(এই ধরনের লেখা সাধারণত আমি লেখিনা, লেখার মত এক্সপার্ট ও আমি না। এই লেখা সম্পূর্ণ আমার নিজের ধারনা, কেউ বা সবাই এর সাথে দ্বিমত পোষণ করতে পারেন। আমি যা চিন্তা করেছি তাই লিখেছি, আমার চিন্তা ভাবনা ভুল হতেও পারে, এটাই স্বভাবিক। দয়া করে আপনার মতের বিপক্ষে গেলে গালাগালি করবেন না)
ইদানীং জঙ্গীবাদ ইস্যুতে সবাই সরব। সবাই এটাকে যে যার মত বিশ্লেষণ করেছেন। যতটুকু বুজলাম সবাই বলতে চেয়েছেন এটার সাথে ইসলামের কোন সম্পর্ক নেই। জঙ্গীদের সাথে ইসলামের কোন সম্পর্ক নেই, ইসলাম জঙ্গীবাদ সমর্থন করেনা- মানলাম। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে আপনারা কোন ইসলামের কথা বলছেন? আল্লাহ্ প্রবর্তিত ইসলাম নাকি মানুষের বানানো ইসলাম? এই ব্লগে আগে ধর্ম নিয়ে অল্প কিছু লেখা লেখি করেছিলাম এবং সে সুবাদে বিভিন্ন মানুষের কমেন্ট পড়ে যা বুঝতে পেরেছি সে সুবাদে এই ইস্যুতে কিছু কথা না বললেই নয়। সেই জন্যই আমার লেখার সূত্রপাত।
মুসলমানরা কোরআন পড়ে না (তোতা পাখির মত আবৃতি করার কথা বলছি না, বুঝে পড়ার কথা বলছি)। কোরআনে কোথাও জংগীবাদকে সমর্থন করা হয়নি, কোথাও নিরীহ মানুষকে মেরে ফেলার কথা বলা হয়নি-সে যে ধর্মের বা যে পেশারই হোক না কেন। তারপরেও আমরা ইসলামের নামে বিভিন্ন জঙ্গী সংঘঠন যেমন আল-কায়েদা, আইসিস- এই সব দেখছি যাদের কাজ হচ্ছে ইসলাম প্রতিষ্ঠার নামে নিরীহ মানুষকে হত্যা করা । লাখ লাখ মানুষ এই সব জঙ্গী সংঘঠনে যোগ দিচ্ছে এবং জিহাদ নামক এক ভুল ধারনার স্বীকার হয়ে নিজের, দেশের এবং ইসলামের নামে কলঙ্ক বয়ে আনছে। প্রশ্ন হচ্ছে এই সব মানুষগুলি কোন ধারনায় বিশ্বাস স্থাপন করে বা তাদেরকে কি দিয়ে ব্রেইন অয়াশ করে এই পথে আনা হচ্ছে?
উত্তরটা খুব সোজা, কিন্তু কেউ স্বীকার করতে চাইবেন না। আর এটাই হচ্ছে মুসলমানদের হিপক্রেসি। উত্তরটা হচ্ছে হাদিস – যা মুসলমানেরা মনে প্রানে মানে এবং বিশ্বাস করে। জ্বী ভাই, এই হাদিস সাহিত্যে আপনি জঙ্গীবাদের প্রচুর উপাদান পাবেন। বুখারী থেকে দাউদ- কোথায় নেই জঙ্গীবাদ? যদিও এই হাদিস সাহিত্য নিয়ে আমি অনেকবার বিভিন্ন ভাবে লিখেছি এবং বলার চেষ্টা করেছি -কোরআন এই সব হাদিস কে কোন রকম অনুমোদন দেয় না, এই হাদিস গুলির বেশিরভাগই কোরআনের সাথে সরাসরি কন্ট্রাডিক্ট করে এবং নিজেদের সাথেও করে। সহিহ বুখারি আর সহিহ মুহাম্মদ একই জিনিষ না এইটা কেউ বুঝতে চায় না। সহিহ মুহাম্মদ কোরআনে পাবেন, বুখারিতে না। আপনি আমার কথা বিশ্বাস করলেন না? স্বাভাবিক। আপনি হাদিসের বই গুলি নিয়ে বসেন, এবং নিজে পড়ে দেখেন ঐ বই গুলিতে জিহাদের নামে, ধর্ম প্রচারের নামে কি লেখা আছে। আমি রেফারেন্স দিবনা, ইসলাম জঙ্গিবাদ সমর্থন করে না এই কথা তোতা পাখির মত বলার আগে নিজের হাদিস বই গুলি পড়ে দেখেন। তারপর নিজে সিদ্বান্ত নিন।
আমি বলেছিলাম এটা মুসলমানদের হিপক্রেসি। কিভাবে? যখন মানুষ এই বই গুলি পড়ে এবং এইগুলিকে ১০০% সঠিক মনে করে এবং এর মধ্যে অনেক ভুল, জাল, রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত হাদিস আছে যার সত্যতা প্রশ্নের সম্মুখীন এই কথা বললে ধর্ম কে বা নবী কে অপমান করা হয়েছে বা ইসলাম কে গালি দেওয়া হয়েছে বলে চিল্লাইয়া গলা ফাটাইয়া নিজেকে ১০০% মুসলমান দাবী করার চেষ্টা করেন, তখন কেউ যদি সেই একই জিনিষ পড়ে বা শুনে এইগুলি বাস্তবায়িত করতে চায়, সে মুস্ললিম না বা ইহা সহিহ ইসলাম না বলে ফতুয়া দেন তখন তাকে হিপক্রেট বলা ছাড়া অন্য কি বলা যায়? এই রকম উদাহরণ অনেক আছে, এই ব্লগেই আছে। একই রকম অন্য প্রসঙ্গে একটা উদাহরণ দেই, যেমনঃ নবীর সাথে আয়েশার ৬ বছর বয়সে বিবাহ (এটা নিয়ে ব্লগে বিতর্ক হয়েছে)। এইটা প্রমানিত যে এটা সম্পূর্ণ একটা মিথ্যা ঘটনা, কিন্তু যেহেতু এইটা বুখারিতে আছে কেউ এইটাকে জাল বলতে পারছে না, বা বুখারী থেকে বাদ দিতেও পারছে না। একই ভাবে অনেক হাদিস যা তথাকথিত সহিহ বলে প্রমানিত কিন্তু কোরআনের সম্পূর্ণ বিপরীত কথা বলে যা নিরীহ মানু্ষ বা অন্য ধর্মের মানুষকে হত্যার জন্য উৎসাহিত করে তা এই মুসলমানেরা মনে প্রানে বিশ্বাস করে কিন্তু কেউ করে দেখাতে গেলেই তাকে ইসলামের বাইরে বলে ঘোষণা করে। কেন এই ধরনের হিপক্রেসি? কেন এই সব টেক্সট কে আপনারা জাল বলে মানতে নারাজ? যদি জাল মানেনই, তাহলে এই সব জিনিষ গুলিকে কেন হাদিস বই গুলি থেকে বাদ দেওয়া হয় না? হয় স্বীকার করেন আপনার হাদিস গ্রন্থে এই উপাদান গুলি আছে, অথবা যদি এই সব উপাদান গুলি অস্বীকার করেন তবে দয়া করে এইগুলি হাদিস বই থেকে বাদ দেন, কারন অন্য কেউ একজন এইগুলি পড়ে বিপথে যেতে পারে।
মানুষ কিভাবে এই গুলি দিয়ে ব্রেইন ওয়াশ হয়? খুব সোজা। প্রথমে তারা আপনাকে এই সব কথা বলবে। আপনি হয়ত বিশ্বাস করবেন না। তখন তারা আপনাকে এই সব হাদিস থেকে রেফারেন্স দেখাবে। যেহেতু আপনি হাদিসের প্রতিটা কথা অক্ষরে অক্ষরে বিশ্বাস করেন সেহেতু আপনি তখন এই জিনিশগুলিকে মেনে নিতে বাধ্য হবেন এবং জিহাদ নামক প্রচলিত ভুল ধারনার বশবর্তী হয়ে ইসলাম রক্ষার নামে ঝাপিয়ে পরবেন।
হাদিসে অনেক ভাল ভাল কথাও আছে-এটা অস্বীকার করার উপায় নেই। কিন্তু সেই একই হাদিস বইয়ে এই ভাল কথার পাশাপাশি এইসব খারাপ উপাদান ও প্রচুর পরিমাণে আছে। অন্ধ বিশ্বাসের বশবর্তী হয়ে, ভাল কে ভাল বলে গ্রহণ করা এবং খারাপ কে খারাপ বলে ত্যাগ না করতে পারলে এই ধরনের জঙ্গি বাদ থেকে মুক্তি পাবার কোন আশা নেই। কারন যারা এই সব জঙ্গীবাদের সাথে যুক্ত তারা একটা আদর্শ ধারন করে এই পথে আসে, আর সে আদর্শের উৎস হচ্ছে হাদিস গ্রন্থ গুলি। পুলিশ দিয়ে জঙ্গীবাদ নির্মূল কারা যাবেনা, হয়ত সাময়িক দমিয়ে রাখা যাবে। জঙ্গীবাদ নির্মূল করতে হলে তারা যে আদর্শ ধরান করে আছে সেই আদর্শকে ভুল প্রমানিত করতে হবে এবং নির্মূল করতে হবে। তবেই জঙ্গীবাদ নির্মূল হবে। কিন্তু আমরা হিপক্রেট রা কি এটা করতে পারব?
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই জুলাই, ২০১৬ বিকাল ৪:১৫