তিনি একজন গ্রামের নিরক্ষর বাউল। প্রাতিষ্ঠানিক লেখাপড়া নেই তার। অথচ কী অবলীলায় মুখে মুখে রচনা করেছেন অসংখ্য গান। খাতা নেই, কম্পিউটার নেই - স্মৃতিতে লিখে রাখেন গানের শব্দমালা। সুর বেধেছেন অসংখ্য গানের। আমরা তার গানের দর্শন, মনস্তত্ত্ব, সমাজতত্ত্ব নিয়ে শতশত পৃষ্ঠা লিখছি বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি থিসিসে। তার গান নিয়ে কলাম লিখছি, তার গানের দরাজ কণ্ঠের মায়াময় সুর নিয়ে ডকুমেন্টারি বানাচ্ছি।
তরুণ এনথ্রোপলজিস্ট তার গবেষণায় ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন সমাজে সর্বব্যাপি ও প্রাধান্য বিস্তারকারী এই সংস্কৃতি কিভাবে জনসংস্কৃতির অংশ হয়ে উঠছে। তারা খুঁজে ফিরছেন নতুন আরেক প্রপঞ্চ, নিম্নবর্গের এই সংস্কৃতির গণ উত্তেজনাকর বিষয়আশয় কিভাবে উচ্চবর্গের সংস্কৃতির রুচিকে ছুঁতে পারলো। তারা সংস্কৃতির বুদ্ধিবৃত্তিক আধেয়কে সুচিন্তিত ভাবে অতি সরলীকরণ বলে জ্ঞান করেন।
আমি অবাক হয়ে এইসব লীলাখেলা দেখি। দিনশেষে আমি গ্রামের এই নিরক্ষর বাউলের কাছে মাথা নত করি। আমি একের পর এক লিখে যাই সেই বাউলের অ-লেখা গানগুলো। যেগুলো তার মুখে লেগে আছে, তার স্মৃতিতে লেপ্টে আছে, কাগজের জমিনে এর আগে কখনো লেখা হয়নি। তিনি আমার কাছে একজন বড়ো মাপের দার্শনিক। খণ্ড খণ্ড বই বেরোয় বাউলের অগ্রন্থিত গান নিয়ে, বিদেশী ফোক জার্নালে প্রকাশিত হয় তার অনূদিত গান, গানের দর্শন। রাজধানীর বুকশপে বিক্রি হয় তার ঢাউস সাইজের গানের সংকলন।
অথচ এই বাউলের জীবনের অবহেলিত খেরোখাতায় চূড়ান্ত সত্যি হয়ে পড়ে থাকে একাকী নিঃসঙ্গ অসচ্ছল বাউল জীবন জীর্নশীর্ন খড়খুটোর ঘরে। আর পড়ে থাকে পুরনো ফিতেয় বাঁধা একতারা, দোতারা।
হাসান ইকবাল
মে ০২, ২০২১, ঢাকা।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা মে, ২০২১ বিকাল ৪:৩১