somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাতাসের শব্দ

২৬ শে মার্চ, ২০২২ দুপুর ১:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমরা থাকি বাংলাদেশের সবার দক্ষিনের জেলা সাতক্ষীরা তে। আমাদের বাসা টা সাতক্ষীরা-যশোর হাইওয়ের ঠিক পাশে। হাইওয়ের ঠিক অপর দিকে অর্থাৎ আমাদের বাসার পশ্চিম দিকে একটা খোলা মাঠ আছে। বিকালে এলাকার ছেলেপুলেরা ক্রিকেট খেলে। আমাদের বাসার পিছনেও একটা মাঠ আছে। ঐ মাঠে বিকালে আমিও খেলি। বাসার দুই পাশে আমাদের প্রতিবেশিরা থাকে।

আমাদের জায়গাটা প্রায় এক বিঘার মত। চারিদিকে উঁচু ইঁটের পাঁচিল আছে। বাসার চারপাশে অনেক গাছ আছে। পেয়ারা, আম, কাঠাল, লেবু, বাতাবি লেবু, ছফেদা, লিচু আছে। এছাড়া গোলাপ, গাদা, জবা গাছ ও আছে। কয়েকটা বড় নিম, সুপারি, দেবদারু গাছ ও আছে। অনেক টা বাগান বাড়ি ফিল হয়। এই বাসাতে আমি,বাবা, মা ও দাদি থাকি। সাথে দুইজন কাজের মানুষ ও থাকে। দাদা মাঝে মধ্যে গ্রাম থেকে এসে থাকেন। 

জেলা স্কুলের ক্লাস থ্রি তে পড়ি আমি। সকালে উঠে ডিম দিয়ে ভাত খেয়ে স্কুলে যাই। মা যাওয়া আসার জন্য ভ্যান ভাড়া চার টাকা দেন। আর টিফিনের জন্য আরো ছয় টাকা দেন।

আজ বৃহস্পতিবার। হাফ ডে স্কুল। ক্লাস শেষ। আজকের আবহাওয়া টা অনেক সুন্দর। আকাশটা ভীষণ নীল। ধবধবে সাদা মেঘ ভেসে ভেসে যাচ্ছে আর কি সুন্দর বাতাস হচ্ছে। বাতাসের ধাক্কায় রাস্তার পাশের বড় বড় গাছ থেকে পাতা এসে পড়ছে। বাতাসের শব্দ এই ভর দুপুরে এক অন্যরকম ভালোলাগা কাজ করে। স্কুলে সবার মন যেন খুশি খুশি। এমন সুন্দর আবহাওয়ার জন্য কিনা জানি না। অনেকে কাগজের প্লেন বানিয়ে উড়াচ্ছে। অনেকে দৌড়াচ্ছে খুশিতে। সবাই আজ সুখি। কারো মনে কোন দুঃখ নাই। কান পাতলেই মানুষের সুখের ভাষা শোনা যাচ্ছে।

রাস্তায় কোন এক উদাস পথিক মনের মাধুরি মিশিয়ে বাঁশি বাজাচ্ছে। বাতাসের শব্দে সে সুর এক উন্মাদনা সৃষ্টি করে। আমি একটা ভ্যান নিলাম বাসায় যাব বলে। হাইওয়ে রোড ধরে যাচ্ছি। রাস্তার দুইপাশের গাছ থেকে পাতা উড়ে উড়ে এসে পড়ছে রাস্তায়। কোন এক অদ্ভুত কারনে রাস্তায় কোন গাড়ি, বাস, ট্রাক নাই। শুধু শব্দহীন ভাবে রাস্তায় ভ্যান, রিকশা চলছে। সাইকেল চলছে। সবার মুখে একধরনের হাসি কি যেন একটা দারুন কিছু হয়েছে। 

আমাদের বাসাতেও অদ্ভুত সুন্দর আবহাওয়ার ছোঁয়া লেগেছে। দেবদারু গাছ গুলো দুলছে। পাতায় পাতায় ছোঁয়া লেগে একটা সুর তৈরি হচ্ছে। ঘরে ফিরেই দেখলাম খাবার টেবিলে প্রিয় মুরগীর মাংসের ঝোল রান্না। দ্রুত গোসল সেরে নিয়ে বসে গেলাম আম্মা, আব্বা ও দাদির সাথে খেতে। কাজের মানুষ দের কে আম্মা খাবার বেড়ে দিলেন। আমরাও খেয়ে নিলাম। খেয়ে দেয়ে চলে গেলাম আমার ঘরে।

জানালা দিয়ে বাতাস ঢুকছে ঘরে। দরজার ঝুলানো ছোট ঘন্টা গুলা বাতাসে টুংটাং করে শব্দ করছে। আমার খাট টা ঠিক জানালার পাশে। একটা গল্পের বই হাতে নিয়ে খাটে শুয়ে পড়লাম। আমার জানালা দিয়ে আকাশ দেখা যায়। বাতাসে সাদা মেঘ উড়ে যাচ্ছে। কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে পাখির ডাক। আমি বই পড়তে পড়তে হারিয়ে যাচ্ছি গল্পের ভিতরে।

যখন ঘুম ভাঙল তখন মোটামুটি বিকাল বলা চলে। আমার ঘরটা যেহেতু পশ্চিম মুখি সেজন্য দেখতে পাচ্ছি সূর্য হেলে পড়েছে। হালকা কমলার আভা ছড়িয়ে গেছে পুরো আকাশ জুড়ে। খাট থেকে গল্পের বই টা মেঝেতে পড়ে গেছে। সেটা তুলে চোখ কচলাতে কচলাতে আম্মা কে ডাকতে লাগলাম। এই সময় নিজের ঘর থেকে ডেকে তেমন সাড়া পাওয়ার কথা না। কারন পরিবারের সবাই বিকালে হয় উঠানে থাকে না হয় বাসার ছাদে থাকে।

উঠানে যেয়ে দেখলাম কেউ নাই। নিশ্চই ছাদে আছে। দুপুরের সেই সুন্দর বাতাস টা এখনো বয়ে যাচ্ছে। দেবদারু গাছ গুলা এখনো দুলছে। কিছুক্ষণ বাতাসের খেলাধুলা দেখে মনে পড়ল আমি তো আম্মারে খুঁজতে আসছিলাম। আবার ডাকতে ডাকতে ছাদে চলে গেলাম। ছাদেও কেউ নাই। ছাদ থেকে আমাদের বাসার পিছনের মাঠ টা দেখা যায়। বছরের এই সময় মাঠের ঘাস গুলা একটু বড় থাকে। বাতাসের জন্য সেই ঘাসগুলাতে ঢেউ খেলে যাচ্ছে। আজকে মাঠে কেউ খেলতে আসে নি। শুধুই মাঠ। ক্রিকেটের পিচ টাতেও ঘাস গজিয়েছে। দেখা যাচ্ছে না তেমন। কিন্তু, বাসার লোকজন সব কই গেল?

উঠানেও নাই, ছাদেও নাই। কারোর কি কোন বিপদ হল? ছাদ থেকে নিচে নেমে আসলাম। সবার ঘরের জানালা দরজা খোলা। বাতাসে পর্দা উড়ছে। সব ঘরের পাখা চলছে। কিন্তু কেউ নাই। দাদির কি কিছু হল? সবাই কি দাদিকে নিয়ে হাসপাতালে গেছে? দাদি গত একবছর ধরে আমাদের বাসায় আছে। তিনি স্ট্রোক করার কারনে তার বামপাশ প্যারালাইজড হয়ে গেছে। হুইল চেয়ারে তিনি চলেন। আমাদের বাসার একজন কাজের লোক সবসময় তার দেখাশোনা করে। 

কিন্তু কি হল যেটা আমাকে বলল না। বাবা-মা র উপর অভিমান হল। আমি বাসা থেকে বের হয়ে আমাদের পাঁচিলের পাশে চলে গেলাম। আমার এক বন্ধু থাকে। বিকালে খেলা করতে আসে। আজ এখনো আসে নি। ওকে এলাকার সবাই 'ছোট' নামেই ডাকে। যদিও বয়সে আমার থেকে দুই বছরের বড়। কয়েকবার ডাকলাম, কোন সাড়া পেলাম না। পাঁচিলের উপর চড়ে বসলাম ওদের বাসার ভিতর টা দেখব বলে। যদি ছোট কে দেখা যায়। ওদের বাসার কাউকে দেখা যাচ্ছে না। উঠানেও কেউ নাই। 

মানে কি? কি হচ্ছে? আমার বাসায় কেউ নাই, ছোটদের বাসাতেও কেউ নাই এমন কি মাঠেও কেউ নাই। একটা অদ্ভুত শূন্যতা গ্রাস করল আমাকে। হঠাৎ ঝড়ো বাতাসে আমাদের এলাকা যেন পাগল হয়ে গেল। গাছ গুলা জোরে জোরে দুলতে লাগল। আমি ভয়ে কুঁকড়ে গেলাম। আমি তো পাঁচিলের উপর উঠে বসে আছি। আমি শক্ত করে ধরে থাকলাম পাঁচিল টা। ঝড়ো বাতাস বেড়েই চলেছে। মনে হচ্ছে উড়িয়ে নিয়ে যাবে আমাকে। বেশিক্ষণ এভাবে থাকলে হয়ত হাত ফস্কে ছিটকে পড়ে যাব। যদি কোনভাবে পাঁচিল থেকে নেমে আমাদের বাসার মধ্যে ঢুকে যেতে পারি তাহলে হয়ত বেঁচে যাব। 

পাঁচিল থেকে নামার চেষ্টা করতেই সেটা যেন দুলে উঠল। যেকোন সময় পড়ে যেতে পারে। ভিষণ ভয়ংকর ভাবে দুলছে বাতাসে। আমি আঁকড়ে ধরে আছি প্রাণপণ। একসময় মনে হল পাঁচিল টা পড়ে যাচ্ছে। পড়ছে তো পড়ছেই। আমার চারিপাশ অন্ধকার হয়ে গেল। আমি কি মারা যাচ্ছি? নাকি মারা গিয়েছি? 

ফোনের এলার্মে ঘুম ভেঙে গেল। সকাল সাড়ে ছয়টা। অফিসে ঠিক টাইমে পৌছাইতে হলে সাড়ে সাতটার মধ্যে বের হতে হবে। দ্রুত ফ্রেশ হয়ে, রেডি হয়ে বের হয়ে পড়লাম।

আজকের নিকুঞ্জের আবহাওয়া টা অনেক সুন্দর। আকাশটা ভীষণ নীল। ধবধবে সাদা মেঘ ভেসে ভেসে যাচ্ছে আর কি সুন্দর বাতাস হচ্ছে। বাতাসের ধাক্কায় রাস্তার পাশের বড় বড় গাছ থেকে পাতা এসে পড়ছে। বাতাসের শব্দ এই সময় এক অন্যরকম ভালোলাগা কাজ করে।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে মার্চ, ২০২২ দুপুর ১:২৬
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বারবাজারে মাটির নিচ থেকে উঠে আসা মসজিদ

লিখেছেন কামরুল ইসলাম মান্না, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৪০

ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার বারবাজার ইউনিয়নে মাটির নিচ থেকে মসজিদ পাওয়া গেছে। এরকম গল্প অনেকের কাছেই শুনেছিলাম। তারপর মনে হলো একদিন যেয়ে দেখি কি ঘটনা। চলে গেলাম বারবাজার। জানলাম আসল... ...বাকিটুকু পড়ুন

সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮








আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

পরিবর্তন অপরিহার্য গত দেড়যুগের যন্ত্রণা জাতির ঘাড়ে,ব্যবসায়ীরা কোথায় কোথায় অসহায় জানেন কি?

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:৫৭


রমজানে বেশিরভাগ ব্যবসায়ীকে বেপরোয়া হতে দেখা যায়। সবাই গালমন্দ ব্যবসায়ীকেই করেন। আপনি জানেন কি তাতে কোন ব্যবসায়ীই আপনার মুখের দিকেও তাকায় না? বরং মনে মনে একটা চরম গালিই দেয়! আপনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯

মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা বলতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×