somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গ্রামীণ ব্যাংক ও এডিডাসের জুতো কাহিনী

১১ ই জুন, ২০১০ রাত ১১:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মূল : দেভিন্দর শর্মা, অনুলিখন : শামীমা সালেহীন

নোবেল পুরস্কার জয়ী ড. মুহম্মদ ইউনূস এবার জার্মানির জুতা নির্মাতা এডিডাসের সঙ্গে একটি যৌথ প্রকল্পের চিন্তাভাবনা করছেন। রিপোর্ট ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টার -এর (মার্চ ২১)। উদ্দেশ্য অতি মহৎ। বাংলাদেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে অতি স্বল্প মূল্যে এই ব্রান্ডের জুতা পরার সুযোগ করে দেওয়া। উভয়পক্ষ এই লক্ষ্যে ইতোমধ্যে একটি সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করেছেন। তাদের বর্তমানের চিন্তা কিভাবে আগামী বছরের আগেই এই জুতা অসহায়, দরিদ্রের পদচুম্বনের সুযোগ পায়। এই জুতার মাহাত্ম্য বর্ণনা করতে গিয়ে ইউনূস জানিয়েছেন, ‘এই জুতো সস্তা ও রোগ প্রতিরোধী (কে না জানে জুতা নানা রোগ সংক্রমণ হতে মানুষকে রক্ষা করে?)।’ অতি মহৎ উদ্যোগ, সন্দেহের কোনো কারণ নেই। কিন্তু এই জুতা আসলে কার রোগ সারাতে যাচ্ছে সেটা একটু তলিয়ে দেখার বিষয়। কি কারণে এই উচ্চমার্গীয় পাদুকা ব্রাহ্মণ্য সেবা হতে ধরাধামের অচ্ছুৎদের সেবায় মনোনিবেশ করলো সেটা একটু না জানলেই নয়।

এই মুহূর্তে এডিডাসের ব্যবসা প্রায় মর মর। কিছুদিন আগে মানি লন্ডারিংয়ের মামলায় জেরবার হয়ে এবং ৯৭ ভাগ লাভ হারিয়ে এশিয়া আর ইউরোপ থেকে এই কোম্পানি যখন ব্যবসা গুটানোর পাঁয়তারায় ছিল ঠিক সেই মুহূর্তে দেবদূতের মতো এসে তাকে রক্ষা করলেন ড. ইউনূস। আর ফলে এডিডাসের জুতোর পক্ষেও সম্ভব হলো এতদিন বাদে তার উৎসের সন্ধানে যাত্রা করবার। কারণ কোনো না কোনো দেশের হতদরিদ্রের হাতেই তাদের জন্ম। ইউনূস এবার গরিবের পদসেবায় জীবন উৎসর্গ করতে যাচ্ছেন বলে তাকে ধন্যবাদ জানাতেই হয়। আমি নিশ্চিত তিনি অচিরেই তার এই পাদুকা ক্লেশনিবারণী প্রকল্পকে তার মহাজনী ঋণ প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত করে দেবেন এবং এডিডাসের জীবনরক্ষায় এই দেশের বিপুল সংখ্যক দরিদ্রের অবদানকে স্মরণীয় করে রাখবেন। এডিডাসের অবশ্য কিছুটা জাতি-বিয়োগ ঘটলো। বিত্তবানের পায়ের বদলে এখন গরিবের পদৌলোতেই তাকে বেঁচে-বর্তে থাকতে হবে, কিন্তু এ যাত্রার মতো রক্ষা তো পাওয়া গেল।

তবে মনে হয়, আমার সঙ্গে সঙ্গে আপনাদেরও কেউ কেউ স্বীকার করবেন, ইউনূসের গ্রামীণ ব্যাংক যদি তার সুদের হারটা একটু কমিয়ে দিতো তাহলে জুতা কেন, ভদ্রস্থ কয়েক প্রস্থ কাপড় কিনতেও এই দরিদ্র মানুষের অসুবিধা হওয়ার কথা ছিল না। কিন্তু বিধাতার লিখন এই, ইউনূস সাহেব প্রথমে দরিদ্রের ক্ষমতায়নের নামে গরিবের পকেট হাতড়ে, ঝেড়ে, কেটে তার সব সঞ্চয় একবার নিজের পকেটে পুরবেন এবং অতপর গরিবকুলের কল্যাণার্থে সস্তা জুতো বিক্রি করবেন। মুহম্মদ ইউনূস ও তার ব্র্যান্ড মাইক্রো ফাইন্যান্স ইনস্টিটিউটশন (MFIs) সারাবিশ্বের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর কাছে চড়া সুদে ঋণ বিতরণ করে যাচ্ছেন। অনেক ক্ষেত্রেই এই সুদের হার গড়ে ২৪-৩৬ শতাংশ। আমার মনে হয় না ইউনূসের ক্ষুদ্র ঋণের ওপর বিরাট আস্থাশীল সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনকেও এই চড়া হারে কখনো সুদ গুনতে হয়েছে। যেহেতু ঋণের এই টাকা প্রতি সপ্তাহে শোধ করতে হয়, এই সুদের হার স্বাভাবিক ভাবেই ৩৫-৫০ শতাংশে উন্নীত হয়ে যায়। আশ্চর্যের কিছু নেই যে এই ঋণের দায়ভার মাথায় নিয়ে ভারতের (এবং বাংলাদেশেরও) মানুষ নিজেদের প্রাণ নিজেরাই হরণ করে চলছে। কল্পনা করে দেখুন এই গরিবেরা যদি ৩/৪ শতাংশ হারে সুদ দিতে পারতো, যেটি ভারতে ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে, তাহলে এই ক্ষুদ্র ঋণ আকারে সে যে সাহায্য পাচ্ছে সেটা সমগ্র অর্থনীতির জন্য কি পরিমাণ লাভজনক হতো। আমি সব সময়ই বলে এসেছি, সবচেয়ে দরিদ্র নারীটিকেও যদি এই সুদে একটি ছাগল কিনতে দেওয়া হয়, দুই বছরের মাথায় সে একটা ন্যানো গাড়ির মালিক হয়ে যেতে পারবে এবং এজন্য ন্যানোর মালিক টাটা কোম্পানির সঙ্গে কোনো সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করার প্রয়োজন নেই।

এডিডাসের সঙ্গে যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে তাতে লাভ হচ্ছে দরিদ্র জনগোষ্ঠী ছাড়া আর সবারই। গ্রামীণ ব্যাংক এই ধরনের সৃজনশীল উদ্ভাবনীর জন্য নাগরিক এলিট শ্রেণী থেকে পাচ্ছে ভূয়সী প্রশংসা। বাংলাদেশ ও ভারতের বাণিজ্য চেম্বারগুলো অত্যন্ত সাগ্রহে অপেক্ষা করছে কবে তারাও এই ধরনের একটি লাভজনক ব্যবসায় পুঁজি খাটাবেন। এডিডাস চিরদিনের জন্য ডক্টর ইউনূসের কাছে ঋণী হয়ে থাকল তার প্রাণ বাঁচানোর জন্য। আর অর্থনীতিবিদরা অপেক্ষায় রইলেন একটি ঊর্ধ্বোন্মুখ জিডিপি রেখার জন্য। গ্রামীণ ব্যাংক ও এডিডাসের এই মিলন তাই সামাজিক দুর্বৃত্ত কর্তৃক দরিদ্রকে লুটে নেওয়ার এক অতুলনীয় উদাহরণ। এতএব, দারিদ্র্য চিরজীবী হোক।

(দেভিন্দর শর্মা একজন প্রখ্যাত ভারতীয় সাংবাদিক, লেখক, চিন্তক, গবেষক, কৃষি বিজ্ঞানী এবং তৃতীয় বিশ্বের খাদ্য ও বাণিজ্যনীতি বিশ্লেষক)

সুত্র: সাপ্তাহিক বুধবার
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই জুন, ২০১০ রাত ১১:০৬
১৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×