আমার জানামতে বৈষম্য দুর করতেই এক সময় কোটা প্রথার প্রচলন হয়। যেমন উপজাতিদের কোটা। বিভিন্ন কারনে দেশের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠিকে তাদের এগিয়ে আসার রাষ্ট্রীয় ব্যর্থতাকে স্বীকার করে সাময়িকভাবে, একটা সুনির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত কোটার মাধ্যমে দেশ পরিচালনার মেইন ষ্ট্রিমে নিয়ে আসার ব্যবস্হা করা হয়। পার্বত্য চট্টগ্রামে দীর্ঘদিন যে অবস্হা ছিল সেখানকার জনগোষ্ঠি সেইসব পাহাড় সমান বাধা কাটিয়ে দেশের সিভিল সার্ভিস বা অন্যান্য জায়গায় আসতে পারছিল না বা সেই সুযোগ ছিল না। অথচ তাদেরকে উন্নয়নের ধারায় সামিল করা দরকার ছিল এবং তা করতেই নির্বাচন, প্রশাসন সহ সকল ক্ষেত্রে একটু ধাক্কা দিয়ে এগিয়ে আনতেই কোটা নামক একটা বিশেষ সুযোগ দেয়া হয়। মহিলা কোটা কিংবা জেলা কোটাও অনেকটা একারনেই দরকার হয়েছিল যে কোন কোন জেলার লোকজন বেশী এসে পড়েছে, কোন কোন জেলার লোকজন আসতেই পারছে না। আবার একটা সময়ে মহিলাদের সাংঘাতিকভাবে পিছিয়ে পড়ার বিষয়টা ছিল। দেশের সকল মানুষের সমান সুযোগ দেয়ার জন্য অর্থাত বৈষম্য কমাতেই কোটা প্রথার চালু করা হয়। তবে কথা হলো সেগুলো নিশ্চয়ই অনির্দিষ্ট কালের জন্য নয়। কেন নয়, বলছি।
এই যে মহিলারা পিছিয়ে পড়েছিল, সেটার জন্য দায়ী ছিল আমাদের সরকার, রাষ্ট্র ও সমাজ। কোন কোন জেলার লোকজন বা উপজাতিরা পিছিয়ে ছিল, সেগুলোর জন্যও দায়ী ছিল এই রাষ্ট্র। ফলে রাষ্ট্রকে একটা সময় কিছুটা ছাড় দিয়ে তাদেরকে এগিয়ে আনতে হয় এবং একই সাথে ওদের সেইসব দুর্বলতাকে কাটিয়ে এনে একটা নির্দিষ্ট সময় পরে সেই কোটা পদ্ধতির অবলুপ্তি ঘটাতে হয়। কারন, কোটা পদ্ধতি কোন মহিলা, কোন বিশেষ জেলার মানুষদের জন্য, এমনকি উপজাতিদের জন্যও সম্মানজনক কোন ব্যবস্হা নয়। যখন আপনার সাংসারিক অবস্হা খারাপ থাকে, তখন আপনি টাকা হাওলাত নিয়ে কিংবা সরকারী অনুদান নিয়ে অন্যদের মতই সংসার চালাতে পারেন, কিন্তু সেটা কখনোই স্হায়ী সম্মানজনক বিষয় নয়। সকলেই স্বপ্ন দেখে যত দ্রুত সম্ভব সংসারের কেউ আয় রোজগার করবে যাতে করে লোন বা অনুদান বা দান খয়রাত নিয়ে সংসার চালানোর অসম্মানজনক অবস্হা সারা জীবন বহন করে যেতে না হয়।
জেলা কোটা, মহিলা কোটা, উপজাতি কোটা নিয়েই কথা বললাম। অন্য কোন কোটা উপরোক্ত ক্রাইটেরিয়ার মধ্যে পরে কিনা আমার জানা নাই। কোটা পদ্ধতি মেধার সর্বনাশতো করেই, তাছাড়াও কোনভাবেই কোন সম্মানজনক বিষয়ও হতে পারে না, স্হায়ীভাবেতো নয়ই। মহান মুক্তিযুদ্ধে যারা অংশ গ্রহন করেছিলেন তাদের ক্ষেত্রেও একটি বিষয় ছিল যে তারা নয়মাস যুদ্ধে ছিলেন, ফলে ক্ষতিগ্রস্হ হয়েছেন। তাদের ঋণ মানুষ কখনোই শোধ করতে পারবেন না। ফলে স্বাধীনতার পর বেশ কিছু ছাড় দেয়া হয়। যেমন ৭২ এর ক্যাডার বলে একটি কথা আমরা জানি। ৭২ সালের এসএসসি সহ যেসব পরীক্ষা হয় সেগুলো কিভাবে হয়েছিল তা আমরা জানি।
কিন্তু মুক্তিযোদ্ধার নাতিপুতিদের কোটার সুযোগ দেয়া তাদের জন্যও কোন সম্মানজনক বিষয় কিনা আমার বোধগম্য নয়। কারন তারাতো উপজাতি বা মহিলাদের মত কোন সিচুয়েশনের মধ্যে দিয়ে যান নি। বরং তারা বেড়ে উঠেছেন দেশের অন্যান্যদের মতই। তাহলে তারা কেন কোটার সুযোগ নিবেন বা পাবেন?
পাকিস্তানের সাথে আমাদের যুদ্ধের মুল কারনই ছিল বৈষম্য। অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রিয় বৈষম্যের শিকার ছিলাম আমরা। সেই বৈষম্য দুর করতেই অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছিলেন আমাদের বীর মুক্তিসেনারা। আর সেই বৈষম্যের বিরুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব। স্বাধীন দেশে সেই বৈষম্য ধীরে ধীরে কমিয়ে এনে সোনার বাংলা গড়ে তোলাই ছিল বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন। প্রশ্ন হলো রাজনৈতিক ফায়দা নেবার জন্য আমরা কি তাহলে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন থেকে দুরে সরে যাচ্ছি? আর এতে করে কি সরকার একটা আবেগের দোহাই দিয়ে দেশের বিশাল জনগোষ্ঠির রোষানলে পড়তে যাচ্ছেন না?