রাত চারটায় ফ্যাক্টরি থেকে ফোন এলো একজন শ্রমিক আহত হয়েছেন। দৌড়ে ছুটে গেলাম। নিজে গাড়ি চালিয়ে তাকে নিয়ে ঢাকা মেডিক্যাল ছুটলাম।
গেটে নামতেই সাতাশ-আঠাশ বছরের একজন দালাল এসে ধরলো।
"কি সমস্যা কই যাইবেন?" খুব উদ্বেগের সাথে জানতে চাইলো দালাল।
পাত্তা না দিয়ে ভিতরে গেলাম। শুনতে পেলাম, দালাল গালি দিলো, "শালা বাইন চো* পণ্ডিত আইছে.."
দশ টাকা দিয়ে টিকেট কাটলাম। কর্তব্যরত কর্মকর্তা নির্দিষ্ট ওয়ার্ড এ যেতে বললেন। সেখানে যাওয়া মাত্র একজন ওয়ার্ডবয় দৌড়ে এসে বললেন, "আসেন সিলাই কইরা দেই।"
"আপনি সেলাই করে দিবেন?"
ওয়ার্ড বয় ফিক করে হেসে বললেন, "কেন ভাই আমগো পছন্দ অয় না? সিলাই-মিলাই আমরাই তো করি।"
ডিউটি ডক্টরের দৃষ্টি আকর্ষণ করলাম। পরে আমার চাপাচাপিতে তিনি নিজেই সেলাই করলেন। ওয়ার্ডবয় তার পাশে বসে মোবাইলে তাস খেলছিল।
সেলাই শেষে ওয়ার্ডবয় কাছে এসে বললেন, "কিছু দিয়া যান, কি সুন্দর ইন্ডিয়ান সুতা দিয়া সিলাই দিছি।"
একশত টাকার একটা নোট তার হাতে গুজে দিলাম।
এরপর ডিউটি ডক্টর সিটিস্ক্যান রুমে পাঠালেন। সেখানে আরেক দালাল ওত পেতে আছে। সিটি স্ক্যানের দায়িত্বে থাকা ভদ্রলোক ঘুম থেকে ওঠে আমাদের দেখে বেশ বিরক্ত হলেন। দালাল আমার রোগীকে হাত ধরে টেনে নিয়ে স্ক্যানিং টেবিলের উপর শোয়ালো।
দায়িত্বরত ভদ্রলোককে ২০০০ টাকা বিল দেবার সময় তিনি বিরস বদনে ডান হাতে গাল চুলকাতে চুলকতে বাম হাত দিয়ে টাকাটা নিলেন।
দালাল বলল, "দেন ১০০ টাকা দেন।"
"কেন?"
"আপনার রোগী রে টাইনা টুইনা শোয়াইছি। দেন তাড়াতাড়ি দেন। অন্য কাম আছে?"
১০০ টাকা বের করে দিলাম। একটু পরে আবার এসে বলল, "দেন ৩০টা ট্যাকা দেন।"
"কেন?"
"খামের দাম। সিটি স্কিনের ফিল্ম ভরার খাম।"
"একটা খামের দাম ৩০ টাকা? ফিল্ম তো খামে ভরেই দেবার কথা?"
দালাল ধমক দিয়ে চলে গেল। দায়িত্বরত ভদ্রলোকের কাছে আমার নামে বিচার দিলো। আমি তার কাছে গেলে তিনি চোখ গরম করে আমার দিকে তাকিয়ে, আমার হাতে খাম বিহীন খালি ফ্লিম ধরিয়ে দিলেন।
সেই দালাল ধমকের সুরে জানালো- সে সেখানকার স্টাফ না। তার চাচা বা কেউ একজন চাকরি করেন। নেতা-পেতাদের ট্যাকা দিয়ে ঢুকছে। তাদের মতো দালালদের সাথে নাকি পুলিশ-সাংবাদিকরাও সমিহ করে কথা বলে!
ঢাকা মেডিক্যাল এ যতবার যাই, ততবারই সত্যি খুব অসহায় লাগে নিজেকে। এর পরিবর্তন কি কোন দিন হবে না??