালাল খাওয়ানোর ব্যাপারে তুমি উদাসীন। তুমি তো তাদের দলে চলে গেছো যাদের ব্যাপারে আল্লাহ তালা বলেছেন, وَتُحِبُّونَ الْمَالَ حُبًّا جَمًّا ﴿٢٠﴾ এবং তোমরা ধন-সম্পদকে প্রাণভরে ভালোবাস! (সুরা ফজর -২০)। তুমি মিথ্যা বলেছ তুমি ধোঁকা দিয়েছ, তুমি ওয়াদা খেলাপ করেছো , সুতরাং তুমি আযাবের সম্মুখীন হয়েছ।

আমি বললাম, আমি এক জনের দোষেই কি সবার বিজয় আটকে আছে?

তখন আমার মন আমাকে বলল, আফসোস; তোমার উপর। তোমার মত কোটি কোটি মানুষ মিলেই তো জাতি গঠিত হয়েছে। কিছু মানুষ ছাড়া সবাই তো তোমার মত । সবাই তো তোমার পথেই চলছে। আল্লাহর আদেশ পালন করছে না, আর গুনাহ থেকে বিরত থাকছো না। কিন্তু সবাই বিজয় চায়। ভাবে তারা শ্রেষ্ঠ। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে সবাই একই রকম [ কিছু সম্মানজনক ব্যতিক্রম ছাড়া]। তুমি জান না সাহাবায়ে কেরাম যুদ্ধে বিপদের সম্মুখীন হলে আগে নিজেদের মধ্যে কোন দুর্বলতা আছে কিনা তা নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েতেন? অথচ এখন তোমরা বাস্তবেই গুনাহের ভেতরে অবস্থান করে বিজয়ের স্বপ্ন দেখা কি বোকামি নয়?

এই কথা শুনে আমার চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়তে লাগল। আমি ভাবতে লাগলাম আমিই কি সেই ব্যক্তি, যে আল্লাহ ও আল্লাহর রসুল [স.] কে ভালোবাসে এবং মুসলমানদেরকে ভালোবাসে অথচ আমিই মুসলমানদের বিপর্যয়ের কারণ? আমিই সারা দুনিয়ায় নিরপরাধ মুসলমানদের হত্যা ও নির্যাতনের জন্য দায়ী?

শাসক শ্রেণীকে আমি কত সহজে গালি দেই। কিন্তু আমি আমার নিজের দোষ ত্রুটি গুলো দেখিনি। আর আল্লাহ তালার এই বাণীর প্রতিও আমি দৃষ্টি দেইনি। إِنَّ اللَّـهَ لَا يُغَيِّرُ مَا بِقَوْمٍ حَتَّىٰ يُغَيِّرُوا مَا بِأَنفُسِهِمْ আল্লাহ কোন জাতির অবস্থা পরিবর্তন করেন না, যে পর্যন্ত না তারা তাদের নিজেদের অবস্থা পরিবর্তন করে। সুরা আর রাআদ – ১১,

মনে মনে বললাম- আল্লাহর হাজার হাজার শুকরিয়া তিনি আমার চোখ খুলে দিয়েছেন। আমি আমার মনকে বললাম এখন আমাকে কি করতে বলছ?

বলল, নিজে থেকে শুরু কর। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ সময় মত জামায়াতে পড়। যথাযতভাবে জাকাত আদায় কর। মাতা-পিতার সেবা কর। সুন্নাত আদায় করার মাধ্যমে আল্লাহকে ভালোবাস। আল্লাহ তালার সান্নিধ্য অর্জন করার কোনও সুযোগই হাত ছাড়া করবে না। যদিও ছোট কোনও ভাল কাজের মাধ্যমে হোক। মনে রাখবে তোমার ভায়ের সাথে হাসি মুখে কথা বলা সওয়াবের কাজ। নিজের মধ্যে এবং নিজের বাড়িতে শরিয়ত চালু কর। আগে নিজের মনের সাথে যুদ্ধ করে জয়ী হও। দায়িত্ব এড়ানোর জন্য নিজের দোষ অন্যের উপর চাপিয়ে দিও না। অন্যকে শুধরানোর আগে নিজে শুধরে যাও। যেখানেই যাও ব্যক্তিত্ববান হও। আদর্শবান হও। যদি অন্যের সমালোচনা করেই তোমার সময় কাটে তাহলে তা বন্ধ কর। কারণ সমালোচনা করার মানুষ অনেক আছে। সমাধান করার মানুষ তেমন নাই। তুমি নিজেকে দিয়ে সমাধান শুরু কর। আগে নিজে শুদ্ধ হয়ে যাও।

যখন তুমি নিজেকে শুধরে নিয়েছ তখন আল্লাহ তালার কাছে দোয়া কর নিষ্ঠা ও এখলাস সহকারে, তোমাকে এবং তোমার মত যারা নিজেকে শুধরে নিয়েছে তাদেরকে বিজয় দেওয়ার জন্য। তখন তুমি তাদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে যাদের ব্যাপারে আল্লাহ তালা বলেছেন يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِن تَنصُرُوا اللَّـهَ يَنصُرْكُمْ وَيُثَبِّتْ أَقْدَامَكُمْ ﴿٧﴾ হে বিশ্বাসীগণ! যদি তোমরা আল্লাহকে সাহায্য কর, আল্লাহ তোমাদেরকে সাহায্য করবেন এবং তোমাদের পা দৃঢ়প্রতিষ্ঠ করবেন। সুরা মোহাম্মাদ – ৭,

মনে রাখবে তোমার প্রতিটি গুনাহ নিরীহ মুসলমানদের হত্যার জন্য দায়ী।

আমি আমার মাথা উঠালাম। তওবা করলাম আল্লাহর কাছে। আল্লাহকে বললাম হে আল্লাহ আমার তওবা কবুল করুন। নতুন জীবন শুরু করলাম দুই রাকাত নফল নামাজের মধ্য দিয়ে। চোখের পানি মুছলাম। শুরু হল আমার নতুন জীবন। হে আল্লাহ আমাকে আপনার দেয়া বিধান মতে চলার তাওফিক দান করুন। আমীন।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে এপ্রিল, ২০১২ রাত ৩:৫০
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইন্টেরিম সরকারের শেষদিন : গঠিত হতে যাচ্ছে বিপ্লবী সরকার ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২২


ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়াকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার আন্তঃদেশীয় প্রকল্পটা সফল হতে অনেক দিন লেগে গিয়েছিল। বাংলাদেশে সে তুলনায় সংশ্লিষ্ট শক্তিসমূহের সফলতা স্বল্প সময়ে অনেক ভালো। এটা বিস্ময়কর ব্যাপার, ‘রাষ্ট্র’... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিচার চাই? না ভাই, আমরা "উল্লাস" চাই

লিখেছেন মাথা পাগলা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৩৭





দীপু চন্দ্র দাস একটি পোশাক শিল্প কারখানায় চাকরি করতো। সম্প্রতি দীপু দাস তার যোগ্যতা বলে সুপার ভাইজার পদে প্রমোশন পেয়েছিলো।

জানা যায়, সুপারভাইজার পজিশনটির জন্য আরও তিনজন প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব সন্ত্রাস, আগুন ও ব্লাসফেমি: হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:৫২


ময়মনসিংহে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন মানুষকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মধ্যযুগীয় এই ঘটনা এই বার্তা দেয় যে, জঙ্গিরা মবতন্ত্রের মাধ্যমে ব্লাসফেমি ও শরিয়া কার্যকর করে ফেলেছে। এখন তারই... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৫


দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×