somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সুখ তুমি কী আমার জানতে ইচ্ছে করে

০৫ ই অক্টোবর, ২০০৬ রাত ৩:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

[গাঢ়]হ্যাপি, হ্যাপিনেস, সুখ, তুষ্টি, তৃপ্তি, সন্তুষ্টি কোনোটিই আমাদের কাছে অপরিচিত শব্দ নয়। অপরিচিত হচ্ছে এর স্বরূপ। এ স্বরূপটি আবিষকার করা সহজ নয়। তবুও মানুষের চেষ্টার শেষ নেই। কিন্তু একথা মানতে কারও আপত্তি থাকার কথা না যে - অল্পতে তুষ্ট মানুষই সুখী। আত্মসমর্পিত মানুষ সহজেই সুখের সন্ধান পায়।[/গাঢ়]

ঋষী যখন ধ্যান করেন, তখন তিনি সুখের সন্ধান করেন। ধ্যানি, তাপস কিংবা জ্ঞানী মনের ভেতর একটি রাজ্য সৃষ্টি করে সুখ তালাশ করেন। ওলি-আল্লাহরা মোরাকাবা মোসাহেদা করে সুখের সাগরে ডুব দেন।

সুখ নিয়ে ছোট বেলায় পড়েছিলাম অনেকটা এমন যে, "নদীর ওকূলেই সর্বসুখ, ওকূল ভাবে বিপরীত কূলেই সুখের বাসা"। এ নিয়ে একটি গানও আছ্লে 'সুখ তুমি কী আমার জানতে ইচ্ছে করে'। আর বিখ্যাত কবিতার লাইনটি্ল 'সুখের লাগিয়া বাঁধিনু ঘর অনলে পুড়িয়া গেল'।

সবচেয়ে বেশি সুখী কে। এ নিয়ে উপসংহার টানা সম্ভব হবে না। যে যার মতো করে সুখের সংজ্ঞা নিরূপণ করবেন, ব্যাখ্যা করবেন। কিন্তু সুখ ছুঁয়ে দেখা সম্ভব হবে না। মনোবিজ্ঞানীরা ভাবেন, "যিনি নিজেকে সুখী মনে করেন তিনিই সুখী"। সুখটা আসলে আপেক্ষিক। সবার কাছে সমানভাবে ধরা দেয় না।

বস্তুবাদী ভাবনায় সুখটা বস্তুর মাঝে লুকিয়ে থাকে। বিজ্ঞানীর মতে, সুখ সৃষ্টি সুখের উল্লাসের মাঝে লুকিয়ে আছে। চিকিৎসা বিজ্ঞান সুখের সংজ্ঞায়িত করে না বরং একটি ধারণা খাড়া করে। সুস্থ মানুষই সুখী। সুস্থতার অর্থ যিনি খেয়ে হজম করতে পারেন। শুলে ঘুমাতে পারেন, কাজে উৎসাহ পান, যা কিছু দেখেন, ভাবেন, মনে করেন, সবকিছু ইতিবাচক অর্থেই দেখেন। [গাঢ়]এক শ্রেণীর কর্মবাদী মানুষ আছেন তারা ভাবেন, নির্লোভ ভাবনার মহৎকর্মেই সুখ আছে। কর্মচাঞ্চল্যও এক ধরনের সুখ।[/গাঢ়]


অধ্যাত্মবাদে সুখ বলে একার্থে প্রকাশযোগ্য কোনো শব্দ নেই। সুখীও ব্যাপক অর্থবোধক। তাছাড়া পৃথিবী অখণ্ড সুখের জায়গা নয়। পৃথিবীর জীবন হবে সুখ-দুঃখ মিশ্রিত। আর অখণ্ড সুখ বা অনাবিল প্রশান্তি শুধু জান্নাতেই পাওয়া যাবে। জান্নাতের এ সুখটা কিনতে হয় দুনিয়াতে। পরিশুদ্ধ মনের বিশ্বাস, সংবেদনশীল মানবিক হূদয়, সৃষ্টিজীবে দয়া আর আত্মসমর্পিত মানুষ যখন আল্লাহর হক ও বান্দার হক অত্যন্ত সুসমভাবে আদায় করে তখনই তিনি সুখের নিশ্চয়তা পান। মুনি-ঋষী, পীর, ফকির, দরবেশ, ওলি-আল্লাহ ও আউলিয়াদের কাছে সুখ 'ফানাফিল্লাহর' মাঝে। যিনি নিজেকে যত বেশি আল্লাতে সমর্পিত করতে পারেন, তার সুখ তত বেশি। রাবেয়া বসরি বলতেন, সুখ হচ্ছে খোদাপ্রেমে মশগুল জীবন। আল্লাহ প্রীতি ও ভীতিতে নয়।

শেষ পর্যন্ত সুখ নিয়ে তিনটি মত দাঁড়ায়। একটি ভাববাদী ধারণা। অন্যটি বস্তুবাদী চিন্তা। শেষটি মনস্তাত্ত্বিক ব্যাখ্যা্ল যা মনোবিজ্ঞানী ও চিকিৎসা বিজ্ঞানের মাধ্যমে পাওয়া যায়। এ তিনটি মতের বাইরে একটি অধিকতর প্রভাব বিস্তারকারী মত হচ্ছ্লে ঐশীবাদী ভাবনা। [গাঢ়]ইহুদি, খ্রিসটান এবং মুসলমানরা কিছু বিকৃতি-বিচু্যতি নিয়েও আসমানি কিতাব-নির্ভর হয়ে জান্নাত-জাহান্নামের আলোকে সুখ ভাবনা লালন করে। অন্যান্য প্রকৃতি পূজারি এবং ধর্মবিশ্বাসীরাও ধর্ম-অধর্ম দিয়ে শান্তি সুখের ঠিকানা সন্ধান করে।[/গাঢ়] এক কথায়, ধর্ম চিন্তায় বিশ্বাসবিধৌত ভাবনায় সুখটা ধরা দেয় ভিন্নভাবে। রীতিটিও বিশ্বাসীরা একভাবে দেখেন। অবিশ্বাসীরা দেখেন ভিন্নভাবে। বিশ্বাস ও কর্মফলের সমন্বিত সুকৃতির ফসল সুখ।

বাংলাদেশে কবি আল মাহমুদ যখন উচ্চারণ করেন স্ত্রৈনরাই সুখী, তখন তিনি সুখের একটি সীমিত রূপের কথা বলেন। সামগ্রিকতায় যান না। কবি শামসুর রাহমান 'স্বাধীনতা' কবিতায় এক ধরনের 'সুখে'র কথা বলেছেন। জীবনানন্দদাসকে 'সুখ' দিয়েছিল নাটোরের বনলতা সেন।

একটা বিখ্যাত আরবি নীতিশাস্ত্রের ভাব-ভাষা প্রিয় নবী বলেছেন ভিন্নভাবে। তিনি 'সময়কে' যথার্থ অর্থে বুঝতে বলেছেন। বলেছেন, বার্ধক্যের আগে যৌবন ও তারুণ্য সুখের প্রতীক। অসুস্থতার আগে সুস্থতা, দুঃসময়ের আগে সুসময় এবং অসচ্ছলতার আগে সচ্ছলতা অত্যন্ত মূল্যবান্ল এ সুখের সময়গুলো কাজে লাগাতে হবে। হাদিসবেত্তারা হাদিসটি অবশ্য আরো ভিন্ন অর্থে, ব্যাপকভাবে ব্যাখ্যা করার পক্ষপাতী। আমি তা-ই মনে করি। এখানে প্রসঙ্গটা টানলাম একমুখী ব্যাখ্যা বোঝানোর স্বার্থে। মিসরীয় একজন পণ্ডিত ভেবেছেন, সবচেয়ে সুখী মানুষ হচ্ছে স্বাধীন মানুষ। স্বাধীন হচ্ছে সেই ব্যক্তি যিনি সাহসের সাথে কালেমা উচ্চারণ করে কায়মনোবাক্যে তার ওপর দৃঢ় থাকতে পারেন। কারণটা ব্যাখ্যা করেছেন, ।[গাঢ়] কালেমা পড়লে মানুষের ওপর মানুষের সকল প্রভুত্ব অস্বীকার করা হয়। তাতে শ্রেণীবৈষম্য, বর্ণবৈষম্য, বিত্তবৈষম্য সবকিছু অস্বীকার করা হয়। মানুষ এবং মানবতাই প্রাধান্য পায়। মানুষ যখন মানবিকবোধে বিবেককে জাগ্রত করতে পারে, তখন আত্মতত্ত্বে বিবেক জাগ্রত হয়ে যায়।[/গাঢ়] কারণ মানুষের ইতিহাস হচ্ছে প্রভুত্বকামী লালসার ইতিহাস। অন্যের স্বাধীনতা হরণ বা খর্ব করার ইতিহাস। পৃথিবীর কোথাও কখনো কোনো বন্য জানোয়ার, হিংস্র হায়েনা মানুষের অধিকার ও স্বাধীনতা হরণ করেনি। শোষণ, বঞ্চনা, অত্যাচার, নিপীড়ন সবকিছু মানুষই মানুষের ওপর চালায়। ফলে এ বক্তব্যটি যে অত্যন্ত জোরালো তা স্বীকার করতেই হবে।


সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই অক্টোবর, ২০০৬ রাত ৩:০৪
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বারবাজারে মাটির নিচ থেকে উঠে আসা মসজিদ

লিখেছেন কামরুল ইসলাম মান্না, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৪০

ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার বারবাজার ইউনিয়নে মাটির নিচ থেকে মসজিদ পাওয়া গেছে। এরকম গল্প অনেকের কাছেই শুনেছিলাম। তারপর মনে হলো একদিন যেয়ে দেখি কি ঘটনা। চলে গেলাম বারবাজার। জানলাম আসল... ...বাকিটুকু পড়ুন

সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮








আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

পরিবর্তন অপরিহার্য গত দেড়যুগের যন্ত্রণা জাতির ঘাড়ে,ব্যবসায়ীরা কোথায় কোথায় অসহায় জানেন কি?

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:৫৭


রমজানে বেশিরভাগ ব্যবসায়ীকে বেপরোয়া হতে দেখা যায়। সবাই গালমন্দ ব্যবসায়ীকেই করেন। আপনি জানেন কি তাতে কোন ব্যবসায়ীই আপনার মুখের দিকেও তাকায় না? বরং মনে মনে একটা চরম গালিই দেয়! আপনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯

মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা বলতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×